অল্প খরচে ভূট্টা চাষ জানবো ভূট্টা চাষের সঠিক নিয়ম
ভুট্টা একটি জনপ্রিয় ফসল এবং বাজারে এর ভালো চাহিদা রয়েছে। তাই চাষীরা ভুট্টা চাষ করে বর্তমানে অধিক লাভবান হচ্ছেন। তাই চলুন কম খরচে ভুট্টা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।
ভুট্টার বৈজ্ঞানিক নাম হলো Zea Mays এবং ভুট্টাকে ইংরেজীতে Corn বলা হয়। আমাদের দেশে ধান ও গমের পরে ভূট্টার চাহিদা প্রচুর। প্রতিনয়ত আমাদের দেশে ভুট্টার চাহিদা বাড়েছে এবং সে সাথে বাড়ছে ভুট্টা দামও। তাই আমাদেশের কৃষক ভাইরাও বর্তমানে ভূট্টা চাষে মনযোগী হচ্ছেন। কারণ, ভুট্টা চাষ তুলনামূলক খুবই সহজ। তাই চলুন ভুট্টা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি।
আরোও পড়তে পারেন – স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি ও সার প্রয়োগ | ছাদে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি
ভুট্টা চাষের পূর্বে ভুট্টার জাত নির্বাচন
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট অল্প জায়গায় ভূট্টার বেশি ফলন হওয়ার জন্য ভুট্টার কিছু উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেছে। ভূট্টা এসব উচ্চ ফলনশীল জাত হলোঃ- বারি ভুট্টা-৫, বারি ভুট্টা-৬, বারি ভুট্টা-৭, বর্ণালী, শুভ্রা, মােহর, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-২, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৩। এছাড়া খই বা পপ কর্ণ এর উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা হলো খই ভুট্টা এবং বারি মিষ্টি ভুট্টা-১।
ভুট্টা চাষের জমি ও মাটি নির্বাচন
ভুট্টা চাষের উপযোগী মাটি হলো বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি। আর ভূট্টা চাষের জন্য পানি জমে না এমন উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে।
ভুট্টা বপন বা চাষের সময়
আমাদের দেশে ভূট্টা বপন বা চাষের উপর্যুক্ত সময় হলো রবি মৌসুমে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস এবং খরিপ মৌসুমে মধ্য ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস। তবে আমাদের দেশে রবি মৌসুমে ভুট্টার চাষ কুবই বেশি হয়।
আরোও পড়ুন – বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ
ভুট্টা চাষের জমি তৈরী
ভুট্টা চাষের জমিতে লাঙ্গল বা নিড়ানি দিয়ে ৪-৫টি গভীর চাষ দিতে হবে। তারপর মই দিয়ে সেই জমিটির মাটি ঝুরঝুরে করে দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে।
ভুট্টার বীজ বপন বা চাষ পদ্ধতি
- প্রথমে জমিতে বারি ভুট্টা নাকি খই ভুট্টা চাষ করা হবে তা নির্বাচন করতে হবে।
- হেক্টর প্রতি জমিতে বারি ভুট্টার জাত চাষের জন্য ২৫-৩০ কেজি এবং খই ভুট্টা চাষের জন্য ১৫-২০ কেজি হারে ভুট্টার বীজ নিতে হবে।
- তারপর সেই ভুট্টার বীজগুলো জমিতে সারি সারি করে বপন করতে হবে। আর ভূট্টা চাষের জমিতে এক সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সেমি এবং সারিতে ভুট্টার বীজ বপনের দুরত্ব হবে ২৫ সে.মি।
আরোও জানতে পারেন – তিল চাষ পদ্ধতি
ভুট্টা চাষের জমিতে সার প্রয়োগের পরিমাণ
রবি মেীসুমে ভূট্টা চাষের জমিতে সার প্রয়োগের পরিমাণ
সারের নাম | সার প্রয়োগের পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) |
ইউরিয়া | ১৭২-৩১২ কেজি |
টিএসপি | ১৬৮-২১৬ কেজি |
এমওপি | ৯৬-১৪৪ কেজি |
জিপসাম | ১৪৪-১৬৮কেজি |
জিংক সালফেট | ১০.১৫কেজি |
বরিক এসিড | ৫-৭কেজি |
গোবর | ৪-৬ টন |
খরিপ মেীসুমে ভূট্টা চাষের জমিতে সার প্রয়োগের পরিমাণ
সারের নাম | সার প্রয়োগের পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) |
ইউরিয়া | ২১৬-২৬৪ কেজি |
টিএসপি | ১৩২-২১৬ কেজি |
এমওপি | ৭২-১২০ কেজি |
জিপসাম | ৯৬-১৪৪ কেজি |
জিংক সালফেট | ৭-১২কেজি |
বরিক এসিড | ৫-৭কেজি |
গোবর | ৪-৬ টন |
ভুট্টা চাষের জমিতে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরীর সময় জমিতে শেষ চাষ দেওয়ার সময় উপরে বর্ণিত ইউরিয়া সারের পরিমাণের এক তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সব সার সম্পূর্ণ ছিটিয়ে দিয়ে ভুট্টার জমি চাষ করতে হবে। আর ইউরিয়া সারের এক তৃতীয়াংশকে ২ কিস্তিতে ভাগ করে ১ম কিস্তি ভুট্টার বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর এবং ২য় কিস্তি ভূট্টার বীজ গজানোর ৪০-৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
ভুট্টা চাষের জমিতে সেচ প্রদান
উচ্চ ফলনশীল ভুট্টার জাতের আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে অবশ্যই ভুট্টা চাষের জমিতে ৩-৪ বার সেচ দিতে হবে। আর ভূট্টা চাষের জমিতে ১ম সেচ দিতে হবে ভুট্টার বীজ বপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে, ২য় সেচ দিতে হবে ভুট্টার বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে, ৩য় সেচ দিতে হবে ভুট্টার বীজ বপনের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে এবং ৪র্থ সেচ দিতে হবে ভুট্টার বীজ বপনের ৮৫-৯৫ দিনের মধ্যে। খেয়াল রাখতে হবে ভূট্টা চষের জমিতে যেন পানি জমে না থাকে।
ভুট্টা চাষের জমিতে আগাছা দমন
ভূট্টার বীজ বপনের ১ মাস পর অতিরক্তি ভুট্টার চারা সহ আগাছা তুলে ফেলতে হবে ভুট্টার জমি থেকে। আর নিয়মিত ভূট্টা জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
আরোও পড়তে পারেন – সজিনা চাষ পদ্ধতি
ভুট্টার রোগ বালাই দমণ ব্যবস্থাপনা
ভুট্টার বীজ পচা এবং চারা গাছের রোগ
ভুট্টা বীজ এবং ভুট্টার চারা পঁচে যায় সাধারণত মাটি বাহিত ছত্রাকের আক্রমণের কারণে। ভুট্টার এই বীজ পঁচা রোগের প্রতিকার হলো ভুট্টার বীজ জমিতে রোপন করার পূর্বে থিরাম বা ভিটাভেক্স ০.২৫% প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করা এবং ১৩ ডিগ্রীর বেশি তাপমাত্রায় ভূট্টার বীজ রোপন করা।
ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ দমন
সাধারণত ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ হয় হেলমিনথোসপরিয়াম টারসিকাম ও হেলমিনথোসপরিয়াম মেইডিস নামক ছত্রাকদ্বয়ের আক্রমণের কারণে। ভুট্টার এই পাতা ঝলসানো রোগের প্রতিকার হলো আক্রান্ত ভুট্টা ফসলে টিল্ট ২৫০ ইসি ০.০৪% প্রতি ১৫ দিন পর পর ভূট্টা গাছে ২-৩ বার স্প্রে করা এবং জমি থেকে. ভুট্টা উঠানোর পর আক্রান্ত গাছ জমি থেকে সরিয়ে পুড়িয়ে ফেলা।
ভুট্টার মোচা ও দানা পচা রোগ দমন
ভুট্টার মোচা ও দানা পচা রোগ হয় বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক (যেমনঃ- ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি প্রভৃতি) এর আক্রমণের কারণে। ভুট্টার মোচা ও দানা পচা রোগের প্রতিকার হলো একই জমিতে বারবার ভুট্টা চাষ না করা, জমিতে পোকা ও পাখির আক্রমন রোধ করা, ভুট্টা পেকে গেলে ুত দ্রুত সম্ভব কেটে ফেলা এবং ভুট্টা ফসল কাটার পর ভুট্টার পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলা।
ভুট্টার কান্ড পচা রোগ দমন
ভুট্টার কান্ড পচা রোগ হয় বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক (যেমনঃ- ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি ইত্যাদি) এর আক্রমণের কারণে। ভুট্টার এই কান্ড পচা রোগের প্রতিকার হলো ছত্রাকনাশক ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে ভুট্টা বীজ শোধন করে জমিতে রোপন করা, সুষম হারে ভুট্টা চাষের জমিতে সার ব্যবহার করা, ভুট্টা জমিতে নাইট্রোজেন ও পটাশ পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করা, ভুট্টা কাটার পর ভুট্টার পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলা এবং আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত হারে ছত্রাকনাশক ২-৩ বার স্প্রে করা।
আরোও পড়ুন – ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
ভুট্টা ফসল সংগ্রহ এবং ফলন
ভুট্টার মোচা চকচক খড়ের রং ধারণ করলে এবং ভুট্টা পাতা কিছুটা হলদে হলে সে সময়টি হলো ভুট্টা ফসল সংগ্রহের উপর্যুক্ত হয়। হেক্টরপ্রতি জমিতে কম্পোজিট জাতের ভুট্টার গড় ফলন হয় ৪ থেকে ৫.৫ মেট্রিক টন, হাইব্রিড জাতের ভুট্টার গড় ফলন ৮ থেকে ১১ মেট্রিক টন এবং খই ভুট্টার ফলন ভুট্টার গড় ফলন হয় ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন।
FAQs
ভুট্টা চাষ করতে হয় ভুট্টা চাষের উপর্যুক্ত জমি, মাটি ও সময় নির্বাচন করে জমি তৈরী করে ভুট্টার বীজ বপনের মাধ্যমে।
১ বিঘা জমিতে ৩৫-৪৫ মণ ভুট্টার উৎপন্ন হয়।
২০২৩ সালে ১ কেজি ভুট্টার দাম হলো ২৩-২৫ টাকা পর্যন্ত। প্রতি বস্তা ভুট্টার দাম হলো ১২০০-১৬০০ টাকা।