নামমাত্র খরচে লাভ করুন অধিক টাকা জানুন ভুট্টা চাষের সঠিক ও নির্ভুল চাষ পদ্ধতি
ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টা দানার পুষ্টিমান বেশি এবং দেশে ভুট্টা দানার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।এখন আমরা আলোচনা করবো ভুট্টার সঠিক চাষাবাদ সম্পর্কে।
ভুট্টা একটি অধিক ফলনশীল ও বহুমুখী ব্যবহার সম্পন্ন দানা শস্য। বাংলাদেশের ভুট্টা চাষ বাড়ছে । ভুট্টা বর্ষজীবী গুল্ম প্রকৃতির। একই গাছে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল জন্মে। পুরুষ ফুল একটি মঞ্জরিদন্ডে বিন্যস্ত হয়ে গাছের মাথায় বের হয়। স্ত্রী ফুল গাছের মাঝামাঝি উচ্চতায় কাণ্ড ও পাতায় অক্ষকোন থেকে মোচা আকারে বের হয়। স্ত্রী ফুল নিষিক্ত হলে মোচার ভিতরে দানা সৃষ্টি হয়। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টা দানার পুষ্টিমান বেশি। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসাবে এবং এর রসাল গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গবাদিপশু. হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসাবে আমাদের দেশে ভুট্টা দানার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষক ভাইরা বর্তমানে ভুট্টা চাষে বেশি মনযোগী হচ্ছেন এবং লাভবান হচ্চেন। তাই চলুন জানি ভুট্টা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
ভুট্টার জাত নির্বাচন
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ভুট্টার অনেকগুলো উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেছে। তারমধ্যে বর্ণালি, শুভ্রা, মোহর, বারি ভুট্টা-৫, বারি ভুট্টা-৬,বারি ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-২, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৩ অন্যতম। এছাড়া খই (পপ কর্ণ) এজন্য বের করেছে খই ভুট্টা এবং কচি অবস্থায় খাওয়ার জন্য বের করেছে বারি মিষ্টি ভুট্টা-১। এর বাইরে বিভিন্ন বীজ কোম্পানি বিদেশি থেকে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা বীজ আমদানি করে থাকে।
ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
ভুট্টা চাষের জমি ও মাটি নির্বাচন
বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উত্তম। তবে খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন পানি না জমে।
ভুট্টার বপনের সময়
আমাদের দেশে রবি মৌসুমে অক্টোবর-নভেম্বর এবং খরিপ মৌসুমে মধ্যে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
ভুট্টা বীজের হার ও ভুট্টা বপন পদ্ধতি
বারি ভুট্টা জাতের জন্য হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ কেজি এবং খই ভুট্টার জন্য ১৫-২০ কেজি হারে বীজ সারিতে বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সেন্টিমিটার এবং সারিতে ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে ১ টি অথবা ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে ২ টি গাছ রাখতে হবে।
ভুট্টা চাষের জন্য জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
আমাদের দেশে রবি মৌসুমে ভুট্টা চাষ বেশি হয়ে থাকে। ৪-৫ গভীর চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। ভুট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের পরিমাণ নিচে দেওয়া হলো-
সারের নাম | সারের পরিমাণ (কেজি / হেক্টর) |
ইউরিয়া | ১৭২-৩১২ |
টিএসপি | ১৬৮ -২১৬ |
এমওপি | ৯৬-১৪৪ |
জিপসাম | ১৪৪-১৬৮ |
ভুট্টা চাষের জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে মোট ইউরিয়ার এক-তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে জমি চাষ দিতে হবে। এছাড়াও এ সময় হেক্টর প্রতি জিংক সালফেট ১০-১৫ কেজি, বোরন সার ৫-৭ কেজি এবং গোবর সার ৫ টন প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
বাকি ইউরিয়া সমান দুই কিস্তিতে ভাগ করে, প্রথম কিস্তি বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ গজানোর ৪০-৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে।
চারার বয়স একমাস না হওয়া পর্যন্ত জমির আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তির ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সময় দুই সারির মাঝখান থেকে মাটি গাছের গোড়া বরাবর তুলে দিতে হবে।
ভুট্টা চাষে সেচ প্রয়োগ
উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে ৩-৪ টি সেচ দেওয়া প্রয়োজন। ৫ পাতা পর্যায়ে প্রথম, ১০ পাতা পর্যায়ে দ্বিতীয়, মোচা বের হওয়ার সময়ে তৃতীয় এবং দানা বাঁধার পূর্বে চতুর্থ সেচ দিতে হয়। ভুট্টার জমিতে যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ভুট্টার পোকা দমন ব্যবস্থাপনা
ভুট্টা ফসলের পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। তবে চারা অবস্থায় কাটুই পোকার লার্ভা গাছের গোড়া কেটে দেয়। এরা দিনের বেলায় মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে এবং রাতে বের হয়। সদ্য কেটে ফেলা গাছের চারপাশে মাটি খুড়ে পোকার লার্ভা বের করে মেরে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ফুরাডান অথবা ডারসবার্ন অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিতে হবে।
ভুট্টা ফসলের রোগ
ভুট্টা ফসলে বেশ কয়েকটি রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন- ভুট্টার বীজ পচা ও চারা মরা রোগ, পাতা ঝলসানো রোগ, কান্ড পচা রোগ, মোচা ও দানা পচা রোগ। এ রোগগুলো বিভিন্ন ধরনের বীজ ও মাটিবাহিত ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে। ভুট্টার বীজ বপনের সময় মাটিতে রস বেশি এবং তাপমাত্রা কম থাকলে বীজ পচা ও চারা মরা রোগ দেখা দেয়। পাতা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়। পরে তা গাছের উপরের অংশে ছড়িয়ে পড়ে। রোগের আক্রমণ বেশি হলে পাতা আগাম শুকিয়ে যায় এবং গাছ মরে যায়।
ভুট্টার রোগ দমন পদ্ধতি
- রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে।
- বীজ বপনের পূর্বে শোধন করে নিতে হবে।
- ভুট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- একই জমিতে বারবার ভুট্টা চাষ বন্ধ করতে হবে।
ভুট্টা সংগ্রহ ও মাড়াই
মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে, দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ব হলে ফসল সংগ্রহ করা যাবে। মোচা সংগ্রহের পর ৪-৫ দিন রোদে শুকাতে হবে। অতঃপর হস্ত বা শক্তিচালিত মাড়াই যন্ত্র দ্বারা দানা ছাড়িয়ে বাছাই-ঝাড়াই করে সংরক্ষন করতে হবে।
ভুট্টার জীবনকাল
রবি মৌসুমে ভুট্টা গাছের জীবনকাল ১৩৫-১৫৫ দিন এবং খরিপ মৌসুমে জীবনকাল ৯০-১১০ দিন।
ভুট্টার ফলন
বাংলাদেশে রবি মৌসুমে ভুট্টার ফলন বেশি হয় এবং খরিপ মৌসুমে ফলন কম হয়। জাতও মৌসুমভেদে ভুট্টার ফলন ৩.৫-৮.৫ টন / হেক্টর হয়ে থাকে।
FAQs
প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫-৪৫ মণ ভুট্টা হয়।
প্রায় ২০০ প্রকারেরও বেশি ভুট্টা রয়েছে।
ভুট্টার ৫টি প্রধান প্রকার হলো ফ্লিন্ট, ময়দা, ডেন্ট, পপ, মিষ্টি এবং মোম।
জুন মাসে মিষ্টি ভুট্টা আসে ফ্লোরিডা থেকে।
হাইব্রিড ভুট্টার চাষ পদ্ধতি হলো ভুট্টা চাষের আগে জমি তৈরীর সময় রাসায়নিক ও জৈব সার ভালোভাবে জমিতে মিশিয়ে হাইব্রিড ভুট্টার বীজ জমিতে ছড়িয়ে দেওয়া।
ভুট্টা বীজের দাম ৭০০-৮০০ টাকা।
উন্নত জাতের ভুট্টার নাম হলোঃ- সাউ (এসএইউ) হাইব্রিড ভুট্টা-১ এবং সাউ হাইব্রিড ভুট্টা-২।