মিষ্টি আলু চাষ পদ্ধতি

মিষ্টি আলু খেতে খুবই সুস্বাদু ও মজাদার। মিষ্টি আলু শুধু সুলভ ও সহজলভ্য এবং সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। তাই আসুন মিষ্টি আলুর সঠিক চাষাবাদ সম্পর্কে জেনে নিই।

মিষ্টি আলু চাষ

মিষ্টি আলু খেতে খুবই সুস্বাদু ও মজাদার। মিষ্টি আলু শুধু সুলভ ও সহজলভ্য এবং সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর।

মিষ্টি আলু রান্না করে, সিদ্ধ করে কিংবা পুড়িয়ে খাওয়া যায়।  এছাড়াও সুপ বানাতেও এ সবজিটি ব্যবহার করা যায়।

তাই আসুন মিষ্টি আলুর সঠিক চাষাবাদ সম্পর্কে জেনে নিই।

মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুণ

এ সবজি ভিটামিন বি৬-এর একটি ভালো উৎস। এটি আমাদের শরীরে হোমোসাইস্টিন নামের কেমিক্যাল কমাতে সহায়তা করে।এই কেমিক্যাল হৃদরোগসহ নানা ধরনের অসুখের অন্যতম কারণ।

এছাড়াও মিষ্টি আলু ভিটামিন সি ও ডিএর সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন সি ঠাণ্ডা প্রতিরোধে ও ভিটামিন ডি স্বাস্থ্যকর হাড়, হার্ট, নার্ভ, ত্বক ও দাঁতের জন্য জরুরি। মিষ্টি আলু আয়রনেরও ভালো উৎস।

এটি আমাদের শরীরে শ্বেতকণিকা তৈরি, চাপ প্রতিরোধ, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর রাখাসহ নানা কাজে আসে। মিষ্টি আলুতে ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়ামও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ধমনী, রক্ত, হাড় ও মাংসপেশির সুস্থতায় ও নার্ভের সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন।

পটাশিয়াম হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে, কিডনি সুরক্ষায় ও কর্মক্ষমতা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে উপকারী। মিষ্টি আলুতে প্রাকৃতিকভাবে চিনি থাকলেও তা খুব ধীরে ধীরে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়।

মিষ্টি আলুর জাত

আমাদের দেশে মিষ্টি আলুর বিভিন্ন জাত রয়েছে। যেমন – বারি মিষ্টি আলু-১, বারি মিষ্টি আলু-২, বারি মিষ্টি আলু-৩, বারি মিষ্টি আলু-৪, বারি মিষ্টি আলু-৫ ইত্যাদি।

মিষ্টি আলু চাষ পদ্ধতি

উপযুক্ত জমি ও মাটি তৈরি

মিষ্টি আলু প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে দোঁআশ ও বেলে দোআঁশ মাটি মিষ্টি আলু চাষের জন্য ভাল। নদীর চরের বালি প্রধান মাটিতে ও মিষ্টি আলু চাষ করা যায়।

চারা রোপন

মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর মাস মিষ্টি আলু চাষের উপযুক্ত সময়। লতার সংখ্যা প্রতি শতকে ২২০-২৩০ টি প্রয়োজন হয়।লতার মাথা থেকে ১ম ও ২য় খন্ড রোপণ করা উচিত।

সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সে.মি. এবং আলু থেকে আলুর দূরত্ব ৩০ সে.মি. হতে হবে। সমতল পদ্ধতিতে সারি তৈরি করে লাগাতে হবে যাতে ২-৩ টি গিট মাটির নিচে থাকে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

সারের নামসারের পরিমান (শতক প্রতি)
গোবর/জৈব সার৪০ কেজি
ইউরিয়া৬০০ গ্রাম
টিএসপি৫০০ গ্রাম
এমওপি৭৩০ গ্রাম

গোবর, টিএসপি, ইউরিয়া ও এমওপি সারের এক চতুর্থাংশ বপনের সময় জমিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া এবং এমওপি সার বপনের দুই মাস পর সারির পাশে প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ পদ্ধতি

জমির আর্দ্রতা উপর নির্ভর করে ২-৩ টি সেচ দিতে হবে। ইউরিয়া সার পার্শ্ব প্রয়োগের সময় ২ বার গাছের গোড়া বেঁধে দিতে হবে।

পোকামাকড় ও তার প্রতিকার

১) উইভিল পোকা

পূর্ণ বয়স্ক উইভিল প্রায় ৬ মিমি. লম্বা এবং ১.৪ মিমি চওড়া হয়ে থাকে। এ পোকার মাথায় শুড়ের মত একটি মুখাংশ আছে। মাথা এবং শাখার উপরিভাগ গাঢ় নীল রং এর এবং চোখ ও পা উজ্জল লাল কমলা বর্ণের।

এই পোকা কন্দমূলের ভিতর আঁকাবাকা সুড়ঙ্গ করে ক্ষতি করে থাকে । উইভিল আক্রান্ত কন্দমূল খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে।

প্রতিকার

মিষ্টি আলু গাছের গোড়ার আলুতে মাটি তুলে দিলে এ পোকা দমন করা যায়। আক্রান্ত মিষ্টি আলু ভাল মিষ্টি আলুর সাথে রাখা যাবে না।

মাটিতে লতা লাগানোর ৭ দিন পর থেকে ১৫ দিন পরপর মোট ৪ বার সুমিথিয়ন কীটনাশক ওষুধ ছিটালে এ পোকা দমন করা যায়।

ফসল সংগ্রহ

চারা রোপণের ১৩০-১৫০ দিনের ভেতর মিষ্টি আলু তুলে সংগ্রহ করা যায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *