অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষ ও মাছের খাবার

বাড়ির শোভাবর্ধন করার জন্য অনেকেই শখ করে বাড়িতে অ্যাকুরিয়াম রাখেন। কিন্তু একুরিয়ামের মাছের যত্নের সঠিক নিয়ম অনেকেই জানে না। তাই আসুন অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।

অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষ ও মাছের খাবার

অ্যাকুরিয়াম হলো কৃত্রিম ভাবে বাহারি মাছ চাষের কৃত্রিম জলাধার। এর সেই জলাধারে জলজ উদ্ভিদ এবং অন্য উপকরণ স্থাপনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যে বাহারি মাছ পালন বা চাষ, সংক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। আমরা অনেকেই বাড়িতে একুরিয়াম রাখি এবং অ্যাকুরিয়ামে মাছ পালন করি বাড়ির সেীর্ন্দযতা বৃদ্ধির জন্য।

তবে এ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষ করার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। যদি নিয়ম না মেনে অ্যাকুরিয়ামে চাষ করা মাছ গুলোকে সঠিক খাবার দেওয়া না হয় এবং এ্যাকুরিয়ামের পানি নিয়মিত বদলানো না হয় তাহলে অ্যাকুরিয়ামে চাষকৃত মাচগুলো মরে যেতে পারে। আর সেজন্য অনেকেই কয়েক মাস পর বাড়িতে আর অ্যাকুরিয়াম রাখেন না। কারণ, তারা একুরিয়ামে মাছ চাষ করার সঠিক নিয়ম জানেন না। তাই, চলুন অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।

আরোও পড়তে পারেন – বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ

অ্যাকুরিয়াম প্রাপ্তির স্থান

অ্যাকুরিয়াম বাজার থেকে কিনতে পাওয়া যায়। ঢাকা এবং চট্ট্রোমের বিভিন্ন এলকায় অ্যাকুরিয়াম পাওয়া যায়। তবে বাজারে এ্যাকুরিয়ামের দাম বেশি হলে বাড়ীতে কাঁচ এন একরিয়াম তৈরী করে মাছ চাষ করতে পারেন।

বাডিতে কাঁচের অ্যাকুরিয়াম তৈরির নিয়ম

  • সাধারণত বাড়িতে একুরিয়াম স্থাপনের জন্য ১৮ থেকে ৬০ ইঞ্চি সাইজের অ্যাকুরিয়াম দোকান থেকে নিতে হবে। তবে ঘরের মাপ নিয়ে এ্যাকুরিয়াম ঘরে তৈরী করলে সবচেয়ে ভালো হবে। এতে বাড়িতে একুরিয়াম দেখতে ভালো লাগবে। 
  • বাড়িতে কাঁচের অ্যাকুরিয়াম তৈরির জন্য চারটি নির্দিষ্ট সােইজের কাচ নিতে হবে।
  • তারপর সেই কাঁচগুলো শিট গাম বা সিলিকন গাম দিয়ে ভালোভাবে জোড়া লাগিয়ে একটি আয়তকার ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে। 
  • একুরিয়াম তৈরীতে এমন কাঁচ ব্যবহার করতে হবে যে কাঁচ অ্যাকুরিয়ামের ভিতরের পানির চাপ সহ্য করতে পারে।
  • আর তাই অ্যাকুরিয়ামের আকৃতি ভেদে ৪ মিলিমিটার থেকে ১০ মিলিমিটার পুরু কাচ ব্যবহার করতে হবে। 
  • অ্যাকুরিয়ামের ভিতরের পানি ধূলিকণা, ময়লা ও দূষণমুক্ত রাখতে এাকুরিয়ামের উপরে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম বা কাঠ দিয়ে ঢাকনা তৈরি করতে হবে।
  • অ্যাকুরিয়ামের ঢাকনায় আলো বা বাতি সংযোজনের জন্য একটি বৈদ্যুতিক প্লাগ লাগাতে হবে।

আরোও পড়ুন – পাবদা মাছ চাষ পদ্ধতি

অ্যাকুরিয়ামের জন্য পানি

একুরিয়ামে সুনিষ্কাশিত বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে। অ্যাকুরিয়াম ওয়াশার পানি বা দূষিত পানি ব্যবহার করা উচিৎ নয়। এতে একুরিয়ামে থাকা মাছের ক্ষতি হতে পারে। আর প্রতি সপ্তাহে ১ বার অ্যাকুরিয়ামের পানি পাল্টাতে হবে।

অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষের জন্য নুড়ি পাথর সংগ্রহ

অ্যাকুরিয়ামে মূলসহ উদ্ভিদকে আবদ্ধ রাখতে এবং অণুজীবের জন্য বায়োটোন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে নুড়ি পাথর দিতে হবে। তাই আমাদের একুরিয়ামের দোকান তেকে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করতে হবে। তবে নুড়ি পাথরের গলে যাওয়া বন্ধ করতে ধাতব আকরিক ব্যবহার করা উচিৎ নয় তাই নুড়ি পাথর গলে গেলে আবার নতুন নুড়ি পাথর অ্যাকুরিয়ামে দিতে হবে।

আরোও জানতে পারেন – বিপন্ন প্রজাতির মহাশোল মাছ এর প্রজনন ও চাষ ব্যবস্থাপনা

অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষের জন্য জলজ উদ্ভিদ নির্বাচন

তারপর অ্যাকুয়ামে জলজ উদ্ভিদ দিতে হবে। কারণ, অ্যাকুরিয়ামে বাহারি মাছের জীবন-যাত্রার মান সুন্দর করতে এই জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করতে হবে। আর এই জলজ উদ্ভিদগুলো হলো:- কুটিপানা, পাতা ঝাঝি, ক্ষুদিপানা, টোপাপানা, উল্কিপানা, ঘেচু, ঝাউ ঝাঝি, ইন্ডিয়ান ফার্ন, পাতা শেলা জাভা মস প্রভৃতি।

অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষের জন্য ওয়েট ডাষ্ট ফিল্টার

একুরিয়ামে নুড়ি পাথরের নিচে একটি ওয়েট ডাষ্ট ফিল্টার রাখতে হয়। আর এই  ওয়েট ডাষ্ট ফিল্টারের সাথে একটি এয়ার এক্সিকিউটর থাকে। অ্যাকুরিয়াম থেকে বাতাস বের করে দেয় এবং বাতাস বের হবার সময় অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে কিছুটা উর্দ্ধ চাপের সৃষ্টি করে। যার ফলেেএকুরিয়ামের ময়লা গুলো খুব ধীরে ধীরে নুড়ি পাথরের ভিতর দিয়ে ঐ ওয়েট ডাষ্ট ফিল্টারের নিচে গিয়ে জমা হয়। আর একুরিয়ামের এই ময়লা পরিষ্কার করার জন্য সবসময় এই যন্ত্রটি চালিয়ে রাখতে হবে।

আরোও জানতে পারেন – চিতল মাছের রেনু উৎপাদন ও চাষ পদ্ধতি

অ্যাকুরিয়ামের জন্য মাছ নির্বাচন

বাড়িতে এ্যাকুরিয়ামে রাখার জন্য সুস্থ সবল বাহারি মাছ বাছাই এবং সংগ্রহ করতে হবে। আর অ্যাকুরিয়ামের জন্য ভালো বাহারি মাছ চেনার উপায় হলোঃ- এই বাহারি মাছ গুলো স্বাচ্ছন্দে পানির যে কোনো স্থানে যাতায়াত করতে পারে। আর অ্যাকুরিয়ামে সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে অ্যাকুরিয়ামে মাছ উপস্থাপন বা চাষ করার জন্য আমাদের একুরিয়ামের উপরিস্তর, মধ্যস্তর এবং নিম্নস্তরের মাছ একসঙ্গে ছাড়তে হবে।

নিম্নে অ্যাকুরিয়ামে চাষ উপযোগী কয়েকটি উন্নত জাতের মাছের নাম হলোঃ-  রেড নোজ টেট্রা, ফ্লেম টেট্রা, গোললাইট টেট্রা, সার্পে টেট্রা, নিওন টেট্রা, কঙ্গো টেট্রা ইত্যাদি। আর একুরিয়ামে মাছ চাষ করার জন্য অ্যাকুরিয়ামের আকার অনুযায়ী এ্যাকুরিয়ামের মাছের আকার ও সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।

আরোও জানুন – চিতল মাছের রেনু উৎপাদন ও চাষ পদ্ধতি

অ্যাকুরিয়ামের মাছের খাবার

অ্যাকুরিয়ামের মাছেদের খাবার হলো জ্যান্ত গাছ , শাকের পাতা , সিদ্ধ করা কড়াই শুটির দানা , সিদ্ধ ভাত , আলু সিদ্ধ , সিদ্ধ ডিমের কুসুম , কাঁচা মাংস বা সিদ্ধ মাংসের টুকরো ,, শশার টুকরো , তরমুজের টুকরা ইত্যাদি। প্রতিদিন দিনে ২ বার এসব খাবার অল্প অল্প করে অ্যাকুরিয়ামে মাছের জন্য দিতে হবে।

অ্যাকুরিয়াম ও মাছের পরিচর্চা

  • নিয়মিত একুরিয়াম মুছতে হবে।
  • প্রায় ১ সপ্তাহ পর পর এ্যাকুরিয়ামের পানি পরিবর্তন করতে হবে।
  • অ্যাকিুরিয়ামে চাষকৃত মাছের রোগ নিরাময় করার জন্য সবসময় অ্যাকুরিয়ামের মাছকে সুষম খাদ্য দিতে হবে।

আরোও পড়ুন – লাভজনক উপায়ে মাছ চাষ পদ্ধতি

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

FAQs

একুরিয়ামের মাছের খাবার দেওয়ার নিয়ম কি?

একুরিয়ামের মাছের খাবার দেওয়ার নিয়ম হলো দিনে ২/৩ বার নির্দিষ্ট পরিমাণে সুষম খাবার দেওয়া।

অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ এর দাম কত?

অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ এর দাম মাছের জাত অনুযায়ী ভিন্ন রকম। যেমনঃ-  অ্যাকুরিয়ামের মাছ ১ জোড়া টাইগার শার্কের দাম হলো ৮০ থেকে ১৬০ টাকা, ১ জোড়া কমেড-ফিশের দাম হলো ৪০ থেকে ১২০ টাকা, রূপচাঁদা মাছের মতো দেখতে মাঝারি অ্যাঞ্জেল ফিস এর দাম ২০০ টাকা এবং বিচিত্র রঙের ডিসকাস ফিশ ১ জোড়ার দাম হলো ৩০০-৬০০ টাকা।

একুরিয়ামের দাম কত?

অ্যাকুরিয়ামের আকৃতি ও মানভেদে এ্যাকুরিয়ামের দাম বিভিন্ন। যেমনঃ ১ ফুট থেকে ৩.৫ ফুট অ্যাকুরিয়ামের দাম হলো ২০০-৪০০০ টাকা।

অ্যাকুরিয়ামের মাছ কিভাবে প্রজনন করে?

অ্যাকুরিয়ামে স্ত্রী মাছ গুলো ডিম পাড়ার পরে সেই ডিমগুলোর সাথে পুরুষ মাছের কিছু শুক্রাণু তাদের মুখে রেখে দেয়। এইভাবে কয়েকদিন পর তাদের মুখে সেই ডিমগুলো ফোটে। এভাবেই অ্যাকুরিয়ামে মাছ প্রজনন করে। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *