রজনীগন্ধা ফুলের চাষ পদ্ধতি
রজনীগন্ধা ফুলটি উৎসব,অনুষ্ঠান, গৃহসজ্জা, তোড়া, মালা, অঙ্গসজ্জায় বেশি ব্যবহৃত হয়।এখন অমরা আলোচনা করবো রজনীগন্ধাফুলের সঠিক চাষাবাদ সম্পর্কে ।
সাদা ও সুবাসিত রজনীগন্ধা ফুলটি আমাদের সকলের প্রিয় একটি ফুল। রাতের বেলা এ ফুল সুগন্ধ ছড়ায় বলে একে রজনীগন্ধা বলে। উৎসব,অনুষ্ঠান, গৃহসজ্জা, তোড়া, মালা, অঙ্গসজ্জায় ফুলটি বেশি ব্যবহৃত হয়। ফুলের পাপড়ির সারি অনুসারে রজনীগন্ধাকে দুইটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যেসব জাতে পাপড়ি এক সারিতে থাকে তাকে সিঙ্গেল বলে।পাপড়ি দুই বা ততোধিক সারিতে থাকলে ডাবল বলে।
এখন আমরা আলোচনা করবো রজনীগন্ধা ফুল সঠিক চাষাবাদ সম্পর্কে।
বংশবিস্তার
বাংলাদেশের কন্ধ থেকে রজনীগন্ধার বংশবিস্তার করা হয়। কন্দগুলো দেখতে পেঁয়াজের মতো। শীতকালে এগুলো মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। শীতের শেষে কন্দের ঝাড়গুলো বের করে কন্দ আলাদা করা হয়। রোপণের জন্য ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার আকারে কন্দ হলেই চলে।
রজনীগন্ধা ফুলের চাষ পদ্ধতি
কন্দ রোপন
রজনীগন্ধার জন্য পর্যাপ্ত আলো- বাতাসযুক্ত জমি নির্বাচন করা উচিত। দোআঁশ ও বেলে- দোআঁশ মাটিতে রজনীগন্ধা ভালো জন্মে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে কন্দ রোপন করা হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০-১৫ সেন্টিমিটার হিসাবে কন্দগুলো ৪-৫ সেন্টিমিটার গভীরতা বসাতে হবে। কন্দ বসানোর ৩-৪ মাস পর গাছ ফল দেয়।
সার প্রয়োগ
৩-৪ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমি তৈরির সময় হেক্টর প্রতি ১০ টন পচা গোবর, ২০০ কেজি ইউরিয়া, ৩০০ কেজি টিএসপি,৩৫০ কেজি এমওপি সার ভলোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। কন্দ রোপণের ৩০-৪৫ দিন পর আবার ১২৫ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা
রজনীগন্ধার জমিতে সব সময় পর্যাপ্ত রস থাকা দরকার। আবার পানির জমাও উচিত নয়, পানি জমলে কন্দগুলো পচে যেতে পারে। সেজন্য জমির অবস্থা বুঝে সেচ দেওয়া দরকার। কন্দ রোপণের ঠিক পরে একবার, গাছ গজানোর পরে একবার ও গাছের উচ্চতা ১০-১৫ সেন্টিমিটার হলে আরেকবার সেচ দিতে হবে। এছাড়া ফুল ফোটা শুরু হলে, দুই – একবার সেচ দিলে বেশি করে ফুল ফোটে এবং ফুল ঝরাও কমে যায়। প্রতিবার সেচের পর, জমিতে জো এলে নিড়ানি দিয়ে মাটি চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
রজনীগন্ধা গাছে ক্ষতিকারক পোকামাকড় তেমন দেখা যায় না। তবে বর্ষাকালে ছত্রাকজনিত গোড়া পচা রোগ অনেক সময় বেশ ক্ষতি করে। এ রোগের কারণে গাছের নিচের দিকে মাটির কাছে পচন ধরে ও গাছ শুকিয়ে মারা যায়। এ রোগ দমনের জন্য জমিতে যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটিতে শতক প্রতি টিণ্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে হবে।
ফুল কাটা
বাজারে রজনীগন্ধা বিক্রি হয় মূলত লম্বা পুষ্পদন্ড বা ডাঁটাসহ অথবা ডাঁটা ছাড়া ঝরা ফুল হিসেবে। ঝরাফুল মালা তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হয়। ফুল ফোটার পূর্বে ফুলের ডাঁটাসহ কেটে ফুল সংগ্রহ করা হয়। সন্ধ্যা ভোরের দিকে ফুল কাটা ভালো। কাটার পর ডাঁটার নিচের অংশ পানিতে ডুবিয়ে রাখা উচিত। এতে ফুলের সতেজতা ও উজ্জলতা বজায় থাকে। ডাঁটাসহ ফুল আঁটি বেঁধে কালো পলিথিনে জড়িয়ে বাজারে পাঠানো উচিত।