দেশের টাকা দেশে রাখুন সঠিকভাবে গম চাষ করুন
ভাতের পরই বাংলাদেশে যে খাদ্যটির চাহিদা বেশি সেটি হলো আটা ও ময়দা। আর আটা-ময়দা আসে গম থেকে। তাই আসুন গমের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
দানা ফসল শর্করার প্রধান উৎস। এ কারণে পৃথিবীর সকল দেশে খাদ্যশস্যা হিসেবে দানা ফসল চাষ করা হয়। বিশ্বের অনেক দেশে গম প্রধান খাদ্যশস্য। বাংলাদেশে ধানের পরে খাদ্যশস্য হিসেবে গমের অবস্থান দ্বিতীয়। বর্তমানে দেশের প্রায় সব জেলাতেই গমের চাষ করা হয় তবে দিনাজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, জামালপুর, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলায় বেশি চাষ হয়। বাংলাদেশে গমের অনেক উচ্চফলনশীল অনুমোদিত জাত রয়েছে। তন্মধ্যে কাঞ্চন, আকবর, অমাণী, প্রতিভা, সৌরভ, গৌরব, শতাব্দী, প্রদীপ, বিজয় ইত্যাদি জাত জনপ্রিয়। তাই আসুন জানি গম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
আরোও পড়তে পারেন – রজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতি
গম চাষে বীজের হার
বীজ গজানোর হার শতকরা ৮৫ ভাগের বেশি হলে ভালো। এক হেক্টর জমিতে ১২০ কেজি গম বীজ বপন করতে হয়। বপনের আগে বীজ শোধন করে নিলে বীজবাহিত অনেক রোগ প্রতিরোধ করা যায়। প্রতি কেজি বীজ ৩ গ্রাম প্রভেক্স ২০০-এর সাথে ভালো করে মিশিয়ে বীজ শোধন করা যায়।
গমের বীজ বপনের সময়
গম শীতকালীন ফসল। বাংলাদেশে শীতকাল স্বল্পস্থায়ী। এ কারণে গমের ভালো ফলন পেতে হলে সঠিক সময়ে গম বীজ বপন করা উচিত। আমাদের দেশে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গম বপনের উপযুক্ত সময়। উঁচু ও মাঝারি দোঁআশ মাটিতে গম ভালো জন্মে। তবে লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়। যেসব এলাকায় ধান কাটতে ও জমি তৈরি করতে দেরি হয় সেসব এলাকায় কাঞ্চন, আকবর, প্রতিভা, গৌরব চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
গমের বীজ বপন পদ্ধতি
জমিতে জো (যে অবস্থায় জমিতে কাঙ্খিত পানি উপস্থিত থাকে, তাকে জো বলে।) এলে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে সেচ দেওয়ার পর জো এলে চাষ দিতে হবে। সারিতে বা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। ছিটিয়ে বপন করলে শেষ চাষের সময় সার ও বীজ ছিটিয়ে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হয়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে জমি তৈরির পর ছোট হাত লাঙল দিয়ে ২০ সে.মি. দূরে দূরে সরু নালা তৈরি করতে হয়। ৪-৫ সে.মি. গভীর নালায় বীজ বপন করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। বপনের ১৫ দিন পর পর্যন্ত পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরোও পড়ুন – ধান চাষ পদ্ধতি
গম চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
সেচ সহ চাষের ক্ষেত্রে মোট ইউরিয়া সারের তিন ভাগের দুই ভাগ এবং সবটুকু টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম সার শেষ চাষের সময় দিতে হবে। বাকি এক ভাগ ইউরিয়া সার প্রথম সেচের সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সেচ ছাড়া চাষের ক্ষেত্রে পুরো ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং জিপসাম সার শেষ চাষের সময় জমিতে দিতে হবে।
গম চাষে সার প্রয়োগের পরিমাণ নিচের তালিকায় দেওয়া হলো –
সারের নাম | সেচসহ সারের পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) | সেচ ছাড়া সারের পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) |
ইউরিয়া | ২০০ কেজি | ১৬০ কেজি |
টিএসপি | ১৬০ কেজি | ১৬০ কেজি |
এমওপি | ৪৫ কেজি | ৩৫ কেজি |
জিপসাম | ১১৫ কেজি | ৮০ কেজি |
গোবর/কম্পোস্ট সার | ৮.৫ টন | ৮.৫ টন |
গম চাষে পানি সেচ
মাটির বুনটের প্রকার অনুযায়ী গম চাষে ২-৩টি সেচের প্রয়োজন হয় । প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময়, দ্বিতীয় সেচ গমের শিষ বের হওয়ার সময় এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় দিতে হবে।
আরোও জানুন – অল্প খরচে ভূট্টা চাষ জানবো ভূট্টা চাষের সঠিক নিয়ম
গম চাষে আগাছা দমন
সার, সেচের পানি ইত্যাদিতে আগাছা ভাগ বসায়। ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের আগে নিড়ানি দিতে হবে। উপরি প্রয়োগের পর সেচ দিতে হবে। গম ক্ষেত আগাছামুক্ত রাখার জন্য কমপক্ষে দুইবার নিড়ানি দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
গম পাকলে গাছ হলদে হয়ে মরে যায়। তালুতে শিষ নিয়ে ঘষলে দানা বের হয়ে
আসবে। এ অবস্থায় গম কেটে ভালোভাবে শুকিয়ে মাড়াই যন্ত্র দিয়ে মাড়াই করতে হবে।
গম চাষে রোগ দমন
গম চাষে পোকা মাকড়ের আক্রমণ তেমন একটা হয় না। তবে ছত্রাকজনিত বেশ কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া অনেক সময় ইঁদুরের উপদ্রব দেখা যায়। ছত্রাকজনিত রোগ যেমন –
১) পাতার মরিচা রোগ
২) পাতার দাগ রোগ
৩) গোড়া পচা রোগ
৪) আলগা ঝুল রোগ
৫) বীজের কালো দাগ রোগ অন্যতম ।
আরোও পড়তে পারেন – বাঁধাকপি চাষ পদ্ধতি
পাতার মরিচা রোগে প্রথমে পাতার উপর ছোট গোলাকার হলুদাভ দাগ পড়ে । শেষ পর্যায়ে এ রোগে মরিচার মতো বাদামি বা কালচে রঙে পরিণত হয় । হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে মরিচার মতো গুড়া হাতে লাগে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতায়, পরে সব পাতায় ও কাণ্ডে দেখা যায়। পাতার দাগ রোগে প্রথমে নিচের পাতায় ছোট ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরে দাগ আকারে বেড়ে পাতা ঝলসে যায়। এ রোগের জীবাণু বীজে বা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। গোড়া পচা রোগে মাটির সমতলে পাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়। পরে দাগ গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে আক্রান্ত স্থানের চারপাশ ঘিরে ফেলে । একসময় গাছ শুকিয়ে মারা যায় ।
গমের শিষ বের হওয়ার সময় আলগা ঝুল রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় । আক্রান্ত গমের শিষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা ঢাকা থাকে। পরে তা ফেটে যায় এবং দেখতে কালো ঝুলের মতো দেখায় । বীজের কালো দাগ রোগের ফলে গমের খোসায় বিভিন্ন আকারের বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। বীজের ভূণে দাগ
পড়ে এবং আস্তে আস্তে দাগ পুরো বীজে ছড়িয়ে পড়ে । গমের এসব ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাতের গম যেমন— কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ, গৌরব চাষ করতে হবে । রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। গম বীজ বপনের আগে শোধন করে নিতে হবে সুষম হাৱে সার প্রয়োগ করতে হবে।
ইঁদুর গমের একটি প্রধান শত্রু। গমের শিষ আসার পর ইঁদুরের উপদ্রব শুরু হয়। গম পাকার সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। ইঁদুর দমনের জন্য হাতে তৈরি বিষ টোপ বা বাজার থেকে কেনা বিষ টোপ ব্যবহার করা যায় । এসব বিষ টোপ সদ্য মাটি তোলা ইঁদুরের গর্তে বা চলাচলের রাস্তায় পেতে রাখতে হয় । বিষ টোপ ছাড়া বাঁশ বা কাঠের তৈরি ফাঁদের সাহায্যেও ইঁদুর দমন করা যায় ।
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
চারটি পদ্ধতিতে গম বপন করা যায়। সেগুলো হলোঃ- সম্প্রচার, স্থানীয় লাঙলের পিছনে, ড্রিলিং এবং ডিব্লিং।
গম চাষের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা হলো ২৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।
গম দানাজাতীয় ফসল বা শস্য।
উচ্চ ফলনশীল গমের নাম হলো সৌরভ (বারি গম-১৯) ও গৌরব (বারি গম-২০)।
গম স্টার্চ এবং শক্তির প্রধান উৎস হওয়ার গম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
১ কেজি গমের দাম ৪০-৫০ টাকা।