সঠিক নিয়মে মরিচ চাষ করে আয় করুন লক্ষ টাকা জানুন মরিচ চাষ পদ্ধতি

মরিচ ছাড়া রান্না অকল্পনীয়। তাই, মরিচের চাহিদা সারা বছরই থাকে। ফলে মরিচ বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই আসুন কিভাবে মরিচ চাষ করে লক্ষ টাক আয় করা সম্ভব জানি।

মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায়

মরিচ আমাদের  নিত্য প্রয়োজনীয় একটি ফসল। প্রতিদিনের রান্নায় মরিচ খুবই প্রয়োজন। তাই মরিচ চাষ সম্পর্কে আমাদের কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন। মরিচ গাছ লাগানোর জন্য আপনি বাজার থেকে মরিচের চারা কিনে আনতে পারেন অথবা নিজেই মরিচের চারা উৎপাদন করতে পারেন। বীজ থেকে চারা গজানো শুরু করলে চারা উঠিয়ে একটি টবে চারাটি লাগান। টবের আকার ছোট হলে একটি টবে একটি চারা লাগান। তবে বড় হলে দুটি লাগাতে পারেন। সব ধরনের মরিচের চাষ পদ্ধতি মোটামুটি একই। আসুন আমরা মরিচ চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

আরোও পড়ুন – জিনসেং চাষ পদ্ধতি

মরিচ চাষের জলবায়ু

মাঝারি থেকে উচ্চ তাপমাত্রা বা ২৪-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মরিচের ভালো ফলন হয়।

মরিচ চাষের জমি ও মাটি নির্বাচন

মরিচ চাষের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে এবং মরিচ চাষের জন্য উর্বর দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগী। তবে অতিরিক্ত অম্ল মাটি ব্যতীত প্রায় সব ধরনের মাটিতেই মরিচ জন্মে।

মরিচের জাত নির্বাচন

বাড়ি মরিচ-১ (লঙ্কা) ও স্থানীয় মরিচের জাত খুবই ভালো ফলন দেয়।

আরোও পড়তে পারেন – বর্তমান সময়ে সাড়া জাগানো ক্যাপসিকাম চাষের সঠিক পদ্ধতি

মরিচ বীজ রোপনের সময়

মরিচ ২ মেীসুমে রোপন করা যায়। বর্ষা মৌসুমের জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে এবং রবি মৌসুমের জন্য অক্টোবর-নভেম্বর মাসে মরিচের বীজ রোপন করতে হবে।

মরিচ বীজ রোপনের  দূরত্ব

৬০-৭৫ সেঃমিঃ (সারি থেকে সারি) এবং ৩০-৪৫ সেঃমিঃ (চারা থেকে চারা)।

মরিচ বীজের হার

হেক্টর প্রতি ৪০-৫০ গ্রাম মরিচের বীজ রোপন করা হয়।

আরোও পড়তে পারেন – বানিজ্যিকভাবে চাষ করতে জানুন লাল শাক চাষ পদ্ধতি

মরিচ চাষে সার প্রয়োগ (হেক্টর প্রতি)

গোবর১০ টন (জমি তৈরির সময় দিতে হবে)
ইউরিয়া২৫০ কেজি (চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৮০ কেজি এবং বাকি সার ৫০ ও ৭০ দিন পর পর ৮৫ কেজি করে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
টিএসপি২০০ কেজি (জমি তৈরির সময় দিতে হবে)
এমওপি ১৫০ কেজি (জমি তৈরির সময় ৫০ কেজি এবং চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৪০ কেজি এবং চারা রোপণের ৫০ ও ৭০ দিন পর পর ৩০ কেজি করে উপরি প্রয়োগ করতে হবে)।

মরিচ চাষে সেচ

শীতকালে ১০-১২ দিন অন্তর।

মরিচের রোগ সমূহ ও প্রতিকার

১. মরিচের ড্যাম্পিং অফ রোগ

রোগের লক্ষণ

চারা অবস্থায় মরিচ গাছে ড্যাম্পিং অফ রোগ দেখা যায় এ রোগের আক্রমণে চারার গোড়া পচে যায়।

প্রতিকার

ডায়াথেন এম-৪৫ (২ গ্রাম/কেজি) দিয়ে শোধন করা মরিচের বীজ বপন করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

আরোও পড়ুন – মাসকলাই চাষ পদ্ধতি

২. মরিচের এনথ্রাকনোজ/ মরিচ পঁচা রোগ

রোগের লক্ষণ

মরিচ গাছের নতুন ডগা ও ফুলের কুঁড়ি আক্রান্ত হয়ে নুয়ে পড়ে এবং পরে শুকিয়ে যায়।

প্রতিকার

  1. অটোস্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে মরিচ গাছে স্প্রে করতে হবে।
  2. কম্প্যানিয়ন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

৩. মরিচের থ্রিপস্ পোকা

পাতা কুঁকড়িয়ে যায়, এতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

দমন ব্যবস্থা

  • ম্যালাথিয়ন ৫০ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলি. হারে মিশিয়ে মরিচ গাছে স্প্রে করতে হবে অথবা 
  • ইমিটাফ  ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি. হারে মিশিয়ে মরিচ গাছে স্প্রে করতে হবে।

আরোও পড়ুন – মিষ্টি আলু চাষ পদ্ধতি

৪. মরিচের মাইটস্ পোকা

মাইটস্ মরিচের পাতার নিচে অনেক গুলো একসাথে মাকড়সার জালের মত স্তর তৈরি করে।

দমন ব্যবস্থা

  1. একামাইট ১০লিটার পানির সাথে ২০ মিঃলিঃ হারে মিশিয়ে মরিচ গাছে স্প্রে করতে হবে অথবা 
  2. সানমেকটিন্ ১০লিটার পানির সাথে ২০ মিঃলিঃ হারে মিশিয়ে মরিচ গাছে স্প্রে করতে হবে। 

৫. মরিচের এফিড/জাবপোকার ক্ষতির ধরণ

জাবপোকা কচি পাতা ও পাতা থেকে রস চুষে খায়।

দমন ব্যবস্থা

  1. ম্যালাথিয়ন ৫০ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলি. হারে মিশিয়ে মরিচ গাছে স্প্রে করতে হবে অথবা 
  2. টাফগর ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলি. হারে মিশিয়ে মরিচ গাছে স্প্রে করতে হবে। 

আরোও পড়তে পারেন – আলু চাষ পদ্ধতি

মরিচ ফসল সংগ্রহ

চারা রোপণের ৭৫-৯০ দিনের মধ্যে মরিচ তোলার উপযোগী হয়। ফল ধরার ৫০-৭০ দিনের মধ্যে মরিচ পাকতে শুরু করে। কাঁচা মরিচ তুলতে হলে তা যেন বেশ শক্ত ও পুরু হয়। মরিচের রং লাল হতে শুরু করলে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।

মরিচের ফলন

প্রতি হেক্টরে কাঁচামরিচ ১০-১১ টন এবং শুকনা মরিচ ২.৫-৩.০ টন উৎপন্ন হয়।

মরিচের উত্তম ফলনের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির পিজিআর অথবা নাইট্রোবেনজিন এই গোত্রীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে পারি। ফ্লোরা, প্রোটোজিম, পিজিআর। 

FAQs

মরিচ গাছ জন্মাতে কতদিন সময় লাগে?

বীজ থেকে মরিচ গাছ জন্মাতে ১ মাস বা তারও বেশি কম সময় লাগে।

মরিচ গাছের জন্য কিভাবে মাটি প্রস্তুত করতে হয়?

মরিচ গাছের জন্য মাটি প্রস্তুত করতে হয় গোবর সার, কম্পোস্ট এবং প্রত্যয়িত জৈব প্যালেটাইজড সার একসাথে মিশিয়ে।

কোনটি মরিচের উন্নত জাত?

মরিচের উন্নত জাত হলো বারি মরিচ -১, বারি মরিচ-২ এবং বারি মরিচ -৩ ইত্যাদি।

মরিচের বীজ লাগানোর আগে কি ভিজিয়ে রাখা উচিত?

প্রয়োজন না হলেও মরিচের বীজের দ্রুত অঙ্করোদগমের জন্য মরিচের বীজ রোপণের আগে মরিচের বীজ ভিজিয়ে রাখা উচিত।

মিরাকল গ্রো মরিচ গাছের জন্য ভালো?

হ্যাঁ মিরাকল গ্রো মরিচ গাছের জন্য ভালো। এটি মরিচ গাছে ৬ সপ্তাহ ব্যবহার করলে এটি মরিচ গাছে মাটির পাশাপাশি গাছের উপকারী জীবাণুকে অতিরিক্ত পুষ্টির জোগান দেয়।

ছোট ছোট লাল মরিচকে কি বলে?

ছোট ছোট লাল মরিচকে চেরি বেল মরিচ বলে।

মরিচ কত প্রকার?

প্রায় ৬০০ প্রজাতিরও বেশি মরিচের প্রজাতি রয়েছে।

মরিচের দাম কত?

মরিচের দাম ৬০-৮০ টাকা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *