পাহাড়ে গাছে গাছে স্বর্ণ, এবার লিচুর বাম্পার ফলন | অধিক লিচু পেতে করণীয়

চলতি মৌসুমে রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কীটনাশক মুক্ত ও ভোক্তার চাহিদা থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলায় এই লিচুর বাজানজাত করা হচ্ছে।

পাহাড়ে গাছে গাছে স্বর্ণ এবার লিচুর বাম্পার ফলন | অধিক লিচুর ফলন পেতে করণীয়

রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে অর্থাৎ তিন পার্বত্য জেলায় হয়েছে লিচুর কাম্পার ফলন এবং বেড়েছে লিচুর কেনাবেচা। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় পাকা লিচু। কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় পরিপক্ব হওয়ার সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন জেলায় এই লিচুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় সরবরাহ করা হচ্ছেে এই লিচু। ফলে কৃষকরা হচ্ছেন আর্থিকভাবে লাভবান।

প্রতিদিনই পাহাড়ের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বাজারে আনা হচ্ছে লিচু ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে। লিচুর আকার ও রঙের ওপর নির্ভর করেই নির্ধারিত হচ্ছে দাম। চলতি মৌসুমে রাঙ্গামাটিতে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় এই লিচুর বাজানজাত করা হচ্ছে। আর চাহিদা বেশি থাকায় ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে লিচুর।

আরোও পড়ুন – কফি চাষ পদ্ধতি

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০২২ সালের তথ্য মতে, এবার রাঙ্গামাটি জেলায় ১,৮৮২ হেক্টর জমিতে ১৭,৪৯৮ টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, উৎপাদন ঠিক রাখতে উন্নত ও দেশি জাতের লিচু চাষে কৃষকের আগ্রহ সৃষ্টির জন্য কাজ করছে কৃষি বিভাগ। ফলন ভালো করতে কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার না করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করছি। তিনি আরো বলেন আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পাহাড়ে বিভিন ফল উৎপাদনের জন্য।

আরোও জানতে পারেন – বারোমাসি আম চাষ

কৃষ্ণমনি চাকমা নামের এক লিচু চাষি বলেন, এ বছর উনার লিচু বাগানে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। আর বাজারে লিচুর ভালো দাম পাচ্ছেন। এতে উনি সহ সকল লিচু চাষিরা অনেক খুশি। তিনি বলেন বর্তমানে বাজারে ১০০ লিচুর দাম ৩০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরো জানুন – গম চাষ পদ্ধতি

রাঙামাটি কাপ্তাই উপজেলার এক লিচু চাষি সুমেধ চাকমা বলেন, ‘উনার বাগানেও  এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরো বলেন তিনি ১৫টি গাছের লিচু বিক্রি করেছি মাত্র ৬০ হাজার টাকায়।’

এদিকে ২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় ২০৫ হেক্টর জমিতে ৫১২ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘লিচু একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। আর মানুষের শরীরের জন্য ভিটামিন সি খুবই প্রয়োজনীয়। তাই বাজারে লিচুর চাহিদাও বেশি। আর এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে।

FAQs

লিচুর ফুল ও ফল ঝরা বন্ধ করতে করণীয় কি?

লিচুর ফুল ও লিচুর ফল ঝরকে শুরু করে মূলত আবহাওয়া শুষ্ক হলে বা গাছে হরমোনের অভাব থাকলে। আর লিচুর ফুল ও ফল ঝরা বন্ধ করতে করণীয় হলো শুষ্ক আবহাওয়ায় সেচের ব্যবস্থা করা এবং লিচু ফল মটর দানা এবং মার্বেল আকার হলে ম্যাসণন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করা। এরপর লিচু গুটি বাধার পর ম্যাকটিনি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩ থেকে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে লিচু গাছে স্প্রে করা।

লিচুর এ্যানথ্রাকনোজ রোগের প্রতিকারের উপায় কি?

লিচুর এ্যানথ্রাকনোজ রোগটি লিচু গাছের কান্ড, পাতায় ও ফলে আক্রমণ করে এবং ক্ষত সৃষ্টি করে। এই রোগের লক্ষণ হলো ক্ষতের রং কালো ও বাদামী বর্ণের হয় এবং আক্রান্ত পাতা, কান্ড ও ফল শুকিয়ে নষ্ট হয়। লিচুর এই এ্যানথ্রাকনোজ রোগের প্রতিকারের উপায় হলো প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম উপসিন এম ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইস বা ১ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন বা ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে লিচু গাছে স্প্রে করা। এভাবে ২ বার ১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। তবে স্প্রে করার এক মাসের মধ্যে ফল খাওয়া যাবেনা। ফল সংগ্রহ শেষ করে গাছরে মরা ডালপালা, ফলরে বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ছাটাই করে ধ্বংস করে দিতে হবে। পরিষ্কার করার পর একটি ছত্রাক নাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। আর নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করতে হবে।

PGR+GA3 এর ব্যাবহারে উপকারিতা কি? 

Gibberellins Gibberellic Acid বা GA3 এবং PGR হল একটি উদ্ভিদ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক। এগুলো গাছের দ্রুত বৃদ্ধি, ফুল ও ফল ধারণ এবং ফলন বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এগুলো প্রধানত পাতা, ডালপালা, ফুল, বীজ বা ফলের মাধ্যমে উদ্ভিদে প্রবেশ করে ভারসাম্যপূর্ণভাবে গাছের কান্ড, পাতা এবং ফলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। এগুলো পুরুষ ও স্ত্রী ফুলের অনুপাত পরিবর্তন করে লিচু গাছের ফুলের ঝরা এবং ফলের ঝরে পড়া কম করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *