কম খরচে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি পাবেন দ্বিগুণ লাভ

বর্তমান এই গরমের দিনে প্রতিনিয়ত চাহিদা বৃদ্দি পাচ্ছে বাঙ্গি ফলের। আর কৃষকরাও এই ফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে। তাই চলুন জেনে আসি কম থরচে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি।

বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি

গরম ও অতিরিক্ত রোদের জন্য যে সমস্ত রোগ হয় বাঙ্গির রস খেলে এই অসুখগুলো প্রতিরোধ হয়। এছাড়াও অ্যাসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য, নারীদের হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করতে সাহায্য করে এই বাঙ্গি। তাই বাজারে এই বাঙ্গির চাহিদা প্রচুর। আর সে কারণে কম খরচে এই ফল চাষ করে অধিক লাববান হচ্ছে চাষিরা। তাই চলুন  জেনে নিই কম খরচে কিভাবে বাঙ্গি চাষ করে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যায়।

আরো্ও পড়তে পারেন – লাভজনক চাষাবাদ করতে জানুন নানা কৃষি যন্ত্রপাতি ও তার মূল্য সম্পর্কে

বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি

বাঙ্গি এক ধরনের শসা জাতীয় ও গ্রীষ্মকালীন ফল। এটি স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টি গুণে ভরপুর একটি অর্থকরী ফসল। বাঙ্গির অপর নাম হলো সাধারনত খরমুজ, কাঁকুড় ও ফুটি। বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বর্তমানে কৃষকরা এই বাঙ্গি চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। নিম্নে বর্ণিত পদ্ধতি সমূহ অনুসরণ করলে খুবই কম খরচে বাঙ্গি চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব।

আরোও পড়ুন – তরমুজ চাষে অধিক লাভ

জলবায়ু ও মাটি

শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু বাঙ্গি বা খরমুজ চাষের জন্য খুবইউপযোগী। আর এই বাঙ্গি বা বাকী চাষের জন্য উর্বর বেলে দোআঁশ এবং পলি মাটি বেশী উপযোগী।

বাঙ্গির জাত পরিচিতি

আমাদের দেশে প্রধানত দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়।

১) বেলে বাঙ্গিঃ

বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম হয়। এর খোসা খুব পাতলা হয় এবং এর শাঁস খেতে বালি বালি লাগে তেমন মিষ্টি হয় না। 

২) এঁটেল বাঙ্গিঃ

এই এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত এবং তুলনামূলকভাবে বেশি মিষ্টি হয়। এই বাঙ্গি লম্বাটে হলেও গোলাকার মিষ্টি কুমড়ার মতো আকারেরও রয়েছে। এ প্রজাতির বাঙ্গির অপর নাম হলো চীনা বাঙ্গি।

বীজ বপনের সময়

বাঙ্গি গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে এই ফলের বীজ বপন করতে হয়। বৃষ্টিতে এই ফলের চারার ক্ষতি হয় তাই বর্ষার সময় বাঙ্গি চাষ করা উচিত নয়। আবার জাত ভেদে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত বাঙ্গির বীজ বপন করা হয়।

বাঙ্গির চারা রোপণ

  • বাঙ্গির চারা রোপন করার জন্য জমিতে আড়াআড়ি চাষ করে মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। 
  • বীজ রপনের জন্য মাদা তৈরি করতে হবে। একটি থেকে আরেকটি মাদার দূরত্ব হবে প্রায় ৫ ফুট থেকে ৬.৬৭ ফুট এবং চওড়া ও গভীর হবে ১.৩৩ ফুট। 
  • প্রতি মাদায় ৪ থেকে ৫ টি করে বীজ বুনতে হবে।
  • চারা গজানোর পর ২ থেকে ৩ টি চারা রেখে দিয়ে বাকি চারা গুলো তুলে ফেলতে হবে।

তবে এই বাঙ্গি চারা রোপনের ক্ষেত্রে বেশি ঘন ঘন চারা রোপন করা উচিত নয়, যতটা সম্ভব পাতলা রাখতে হবে জমি। কারণ, এই বাঙ্গি এক ধরনের লতানো গাছ। আর এই গাছটি খুব কম সময় বাচে। তাই একবার ফল ধরার দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত জমি থেকে বাঙ্গি তোলা যাবে।

সার প্রয়োগ

সারের নাম সারের পরিমাণ (শতাংশ প্রতি)

সারের নামপরিমাণ (শতাংশ প্রতি)
গোবর সার৪০ কেজি
ইউরিয়া সার২৫০ গ্রাম
টিএসপি সার৩০০ গ্রাম
পটাশ সার২০০ গ্রাম

প্রয়োগ পদ্ধতি

  • জমি তৈরির সময় জমিতে অর্ধেক সার দিয়ে দিতে হবে।
  • বাকি অর্ধেক সার মাদায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • মাদায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে অর্ধেক জৈব সার আর পুরো টিএসপি সার মাদায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • তারপর গাছ একটু বড় হলে ইউরিয়া সার ও পটাশ সার মাদার আশেপাশের মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
  • সার দেওয়ার পর যদি মাটিতে রসের অভাব দেখা দেয় তাহলে জমিতে সেচ দিতে হবে।

সেচ প্রয়োগ

বাঙ্গি গাছ তাপ এবং ক্ষরা সহ্য করতে পারে। কিন্তু যদি ভালো ফলন পেতে হয় শুকনা মৌসুমেও জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে সেচ দেওয়ার পর খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে। কারণ, গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে গোড়া পচা রোগ দেখা দিতে পারে এবং গাছের গোড়া পড়ে যেতে পারে।

আরোও পড়ুন – লবণ চাষ পদ্ধতি

বিশেষ পরিচর্যা

ফসলের যাতে ভালো ফলন হয় সেজন্য আমাদের বাঙ্গি গাছের কিছু বিশেষ পরিচর্চা করতে হবে। সেগুলো হলোঃ-

  • ফল যাতে পচেঁ না যায় সেজন্য জমিতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
  • গাছে যদি অতিরিক্ত ফল ধরে সেক্ষেত্রে প্রতি গাছে  ৪/৫ টি ফল রেখে বাকী সব ফল ছাঁটাই করে দিতে হবে।
  • নিয়মিত গাছের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
  • সেচ ও পানি নিষ্কাশনের উপর নজর দিতে হবে।

রোগ ও পোকামাকড় দমন

হোয়াইট মোল্ড রোগের ক্ষেত্রে

বাঙ্গি গাছের সবচেয়ে বেশি হোয়াইট মোল্ড রোগ হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে বাঙ্গি পচে যায়। আর এই রোগের প্রতিকারের জন্য প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাক নাশক ব্যবহার করতে হবে। এই ছত্রাক নাশক জলে মিশিয়ে ১০ দিন পর্যন্ত পরপর তিন বার করে গাছে স্প্রে করতে হবে।

অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে

বাকী বা বাঙ্গি গাছ কাঠাল পোকা, লিপস পোকা, ব্লাক রট রোগ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর তার জন্য প্রয়োজনীয় ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।

ফলের মাছি পোকা

বাঙ্গি বা খরবুজা গাছে ফলের মাছি নামক এক ধরনের পোকা আক্রমণ করে থাকে। আর এই পোকা দমনের জন্য সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে।

ফল ফেটে যাওয়া ও তার প্রতিকার

উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার জন্য অনেক সময় বাঙ্গি ফলের শাঁস ও খোসার বৃদ্ধির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে না। আর সেজন্য এই ফলটি ফেটে যায়। আবার অনেক সময় জাতগত বৈশিষ্ট্যের কারণেও এই ফল ফেটে যায়। আর এর প্রতিকার পাওয়ার জন্য ফলের বৃদ্ধি পর্যায়ে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। তাছাড়া যেসব জাতের বাঙ্গি ফাটে না সেসব জাতের বাঙ্গি চাষ করা উত্তম।

বাঙ্গি ফসল সংগ্রহ

সাধারণত বাঙ্গির রং হলদে হলে বা ফল ফেটে যাওয়া শুরু করলে অথবা কোনো কোনো জাতের বোঁটা বিচ্ছিন্ন হলে বুঝতে হবে যে এই বাঙ্গি ফল তোলা যাবে।

ফলন

জাত অনুযায়ী শতাংশ প্রতি জমিতে ৮০-১০০ কেজি বাঙ্গি ফসলের ফলন হয়ে থাকে। আর সাধারণত প্রতিটি বাঙ্গি ফলের ওজন প্রায় ১ কেজি থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত হয়।

আরোও জানুন – শসা চাষ পদ্ধতি ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *