জুলাই মাসে কি কি সবজি চাষ করে ভালো লাভ করা যায়

জুলাই মাসের আবহাওয়া সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আর এই মাসে ফসলের অধিক উৎপাদন হয়। তাই জানুন জুলাই মাসে কি কি সবজি চাষ করে অধিক লাভ করা সম্ভব সে সম্পর্কে।

জুলাই মাসের সবজি চাষ

জুলাই মাস হচ্ছে ফসল উৎপাদন বা চাষের মাস। এই জুলাই মাসকে বর্ষার মাসও বলা হয়। এই জুলাই মাসেই যেকোনো ফসল চাষের মক্ষম সময়। কারণ, এই সময় প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় জমির মাটি ফসল উৎপাদনের পর্যাপ্ত শক্তি পাই। এই জুলাই মাসে রবি মেীসুমও ধরা হয়। শ্রাবণ মাস অর্থাৎ মধ্য জুলাই-মধ্য আগস্ট মাস পর্যন্ত আগাম রবি সবজি উৎপাদনের উপর্যুক্ত সময়। এই সময় ফসল চাষ করে কৃষকরা অধিক লাভবান হোন।

জুলাই মাসে যেসব ফসল চাষ করা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো বাঁধাকপি, ফলকপি, লাউ, টমেটো, বেগুন, আলু, ঢ্যাঁড়স, পেঁয়াজ, করলা , লাই ইত্যাদি। তবে বর্ষার মেীসুমে বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে ফসল চাষ করলে ভালো লাভ করা যাবে। তাই আসুন জেনে নিই জুলাই মাসে কি কি সবজি চাষ করলে ভালো লাভ পাওয়া যায় সে সম্পর্কে।

জুলাই মাসে ঢ্যাঁড়শ চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জন

যে কোনও মাটিতেই সাধারণত ঢ্যাঁড়শ বা ভেন্ডির চাষ করা যায়। তবে জুলাই মাসের শুষ্ক-আর্দ্র আবহাওয়ায় ঢ্যাঁড়শ চাষ করলে ভালো উৎপাদন হয়৷ ফলে জুলাই মাসে ঢ্যাঁড়স চাষ করে ভালো লাভ করা সম্ভব। আর ঢ্যাঁড়স বৃষ্টির মেীসুমে চাষ করলে অধিক লাভ পাওয়া সম্ভব। যদিও এখন সারা বছরই ঢ্যাঁড়স উৎপাদন করা যায়। তবে জুলাই মাসে অধিক উৎপদন হয় ঢ্যাঁড়সের অন্যান্য সময়ের তুলনায়।

জুলাই মাসে পেঁয়াজ চাষ করে অধিক লাভ করা

যদিও শীতের সময়ে পেঁয়াজ চাষ করা হয়৷ তবে বর্তমানে জুলাই মাসেও উন্নত মানের পেঁয়াজের চাষ করা যায় এবং এর উৎপাদনও ভালো হয়। জুলাই মাসে পেঁয়াজ চাষের জন্য বেলে-দো-আঁশ মাটির প্রয়োজন।

জুলাই মাসে উন্নতমানের পেঁয়াজের জাত যেমনঃ- এগ্রিফাউন্ড লাইট রেড, এন-৫৩, এগ্রিফাউন্ড ডার্করেড, ভীমা সুদর, রেড (এল-৬৫২), অর্কা কল্যাণ এবং অর্কা প্রগতি চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

জুলাই মাসে করলা চাশ করে অধিক লাভ করা

করলা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে৷ তাই বাজারে এর চাহিদাও অনেক বেশি থাকে৷ বিশেষত জুলাই মাসের পরবর্তী সময়ে করলার চাহিদা অধিক থাকে। তাই জুলাই মাস থেকে কৃষকরা করলা চাষে মনযোগী হোন এবং অধিক লাভবান হোন। তবে জুলাই মাসে করলা চাষের জন্য ভালো জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা সহ একটি উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। কারণ, জুলাই মাসে অধিক বৃষ্টি হয়। আর জুলাই মাসে করলা চাষের জন্য দোআঁশ মাটি খুবই উপযোগী। জুলাই মাসে করলার যেসব উন্নত জাত চাষ করা যায় সেগুলো হলোঃ- পুসা হাইব্রিড ১,২, পুসা বিশেষ, কল্যাণপুর, প্রিয়া কো-১, এস ডি ইউ- ১, কোয়েম্বাটুর লং, কল্যাণপুর সোনা, বারোমাসি করলা, পঞ্জাব করোলা-১, পঞ্জাব-১৪, সোলন, বারোমাসি ইত্যাদি৷

জুলাই মাসে লাউ চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জন

লাউ এর মধ্যে প্রচুর পরিমোণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, খনিজ লবণ, ভিটামিন বিদ্যমান৷ লাই আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে খুবই কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। আর এই লাউ চাষের উপর্যুক্ত সময় হলো জুলাই মাস বা বর্ষার শুরুতে। জুলাই মাসে লাউ এর যেসব উন্নত জাত চাষ করা সম্ভব সেগুলো হলোঃ- পুসা সন্তুষ্টি, পুসা সন্দেশ (গোল), পুসা সমৃদ্ধি এবং পুসা হাইব্রিড ৩. নরেন্দ্র রশ্মি, নরেন্দ্র শিশির, নরেন্দ্র ধারীদার, কাশী গঙ্গা, কাশী বাহার ইত্যাদি৷

জুলাই মাসে বিভিন্ন ধরণের ধান চাষ করে অধিক লাভ করার উপায়

জুলাই মাস হচ্ছে চাষের মাস। বিশেষত ধান চাষের জন্য খুবই বিশেষ একটি মাস হচ্ছে এই জুলাই মাস। এই সময় বিভিন্ন ধরনের ধান চাষ করা যায় ক্ষেতে। কারণ, জুলাই মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফসলেল জমির মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকে। যার ফলে জুলাই মাসে ধান চাষ করলে ধানের অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়। তবে জুলাই মাসে ধান চাষ করার জন্য কিছু দিক নিদের্শনা মেনে ধান চাষ করতে হয়। কারণ, এই জুলাই মাসে অধিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে ফসলের জমিতে। যার জন্য ধানের উৎপাদন ব্যহত হতে পারে। তাই জুলাই মাসে ধান চাষ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং পানি সহনশীল উন্নত মানের উচ্চফলনশীল ধান চাষ করতে হবে জুলাই মাসে। জুলাই মাসে যেসব ধান চাষ করা যায় সেগুলো হলোঃ- আমন ধান, বোরো ধান, আউশ ধান ইত্যাদি।  

জুলাই মাসে ভুট্টা চাষে অধিক লাভ

জুলাই মাসে ভুট্টা চাষ করলে তা যাতে পরিপক্ব হওয়ার পর বৃষ্টিতে নষ্ট না হয় সেজন্য আগে মোচা সংগ্রহ করে  ঘরের বারান্দায় ভুট্টা সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভুট্টার মোচা থেকে ভুট্টার দানা সংগ্রহ করতে প্রয়োজনে ভুট্টা মারাই যন্ত্রের ব্যবহার করা যেতে পারে। জুলাই মাসে রোদ হলে ভুট্টা শুকিয়ে নিতে হবে। আর ভুট্টার মোচা পাকতে দেরি হলে জুলাই মাসে মোচার আগা চাপ দিয়ে ভু্ট্টার মোচাকে মুখী করে দিতে হবে। এতে করে জুন-জুলাই মাসের বৃষ্টিতে ভুট্টার মোচা নষ্ট হবে না।

জুলাই মাসে বিভিন্ন ধরণের উপকারী গাছপালা রোপন করে অধিক লাভ করার উপায়
জুন-জুলাই মাস হলো চাষের মাস। তাই এই জুলাই মাসে যত বেশি ফসল এবং গাছ-পালা চাষ বা রোপন করা যাবে ততই আমাদের জন্য লাভ। তাই বিভিন্ন ধরণের উপকারী বা পরিবেশ বান্ধব এবং দামী গাছ রোপন করা যেতে পারে এই জুলাই মাসে। কারণ, জুলাই মাসে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস ও পুষ্টি থাকে। ফলে গাছপালাও ভালো জন্মে এই জুলাই মাসে।

পরিশেষে বলা যায়, জুলাই মাস কৃষকের জন্য খুবই উপকারি একটি মাস। কারণ, এই মাসে তারা বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদন করে অধিক লাভবান হতে পারেন কৃষকরা। তবে জুলাই মাসে ফসল চাষ করার জন্য একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো ফসল চাষের জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। কারণ, জুলাই মাসে অধিক বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার ফলে ফসলের জমিতে পানি জমার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই জুলাই মাসে ফসল চাষের জন্য সুন্ষ্কিাশিত উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে।

FAQs

খরিপ-১ মেীসুম এর সবজি কি কি?

খরিপ-১ মৌসুমের সবজি হলো বেগুন, মূলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, চিচিঙা, বরবটি, ঢেঁড়স, সজনে, পটল, করলা, ঝিঙা ও লালশাক।

বর্ষা কালে কি কি সবজি চাষ করা হয়?

বর্ষাকালে যেসব চাষ করা যায় সেগুলো হলোঃ- শসা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, চালকুমড়া, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়শ, পুইশাক, লালশাক, ডাঁটা, পাটশাক, গিমাকলমি, করলা ইত্যাদি।

কোনটি বারমাসি সবজি?

বারোমাসি সবজি হলো শসা, মিষ্টিকুমড়া, আলু, লাউ, মরিচ, পেঁয়াজ, টমেটো, পুইশাক ইত্যাদি।

খরিপ ২ এর সবজি কি কি?

খরিফ-২ সবজি হলো পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, বরবটি, আলু ইত্যাদি।

খারিফ ফসল কি কি?

খরিফ ফসল হলো ধান, ভুট্টা, বাজরা, রাগি, ডাল, সয়াবিন, চীনাবাদাম প্রভৃতি।

রবি মৌসুমের ফসল কি কি?

রবি মেীসুমের ফসল হলো গম, মসুর ডাল, সরিষা, যব, মটরশুঁটি, পেঁয়াজ, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, গাজর, লাউ, আলু ইত্যাদি।

বর্ষাকালে কোন সবজি খাওয়া ভালো?

বর্ষাকালে বিভিন্ন ধরণের শাক, শসা, পটল, আলু, করলা, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, বরবটি প্রভৃতি খাওয়া ভালো।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *