করমচা চাষ পদ্ধতি

করমচা একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। বর্ষাকালে এই করমচার উৎপাদন, চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা এই করমচা চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন । তাই, আসুন করমচা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।

করমচা চাষ পদ্ধতি

করমচা এক ধরণের ছোট ও টক জাতীয় ফল। করমচা ফলের ইংরেজি হলো Bengal currant বা Christ’s thorn এবং করমচার বৈজ্ঞানিক নাম হলো Carissa Carandas (ক্যারিসা ক্যারোন্ডাস)। করমচা গাছ প্রচুর ঝোপ যুক্ত এবং এই করমচা ফলের গাছে বড় বড় কাটা থাকে।

করমচা ফুল এর রং সাদা ও হালকা রঙের হয় এবং আকারে বড় ও মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত। আর এই করমচা ফলটি বর্ষাকালীন ফল হওয়ায় বর্সাকালে এই করমচা ফলের প্রচুর চাহিদা ও দাম থাকে। তাই কৃষকরাও এই মেীশুমি ফল করমচা চাষ করে অধিক লাভবান হন।  সেজন্য চলুন করমচা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।

আরোও পড়তে পারেন – থানকুনি চাষ পদ্ধতি

করমচা চাষের মাটি ও জলবায়ু নির্বাচন

করমচা গাছ চাষের জন্য শুষ্ক পরিবেশ, গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং ছায়াযুক্ত স্থান খুবই উপযোগী। করমচা গাছ চাষের জন্য উপযোগী মাটি হলো বেলে দোআঁশ মাটি। আর করমচা ফল চাষের মাটি কিছুটা ক্ষারীয় হলে করমচা গাছ চাষ ও করমচা ফলের উৎপাদন ভালো হয়।

করমচা চাষের উপযোগী সময়

করমচা চাষের উপযোগী সময় হলো বর্ষাকাল। কারণ, এই সময় করমচার ফলন বৃদ্ধি পায়। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে করমচা গাছে করমচার ফুল আসে এবং এপ্রিল মাস থেকে মে মাসের মধ্যে গাছে করমচার ফল আসে। তবে সারাবছরই করমচা চাষ করা যায়।

আরোও পড়ুন – কম খরচে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি পাবেন দ্বিগুণ লাভ

করমচা চাষের পূর্বে করমচার চারা সংগ্রহ

সাধারণত করমচার চার নার্সারীতে পাওয়া যায়। আর সেখান তেকে করমচার চারা সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়াও চাইলে করমচা চাষের জমিতে বীজতলা তৈরী করে করমচার বীজ সংগ্রহ করে সেই বীজতলায় রোপন করে করমচার চারা তৈরী করা যায়।

করমচা চাষের জমি নির্বাচন ও জমি তৈরী

প্রায় সব জায়গায় করমচা ফলের চাষ করা গেলেও করমচা চাষের জমি উঁচু ও সমতল হলে করমচা ফলের উৎপাদন ভালো হয়। করমচা চাষের জমিতে জল নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে নিচু জমিতে করমচা চাষ করলে খেয়াল রাখতে হবে যেন জমিতে জল জমে না থাকে।

আরোও জানতে পারেন – লেবু চাষ পদ্ধতি

করমচা চাষের জমি নির্বাচনের পর সেই জমিটিতে ভালোভাবে লাঙ্গল দিয়ে চাষ দিয়ে জমির মাটি  ঝুরঝুরে করে জমি তৈরী করতে হবে এবং জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। যেহুতু বর্ষাকালে করমচার ফলন হয় সেহুতু করমচা চাষের জমি বর্ষাকালের পূর্বে করতে হবে।

করমচা চাষে জমিতে সার প্রয়োগ

করমচা চাষে তেমন কোনো সারের প্রয়োজন পড়ে না। শুধুমাত্র করমচা চাষের পূর্বে সাধারনত বর্ষাকালের আগেই জমি তৈরী করতে হয়। আর করমচা চাষের সেই জমি তৈরীর সময় ১০ কেজি কম্পোস্ট সার এবং ২৫ গ্রাম সুফলা ভালোভাবে মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হয়।

আরোও জানুন – জিনসেং চাষ পদ্ধতি

করমচা চাষ বা রোপন পদ্ধতি

  • করমচার চারা জমিতে রোপন করার পূর্বে জমিতে ৩০ সেমি গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হবে।
  • করমচার চারাগাছ জমিতে রোপন করার ১৫-২০ দিন পূর্বে জমিতে গর্ত প্রস্তুত করতে হবে।
  • করমচা চারার গর্ত তৈরি করার পর গর্তে প্রয়োজনীয় সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • এরপর করমচা চাষের সেই গর্তে করমচার চারা সোজা করে রোপন করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে করমচারর চারাটি যেন গর্তের ঠিক মধ্যখানে বসে।
  • করমচার চারা গর্তে রোপন করার পর করমচা চারার গোড়ায় ভালোভাবে মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে।
  • এছাড়াও করমচার গাছ যেন হেলে না পড়ে সেজন্য করমচার চারার সাথে একটি ছোট খুটি পুতে দিতে হবে এবং করমচা গাছের পরিচর্চা নিতে হবে।

আরোও পড়তে পারেন – রাবার চাষ পদ্ধতি

করমচা চাষে জমিতে সেচ প্রদান

করমচা চাষের সময় করমচা ফলের উৎপাদন ভালো হওয়ার জন্য মাঝেমাঝে করমচা চাষের জমিতে জমিতে জল সেচ দিতে হবে। করমচার চারা ছোট থাকা অবস্থায় জমিতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। এরপর জমির অবস্থা বুঝে করমচা জমিতে সেচ দিতে হবে। যেমনঃ শুকনা মৌসুমে ১৫ দিন পর পর করমচা চাষের জমিতে সেচ দিলে করমচার ফলন বৃদ্ধি পায়।

করমচা ফল সংগ্রহ

করমচার বীজ থেকে করমচার গাছ চাষ করলে সেই গাছ বড় হতে এবং সেই করমচা গাছে ফল আসতে প্রায় ৩-৪ বছর সময় লাগে। একটি পূর্ণ বয়স্ক করমচা গাছ থেকে প্রায় ৪০-৫০ কেজি করমচা ফল পাওয়া যায়।

আরোও জানুন – বেগুন চাষ পদ্ধতি

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

FAQs

করমচা ফল খাওয়ার উপকারিতা কি?


করমচার উপকারিতা হলো করমচাতে উপস্থিত থাকা ভিটামিন বি আমাদের শরীরের চুলকানিসহ ত্বকের নানা সমস্যা প্রতিরোধ করে। নিয়মিত করমচা খেলে এটি আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।এছাড়াও করমচা খাওয়ার উপকরিতা হলো এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ কমায় এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য ও হজম দূরীভূত করে এবং ক্যান্সার পতিরোধ করে।

করমচা ফলের দাম কত?


প্রতি ১০০ গ্রাম করমচা ফলের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অর্থাৎ ১ কেজি করমচা ফলের দাম হলো ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।

করমচার পুষ্টিগুণ কি কি?

করমচা প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। পুষ্টিগুণাগুণ সমৃদ্ধ করমচা ফলের মধ্যে রয়েছে জলীয় রস, প্রোটিন, খনিজ, স্নেহ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, ভিটামিন প্রভৃতি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *