কাঁঠাল চাষ পদ্ধতি: সঠিক নিয়মে কাঁঠাল চাষ করে পান সফলতা

বর্তমান গ্রীষ্মকালে বাজারে কাঁঠালের চাহিদা প্রচুর। সে সাথে পাওয়া যাচ্ছে কাঁঠালের ভালো দাম। কৃষকরা কাঁঠাল চাষে লাভবান হচ্ছেন। জানুন কাঁঠাল চাষের সঠিক নিয়ম।

কাঁঠাল চাষের সঠিক নিয়ম

আমরা সবাই জানি কাঁঠাল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল এবং গ্রীষ্মকালে কাঁঠালের প্রচুর চাহিদা থাকে বাজারে। তাই অনেক কৃষক ভাই গ্রীষ্মকাল আসার অনেক আগে থেকেই তাদের বাগানে কাঁঠাল গাছ চাষ করে থাকে। যাতে তারা গ্রীষ্মকাল আসার সাথে কাঁঠাল গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে কাঁঠাল বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। তাই জানুন কিভাবে সঠিক নিয়মে কাঁঠাল গাছ চাষ করে কাঁঠাল বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় সে সম্পর্কে।

আরোও জানতে পারেন – অল্প খরচে ভূট্টা চাষ জানবো ভূট্টা চাষের সঠিক নিয়ম

কাঁঠাল গাছ চাষের জন্য মাটি নির্বাচন

প্রায় সব মাটিতে কাঁঠার চাষ করা গেলেও কাঁঠাল গাছ চাষের উপর্যুক্ত মাটি হলো দোআঁশ ও পলিমাটি। তবে সেচের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকলে এঁটেল মাটি ও লাল কাঁকড়ড়যুক্ত মাটিতেও কাঁঠাল চাষ করা যায়। আর বাংলাদেশের অম্লভাবাপন্ন লাল মাটির অঞ্চল যেমনঃ- মধুপুর, ভালুকা, রাঙ্গামাটিতে কাঁঠালের উৎপাদন ভালো হয়।

কাঁঠাল গাছ চাষের জন্য জমি নির্বাচন

কাঁঠাল চাষ করার জন্য সুনিষ্কাশিত জমি নির্বাচন করা দরকার। কারণ, কাঁঠাল সব ধরণের জমিতে চাষ করা যায়। তবে পানি জমে থাকে না এমন উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি কাঁঠাল চষের জন্য উপর্যুক্ত।

কাঁঠাল চাষের জন্য আবহাওয়া ও জলবায়ু নির্বাচন

বাংলাদেশের জলবায়ু কাঁঠাল চাষের খুবই উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু হচ্ছে কাঁঠাল চাষের উপর্যুক্ত আবহাওয়া। আর শীত প্রধান ও তুষারপাতের এলাকা কাঁঠাল চাষের জন্য সর্বোত্তম।  

কাঁঠাল চাষের সময় নির্বাচন

কাঁঠাল চাষের নির্দিষ্ট কোনো সময় সীমা নেই। কারণ, কাঁঠাল গাছ বড় হলে তারপর কাঁঠাল ফর দেয়। তবে গাছে কাঁঠাল ফল ধরা ও পাঁকার সময় মাথায় রেখে কাঁঠাল গাছ চাষ করতে হবে। আর কাঁঠাল গাছে কাঁঠাল ধরার সময় হলো অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে এবং কাঁঠাল পাকার সময় হলো জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে। তাই সেই বিবেচনা করে বর্ষাকালে কাঠাল গাছ চাষ করার উপর্যুক্ত সময়। আর কাঠাল গাছ চাষের উপর্যুক্ত সময় হলো মধ্য জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে মধ্য শ্রাবণ মাস। অর্থাৎ বর্সাকালের শুরুতে কাঁঠাল গাছের চারা রোপন করতে হয়।

আরোও পড়ুন – জুলাই মাসে কি কি সবজি চাষ করে ভালো লাভ করা যায়

কাঁঠালের জাত নির্বাচন

কাঁঠালের অনেক জাত রয়েছে। তবে আমাদের দেশে কাঁঠালের ৩টি জাতের চাষ বেশি করা হয়। কাঠালের সেই ৩টি জাত হলোঃ- খাজা, আদারসা ও গালা বা গলা।

কাঁঠালের চারা তৈরি

  • কাঁঠাল গাছের চারা তৈরী করার জন্র প্রথমে ভালো পাঁকা কাঁঠাল থেকে পুষ্ট বড় কাঁঠালের বীজ বা বিচি সংগ্রহ করতে হবে।
  • তারপর কাঁঠালের সেই বিচিগুলোতে ছাই মাখিয়ে ২/৩ দিন ছায়াযুক্ত স্থানে শুকাতে হবে।
  • তারপর ছাইযুক্ত সেই কাঁঠালের বীজগুলো বীজতলায় নিযে গিয়ে বপন করতে হবে।
  • এরপর ২০-২৫ দিন পর বীজতলায় কাঁঠালের চারা গজাবে।
  • এছাড়াও গুটি কলম, ডাল কলম, চোখ কলম, চারা কলম এর সাহয্যেও কাঁঠালের চারা তৈরি করা যায়।

কাঁঠালের চারা রোপন পদ্ধতি

  1. কাঁঠাল চাষ করার জন্য জমির আগাছা পরিষ্কার করে ভালভাবে জমিতে চাষ দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
  2. জমিতে কাঁঠালের চারা রোপণের ১০ দিন পূর্বে কাঁঠালের চারা সংখ্যা অনুযায়ী জমিতে ১ মিটার আকারে গর্ত খুঁড়তে হবে।
  3. জমিতে প্রত্যেকটি কাঁঠাল গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে সবদিকে ১২ মিটার x ১২ মিটার।
  4. তারপর সেসব গর্তে কাঁঠালের চারা সোজা করে রোপন করতে হবে। কাঁঠালের চারা যাতে হেলে না যায় সেজন্য প্রয়োজনে কাঁঠাল চারার সাথে একটি করে খুটি দিতে হবে।
  5. তারপর কাঁঠাল গাছের প্রতিটি গর্তে পরিমিত পরিমাণে সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে।

সরাসরি কঁঠাল চাষ পদ্ধতি

এছাড়া চাইলে কাঁঠাল চাষ করার জন্য এত কষ্ট না করে বা কাঁঠালের চারা তৈরী না করে সরাসরি মাটিতে গর্ত করে প্রতিটি গর্তে প্রয়োজন মতো সার প্রয়োগ করে কাঁঠালের ৩-৪টি বীজ একসাথে প্রতিটি গর্তে বপন করে দেওয়া যায়। এতে সময়ও কম লাগে কাঁঠাল চাষের জন্য।

আরোও জানতে পারেন – তিল চাষ পদ্ধতি

কাঁঠাল চাষে সার প্রয়োগ

কাঁঠালের চারা রোপনের সময় প্রতিটি গর্ত যে যে মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হয় তা হলোঃ-

সারের নামপরিমাণ (প্রতিটি গর্তে)
গোবর সার২-৩ ঝুড়ি বা ৩৫ কেজি
টিএসপি সার৩০০ গ্রাম
এমওপি সার২১০ গ্রাম

কাঁঠাল গাছ চাষে পরিচর্চা

  • কাঁঠাল গাছ চাষের ক্ষেত্রে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে তা হলো বছর বছর কাঁঠাল গাছ যত বড় হবে গাছে সার প্রয়োগের পরিমাণও বাড়াতে হবে।
  • গাছের বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত কাঁঠাল গাছে সেচ দিতে হবে।
  • কাঁঠাল গাছের চারপাশের আগাছা সময়ে সময়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে।

কাঁঠাল গোছের রাগ-বালাই ও পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা

কাঁঠাল পঁচা রোগ ও প্রতিকার

কাঁঠাল গাছের কাঁঠাল পঁচা রোগ হয় এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমণের কারনে। এ রোগের আক্রমণে কাঁঠাল ফলের গায়ে বাদমি রঙের দাগের সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত আক্রান্ত কাঁঠাল ফল গাছ থেকে ঝড়ে পড়ে।
এই কাঁঠাল পঁচা রোগের প্রতিকার হলোঃ-

  • কাঁঠাল গাছের নিচে ঝড়ে পড়ে থাকা পাতা ও ফল পুড়ে ফেলা।
  • ফলিকুর ছত্রাকনাশক ০.০৫% হারে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে কাঁঠাল গাছে ফুল আসার পর থেকে ১৫ দিন পর পর ৩ বার গাছে সেপ্র করা।

কাঁঠাল গাছের মুচিঝরা রোগ ও প্রতিকার

কাঁঠালে ছত্রাকের আক্রমণের কারনে ছোট অবস্থাতেই গাছ থেকে কাঁঠাল কালো হয়ে ঝড়ে পড়ে। যাকে মুচিঝরা রোগ বলে। 

কাঁঠালের এই মুচিঝরা রোগের প্রতিকার হলোঃ প্রতিলিটার পানিতে ডাইথেন এম ৪৫ অথবা রিডোমিল এম জেড ৭৫, ২.৫ গ্রাম করে মিশিয়ে কাঁঠাল গাছে সেপ্র করতে হবে।

আরোও জানুন – আধুনিকভাবে চাষ করুন ধনিয়া সারা বছরই ইনকাম

কাঁঠাল গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ

কাঁঠাল গাছে কাঁঠারল ধরার সময় থেকে কাঁঠাল পাকতে ১২০-১৫০ দিন সময় লাগে। সাধারণত প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে কাঁঠাল গাছ কাঁঠাল সংগ্রহ করতে হয়।

FAQs

কাঁঠাল কিভাবে চাষ করা হয়?

ভালো পাঁকা কাঁঠাল থেকে কাঁঠালের বীজ বা বিচি সংগ্রহ করে তা সরাসরি জমিতে গর্ত করে রোপন করে কাঁঠাল চাষ করা যায়।

কাঁঠালে কি কি ভিটামিন ও মিনারেল আছে?

কাঁঠালের মধ্যে ভিটামিন বি ও সি, ফোলেট, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন, পটাসিয়াম, মিনারেল এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।

কাঁঠালের সবচেয়ে ভালো জাত কোনটি?

কাঁঠালের সবচেয়ে ভালো জাত হলো গোল্ডেন বালিশ কাঁঠাল।

ডায়াবেটিস রোগীদের কাঁঠাল খাওয়া যাবে কি?

ডায়াবেটিস রোগীদের কাঁঠাল খাওয়া যাবে, তবে অল্প পরিমাণে।

কাঁঠাল কি প্রোটিন রয়েছে?

কাঁঠালের ২.৮৪ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে।

কাঁঠালের বীজ কি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভালো?

হ্যাঁ, কাঁঠালের বীজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *