ধান চাষ পদ্ধতি

ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য শস্য। এ দেশের অর্থনীতি মূলত ধান উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল।এজন্য সঠিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করা প্রয়োজন।

ফলন বৃদ্ধির উপায়

ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য শস্য। বাংলাদেশের জলবায়ু ধান চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় এটি এদেশের একটি প্রাচীনতম ফসল হিসেবে পরিচিত।

বর্তমানে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম। এ দেশের অর্থনীতি মূলত ধান উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল।

দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। চাষাবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধির সুযোগ না থাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদের মাধ্যমে অতিরিক্ত খাদ্য চাহিদার যোগান দেওয়া হচ্ছে।

এজন্য সঠিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করা প্রয়োজন।

ধান চাষাবাদ পদ্ধতি

ধানের ফলন উপযুক্ত চাষাবাদ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। তাই জাত নির্বাচন থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত সব কাজ ধারাবাহিকভাবে বিচক্ষণতার সাথে করতে হবে।

নিয়মের হেরফের অথবা অনুমোদিত পদ্ধতি ঠিকমতো অনুসরণ না করলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং আশানুরুপ ফলন থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

জাত নির্বাচন

জমি, মৌসুম, পরিবেশ ও শস্যক্রম বিবেচনায় রেখে উপযুক্ত ধানের জাত নির্বাচন করা উচিত। মৌসুমভেদে উপযুক্ত ধানের জাত নির্বাচন করা যেতে পারে।

বীজ বাছাই

বপনের জন্য রোগমুক্ত, পরিষ্কার, পরিপুষ্ট বীজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ভাল বীজ মানে সবল চারা।

আর রোগাক্রান্ত চিটা থেকে বীজতলায় সহজেই রোগ ছড়ায়। তাই মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের লক্ষ্যে ভালভাবে বীজ বাছাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

বীজ বাছাইয়ের জন্য প্রায় ৪০ লিটার পরিষ্কার পানিতে দেড় কেজি ইউরিয়া সার মিশিয়ে দিন। এবার ৪০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দিন।

ভারী, পুষ্ট, সুস্থ্য ও সবল বীজ ডুবে নিচে জমা হবে এবং অপরিপুষ্ট, হালকা, রোগ বা ভাঙ্গা বীজ ভেসে উঠবে। হাত অথবা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো পৃথক করে নিন।

ভারী বীজ নিচ থেকে তুলে নিয়ে পরিস্কার পানিতে ৩-৪ বার ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। ইউরিয়া মিশানো পানি সার হিসেবে বীজতলায় ব্যবহার করা যায়।

কুলা দিয়ে ঝেড়ে বীজ বাছাই পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এতে চিটা দূর হলেও অপরিপুষ্ট বীজ দূরীভুত হয় না।

বীজতলা তৈরি

বীজতলা তৈরির আগে জেনে নিতে হবে কখন কোন জাতের ধানের বীজ বীজতলায় বপন করতে হবে। ৩ টি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা যায়।

১. শুকনো বীজতলা

উপযুক্ত আর্দ্রতায় ৫-৬ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটিকে একেবারে ঝুরঝুরে করার পর জমি সমান করে শুকনো বীজতলা তৈরি করা যায়।

এবার চারাগাছের পরবর্তী পরিচর্যা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ২৫-৩০ সেন্টিমিটার চওড়া নালা তৈরি হবে। বেডের উপরি ভাগের মাটি ভালোভাবে সমান করার পর শুকনো বীজ সমানভাবে ছিটিয়ে দিন।

২. কাঁদাময় বীজতলা

দোঁআশ ও এটেল মাটি এ বীজতলার জন্য ভাল। আরেকটি কথা, বীজতলার জমি উর্বর হওয়া প্রয়োজন। যদি জমি হয় তাহলে প্রতি বর্গমিটার জমিতে দুই কেজি হারে জৈব সার (পচা গোবর বা আবর্জনা) সুন্দরভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।

এরপর জমিতে ৫-৬ সেন্টিমিটার পানি দিয়ে দু-তিনটি চাষ ও মই দিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন রেখে দিন এবং পানি ভালভাবে আটকে রাখুন। আগাছা, খড় ইত্যাদি পচে গেলে আবার চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাদাময় করে জমি তৈরি করতে হবে। 

৩. ভাসমান বীজতলা

বন্যা কবলিত এলাকায় যদি বীজতলা করার মতো উঁচু জায়গা না থাকে বা বন্যাপানি নেমে যাওয়ার পর চারা তৈরির প্রযোজনীয় সময় না পাওয়া যায় তাহলে বন্যার পানি, পুকুর, ডোবা বা খালের পানির উপর বাঁশের চাটাইয়ের মাচা বা কলাগাছের ভেলা করে তার উপর ২-৩ সেন্টিমিটার পরিমাণ কাদার প্রলেপ দিয়ে ভেজা বীজতলার মতো ভাসমান বীজতলা তৈরি করা যায়।

বন্যার পানিতে যেন ভেসে না যায় সেজন্য বীজতলা দড়ি বা তার দিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা দরকার। পানিতে ভাসমান থাকার জন্য এ বীজতলার পানি সেচের দরকার হয় না।

বীজ জাগ দেওয়া

উপরে বর্ণিত বীজ বাছাই পদ্ধতিতে বাছাইকৃত বীজ কাপড় বা চটের ব্যাগে ভরে ঢিলা করে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে রাখুন ২৪ ঘন্টা। এরপর বীজের পোটলা পানি থেকে তুলে ইট বা কাঠের উপর ঘন্টাখানেক রেখে দিন পানি ঝড়ে যাওয়ার জন্য।

এবার বাঁশের টুকরি বা ড্রামে ২/৩ পরত শুকনো খড় বিছিয়ে তার উপর বীজের পোটলা রাখুন এবং আবারও ৩/৪ পরত শুকনো খড় দিয়ে ভালভাবে চেপে তার উপর ইট বা কাঠ অথবা যেকোন ভারি জিনিস দিয়ে চাপা দিন।

এভাবে জাগ দিলে ৪৮ ঘন্টা বা ২ দিনেই ভাল বীজের অঙ্কুর বের এবং কাদাময় বীজতলায় বপনের উপযুক্ত হবে।

বীজতলায় বপন

সতেজ ও সবল চারা আমাদের প্রধান কাম্য। তাই বাছাইকৃত বীজ ওজন করে নিতে হবে। প্রতি বর্গমিটার বীজতলায় ৮০-১০০ গ্রাম বীজ বোনা দরকার।

এরূপ ১ বর্গমিটার বীজতলার চারা দিয়ে ২৫-৩০বর্গমিটার জমি রোপণ করা যাবে। শুকনো বীজতলার জন্য বীজ জাগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

ভেজা বীজতলায় বীজ বেডের উপর থাকে বলে পাখিদের নজরে পড়ে। তাই বপনের সময় থেকে ৪/৫ দিন পর্যন- পাহারা দিতে হবে। 

বীজতলার পরিচর্যা

বীজতলায় সব সময় নালা ভর্তি পানি রাখা দরকার। বীজ গজানোর ৫-৬ দিন পর বেডের উপর ২-৩ সেন্টিমিটার পানি রাখলে আগাছা ও পাখির আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

বোরো মৌসুমে শীতের জন্য চারার বাড়-বাড়তি ব্যহত হয়। এ কারণে রাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে ঠান্ডাজনিত ক্ষতি থেকে চারা রক্ষা পায় এবং চারার বাড় বাড়তি বৃদ্ধি পায়।

বীজতলায় আগাছা, পোকামাকড় ও রোগবালাই দেখা দিলে তা দমন করার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বীজতলায় চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম করে ইউরিয়া সার উপরি-প্রযোগ করলেই চলে।

ইউরিয়া প্রয়োগের পর চারা সবুজ না হলে গন্ধকের অভাব হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। তখন প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম সার উপরি-প্রয়োগ করা দরকার।

ইউরিয়া সারের উপরি-প্রয়োগের পর বীজতলার পানি নিষ্কাশন করা উচিত নয়।

চারা উঠানো 

চারা উঠানোর আগে বীজতলায় বেশি করে পানি দিতে হবে যাতে বেডের মাটি ভিজে একেবারে নরম হয়ে যায়। চারা উঠাতে এমন সাবধানতা নিতে হবে যেন চারা গাছের কান্ড মুচড়ে বা ভেঙ্গে না যায়। 

চারা বহন

বীজতলা থেকে রোপণ ক্ষেতে চারা বহন করার সময় পাতা ও কান্ড মোড়ানো রোধ করতে হবে। এজন্য ঝুড়ি বা টুকরিতে এক সারি করে সাজিয়ে ভারের সাহায্যে চারা বহন করা উচিত। বস্তাবন্দী করে ধানের চারা বহন করা উচিত নয়। 

রোপনের জন্য জমি তরি

জমিতে হেক্টরপ্রতি ৩-৫ টন পরিমাণ জৈব সার ভালভাবে ছিটিয়ে দিন। এখন ৫-১০ সেন্টিমিটার পানি দিয়ে দুটি চাষ আড়াআড়িভাবে দিয়ে ৭-৮ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

এবার ১০-১৫ সেন্টিমিটার গভীর করে আড়াআড়িভাবে দুটি চাষ ও দুটি মই দিয়ে ৩-৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপর দিতে হবে শেষ চাষ।

এ চাষের আগেই নাইট্রোজেন (১ম কিস্তি), পটাশ, ফসফেট এবং জিপসাম সার ছিটিয়ে চাষ শুরু করতে হবে। সারের পরিমাণ সার ব্যবস্থাপনা অংশ থেকে দেখে নিতে হবে।

জমির মাটি ভেদে শেষ চাষ এক বা দুবার হতে পারে। মই দিতে হবে ২-৩ বার জমি সমান হয় এবং সমস- জমিতে কই গভীরতায় পানি থাকে উওমরূপে কাদা করে তৈরি জমিতে পানির অপচয় কম হয়, নাইট্রোজেন সারের কার্যকারিতা বাড়ে, অনেক আগাছা দমন হয় এবং অতি সহজে  চারা রোপণ করা যায়। 

চারা রোপন 

চারার বয়স

ভাল ফলন পেতে হলে উপযুক্ত বয়সের চারা রোপণ করা জরুরি। সাধারণভাবে আউশে ২০-২৫ দিন, রোপা আমনে ২৫-৩০ দিন এবং বোরাতে ৩৫-৪৫ দিন হওয়া উচিত।

রোপনের নিয়ম

রোপণের সময় জমিতে ছিপছিপে পনি থাকলে চলে। প্রতি গুছিতে ২-৩ টি চারা রোপণ করা ভাল। মাটির ২-৩ সেন্টিমিটার গভীরতায় চারা রোপণ করা উত্তম। সঠিক গভীরতায় চারা রোপণ করলে চারার বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং কুশির সংখ্যা বেশি হয়।

জাতের বৈশিষ্ট

বিআর ১

বোরো ও আউশ মৌসুমে  আবাদযোগ্য এ ধানের জনপ্রিয় নাম চান্দিনা । কোন কোন অঞ্চলে এ ধান ৫৩২ আবার কোথাও কেবল  ৭৬ নামে পরিচিত । চান্দিনা একটি আগাম জাত । 

বিআর ২

এ ধানের জনপ্রিয় নাম মালা । এ ধানের মুড়ি  খুব ভাল হয়। মালা বোরো এবং রোপা আউশের একটি জাত।

বিআর ৩ 

এ ধানের জনপ্রিয় নাম বিপ্লব। এটি নাবী জাত হলেও বোরো মৌসুমে ফলনের জন্য সুখ্যাত। জাত রোপা আউস এবং রোপা আমন মৌসুমেও ভাল ফলন দেয়। 

বিআর ৪

এ ধানের জনপ্রিয় নাম ব্রিশাইল। এটি একটি আলোক-সংবেদনশীল জাত। তাই কেবল রোপা আমন মৌসুমে চাষাবাদ  করার জন্য উপযোগী।

এ ধানের বীজ বপনের সবচেয়ে ভাল সময় হলো আষাঢ় মাস। এ সময় বীজ বপন করলে শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ে চারা রোপণ করা যায়।

কার্তিকের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহে ফুল ফোটে। অগ্রহায়ণের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে ধান পাকে। 

বিআর ৫

আমন মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয়তা নাম দুলাভোগ। এর  চালের কালিজিরা চালের মতো সুগন্ধ আছে বলে পোলাও এবং পায়েশ তৈরির জন্য খুবই উপোযোগী। এটি আলোক- সংবেদনশীল, তাই এর চাষাবাদ রোপা আমন মৌসুমের জন্য নির্ধারিত। 

বিআর ৬

বোরো ও আউশ  মৌসুমের জাত। ব্রি এ ধানটি ইরি থেকে সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আশানুরুপ ফলন পাওয়ায় বিআর ৬ নামে অনুমোদন পায়। এটি একটি আগাম জাত। 

বিআর ৭

ঝড়-ঝঞ্ঝা কম হয় এমন অঞ্চলে এ ধান রোপা আউশ ও বোরো মৌসুমের জন্য উপযোগী। কারণ ধান বেশি পেকে গেলে ঝড়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তাই এ ধান  পাকার সাথে সাথে কর্তন করতে হবে। এর চালের আকার প্রায় বাসমতির মতো, তবে এতে সুগন্ধি নেই।

বিআর ৮

এ জাতের জনপ্রিয় নাম আশা। বোরো এবং আউশ মৌসুমের এ জাত ধান শীষের সাথে শক্তভাব লেগে থাকে । তাই ঝড়-ঝঞ্ঝা এবং শিলা বৃষ্টি-প্রবণ এলাকার জন্য এ ধান বিশেষ উপযোগী।

বিআর ৯

বোরো ও আউশ  মৌসুমে চাষের উপযোগী। বিআর ৯ এর জনপ্রিয় নাম সুফলা। এ জাতে ধান শীষের সাথে শক্তভাবে লেগে থাকে তবে আশা ধানের চেয়ে মজবুতি কিছু কম। এ জাত শিলাবৃষ্টি-প্রবণ এলাকার জন্য খুবই উপযোগী। 

বিআর ১০

এ ধানের জনপ্রিয় নাম প্রগতি। এজাতটি সহজে চেনা যায। কারণ ফুল ফোটার সময় শীষগুলো ডিগপাতার নিচে থাকে এবং ডিগপাতার শেষ প্রান- হঠাৎ করেই সুচালো। প্রগতিকে রোপা আমনের নাবী জাতের তালিকায় ফেলা যায়।  

বিআর ১১

এ ধানের জনপ্রিয় নাম মুক্তা। এ ধানের ফুল ফোটার সময় শীষ ডিগপাতার উপরে থাকে এবং সহজেই দৃষ্টি কাড়ে।

আমন মৌসুমের এ জাতটি সারা দেশে জনপ্রিয়। মুক্তা ধান স্বল্প আলোক সংবেদনশীলতাবিশিষ্ট। স্বল্প আলোক সংবেদনশীলতার জন্য এ জাত জ্যৈষ্ঠের ২০-২৫ তারিখে বপন করলে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে ফসল কাটা যায়; ফলে ঐ জমিতে সময়মতো গম, ডাল ও তেল ফসল আবাদ করা যায়।

বিআর ১২

বোরো ও আউশ মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয় নাম ময়না। এ ধানের গাছের নিচের অংশে বেগুনী রঙ দেখে জাতটি সহজে চেনা যায়।এ জাতটি দেশের যে সকল অঞ্চলে আগাম রোপা আউশ হয় ঐ সব এলাকার জন্য খুবই ভাল জাত।

বিআর ১৪

এর জনপ্রিয় নাম গাজী। বোরো ও আউশ মৌসুমের এ জাত ছড়া বের হবার পর ডিগপাতা কিছুটা হেলে যায়; ফলে শীষ উপরে দেখা যায় এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করে।  ছড়ার উপরি ভাগের ধানে হেলে শুঙ আছে। ধানের গাছ বেশ উঁচু এবং খুব মজবুত, তাই ধান পাকার সময় মাঠ কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায় না। এ জন্যে দেশের বিল অঞ্চলে বোরো মৌসুমে এটি খুবই জনপ্রিয়।

বিআর ১৫

বোরো ও আউশ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বিআর ১৫ নামে অনুমোদন লাভ করে। এর জনপ্রিয় নাম মোহিনী । এ জাতের চাল প্রায় স্থানীয় শানীয় ধানের মতো, কিন’ এটি নাবী জাত।

বিআর ১৬

বোরো ও আউশ মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয় নাম শাহীবালাম। এ ধানের চাল পুরানো আমলের বালাম সমমানের এবং বর্তমানে মুড়ি তৈরি জন্য খ্যাতি লাভ করেছে।

এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চ ফলনশীল বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের ধান বাজারে পাওয়া যায়। 

সিনজেনন্টা, এসিআই, অটো ক্রপ কেয়ার, সেমকো, লাল তীর ও সুপ্রিম সীড এ সকল কোম্পানির বহু ধরনের উচ্চফলনশীল হাইব্রিড বীজ বাজারে পাওয়া যায়। যা অধিক ফলনের সহায়তা করে।

সার ব্যবস্থাপনা

সারের নাম পরিমান (শতক প্রতি)
পচা গোবর বা কম্পোস্ট২০ কেজি
ইউরিয়া৩৬০-৮৪০ গ্রাম
টিএসপি৩০০-৫০০ গ্রাম
এমওপি১৬০-২৮০ গ্রাম
জিপসাম২৪০-২৮০ গ্রাম
দস্তা৪০ গ্রাম

বালাই ব্যবস্থাপনা

পোকা/ রোগের নামকীটনাশক
মাজরা পোকা,গান্ধী পোকা,পামড়ি পোকা, ছাতরা পোকা,চুঙ্গী পোকা,গলমাছি, পাতা মোড়ানো পোকা, পাতার শোষক পোকা ভিরতাকো, ডায়াজিনন, ক্লোরোপাইরিফস, 
বাদামী ঘাস ফড়িং অথবা কারেন্ট পোকা পাইটাফ, ইমিটাফ, টিডো, এসাটাফ
আর্লি ব্লাস্ট, লেটলি ব্লাস্টএমিস্টার টপ, এজোসিফ, নাভারা
পাতা পোড়া রোগ, বাদামী দাগ রোগ, খোল পচা রোগ, খোল পোড়া রোগ আউয়াল,নোইন, কনটাফ, বনডেস্
শীষ মাড়া, হপার বার্ন (ধানের শীষ পাকার আগ মূহুর্তে)  টুপার, নাটিবো একসাথে পাইটাফ,এসেটাফ

ফলন

আউশের চেয়ে আমনের আবার আমনের চেয়ে বোরোর ফলন বেশি হয়ে থাকে। উল্লেখ্য স্থানীয় জাতের তুলনায় উফশী জাতের ফলন বেশি হয়ে থাকে। উফশী জাতের ধানের হেক্টরপ্রতি ফলন ৫-৬ টন এবং শতক (৪০ বর্গমিটার) প্রতি ২০-২৪ কেজি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *