লবণ চাষ পদ্ধতি

লবন আমদের শরীরের আয়োডিনের অভাব পূরণ করে। পাশাপাশি ডায়েবেটিসের ঝুকি কমানো সহ অনেক স্বাস্থ্য উপকার করে থাকে। তাই আসুন জেনে আসি কিভাবে লবণ চাষ করা হয়।

লবন চাষ পদ্ধতি

লবণ নিত্যদিনের খাদ্য তালিকার অন্যতম উপাদান। লবন ছাড়া যেকোনো রান্নায় অসম্পূর্ণ। এক চিমটি লবন আমাদের শরীরে শক্তির যোগান দেয়। পাশাপাশি লবন আমদের শরীরের আয়োডিনের অভাব পূরণ, হজম শক্তি বৃদ্ধি, ডায়েবেটিসের ঝুকি কমানো সহ অনেক স্বাস্থ্য উপকার করে থাকে।

বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে উৎপন্ন লবণকে কেন্দ্র করে বৃহৎ লৰণশিল্প গড়ে উঠেছে। তাই আসুন বিস্তারিত জেনে আসি লবন চষের মেীসুম, লবন চাষের স্থান, লবনের উৎপাদন, লবন চাষ পদ্ধতি, লবনের সরবরাহ সর্ম্পকে।

আরোও পড়তে পারেন – শসা চাষ পদ্ধতি ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

লবণ চষের মেীসুম

লবণ চাষের ভরা মৌসুম হলো ফাল্গুন-চৈত্র মাস। তবে আরও চার মাসও লবণের ভালো উৎপাদন হয়। অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে মোট ৬ মাস বা ডিসেম্বর হতে মে মাস লবন চাষের সেরা মেীসুম। 

আরোও পড়ুন – ফেব্রুয়ারী মাসের সবজি চাষ

লবণ চাষের স্থানসমূহ

লবণ সাধারণত উৎপাদিত হয়ে থাকে সমূদ্র উপকূলীয় স্থানে। আর এর কারণ আমাদের সকলেরেই জানা আছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সমুদ্রের লোনা পানি দ্বারা লবণ উৎপাদিত হয়ে আসছে। সারাদেশের লবণের চাহিদার ৮০ ভাগই কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মেটানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে উৎপন্ন লবণকে কেন্দ্র করে বৃহৎ লবণশিল্প গড়ে উঠেছে।

কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর ইউনিয়ন ছাড়াও কুতুবখালী, মহেশখালী, ইসলামাবাদ, ফুকখালী, বাড়বুআলী, চণ্ডলণ্ডীসহ বেশ কয়েক জায়গায় বর্তমানে লবণ চাষ হচ্ছে।  বর্তমানে খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে।

আরোও জানতে পারেন – পাবদা মাছ চাষ পদ্ধতি

লবণের উৎপাদন 

রোদ থাকলে চৈত্র মাসে এক একর প্রতি প্রায় ২১ মেট্রিক টন পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়। লবণ চাষ মূলত আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। শীতের কুয়াশাও লবণের জন্য ক্ষতিকর। ফলে আশানরুপ ফলন না পাওয়া যেতে পারে। তাই এ ব্যবসা একটু ঝুঁকিপূর্ণ।

আরোও জানুন – পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি

লবণ চাষের জমিতে মাছ চাষ

যহেুতু বছরের ছয় মাস লবণ চাষ হয় বাকি ছয় মাস লবন চাষ করা সম্ভব হয় না, তাই চাষীগণ চাইলে একই জায়গা লোনা পানির চিংড়ি চাষ সহ ঐ স্থানের উপযোগী অন্যান্য মাচ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।

আরোও পড়ুন – কমলা চাষ পদ্ধতি

সহজ উপায়ে লবন চাষ পদ্ধতি

আমরা জানি খাবার তৈরীতে লবন একটি অপরিহার্য উপাদান এবং খাদ্য তালিকার বাইরেও লবন  ড্রাইং, কাপড় তৈরি, চামড়া শিল্প সহ প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা কি জানি কি করে লবণ চাষ করা হয়? তাই আসুন জেনে আসি কিভাবে সহজ উপায়ে লবন চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়।

আরোও জানতে পারেন – তুলা চাষ পদ্ধতি | তুলা চাষে অনন্য সুবিধা ও সম্ভাবনা

লবণ চাষ পদ্ধতি ২ ধরণের। যথা:

  • সনাতন পদ্ধতি
  • পলিথিন পদ্ধতি

১)  সনাতন পদ্ধতি

পূর্বে মানুষ সমুদ্রের পানি চুলায় জ্বাল দিয়ে বা রোদে শুকিয়ে অর্থাৎ সৌর পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করতো। কিন্তু উৎপাদন হতো কম। এই পদ্ধতিতে একর প্রতি লবণের উৎপাদন ছিল ১৭.২৫ মেট্রিক টন। র্বতমানে এই পদ্ধতিতে লবণ চাষ তেমন করা হয় না।

আরোও পড়তে পারেন – বিনাসয়াবিন চাষাবাদ পদ্ধতি

২) পলিথিন পদ্ধতি

২০০০ সাল বা ২০০১ সাল থেকে পলিখিন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতি একরে লবণ উৎপাদিত হয় প্রায় ২১ মেট্রিক টন। এই পদ্ধতিতে সনাতন পদ্ধতির তুলনায় ৩৫% অধিক ও আন্তর্জাতিক মানের লবণ উৎপাদিত হয়, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করার সম্ভবনা সৃষ্টি করে থাকে। র্বতমানে এই পদ্ধতি খুবই প্রচলিত। কারণ, এই পদ্ধতি তুলনামূলক খুবই সহজ।

আরোও জানতে পারেন – বিপন্ন প্রজাতির মহাশোল মাছ-এর প্রজনন ও চাষ ব্যবস্থাপনা

তাই চলুন জেনে নিই  কিভাবে পলিথিন পদ্ধতিতে বা সহজ উপায়ে লবন চাষ করা যাবে।

  • সমুদ্রের বা সমুদ্রতীরবর্তী নদীর লবণাক্ত পানি দিয়ে লবণ উৎপাদন করতে হবে।
  • সমুদ্রতীরবর্তী সমতল ভূমিকে চারপাশে মাটির ছোট আইল বা মাটি দিয়ে উঁচু করে বেড়ার মত দিয়ে ছোট প্লট আকৃতির জায়গা বানাতে হবে।
  • এরপর ছোট প্লটগুলো রোদে ভালভাবে শুকাতে হবে।
  • ছোট প্লটগুলো শুকানোর পর কালো পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে।
  • এরপর সমুদ্র বা সমুদ্রতীরবর্তী নদী থেকে ইঞ্জিনচালিত মেশিন দিয়ে লোনা পানি এনে ছোট ছোট ওই প্লটগুলো পানি দিয়ে ভর্তি করতে হবে।
  • এভাবে পানি সংগ্রহ করার পর ৪ থেকে ৫ দিন রোদে রেখেদিতে হবে।
  • কড়া রোদে ৪/৫ দিন পানি রেখে দেওয়ার পর দেখা যাবে পানি বাষ্পীভূত হয়ে চলে যাবে আর লবণ পড়ে থাকবে পলিথিনের ওপর
  • লবণের সাদা দানা একটু ঝরঝরে হলেই রিফাইনারি মেশিনের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে লবণ রিফাইন করে বস্তা ভর্তি করতে হবে। (সাধারনত প্রতি বস্তায় ৮০ কেজি করে লবণ ভর্তি করা হয়।

আরোও পড়ুন – চিতল মাছের রেনু উৎপাদন ও চাষ পদ্ধতি

লবন সরবরাহ বা বাজারজাতকরন

লবণ প্রাথমিকভাবে রিফাইন করে বস্তা ভর্তি করার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় এবং বড় বড় নামি-দামি কোম্পানি (যেমন: এসিআই সুপারি সল্ট, কনফিডেন্সসহ অন্য সব কোম্পানি) কাছে বিক্রয় করা হয়। বড় বড় নামি-দামি কোম্পানিগেুলো প্রাথমিকভাবে রিফাইন করা  লবণ নিয়ে নিজেদের মেশিনে আরও ঝরঝরে ও পরিশোধন করে। এরপর কোম্পানির মোড়কজাত করে বাজারে সরবরাহ করে।

আরোও জানুন – লাভজনক উপায়ে মাছ চাষ পদ্ধতি

পরিশেষে কৃষক ভাইদের বলি, আপনারা ভালো ফলনের জন্য উপরের বিষয় গুলোকে অনুসরণ করতে পারেন এবং যেকোনো পরামর্শ প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনাদের সোবাই নিয়োজিত সর্বদা সর্বক্ষণ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ও নিরাপদে থাকুন।

আরোও পড়ুন – বিলেতি ধনিয়া পাতার চাষ পদ্ধতি

FAQs

লবণের দাম ২০২৩ সালে কত?

বর্তমানে প্রতি মণ অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। আর বাজারে প্যাকেটজাত লবণের দাম হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪২ টকা। ৭ দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি দাম বেড়েছে ৬০ টাকা এবং বাজারে প্যাকেটজাত লবণের দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪ টাকা।

লবণ বা সল্ট চাষ কিভাবে করা হয়?

বাষ্পীয়ভবনের মাধ্যমে সামুদ্রিক লবণ অগভীর পুকুর থেকে চাষ করার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় যাকে সল্টারন বলা হয়। অগভীর পুকুর থেকে পানি বাষ্পীভূত হওয়ার সাথে সাথে পানিতে লবণ আরও ঘনীভূত হয়। যখন পানি প্রায় ২৫ শতাংশ লবণাক্ততায় পৌঁছায়, তখন লবণ স্ফটিক হতে শুরু করে এবং এটি সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

লবণ থেকে উৎপাদিত প্রধান শিল্প বা পণ্য কি?

লবণ থেকে উৎপাদিত প্রধান শিল্প বা পণ্য হল কস্টিক সোডা এবং ক্লোরিন।

ফিড সল্ট কি?

পশু খাদ্য লবণকে ফিড সল্ট বলা হয়। ফিড সল্ট বা লবণ পশু খাদ্যের একটি অপরিহার্য উপাদান। ফিড সল্ট বা লবণ সঠিক মাত্রায় প্রাণীদের খনিজ ভারসাম্য বজায় রাখে এবং আপনার গবাদি পশুকে সুস্থ রাখে। সমুদ্রের লবণ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এই ধরণের লবণে অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় খনিজ এবং ট্রেস উপাদান রয়েছে। যা গবাদি পশুর জন্য উপকারি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *