মেহগনি গাছ চাষ পদ্ধতি | মেহগনি গাছ রোপন পদ্ধতি

দিন দিন মেহগাছের চাহিদা ও দাম বৃদ্দি পাচ্ছে। তাই কৃষকরাও অধিক লাভবান হওয়ার আমায় এই গাছ চাষ করছেন। তাই চলুন জেনে নিই মেহগনি গাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।

মেহগনি গাছ চাষ পদ্ধতি

মেহগনি গাছকে ইংরেজিতে Swietenia Macrophylla বা Mahogany Tree বলা হয় এবং মেহগনি গাছের বৈজ্ঞনিক নাম হলো Meliaceae. মেহগারি গাছ চাষ বা রোপনের জন্য উর্বর জমি এবং ভালো জল নিকাশি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। তাহলেই এই মেহগনি গাছ কমপক্ষে ১০ বছরের মধ্যে বড় হতে পারবে। আর এই মেহগনি গাছ  ২০ থেকে ২৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে এই মেহগনি গাছের প্রচুর চাষ করা হয়। কারণ, এই গাছের দাম অনেক। তাই এই গাছ চাষে কৃসকরা খুবই লাভবান হোন। তাই আসুন মেহগনি গাছ এর চাষ বা রোপন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি। 

আরোও পড়তে পারেন – বারি সরিষা-১৪ চাষ পদ্ধতি

মেহগনি গাছের বীজ সংগ্রহ

  • সাধারণত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে মেহগনি গাছের ফল পরিপক্ক হয়। আর গাছ থেকে এই মেহগনি ফল সংগ্রহ করে ৫-৬ দিন রোদে শুকাতে দিলে ফলের বহি আবরণ ফেটে প্রতিটি ফল থেকে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টি বীজ বের হয়।
  • তারপর ফলের বীজগুলো সংগ্রহ করে রোদে বাঁশের চাটাই, পাটি বা মাদুরের উপর পাতলা করে বিছিয়ে শুকতে দিতে হবে।
  • প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার বীজগুলো নেড়ে দিতে হবে এবং যত দিন পর্যন্ত বীজ ভালোভাবে  শুকাবে না তত দিন শুকাতে দিতে হবে।

মেহগনি গাছের বীজ সংরক্ষণ

  • মেহগনির বীজ রোদে শুকনোর পর সেই বীজগুলো ঢাকনা দেয়া কাঁচ বা টিনের পাত্রে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • আর মাঝের মধ্যে পাত্র থেকে বের করে বীজগুলো আবার রোদে শুকিয়ে নিলে বীজ ভালো থাকবে ও বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা কম থাকবে।

মেহগনি গাছ চাষের মাটি বা জমি তৈরী

সাধারণত মেহগনি গাছ বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মায়। পলিব্যাগে চারা তৈরী করা জন্য পলিব্যাগের ৩ ভাগের দুই বেলে দোআঁশ মাটি এবং ১ ভাগ জৈব সার নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পলিব্যাগে সে মাটি ভর্তি করতে হবে। আর এই জৈব সার গোবর, কম্পোষ্ট, সামান্য পরিমাণ রাসায়সিক সার ও ছাই এবং পচা পাতা সারের সমহারে মিশিয়ে তৈরী করতে হবে। আর এই মাটি বীজ বপনের ১ মাস পূর্বেই তেরী করতে হবে।

আরোও পড়ুন – জিরা চাষ পদ্ধতি

মেহগনি গাছের বীজ বপনের সময়

সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মেহগনি বীজ বপনের উপর্যুক্ত সময়।

মেহগনি গাছের বীজ বপন বা রোপন পদ্ধতি

  • দুটি বীজ নিয়ে পলিব্যাগে নার্সারীতে বেড করে বপন করতে হবে। 
  • বেডের সারিতে জায়গা অনুযায়ী ৮ থেকে ১০ সে.মি. দূরে দূরে বীজ বপন করতে হবে।
  • ৩ থেকে ৪ সে.মি. মাটির গভীরে বীজ ঢুকিয়ে দিতে হবে। আর বীজ বপন করার সময় একটু কাত করে লাগাতে হবে যেন বীজের পাখা উপরের দিকে থাকে। 
  • সাধারণত মেহগনি বীজ বপনের প্রায় ১ মাস পরে বীজের অঙ্কুরোদম হয়ে থাকে।
  • আর মেহগনি বীজ বপনের পর মাঝে মাঝে হাল্কা সেচ দিতে হবে।
  • মেহগনি গাছের চারা ছোট অবস্থায় চারাগুলিকে দুপুরে রোদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ছায়া বা ঢাকনা দিতে হবে। তবে সকাল ও বিকাল বেলায় এই ছায়া বা ঢাকনা সরিয়ে দিতে হবে এবং চারার বয়স ১ মাস হলে চারায় ছায়া দেয়া বন্ধ কের দেওয়া যেতে পারে।
  • চারার বেড সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে এবং মাঝের মধ্যে মাটি নিড়িয়ে দিতে হবে।

মেহগনি গাছের চারা উত্তোলন

  • চারার বয়স ১ মাস হলে বেড থেকে পলিব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে।
  • পলিব্যাগে বপনকৃত চারার বয়স ২০ দিন হলে পলিব্যাগে  ১টি চারা রেখে অপরটি তুলে ফেলতে হবে।

আরোও জানতে পারেন – জুম চাষ পদ্ধতি | জুম চাষ

মেহগনি গাছের চারা রোপন

  • মেহগনি গাছের চারা রোপনের আগে মাটি জৈব সার দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে তৈরী করে মাটি সমান্য গর্ত করতে হবে।
  • তারপর পলিব্যাগ থেকে চারা স্থানান্তর করতে হবে। 
  • আর চারা স্থানান্তরের সময় গাছের কান্ডে হাত না লাগিয়ে পাতার দিকে গাছে ধরে চারা গাছ সোজাভাবে মাটির গর্তে প্রবেশ করিয়ে মাটি দিয়ে ভালোভাবে চেপে দিতে হবে।
  • চারা রোপণের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন চারার মূল ও কান্ডের সংযোগ স্থল বা কলার যেন মাটির সমতলে থাকে।

রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় দমণ ব্যবস্থাপনা

পাতার দাগ ও গোড়া পচা রোগ মেহগনি গাছের প্রধান দুটি রোগ। আর পোকার মধ্যে ক্যকচাফারস ও শুককীট গাছের মূল খেয়ে ফেলে। তাই এই সমস্ত রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দিলে দ্রুত কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে যোগাযোগ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করুণ।

এভাবে মেহগনি গাছ চাষ বা রোপন করা হয়। তবে শুধু চারা রোপন করলেই হবে না নিয়মিত মেহগনি গাছের পরিচর্চা করতে হবে। তাহলে গাছ খুবই মোটা ও লম্বা হবে। 

আরোও জানুন – ছাদে লাগান ৬ টি বেগুন গাছ প্রতিদিন পাবেন বেগুন | বারোমাসি বেগুন চাষ পদ্ধতি

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

FAQs

মেহগনি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম কি?

মেহগনি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Meliaceae.

মেহগনি গাছ কত দিনে বড় হয়?

মেহগনি গাছ বড় হতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগে। আর ৯ থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে এই গাছে ফুল আসা শুরু করে।

মেহগনি গাছ লাগানোর নিয়ম কি?

মেহগনি গাছ লাগানোর নিয়ম হলো ভালো করে জমি বা মাটি প্রস্তুত করে গাছের ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে ভালোভাবে শুকিয়ে বীজ বপন করা এবং চারা গজানোর পর মাটিতে চারা রোপন করে সবসময় গাছের পরিচর্চা করা।

মেহগনি গাছে সার দেওয়ার নিয়ম কি?

সাধারণত প্রতিটি মেহগনি গাছে প্রতি বছর গোবর বা কম্পোস্ট সার ১৫ থেকে ২০ কেজি, ইউরিয়া সার ১৫০ গ্রাম, টিএসপি সার ১০০ গ্রাম ও এমওপি বা পটাশ সার ১০০ গ্রাম এবং ছাই ৫০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। তবে প্রতি বছর গাছের বৃদ্ধির ধরন অনুযায়ী ২৫ থেকে ৫০ গ্রাম হারে রাসায়নিক সার প্রয়োগের পরিমাণ বাড়াতে হয়। আর হালকা হালকা সেচ দিতে হয়।

মেহগনি গাছের ঔষধি গুণ কি?

মেহগনি গাছের ঔষধি গুণ হলো এটি হজমের সমস্যা এবং ব্যাথানাশক হিসেবে কাজ করে।

মেহগনি গাছের ফল কি খাওয়া যায়?

যদিও মেহগনি গাছের ফল খাওয়া যায় না। তবে ডায়াবেটিক রোগীরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য মেহগনি ফলের বিচির ভেতরের সাদা শাঁস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পান করলে তাদের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *