জৈব বালাইনাশক কি? জৈব বালাইনাশকের তালিকা ও ব্যবহার
জৈব বালাইনাশক হলো পরিবেশ বান্ধব ও রোগ-বালাই দমনের জন্য অতন্ত্য কার্যকরী। তাই আমরা বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক সর্ম্পকে জেনে নিই।
জৈব বালাইনাশক হলো প্রাকৃতি উৎস হতে আহরিত বাইনাশক যা পরিবেশ বান্ধব ও কেবলমাত্র নির্দিষ্ট পোকা-মাকড় অথবা রোগবালাই দমনের জন্য কার্যকরিী। এটি দ্রুত পরিবেশের সাথে মিশে যায় বলে পরিবেশের বা ফসলে এর কোন অবশিষ্টাংশ থাকে না।
জৈব বালাইনাশকের প্রকারভেদ
- ফেরোমন : প্রধানত : সেক্স ফেরোমন (বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকার জন্য)
- অণুজীব জৈব বালাইনাশক (উপকারী ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি)
- উদ্ভিদ উৎস হতে আহরিত জৈব বালাইনাশক (বোটানিক্যাল)
- জৈব রাসায়নিক বালাইনাশক (বায়োকেমিক্যাল)
- বায়ো-কন্ট্রোল এজেন্ট (উপকারী বন্ধু পোকা)
জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের সুবিধা
১. জৈব বালাইনাশক দ্রুত পরিবেশের সাথে মিশে যায় ফলে এটি ব্যবহার করে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করা যায়।
২. জৈব বালাইনাশক একটি সহজ, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকারী পোকা-মাকড় রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি।
৩. জৈব বালাইনাশক প্রাকৃতিক উৎস হতে আহরিত হাওয়াই এর বিরুদ্ধে পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই সমূহ সহজেই প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারেন না।
৪. নির্দিষ্ট ক্ষতিকর পোকা-মাকড় অথবা রোগ-বালাই এর উপরেই কেবলমাত্র কাজ করে ফলে অন্যান্য উপকারী পোকা-মাকড় এর জন্য জৈব বালাইনাশক নিরাপদ।
৫. জৈব বালাইনাশক পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ফলে এর দ্বারা পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না।
৬. জৈব বালাইনাশক ব্যবহারকারী ও ভোক্তা উভয়ের জন্যই নিরাপদ।
৭. জৈব বালাইনাশক দীর্ঘদিন ব্যবহারে ফসল উৎপাদন খরচ কমতে থাকে।
৮. দীর্ঘদিন ব্যবহারে ও জৈব বালাইনাশক গাছে কোন বিষাক্ততার সৃষ্টি করে না।
ফেরোমন ট্র্যাপ
ট্রাপ বালতি আকৃতির, রয়েছে দুটি অংশ- ঢাকনা ও বডি। ট্রাপ ঝুলিয়ে রাখার জন্য এতে দুদিকে ছিদ্র আছে। এটি সহজে পরিবহন উপযোগী। ঢাকনা গোলাকার, লাল বর্ণের এবং এতে ফেরোমন টোপ ঝুলানো ব্যবস্থা রয়েছে। বডি স্বচ্ছ, দুই পাশে ত্রিকোণাকারভাবে কাটা ও গুঁড়া সাবান মিশ্রিত পানির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য দাগ রয়েছে।
ট্র্যাপে ফেরোমন টোপ ঝুলানো ও জমিতে স্থাপন পদ্ধতি
১. ট্রাক এ ত্রিকোণাকারভাবে কর্তিত অংশের মাঝ বরাবর তার দিয়ে ফেরোমন লিউর / টোপটি ঝুলিয়ে দিতে হবে।
২. ট্রাপ এর তলায় গুঁড়া সাবান এক চিমটি মিশ্রিত পানি এমনভাবে দিতে হবে যাতে টোপটি পানির এক ইঞ্চি উপরে থাকে।
৩. ত্রিকোণাকারভাবে কর্তিত অংশ উত্তর-দক্ষিণ বরাবর রাখা উত্তম।
৪. ৪/৫ দিন পর পর পোকাসহ সাবান মিশ্রিত পানি ফেলে নতুনভাবে গুঁড়া সাবান এক চিমটি মেশানো পানিতে দিতে হবে।
৫. ফুল ও ফল যে উচ্চতায় থাকে সে উচ্চতায় ফেরোমন ফাঁদটি দুটি খুঁটির সাহায্যে শক্তভাবে বেঁধে দিতে হবে অথবা গাছে ঝুলিয়ে দিতে হবে।
কিউ-ফেরা
করলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, পটল, চাল কুমড়া, ক্ষিরা, ঝিঙ্গা, কাকরোল, চিচিঙ্গা, উচ্ছে, ধুন্দল, তরমুজ, বাঙ্গি ইত্যাদি কুমড়াজাতীয় ফসলের মাছি পোকা দমনে কিউ-ফেরা ফেরোমন টোপ অত্যন্ত কার্যকরী।
বিএসএফবি-ফেরো
বেগুনের মাজরা পোকা দমনে বিএসএফবি-ফেরো ফেরোমন টোপ অত্যন্ত কার্যকরী।
ব্যাকট্রো-ডি
আম, পেয়ারা ও কমলার মাছি পোকা দমনের জন্য ব্যাকট্রো-ডি ফেরোমন টোপ অত্যন্ত কার্যকরী।
স্পোডো-লিউর
ফুলকপি, বাঁধাকপি, তরমুজ, তামাক ও কচু’র লেদা পোকা: টমেটো, মরিচ ও সরিষার ফল ছিদ্রকারী পোকা এবং তুলার আঁচাপোকা ইত্যাদি দমনের জন্য স্পোডো-লিউর ফেরোমন টোপ অত্যন্ত কার্যকরী।
বায়ো-চমক
ধানের মাজরা, কারেন্ট পোকা ও পাতা মোড়ানো পোকা; বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা; সবজির লেদা পোকা;সীম ও বরবটির ফল ছিদ্রকারী পোকা এবং ভুট্টার ফল আর্মিওয়ার্ম।