পাহাড়ে দ্বিগুণ ফলন পেতে সঠিক নিয়মে হলুদ চাষ পদ্ধতি
সঠিকভাবে হলুদ চাষ পদ্ধতি জানলে ভাল ফলন ও অধিক লাভ পাওয়া যায়। তাই জানুন, হলুদ চাষ পদ্ধতি এবং এর বিভিন্ন রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে।
বাংলাদেশে মসলার মধ্যে হলুদ অন্যতম। হলুদ ছাড়া রান্না ভাবা যায় না। প্রায় সকল রান্নায় হলুদ কম-বেশি ব্যবহৃত হয়। মসলা ছাড়াও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান সৌন্দর্য চর্চায় শিল্পের কাঁচামাল এবং ঔষধি হিসবে হলুদের ব্যবহার বহু প্রাচীন।
দেশের প্রায় সর্বত্র হলুদ চাষ হয়। তাই এই হলুদের চাহিদা প্রচুর। আর ভালো দাম থাকায় পাহাড়ে প্রচুর পরিমাণে হলুদ চাষ হচ্ছে এবং কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। তাই চলুন পাহাড়ে অধিক ফলন পেতে হলুদ চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্হকে জানি।
এছাড়াও পাটনাই জাত দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হচ্ছে।
সঠিক পদ্ধতিতে হলুদ চাষ পদ্ধতি
প্রায় সব রকম মাটিতেই হলুদ চাষ করা যায়। বেলে দোআঁশ দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য উত্তম। সাধারণত উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু জমিতে যেখানে পানি দাড়ায় না এমন জায়গায় এর চাষ ভালো হয়। হলুদের চাষ লাভজনক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
হলুদ চাষের জন্য স্থান নির্বাচন ও জমি তৈরি
যে কোনো ফলের বাগানের শুরুতে সাথী ফসল হিসাবে হলুদ চাষ লাভজনক। সমতল বা প্রায় সমতল জমিতে চাষের ক্ষেত্রে প্রথমে জমি পরিষ্কার করে ভালোভাবে চার থেকে পাঁচটি চাষ দিয়ে তৈরি করে সারিতে হলুদ বপন করা হয়। সাধারণত ঢালু পাহাড়ে মাটি ক্ষয় রোধে জমি চাষের পরিবর্তে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর কোদাল বা দা দিয়ে ছোট ছোট গর্ত করে হলুদ লাগানো হয়।
আরোও পড়তে পারেন – মরিচ চাষ পদ্ধতি
বীজ শোধন ও বীজ বপন
বীজ বপনের আগে ছত্রাকনাশক দ্বারা শোধন করে নিতে হবে। এজন্য প্রতি ১০লিটার পানিতে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন অটোস্টিন ২০ গ্রাম গুলে সেই পানিতে ২০ কেজি বীজ হলুদ ৩০ মিনিট চুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর পানি থেকে বীজ তুলে ৬ থেকে৮ ঘণ্টা ছাড়ায় শুকিয়ে মূল জমিতে লাগাতে হবে।
হলুদের কন্দইন বীজ। বীজ রোগ ও পোকামাকড়মুক্ত থাকতে হবে। ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে সারিতে ২৫ সেন্টিমিটার ব্যবধানে হাতে টানা লাঙ্গল দিয়ে প্রায় ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার গভীর করে বীজ বপন করতে হবে। পাহাড়ি ঢালে জঙ্গল পরিষ্কার করে এক বিঘত দূরত্বে গর্ত করে সেখানে বীজ বপন করা হয়।
আরও পড়ুন – পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি
হলুদ চাষে সার প্রয়োগ
জমি তৈরীর সময় বীজ রোপনের ৫ থেকে ৭ দিন আগে সমৃদয়
- গোবর
- টিএসপি
- জিপসাম
- বোরিক এসিড
এবং অর্ধেক এমওপি সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের অর্ধেক বীজ রোপণের ৫০ থেকে পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
অবশিষ্ট ইউরিয়া এবং এমওপি সার সমান দুই কিস্তিতে রোপনের ৮০ থেকে ৯০ এবং ১১০ থেকে ১২০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
হলুদের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন
হলুদের রোগবালাই অপেক্ষাকৃত কম। হলুদের উল্লেখযোগ্য রোগের মধ্যে লিফ ব্লচ, লিফ স্পট, কান্ড পঁচা ইত্যাদি রোগ হতে পারে। এসব রোগ দমন করতে হলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
পোকামাকড়ের মধ্যে কান্ডছেদক পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা,রাইজোম স্কেল পোকা, বিছা পোকা,থ্রিপস ইত্যাদির আক্রমণ হতে পারে। ডিসপেল ৪৮ ইসি অথবা নেপসুন ৪৮ ইসি জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
হলুদের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার
হলুদে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। এছাড়া হলো ফাইবার আমিষ ক্যারোটিন ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ। হ লুদ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ খেলে চর্মরোগ দূর হয়। গরম চুন ও হলুদ মিশ্রণের প্রলেপ ব্যাথা কমায়। হলুদ রক্ত পরিষ্কার করে এবং হজমে সহায়তা করে। প্রসাধন শিল্প ওষুধ শিল্পে হলুদের ব্যবহার সুবিদিত।
হলুদের জাত
- বারি হলুদ ১ (ডিমলা)
- বারিহলুদ ২ (সিন্দুরী)
- বারি হলুদ ৩
- বিনা হলুদ ১ (ফলন ৩০-৩৩ টন / হেক্টর)
এছাড়াও পাটনাই জাত দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হচ্ছে।
FAQs
বার্ষিক ১০০ থেকে ২০০ সেমি বৃষ্টিপাতে হলুদ চাষ করা হয়। এছাড়াও সব ধরনের মাটিতে হলুদ চাষ করা গেলেও দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য উপর্যুক্ত। হলুদের ভালো ফলনের জন্য জমিতে ৪ থেকে ৫ টি গভীরভাবে চাষ দিতে হবে এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে এবং জমির আগাছা পরিষ্কার করে ঢেলা ভেঙ্গে ভালোভাবে হলুদ চাষের জমি তৈরি করে নিতে হবে।
হেক্টর প্রতি জমিতে ২৫-৩০ টন কাঁচা হলুদ এর ফলন পাওয়া যায়।
হ্যাঁ সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে হলুদ চাষ করলে হলুদ চাষ সহজ।
না আদা ও হলুদ দুটোই মসলা জাতীয় কাদ্য হলেও আদা ও হলুদ এক নয়।
প্রায় ৩০ প্রকোরেরও বেশি হলুদ রয়েছে।
লাকাডং হলুদ এর জাত ভালো।
১ চা চামচে প্রায় ৫ গ্রাম হলুদ থাকে।
এক চা-চামচ হলুদের গুড়োতে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম কারকিউমিন থাকে।
হলুদ ৯ থেকে ১০ মাসের ফসল। যখন হলুদ গাছের কান্ড শুকিয়ে যায় তখন হলুদ সংগ্রহ করতে হয়।