মাল্টা চাষ পদ্ধতি, মাল্টার রোগ ও প্রতিকার

সঠিকভাবে মাল্টা চাষ পদ্ধতি জানলে ভাল ফলন পাওয়া ও অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই জানুন, মাল্টা চাষ পদ্ধতি এবং এর বিভিন্ন রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে।

মাল্টা চাষ পদ্ধতি

মিষ্টি কমলা বা Sweet Orange (Citrus sinensis) সাইট্রাস পরিবারভুক্ত একটি বিদেশী ফল যা বাংলাদেশে মাল্টা নামে পরিচিত। মাল্টা খেতে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিতে ভরপুর।

কমলার তুলনায় এর অভিযোজন ক্ষমতা অধিক হওয়ায় এবং এর রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় এটি বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দেশের জলবায়ু ও মাটি মাল্টা চাষের উপযোগী বিধায় পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকায়ও সহজেই মাল্টার চাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব।

আরোও পড়ুন – কমলা চাষ পদ্ধতি

দক্ষিণ পূর্ব ভারত, মায়ানমার, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ চীন মাল্টার আদি উৎপত্তিস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে এই ফলটি বিশ্বের উষ্ণ ও অব-উষ্ণ মন্ডলীয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে চাষাবাদ হচ্ছে।

আসুন জানি মাল্টা চাষের নিয়ম এবং করণীয় পদক্ষেপগুলো কি কি।

সঠিক পদ্ধতিতে মাল্টা চাষ পদ্ধতি

কম বৃষ্টিবহুল সুনির্দিষ্ট গ্রীষ্ম ও শীতকাল শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। মাল্টা প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। তবে ছায়া পড়ে না এমন সুনিষ্কাশিত উর্বর, মধ্যম হতে হালকা দোআঁশ মাটি চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।

‘বারি মাল্টা-১’ জাতটি নিয়মিত ফলদানকারী এবং উচ্চ ফলনশীল। ফল গোলাকার, মাঝারি আকৃতির। ‘বাউ মাল্টা-১’ গাছ বামনাকৃতি, বিচি কম হয়।

মাল্টা চাষের জমি তৈরি ও চারা রোপন পদ্ধতি

সারাদিন রোদ পড়ে এবং বৃষ্টির পানি জমে না এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি মাল্টা চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।  নির্বাচিত জমিটি পর্যায়ক্রমিক চাষ ও মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে।

সমতল ভূমিতে বর্গাকার বা ষড়ভুজী পদ্ধতিতে এবং পাহাড়ি এলাকায় কন্টুর পদ্ধতিতে চারা বা কলম রোপণ করা হয়।

আরোও পড়তে পারেন পেয়ারা চাষ পদ্ধতি

সেচ ও আগাছা পরিষ্কার

বাগান সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়া হতে একটু দূরে শুকনো লতাপাতা, খড়, কুটা বিছিয়ে বা কালো পলিথিন দিয়ে মালচিং এর ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।

শীত মৌসুমে এবং অন্য সময় খরা দেখা দিলে গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। তেমনি বর্ষার পানিতে জলাবদ্ধতা যেন না হয়, সেজন্য দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

আরোও পড়তে পারেন – বারোমাসি আম চাষ

মাল্টার রোগ ও প্রতিকার

মাল্টা ফসলে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় এবং রোগের আক্রমণ হতে পারে।

১. পাতা সুরঙ্গকারি পোকা

লিফ মাইনার বা পাতা  সুরঙ্গকারি পোকা মাল্টার অন্যতম একটি ক্ষতিকর পোকা। সাধারণত গ্রীষ্ম  শরৎকালে গাছে নতুন পাতা গজালে এ পোকার আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়।

আঁঠালো হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করা যায়। কচি পাতায় এডমায়ার ২০০ এসএল ০.২৫ মি.লি. বা কিনালাক্স ২৫ ইসি ২ মি.লি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।

২. ফলের মাছি পোকা

পূর্ণাঙ্গ পোকা সাধারণত আধা পাকা ফলের ভিতরে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে ফলের শাঁস খেতে থাকে। পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত ফলে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জন্মে ও আক্রান্ত ফল পঁচে ঝরে পড়ে। সেক্স-ফেরোমন ফাঁদ দ্বারা পূর্ণাঙ্গ পুরুষ পোকা মারা যেতে পারে।

৩. লেবুর প্রজাপতি পোকা

পূর্ণাঙ্গ পোকা কালো-হলুদ রঙের এক ধরনের প্রজাপতি বিশেষ।  এদের  কীড়াগুলোই গাছের ক্ষতি করে থাকে। কীড়াগুলি পাতা খেয়ে গাছের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।

এর প্রতিকারের সম্ভব হলে ডিম ও ক্রীড়াসহ পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।  ডাইমেক্রন ১০০ ইসি বা সুমিথিয়ন ২ মি.লি./লিটার পানি অথবা সেভিন ৮৫ এসসি ১ গ্রাম/ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।

আরোও পড়ুন – লেবু চাষ পদ্ধতি

৪. ডাইব্যাক বা আগামরা রোগ

বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত গাছের পাতা ঝরে যায় ও আগা থেকে ডালপালা শুকিয়ে নিচের দিকে আসতে থাকে এবং আস্তে আস্তে পুরো গাছটিই মরে যায়।

২.৫ সেঃমিঃ সবুজ অংশ সহ কেটে ফেলে এবং কর্তিত অংশে বর্দ্দোপেস্ট লাগাতে হবে। বছরে দু-একবার বর্দ্দোমিশ্রণ অথবা কুপ্রাভিট /কপার অক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করা প্রয়োজন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *