বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ
বাঙ্গালীকে মাছে ভাতে বাঙ্গালী বলা হয়। তাই আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত মাছের চাহিদা বাড়ছে। আর বর্তমানে খুব সহজে বাড়ির ছাদে বা আঙ্গিনায় মাছ চাষ করা যাচ্ছে। তাই চলুন বাড়ির ছাদে মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি।
বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে একটি অভিনব বিষয়। কারণ, আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। তবে বর্তমানে বায়োফ্লক পদ্ধতি ব্যবহার করে কম জায়গায় বা ঘরের ছাদে বা বাড়ির আঙ্গিনায় টাঙ্কিতে মাছ চাষ করে কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। কারণ, এতে জায়গাও বেশি লাগে না।
এই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে খরচও কম পড়ে এবং উৎপাদনও দ্বিগুন হয়। আর এই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ (যেমন: তেলাপিয়া, রুই, শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা ও চিংড়ি প্রভুতি) চাষ করা যায় এবং মাছও দ্রুত বড় হয়। তাই চলুন বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি।
আরোও পড়তে পারেন – পাবদা মাছ চাষ পদ্ধতি
মাছ চাষের বায়োফ্লক পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা
বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষ একটি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি। এই বায়োফ্লক পদ্ধতি মাছ চাষের পানিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানগুলোকে ক্রমাগতভাবে পুনরাবর্তনের মাধ্যমে পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। প্রোটিন সমৃদ্ধ জৈব পদার্থ এবং বিভিন্ন অণুজীবের সমষ্টিকে বায়োফ্লক বলে। এই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে এত থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যামোনিয়া থেকে একক প্রোটিন তৈরি করে থাকে। যা বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চাষকৃত মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
আরোও জানুন – লাভজনক উপায়ে মাছ চাষ পদ্ধতি
তাই এই বায়োফ্লক পদ্ধতি মাছ চাষের জন্য যেমন ভালো পরিবেশ তৈরি করে তেমনি এই পদ্ধতিতে মাছের খাদ্যের খরচও কমে পড়ে। ফলে এই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের মজুদ ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এই বায়োফ্লক প্রযুক্তি মাছ চাষের পানিতে বিদ্যমান কার্বন ও নাইট্রোজেনের সমান অবস্থা নিশ্চিত করে। যার ফলে মাছ চাষের পানির গুনাগুণ বৃদ্ধি পায় এবং পানিতে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করে। আর এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে মাছের রোগ কম হয় এবং মাছের সাইজ তুলনামূলক বড় হয়।
আরোও পড়ুন – বিপন্ন প্রজাতির মহাশোল মাছ-এর প্রজনন ও চাষ ব্যবস্থাপনা
বায়োফ্লক পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ চাষ
- বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য প্রথমে কয়েকটি ট্যাংক, অক্সিজেন সরবারহের পাম্প সংগ্রহ করতে হবে। যদি মাছ চাসী দক্ষ হয় সেক্ষেত্রে ৪০-৫০ টি ট্যাঙ্কে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন। যদি এই পদ্ধতিতে মাছ ছাদে চাষ করা হয় সেক্ষেত্রে ছাদ ট্যাঙ্কের মতো বানাতে হবে অথবা ছাদে ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করতে হবে।
- এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার জন্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করতে হবে।
- ট্যাঙ্ক সংগ্রহ করার পর প্ট্যাঙ্কগুলো পানি দিয়ে ভর্তি করতে হবে।
- এরপর ১ সপ্তাহ ট্যাঙ্কের পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। আর এই অক্সিজেনের সরবরাহ সবসময় রাখতে হবে।
- ১ সপ্তাহ পর দেখা যাবে ট্যাঙ্কের পানিতে আয়রন বা অন্য ভারী পদার্থ জমা হয়েছে।
- এরপর ট্যাঙ্কের পানি ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী বা ট্যাঙ্কের প্রতি ১ হাজার লিটার পানিতে ১ কেজি হারে আয়োডিনমুক্ত লবণ প্রয়োগ করতে হবে।
- এরপর ট্যাঙ্কের পানিতে টিডিএস ১২০০ এর বেশি হলে ট্যাঙ্কের প্রতি ১ হাজার লিটার পানিতে ১০ গ্রাম হরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
- তারপর ট্যাঙ্কের পানিতে কার্বনের উৎস হিসেবে প্রতি ১ হাজার লিটার পানিতে ৫০-১০০ গ্রাম চিটাগুড় দিতে হবে।
- এভাবে ট্যাঙ্কের পানি ২ সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।
- ২ সপ্তাহ পর দেখা যাবে ট্যাঙ্কের সেই পানিতে বায়োফ্লক (ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, শৈবাল, ডায়াটম) তৈরি হয়েছে।
- তারপর পানিতে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার বায়োফ্লক হয়েছে কিনা তা পরিমাপ করতে হবে।
- যদি ট্যাঙ্কের পানিতে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার বায়োফ্লক তৈরী হয় তারপর ট্যাঙ্কের পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছাড়া যাবে।
- আর বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ কালীন সময়ে ট্যাঙ্কের পানিতে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ও পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করতে হবে এবং ট্যাঙ্কের ভিতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বদা বিদ্যুৎ ও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
আরোও জানতে পারেন – চিতল মাছের রেনু উৎপাদন ও চাষ পদ্ধতি
সুতরাং এই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ পুকুরে মাছ চাষের থেকেও সহজ এবং খরচ ও পরিশ্রম কম। যদি এই পদ্ধতিতে শুধু ঘরের চাহিদা মেটানোর জন্য মাছ চাষ করা হয়। তবে সেই মাছ দিয়ে ঘরের চাহিদা পূরণ করে বাজারেও বিক্রি করতে পারবে। তাই, পরিশেষে বলা যায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সমাজ ও দেশের জন্য খুবই লাভজনক।
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
চিংড়ি মাছ চাষ সবচেয়ে বেশি লাভজনক।
রুই মাছ বড় হতে কত দিন লাগে?
রুই মাছ বড় বা প্রাপ্তবয়স্ক হতে ২-৩ বছর সময় লাগে।