আতা ফল চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই
আতা একটি মেীশুমি ফল। আর আতার মেীশুমে আতা ফলের ভালো চাহিদা ও দাম থাকে বলে চাষীরা আতা চাষ করে লাভবান হন। তাই আসুন আতা চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই সম্পর্কে জানি।
আতা ফলের ইংরেজি নাম হলো Custard apple এবং আতাা ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Annona squamosa. আতা ফলের অপর নাম হলো শরীফ ফল, যা আমদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। এই পুষ্টি সমৃদ্ধ আতা ফলের উপকারিতা হলো এটি আমাদের শরীরকে রোগ সৃষ্টিকারী কণা থেকে রক্ষা করে এবং শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আর তাই বাজারে এই আতা ফলের ভালো চাহিদা রয়েছে এবং কৃষকরাও এই আতা ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এই আতা ফল বানিজ্যিকভাবে অথবা টবেও চাষ করা যায়। তাই চলুন আতা ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি।
আরোও পড়তে পারেন – ফলন বৃদ্ধির উপায়
আতা ফল চাষের জন্য মাটি, জমি ও জলবায়ু নির্বাচন
আতা ফল চাষের জন্য খোলা-মেলা এবং ছায়াযুক্ত উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। আর আতা ফল চাষের উপর্যুক্ত মাটি হলো বেলে দোআঁশ মাটি। তবে অম্ল স্বাদযুক্ত পাহাড়ী মাটিতেও এই আতা গাছ ভাল জন্মায়। শরিফা গাছ বা আতা গাছ শুষ্ক ও গরম আবহাওয়া বা জলবায়ুতে ভালো জন্মায়।
আতা ফল গাছের চারা তৈরি
- আতা ফলের বীজ থেকে সাধারণত শরিফা গাছ বা আত গাছের চারা তৈরি করা হয়। আতার বীজ রোপন করার দুই-তিন বছর বয়সের মধ্যে আতা ফল গাছে আতা ফলের ফলন শুরু হয়।
- আতার পুষ্ট ও নিরোগ বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে হয়।
- আতার বীজ থেকে আতা গাছের চারা অংকুরিত হতে প্রায় দুই-তিন মাস সময় লাগে।
- আতার বীজের আবরণ বেশ শক্ত হওয়ায় আতার বীজকে পানিতে ভিজিয়ে বপন করলে আতার চারা গাছ তাড়াতাড়ি গজায়।
- বীজতলায় অথবা পলিথিনের ব্যাগে আতা গাছের চারা উৎপাদন করা যেতে পারে।
আত ফল গাছের চারা রোপনের সময়
সাধারণত ৪ থেকে ৫ মাস বয়সী আতা গাছের সুস্থ চারা বা কলম মূল চাষের জমিতে রোপন করতে হয়। আর আত ফল গাছের চারা রোপনের উপর্যুক্ত সময় হলো জুন-জুলাই মাস।
আতা ফল গাছ চাষ বা রোপন পদ্ধতি
- আতা ফল গাছ চাষের পূর্বে চাষের জমি ভালোভাবে পরিষ্কার করে জমিতে মই দিয়ে চাষ দিয়ে জমি তৈরী করতে হবে এবং চাষের জমির মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে।
- আতা ফল গাছের চারা সারি সারি করে রোপন করতে হবে। আর আতা গাছের এই সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৪ মিটার।
- তারপর প্রতিটি আতা গাছের চারার জন্য ৬০×৬০×৬০ সে.মি. গর্ত করতে হবে।
- এরপর প্রতিটি গর্তের জন্য ২০ কেজি পঁচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি সার, ২৫০ গ্রাম এমওপি সার নিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করে প্রতিটি গর্ত ভরাট করতে হবে এবং ১৫ থেকে ২০ দিন রেখে দিতে হবে।
- ১৫-২০ দিন পর আতা গাছের চারা নিয়ে প্রতিটি গর্তের ঠিক মাঝখানে খাড়াভাবে আতার চারা রোপণ করতে হবে।
- আতা গাছের চার রোপণের পর পরই প্রতিটি গর্তে পানি দিতে হবে।
আরোও পড়ুন – সবচেয়ে লাভজনক ফল চাষ
আতা গাছ চাষে এবং আতা ফলের ফলন বৃদ্ধিতে সার পয়োগ
প্রতি বছর ১ থেকে ২ বছর বয়সী আতা গাছের জন্য ফেব্রুয়ারী এবং অক্টোবর মাসে দুই কিস্তিতে মোট ১৫-২০ কেজি গোবর সার, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ২০০ গ্রাম টিএসপি সার, ২০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে এবং সার দেয়ার সাথে সাথে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। আর আতা গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিবছর সার প্রয়োগের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এত আতার ফলন বাড়বে।
আতা গাছের রোগ ও প্রতিকার
আতা ফল গাছে মিলিবাগ পোকার আক্রমণ ও প্রতিকার
আত ফল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন দেখা যায় না। তবে মিলিবাগ নামের একধরণের পোকা এই আতা ফল এর উপর আক্রমণ করে। আর এই পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার প্রতিকার হলো আতা ফল গাছে, কীটনাশক ব্যবহার করা অথবা হাত দিয়ে পোকা ধ্বংস করে ফল পরিস্কার করে আতা ফল রক্ষা করা।
আত ফল গাছে এনথ্কাস রোগের আক্রমণ এবং প্রতিকার
আতা ফল এনথ্কাস রোগে আক্রন্ত হলে আতা ফল সম্পূর্ণ কালো হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আর এই আতার এনথ্কাস রোগের প্রতিকার হলো এনথ্কাস রোগে আক্রান্ত আতা ফল গাছ থেকে পেড়ে ফেলা এবং আতা গাছের যে সকল ডাল মরে গেছে সে সকল আতার ডাল কেটে ফেলা।
আতা ফল সংগ্রহ
সাধারণত আতা ফুল ফোটার পর থেকে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে আতা ফল পুষ্ট হয়। আর এই পুষ্ট আতা ফল হালকা সবুজ অথবা হলুদাভ সবুজ হয়ে থাকে। আতা গাছ থেকে পরিপক্ক ফল সংগ্রহ করার ২ থেকে ১ দিনের মধ্যে আতা ফল পাকতে শুরু করে এবং এই আতা ফল পাকলে তাড়াতাড়ি নরম হয়ে যায়। একটি আতা গাছে প্রায় ১০০টি আতা ফলের ফলন পাওয়া যায়।
আরোও জানুন – টবে সারা বছর লেবু চাষ পদ্ধতি
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
২০২৩ সালে ১ কেজি আতা ফলের দাম হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে আতা গাছে ফুল ধরে এবং ফুল ধরার ৪/৫ মাসের মধ্যে অর্থাৎ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আতা ফল পাকে এবং বাজারে আতা পাওওয়া যায়।
আতাযতে ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স বেশি পরিমাণে আছে।