গরুর খাদ্য নেপিয়ার চাষ করুন সহজেই | নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি
নেপিয়ার ঘাস পশুখাদ্যের মধ্যে অন্যতম।এটি খুবই দ্রুত বর্ধনশীল, সহজে জন্মে, পুষ্টিকর, সহজপাচ্য ও খরা সহিষ্ণু।তাই আসুন জেনে নিই কীভাবে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করা হয়।
নেপিয়ার এক প্রকার স্থায়ী ঘাস, যা বাংলাদেশে চাষকৃত গরু বা পশুখাদ্যের মধ্যে অন্যতম। এটি দেখতে আখের মত লম্বা। এই ঘাস প্রায় ৬.৫ ফুট থেকে ১৩ ফুট বা তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। এই ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল, সহজে জন্মে, পুষ্টিকর, সহজপাচ্য ও খরা সহিষ্ণু। একবার এই নেপিয়ার ঘাস রোপন করলে ৩/৪ বছর পর্যন্ত এর ফলন পাওয়া যায়। আর এই ঘাস খুবই সহজে চাষ করা যায়।
আরোও পড়তে পারেন – কম খরচে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি পাবেন দ্বিগুণ লাভ
নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিগুণ
১ কেজি নেপিয়ার ঘাসে রয়েছে শুষ্ক পদার্থ ২৫০ গ্রাম, প্রোটিন ৮ থেকে ১২%, ফাইবার ২৬ থেকে ২৮%, টোটাল ডাইজেস্টবেল ৫৫ থেকে ৫৪% এবং বিপাকীয় শক্তি ২ মিলিগ্রাম। নেপিয়া ঘাসে থাকা এসব পুষ্টিগুণ গবাদিপশুর জন্য খুবই উপকারি।
নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার জন্য নেপিয়ার ঘাস খুব ভালো জন্মে। কচি অবস্থায় এই নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিমান বেশি থাকে। আর এই ঘাস চাষ করতে তেমন পরিশ্রম ও অর্থের প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ খুবই সহজে এই ঘাস চাষ করা যায়। তাই চলুন জেনে নিই নেপিয়ার ঘাস এর চাষ পদ্ধতি বা লাগানোর নিয়ম সম্পর্কে।
নেপিয়ার ঘাস চাষ বা এর বীজ লাগানোর সময়
বছরের যে কোনো সময় নেপিয়ার ঘাস চাষ করা যায়। তবে ফাল্গুন মাস থেকে চৈত্র মাস নেপিয়ার ঘাস চাষের জন্য ভালো সময়। এই সময় এই ঘাসের ফলন ভালো হয়।
নেপিয়ার ঘাস চাষের স্থান
পানি জমে এমন জায়গা ছাড়া বাংলাদেশের যে কোনো ধরনের মাটি বা স্থানে এই ঘাস চাষ করা যায়। এমনকি পাহাড়ি ঢাল ও হালকা লবণাক্ত জমিতেও এ ঘাস চাষ করা যায়। তবে প্রায় সব মাটিতেই এ ঘাস জন্মালেও উঁচু ও বেলে দোআঁশ মাটি নেপিয়ার ঘাস চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
নেপিয়ার ঘাসের বীজ বপন বা এর চারা রোপন পদ্ধতি
- প্রথমে জমিতে ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে।
- জমিতে ৩ থেকে ৪ টি চাষ দেওয়ার পর ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
- এরপর নেপিয়ার ঘাসের কাণ্ড বা মুকুল কেটে অথবা এই ঘাসের চারার শিকড়সহ এর মুখা মাটিতে পুঁতে দিতে হবে।
- সাধারণত হেক্টরপ্রতি ২৫ থেকে ২৬ হাজার নেপিয়ার ঘাসের চারা বা কাটিং বা মুখা প্রয়োজন হয়।
- এই ঘাসের চারা বা কাটিং রোপণের সময় এক সারি হতে অন্য সারির দূরত্ব হবে ১.৫ ফুট থেকে ২ফুট এবং এক চারা বা কাটিং হতে অন্য কাটিং এর দূরত্ব হবে ১ ফুট থেকে ১.৫ ফুট।
- রোপণের পর চারার গোড়া মাটি দিয়ে শক্ত করে চাপা দিতে হবে।
- মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে চারা লাগানোর পরপরই সেচ দিতে হবে।
নেপিয়ার ঘাসের জমিতে সার প্রয়োগের পরিমাণ
সারের নাম | পরিমাণ (একর প্রতি) |
গোবর সার | ২০০০ কেজি থেকে ২৫০০ কেজি |
ইউরিয়া | ৩৫ কেজি |
টিএসপি | ২ কেজি |
এমপি | ২০ কেজি |
নেপিয়ার ঘাসের জমিতে সার প্রয়োগের নিয়ম
জমি প্রস্তুতকালে গোবর সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এরপর সার ছিটানোর আগে দুই সারির মাঝখানের মাটি ভালোভাবে লাঙ্গল অথবা কোদাল দিয়ে আলগা করে নিতে হবে। তার চারা রোপনের সাথে সাথে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সার দিলে ভালো ফলন পাওয়া যাযবে। এছাড়াও প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ২৬ কেজি হারে ইউরিয়া সার প্রদান করলে পরবর্তী ফলন ভালো পাওয়া যাবে।
নেপিয়ার ঘানের জমিতে সেচ ব্যবস্থা
যদিও বর্ষা মৌসুমে সেচের প্রয়োজন নেই। তবে শুষ্ক মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর সেচ প্রদান করতে হবে।
ঘাস কাটা ও ফলন
সাধারণত নেপিয়ার ঘাসের চারা লাগানোর ৪০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ ঘাস পাওয়া যায়। এরপরে এই ঘাস কেটে গবাদি পশুকে খাওয়ানো যাবে। তবে গ্রীষ্মকালে ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর পর এবং শীতকালে ৫০ থেকে৬০ দিন পর পর এই নেপিয়ার ঘাস কাটা যায়।
ঘাস কাটার সময় গোড়ার দিকে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি রেখে কাটতে হবে। কারণ, নেপিয়ার ঘাসের ঐ রেখে দেওয়া অংশ থেকে আবার ঘাস জন্মাবে। প্রতি বছর ১ একর জমিতে ৬০,০০০ থেকে ৬৫,০০০ কেজি বা ৬০ থেকে ৬৫ মেট্রিক টন কাঁচা নেপিয়ার ঘাস পাওয়া যায়।
গবাদি পশুকে নেপিয়ার ঘাস খাওয়ানোর নিয়ম
ঘাস কাটার পর টুকরো টুকরো করে গবাদি পশু বা গরুকে এই নেপিয়ার ঘাস খাওয়ানো যায়। এছাড়াও ২/৩ ইঞ্চি করে কেটে খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। নেপিয়ার ঘাস শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে পুষ্টিমান কমে যায়। তবে সাইলেজ আকারে সংরক্ষণ করলে পুষ্টিমান ঠিক থাকে।
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com