বিভিন্ন ফল ও ফসলের ফলন বৃদ্ধির উপায়

বর্তমান সময়ে জনসংখ্যা যে পরিমাণে বাড়ছে সে পরিমাণে বাড়ছে প্রায় সব ফসলের চাহিদা। কিন্তু তার সাথে বাড়ছে না উৎপাদন। তাই ফসলের ফলন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানুন।

ফলন বৃদ্ধির উপায়

ফলন বৃদ্ধি করার পূর্বশর্ত বা উপায় হলো ফসল অনৃযায়ী মাটি নির্বাচন করে ফসল চাষে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার ও সেচ প্রয়োগ করা এবং নিয়মিত ফসলের পরিচর্চা করা। তবে ফসলের ফলন বেশি করার জন্য কিছু বিশেষ সার ব্যবহার করতে হবে। সেগুলো হলোঃ পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, হরমোন, জিব্রেলিক এসিড (GA3) ইত্যাদি।

তাই, জমিতে ফসল চাষের ক্ষেত্রে ফলন বৃদ্ধির জন্য পিজিআর সার ২ মিলি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে ১ বার স্প্রে করতে হবে অথবা নাইট্রোবেনজিন গুপের হরমোন স্প্রে করলেও ফসলের ফলন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

তাছাড়াও জিব্রেলিক এসিড (GA3) ও লিবারেণ জিংক ব্যবহার করেও ওবশি ফলন পাওয়া সম্ভব। তাই নিম্নে কিছু ফসলের ফলন বৃদ্ধির উপায় দেওয়া হলো।

আরোও পড়তে পারেন – মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায়

মিষ্টি কুমড়ার ফলন বৃদ্ধির উপায়

মিষ্টি কুমড়ার ফলন বৃদ্ধির উপায় হলো মিষ্টি কুমড়া  উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর আবহাওয়ায় চাষ করা। এছাড়াও সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁ-আশ বা এঁটেল দোঁ-আশ মাটিতে মিষ্টিকুমরা চাষ করলে ফলন দ্বিগুন বাড়ে।

তবে চরাঞ্চলের পলি মাটিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করলে ফলন ভালো হয়। এছাড়াও পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি মিষ্টিকুমড়া চাষের সময় ব্যবহার করলে মিষ্টিকুমড়ার ফলন বৃদ্ধি পায়। 

পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায়

পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায় হলো উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ুর আবহাওয়া এবং বন্যামুক্ত অথবা পানি জমে না এমন জমিতে পটল চাষ করা। এছাড়াও বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটিতে পটলের ভালো ফলন হয়।

পটল অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস অথবা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে চাষ করলে পটলের অধিক ফলন পাওয়া যায়। পাশাপাশি পটল চাষে পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি বিশেষ সার ব্যবহার করলে পটলের ফলন বৃদ্ধি পায়।

কলার ফলন বৃদ্ধির উপায়

কলার ফলন বৃদ্ধির উপায় হলোপর্যাপ্ত রোদযুক্ত এবং উর্ববর দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে কলা চাষ করা। ১৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা গাছের বৃদ্ধি এবং উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

এছাড়াও কলার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কলা চাষের জমি পর্যাপ্ত আলো বাতাসপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি কলা চাষে  পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি বিশেষ সার ব্যবহার করলে কলার ফলন বৃদ্ধি পায়।

আরোও পড়ুন – চারা গাছ রোপন পদ্ধতি

নারিকেল গাছের ফলন বৃদ্ধির উপায়

নারিকেল গাছের ফলন বৃদ্ধির উপায় হলো নারিকেল গাছের গোড়াযর মাটিতে পটাশিয়াম ও নাইট্রোজেন জাতীয় সার ব্যবহার করা। পাশাপাশি নারিকেলের ফলন বাড়াতে পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি বিশেষ সার ব্যবহার করা।

এছাড়াও নারিকেলের ফলন বাড়াতে নারিকেল গাছের গোড়ার চারদিকে ১.৮ মিটার দূরে বৃত্তাকার গর্ত করে সেখানে ইউরিয়া ৪ কেজি, এমওপি ৬ কেজি, টিএসপি ১ কেজি এবং সামান্য লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

আলুর ফলন বৃদ্ধির উপায়

আলুর ফলন বৃদ্ধির উপায় হলো আলুর চাষের জমিতে পর্যাপ্ত সার ও সেচের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও আলুর ফলন বৃদ্ধি করতে পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি বিশেষ সার ব্যবহার করা উচিৎ।

শিমের ফলন বৃদ্ধির উপায়

শিমের ফলন বৃদ্ধির উপায় হলো প্রতি মাদায় ২৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি সার শিম গাছের গোড়ার চারদিকে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দেওয়া। এছাড়াও পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি বিশেষ সার ব্যবহার করলে শিমের ফলন বৃদ্ধি পায়।

আরোওও জানতে পারেন – পাহাড়ে গাছে গাছে স্বর্ণ, এবার লিচুর বাম্পার ফলন

বোরো ধানের ফলন বৃদ্ধির উপায়

বোরো ধানের ফলন বৃদ্ধির উপায় হলো লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে ফেলা এবং তারপর ধানের নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা। এরপর ধানের উৎপাদন বাড়াতে সুষমভাবে ধানের জমিতে ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ সার,  পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি ব্যবহার করা এবং ধানের জাত অনুসারে সঠিক দূরত্বে ধানের চারা রোপণ করা।

চাল কুমড়ার ফলন বৃদ্ধির উপায়

চাল কুমড়ার ফলন বৃদ্ধির উপায় হলো জমিতে চালকুমড়া চাষের পূর্বে দো-আঁশ মাটি নির্বাচন করা। তবে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার সাহয্যে কাদা মাটি ছাড়া যে কোনো মাটিতে চালকুমড়া চাষ করলো চালকুমড়ার ভালো ফলন পাওয়া যায়।

এছাড়াও ছাড়াও পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি বিশেষ সার ব্যবহার করলে চাল কুমড়ার ফলন বৃদ্ধি পায়।

আরোও জানুন – রজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতি

শসার ফলন বৃদ্ধির উপায়

শসার ফলন বৃদ্ধির উপায় হলো নিয়ম মতো শষা চষে জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা। আর তাই শষার উৎপাদন বাড়াতে প্রতি মাদায় পচা গোবর, ছাই, পচা কচুরিপানা, জৈব সার ইত্যাদি ভালোভাবে মিশিয়ে তার সাথে ১০০ গ্রাম টিএসপি সার, ৬০-৭০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে শষার জমিতে ভালোমতো মিশিয়ে দেওয়া।

এরপর ১৫/২০ দিন অন্তর অন্তর প্রতি মাদায় ৫০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা। পাশাপাশি পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি বিশেষ সার ব্যবহার করলে শসার ফলন বৃদ্ধি পায়।

লাউ এর ফলন বৃদ্ধির উপায়

লাউ এর ফলন বৃদ্ধির উপায় হলো লাউ গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি ও সার দেওয়া। আর লাউ এর উৎপাদন বাড়াতে গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমপি সার লাউ গাছের গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দূরে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি বিশেষ সার ব্যবহার করলে লাউ গাছ এর ফলন বৃদ্ধি পায়।

লেবুর ফলন বৃদ্ধির উপায়

লেবুর ফলন বৃদ্ধির জন্য আগে জানতে হবে কিভাবে লেবু গাছে সার প্রয়োগ করতে হয়। কারণ, লেবু গাছে সঠিকভাবে সার দিলে লেবু গাছের ফলন দ্রুত বাড়ে ও গাছও লম্বা হয়। এছাড়া নিঢমিত লেবু গাছের যত্ন ও পরিচর্চা করলে লেবুর ফলন বৃদ্ধি পায়।

গমের ফলন বৃদ্ধি করার উপায়

গমের ফলন বৃদ্ধি করার উপায় হলো গম চাষের জমিতে নালা অথবা ফিতা পাইপের মাধ্যমে সেচের পানি ছিটিয়ে দেওয়া। গম চাষে সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনা করলে গমের ফলন ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

তাই গম চাষের প্রতি বিঘা জমিতে ইউরিয়া সার ২৪-২৫ কেজি, টিএসপি ১৮-১৯ কেজি, এমওপি সার ৫-৬ কেজি, জিপসাম ১৪-১৫ কেজি, ১কেজি৩০০ গ্রাম বোরাক্স, গোবর বা কম্পোস্ট সার ১০০০ থেকে ১২০০ কেজি প্রয়োগ করলে গমের ফলন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি পিজিআর সার, নাইট্রোবেনজিন সার, ফ্লোরা সার ইত্যাদি বিশেষ সার ব্যবহার করলে গমের ফলন বৃদ্ধি পায়।

আরোও পড়ুন – সবচেয়ে লাভজনক ফল চাষ

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

FAQs

ধানের কুশি বৃদ্ধির উপায় কি?

ধানের কুশি বৃদ্ধির উপায় হলো ধানের জমিতে যদি জিপসাম দেওয়া হয় তাহলে থিওভিট না দিয়ে জমিতে ধান রোপনের ১৫ দিন পর ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিতে হবে। এভাবে আবার ৩৫ এবং ৫০ দিন পর ছিটিয়ে দিতে হবে। আর ধানের ৫৫ দিন বয়স থেকে ৭০ দিন বয়স পর্যন্ত ধানের জমিতে পানি জমিয়ে রাখতে হবে।

গাছের বৃদ্ধির জন্য কোন সার প্রয়োজন?

গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রায় সব সারই প্রয়োজন তবে ইউরিয়া, নাইট্রোজেন ও গোবর এবং জৈব সার খুবই প্রয়োজন।

গাছে সার দেওয়ার নিয়ম কি?

গাছে সার দেওয়ার নিয়ম হলো প্রতি মাসে ৩বার নির্দিষ্ট পরিমাণে সার প্রয়োগ করা। আর গাছের সার দেওয়া নিয়ম হলো ১ লিটার পানিতে ১/২ চা চামচ ইউরিয়া বা সাদা সার, এমওপি/পটাশ বা লাল সার ও টিএসপি বা মোটা সার এবং ১ চিমটি করে সালফার অথবা বোরণ নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে গাছে প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষত্রে পানিতে সার গলে বা মিশে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

গাছ দ্রুত বৃদ্ধির উপায় কি? 

গাছ দ্রুত লম্বা বা বৃদ্ধির উপায় হলো গাছে নিয়মিত সার, সেচ দেওয়া এবং গাছের পরিচর্চা করা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *