কেঁচো সার তৈরী পদ্ধতি ও কেঁচো সারের উপকারিতা
আমাদরে দেশের কৃষকরা ফসল উৎপাদনে কেঁচো সার ব্যবহার করতে খুবই পছন্দ করে। কারণ এর অনেক উপকারিতা রয়েছে এবং কেঁচো সার তৈরী করাও সহজ। তাই জানুন কেঁচো সার সম্পর্কে।
মাটি উর্বরতা বৃদ্ধি করতে, মাটি আলগা করে মাটির ভিতর বায়ু চলাচল করতে এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে কেঁচো সার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এই কেঁচো সার বানানোর বা তৈরী করার পদ্ধতি হলো কেঁচো দিয়ে এই জৈব সার তৈরী করা।
এই ভার্মি কোম্পস্ট কেঁচো সারের উপকারিতা হলো ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জমিতে এই কেঁচো সার ব্যবহার করলে অন্যান্য রাসায়নিক সারের প্রয়োজনীয়তা কম পড়ে এবং ফসলও বিষ মুক্ত হয়। তাই প্রতিনিয়ত এই কেঁচো সারের চাহিদা বাড়ছে। আসুন ভার্মি কোম্পস্ট কেঁচো সার তৈরী পদ্ধতি এবং উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি।
আরোও পড়তে পারেন – কোন সার কি কাজ করে
কেঁচো সার তৈরী পদ্ধতি
কেঁচো সার বানানোর পদ্ধতি খুবই সহজ। কেঁচো সার তৈরীর মূল উপাদান হলো কেঁচো। এছাড়াও কেঁচো সার তৈরীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অন্যান্য উপকরণ সমূহ হলো মাটি বা ইটের তেরী নালা বা চেীবাচ্চা এবং ১ মাসের বাসী গোবর। আর তাই ভার্মি কোম্পস্ট সার তৈরী পূর্বে ২০০টি কেঁচো, কেঁচো সার বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ক্রয় বা সংগ্রহ করতে হবে অথবা মাটি খুড়ে মাটির গভীর থেকে কেঁচো সংগ্রহ করা যেতে পারে।
আর কেঁচো সার তৈরীর জন্য বৃহৎ জায়গার প্রয়োজন নেই বাড়িতে কেঁচো সার তৈরী করা যায়। তাই চলুন জেনে নিই কিভাবে কেঁচো সার তৈরী করা হয়।
- প্রথমে ইট দিয়ে একটি চৌবাচ্চা তৈরি করতে হবে যার উচ্চতা হবে ২ মিটার লম্বা, চওড়া বা প্রস্থ হবে ১ মিটার। আর চৌবাচ্চার উপর টিনের অথবা খড়ের চাল দিতে হবে।
- তারপর সেই গর্ত বা চেীবাচ্চার মধ্যে বাসী পচা গোবর দিয়ে ভর্তি করে দিতে হবে।
- অতঃপর চেীবাচ্চাটির মধ্যে থাকা গোবরের উপর ২০০ থেকে ৩০০ টি কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে।
- এরপর সেই কেঁচোগুলো গোবরের উপর মল ত্যাগ করবে। আর কেঁচোর এই মলকে কেঁচো সার বলে।
- কেঁচো সার তৈরীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কেচোর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এই ভার্ কোম্পস্ট সার উৎপাদনের সময় নির্ভর করে। কারণ, কেঁচোর সংখ্যা যত বেশী হবে কেঁচো সার তত দ্রুত তৈরি হবে।
- কেঁচো সার তৈরী পর এই কেঁচো সার অনেকটা চাপাতার গুড়ার মত দেখতে হবে।
- এরপর কেঁচো সার তৈরি হওয়ার পর সার তৈরীতে ব্যবহৃত সেই চৌবাচ্চা হতে সতর্কতার সাথে সেই ভার্মি কম্পোস্ট উত্তোলন করে চালুনি দিয়ে চালতে হবে। তবে সার চালুনীর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশু কেঁচোগুলো মারা না যায়।
- আর কেঁচো সার থেকে প্রাপ্ত কেঁচোগুলো আলাদা করে পুনরায় ভার্মি কম্পোস্ট কেঁচো সার তৈরির কাজে ব্যবহার করতে হবে।
- সবশেষে কেঁচো সার বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সাইজের প্যাকেট বা বস্তা ভর্তি করে বাজারে সরবরাহ করতে হবে এবং অতিরিক্ত কেঁচো সার সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে বাজারজাত করা যেতে পারে।
আরোও জানতে পারেন – কচুরিপানা দিয়ে কম্পোষ্ট সার তৈরীর পদ্ধতি
কেঁচো সারের ব্যবহার বা উপকারিতা
কেঁচো সারের উপকারিতা অনেক। এই কেঁচো সার মূলত ফসলের জমি উর্বর করতে এবং ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। তাই জানুন কেঁচো সার কোথায় ব্যবহার করা হয় বা এই কেঁচো সারের উপকারিতা সম্পর্কে।
- সকল প্রকারের ফসলের ক্ষেতে বা জমিতে এই ভার্মি কম্পোস্ট কেঁচো সার ব্যবহার করে ফসলের ফলন বাড়ানো যায়।
- এই কেঁচো সার ব্যবহারের ফলে ফসলের জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে এবং মাটিতে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়।
- এই কেঁচো সার এর উপকারিতা হলো জমির মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে জমিতে পানির সেচ কম দিলে হয়।
- এই কেঁচো সারের উপকারিতা হলো ফসলের জমির মাটির বিষাক্ততা দূরে যায়।
- জমিতে এই কেঁচো সার ব্যবহারের ফলে জমির মাটির অনুজৈবিক কার্যাবলী বাড়ে। যার ফলে মাটির পুষ্টি পরিশোধন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- এই কেঁচো সার জমিতে ব্যবহার করলে ফসলের জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের মাত্রা দুই ভাগের ১ ভাগ ব্যবহার করলেই চলে।
- এই ভার্মি কোম্পস্ট কেঁচো সারের অন্যতম উপকার হলো এই সার পুকুরে ব্যবহার করলে পুকুরের পানিতে ফাইটোপ্লাংকটনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যার ফলে পুকুরে মাছের উৎপাদন বাড়ে।
- জমিতে এই কেঁচো সার ব্যবহার করে ক্ষারীয় লবণাক্ত মাটিতেও ফসলের চাষাবাদ করা সম্ভব।
আরোও পড়ুন – সবচেয়ে লাভজনক ফল চাষ
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
কেঁচো সার নিকটবর্তী নার্সারী বা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাওয়া যায়।
কেঁচো সাধারণত মাটিতে জৈব উপাদান খায়। এছাড়াও ভুট্টা এবং সয়াবিনের মতো ফসল সহ বিভিন্ন উদ্ভিদের শিকড় থেকে তাজা এবং ক্ষয়প্রাপ্ত উপাদান খেয়ে তাদের জীবন ধারণ করে। কেঁচোর টানেল মাটিতে অক্সিজেন নিয়ে আসে এবং পানি নিষ্কাশন করে। আর কেঁচো গাছের শিকড়ের জন্য জায়গা তৈরি করে মাটি আলগা করে মাটিতে আলো-বাতাস আসতে সাহায্য করে।
কেঁচো গোবর খেয়ে কেঁচোর দেহ থেকে মল ও রাসায়নিক পদার্থ বের করে দেয় সেই গোবরের উপরে এবং সেই মল গোবরের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে যে সার তৈরী করা হয় তাকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট সার বলা হয়।
২০২৩ সালে কেজি প্রতি কেঁচো সারের দাম ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত এবং ১ মন কেঁচো সারের দাম হলো ৫০০ টাকা তেকে ৬০০ টাকা।