কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় | সবজি চাষ পদ্ধতি

জানুন বিভিন্ন ঋতুতে কোন কোন সবজি চাষ করা যায় এবং সবজি চাষের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত।

কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়

বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কৃষকেরা যুগ যুগ ধরে সবজি চাষ করে আসছে। কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ বসতবাড়ির আঙ্গিনার অনেক জায়গা খালি থাকে এবং এলোমেলোভাবে সবজি চাষ করা হয়।

নিবিড়ভাবে সবজি বাগান প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সারা বছর বিভিন্ন সবজি উৎপাদন এবং উৎপাদিত সবজি কৃষক পরিবারের সদস্যরা খাবে এবং তাদের অপুষ্টি দূর হবে। এছাড়া মহিলা ও ছেলেমেয়েদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সংস্থান করা।

একজন মানুষের দৈনিক সবজির চাহিদা গড়ে ২১৩ গ্রাম। কিন্তু আমরা বাংলাদেশিরা গড়ে মাত্র ৫৩ গ্রাম সবজি খেয়ে থাকি। শাক-সবজি ও ফল-মূল ভিটামিন ও খনিজের অন্যতম প্রধান উৎস। সে কারণে সবজি চাষের নিবিড়তা বাড়িয়ে সবজি গ্রহণের হার বাড়াতে হবে।

কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়

আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছয়টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসে  কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়।

সে জন্য বলা যায় বছরের প্রতিটি দিনই কৃষির কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চাষি ভাইরা নিজস্ব চিন্তাধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজগুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন। তাহলেই লাভবান হবেন এবং কৃষি ভুবন সমৃদ্ধ হবে। সেজন্য কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হবে তা আমাদের জানা প্রয়োজন।

গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ

(ফেব্রুয়ারি–মার্চ) ফাল্গুন মাস 

সবজির বীজতলা তৈরি, মাদাতৈরি, বীজ বপন, ঢেঁড়স, ডাঁটা লালশাক এর বীজ বপন। আগাম খরিফ-সবজির চারা উৎপাদন ও মূল জমি তৈরি, সার প্রয়োগ ও রোপণ। আলু, মিষ্টি আলু সংগ্রহ, রবি সবজির বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাগানের অন্যান্য ফসলের পরিচর্যা। আলু সংরক্ষণে বেশি যত্নবান হোন। এক্ষেত্রে জমিতে আলু গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে সমুদয় গাছ কেটে গর্তে আবর্জনা সার তৈরি করুন।

(মার্চ–এপ্রিল) চৈত্র মাস 

গ্রীষ্মকালীন বেগুন, টম্যাটো, মরিচ- এর বীজ বপন/চারা রোপণ। নাবী জাতের বীজতলাতৈরি ও বীজ বপন। যে সব সবজির চারা তৈরি হয়েছে সেগুলো মূল জমিতে রোপণ। সবজি ক্ষেতের আগাছা দমন, সেচ ও সার প্রয়োগ, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন। নাবী রবি সবজি উঠানো, বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ। মাটিতে রসের ঘাটতি হলে ফলের গুটি/কড়া ঝরে যায়। তাই প্রয়োজনীয় সেচ প্রদান, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন জরুরি।

(এপ্রিল–মে) বৈশাখ মাস 

লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন ও গ্রীষ্মকালীন টম্যাটোর চারা রোপণ। মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচাতৈরি, চারা উৎপাদন, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় দমন, সেচ প্রদান।

কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসেবে ব্যবহার। কচি সজিনা, তরমুজ, বাঙ্গি সংগ্রহ, আলুর চিপস তৈরি ও রকমারি ব্যবহার। ফল চাষের স্থান নির্বাচন, উন্নতজাতের ফলের চারা/কলম সংগ্রহ, পুরানো ফলগাছে সুষম সার প্রয়োগ, ফলন্ত গাছে সেচ প্রদান।

(মে–জুন) জ্যৈষ্ঠ মাস 

বিভিন্ন সবজির চারা রোপণ, সেচ ও সার প্রয়োগ, বিভিন্ন সবজির পরিচর্যা, সজিনা সংগ্রহ এবং গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা রোপণ ও পরিচর্যা।

ঝিঙা, চিচিংগা, ধুন্দুল, পটল, কাঁকরোল সংগ্রহ, পোকামাকড় দমন। নাবী কুমড়া জাতীয় ফসলের মাচা তৈরি, সেচ ও সার প্রয়োগএবং সপ্তাহ অন্তর কীটনাশক ব্যবহার করা। ফলের চারা রোপণের গর্ত প্রস্তুত ও বয়স্ক ফল গাছে সুষম সার প্রয়োগ, ফল সংগ্রহ, বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ।

বর্ষাকালে কি সবজি চাষ করা যায়

(জুন–জুলাই) –  আষাঢ় মাস

গ্রীষ্মকালীন বেগুন, টম্যাটো, কাঁচা মরিচের পরিচর্যা, শিমের বীজ বপন, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড়, রোগবালাই দমন ফলের চারা রোপণের গর্ত প্রস্তুত ও বয়স্ক ফল গাছে সুষম সার প্রয়োগ, ফল সংগ্রহ, বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ।

আগে লাগানো বেগুন, টম্যাটো ও ঢেঁড়সের বাগান থেকে ফসল সংগ্রহ। সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যা, সেচ, সার প্রয়োগ। ফলসহ ওষুধি গাছের চারা/কলম রোপণ, খুঁটি দিয়ে চারা বেঁধে দেয়া, খাঁচা/বেড়া দেয়া। ফল গাছে সুষম সার প্রয়োগ।

(জুলাই–আগস্ট) শ্রাবণ মাস 

বিভিন্ন সবজি যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো, বেগুন এর বীজতলা তৈরি, বীজ বপন। সবজি উঠানো ও পোকামাকড় দমন। শিমের বীজ বপন, লালশাক ও পালংশাকের বীজ বপন। রোপণকৃত ফলের চারার পরিচর্যা, উন্নত চারা/কলম রোপণ, খুঁটি দেয়া, খাঁচি বা বেড়া দেয়া, ফল সংগ্রহ, বাজারজাতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ/ সংরক্ষণ।

শরৎকালে কি সবজি চাষ করা যায়

(আগস্ট–সেপ্টেম্বর) ভাদ্র মাস 

অধিকাংশ খরিফ-২ সবজির সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও খরিফ-১ এর সবজি বীজ সংরক্ষণ। আগাম রবি সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, সবুজ ফুলকপি, টম্যাটো, বেগুন, লাউ-এর জমিতৈরি, চারা রোপণ, সার প্রয়োগ। মধ্যম ও নাবী রবি সবজির বীজতলাতৈরি, বীজ বপন সপ্তাহ অন্তর কীটনাশক ব্যবহার করা। সবজি সংগ্রহ, বীজ সংরক্ষণ। আগে লাগানো ফলের চারার পরিচর্যা। ফলের উন্নত চারা/কলম লাগানো, খুঁটি দেয়া, বেড়া দিয়ে চারাগাছ সংরক্ষণ, ফল সংগ্রহের পর গাছের অঙ্গ ছাঁটাই।

(সেপ্টেম্বর–অক্টোবর) আশ্বিন মাস 

আগাম রবি সবজির চারা রোপণ, চারার যত, সেচ, সার প্রয়োগ, বালাই দমন, নাবী রবি সবজির বীজতলাতৈরি, বীজ বপন, আগাম টম্যাটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সবুজ ফুলকপি, ওলকপির আগাছা দমন ও গোড়া বাঁধা। শিম, লাউ, বরবটির মাচাতৈরি ও পরিচর্যা। রসুন, পেঁয়াজের বীজ বপন, আলু লাগানো। ফল গাছের গোড়ায় মাটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার ও সার প্রয়োগ।

(অক্টোবর–নভেম্বর) কার্তিক মাস 

আলুর আইট বাঁধা ও আগাম রবি সবজির পরিচর্যা ও সংগ্রহ। মধ্যম রবি সবজি পরিচর্যা, সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান। নাবী রবি সবজির চারা উৎপাদন, জমি তৈরি/চারা লাগানো। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপির গোড়া বাঁধা/ আগাছা পরিষ্কার করা। মরিচের বীজ বপন/চারা রোপণ। ফল গাছের পরিচর্যা,সার প্রয়োগ না করে থাকলে সার ব্যবহার ও মালচিং করে মাটিতে রস সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া।

শীতকালীন সবজি চাষ

(নভেম্বর–ডিসেম্বর) অগ্রহায়ণ মাস 

মিষ্টি আলুর লতা রোপণ, পূর্বে রোপণকৃত লতার পরিচর্যা, পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচের চারা রোপণ, আলুর জমিতে সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান। অন্যান্য রবি ফসল যেমনঃ ফুলকপি, বাঁধাকপি, টম্যাটো, বেগুন ওলকপি, শালগম-এর চারার যত্ন, সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান, আগাছা পরিষ্কার, সবজি সংগ্রহ। ফল গাছের মালচিং এবং পরিমিত সার প্রয়োগ সপ্তাহ অন্তর কীটনাশক ব্যবহার করা।

(ডিসেম্বর–জানুয়ারি) পৌষ মাস 

আগাম ও মধ্যম রবি সবজির পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন, সবজি সংগ্রহ। নাবী রবি সবজির পরিচর্যা, ফল গাছের পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন এবং অন্যান্য পরিচর্যা।

যারা বাণিজ্যিকভাবে মৌসুমি ফুলে চাষ করতে চান তাদেরকে এ সময় ফুল গাছের বেশি করে যত্ন নিতে হবে বিশেষ করে সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে এবং মাঝের মধ্যে সেচ ব্যবস্থাপণা করা অত্যন্ত জরূরী ।

(জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি) মাঘ মাস 

আলু, পেঁয়াজ, রসুন-এর গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া, সেচ, সার প্রয়োগ, টম্যাটোর ডাল ও ফল ছাঁটা, মধ্যম ও নাবী রবি সবজির সেচ, সার, গোড়া বাঁধা, মাচা দেয়া বীজতলায় চারা উৎপাদনে বেশি সচেতন হতে হবে। কেননা সুস্থ-সবল রোগমুক্ত চারা রোপণ করতে পারলে পরবর্তীতে অনায়াসে ভাল ফসল/ফলন আশা করা যায়। ফল গাছের পোকামাকড়, রোগাবালাই দমন ও অন্যান্য পরিচর্যা।

মাটির নিচের সবজি

প্রতিদিন আমরা নানা রকমের সবজি খেয়ে থাকি। এইসব সবজির মধ্যে মাটির নিচের কিছু সবজি রয়েছে। মাটির নিচে খাবারগুলো শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, এটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।

যেমন আলু খুব ভাল শর্করার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। আবার বিট রক্তস্বল্পতা দূর করতে কার্যকরী। এছাড়াও রয়েছে –

  • গাজর
  • মুলা
  • শালগম
  • মিষ্টি আলু
  • কচু

সবজি চাষ পদ্ধতি

বসতবাড়ির আঙ্গিনার যে জায়গায় মোটামুটিভাবে সারাদিন রোদ পড়ে এবং বর্ষাকালে পানি জমে না এমন জায়গা সবজি চাষের জন্য উপযোগী। প্রয়োজনবোধে ছায়াপ্রদানকারী গাছের ডালপালা ছেঁটে নির্বাচিত স্থানে রোদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

সবজি উৎপাদনের বিভিন্ন ধরন

বসতবাড়ির আঙ্গিনার সারা বছর সবজি চাষের জন্য বেশ কিছু মডেল রয়েছে যেমন গয়েশপুর মডেল, বরেন্দ্র মডেল, সৈয়দপুর মডেল, পালিমা মডেল, কালিকাপুর মডেল, খাগড়াছড়ি মডেল ইত্যাদি। তবে সার্বিক বিবেচনায় বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সারা বছর সবজি চাষে কালিকাপুর মডেলটি বেশি ব্যবহৃত হয়।

সবজি বাগানের ধরন

এ বাগানের জন্য ৬ মিটার প্রস্থ ও ৬ মিটার দৈর্ঘ্য বা ৩৬ বর্গমিটার বা প্রায় ১ শতক জায়গা প্রয়োজন। নির্বাচিত জমির চারদিকে ৫০ সেন্টিমিটার বেড়া দেয়া ও নালা তৈরির জন্য জায়গা বাদ দিয়ে বাকি ২৫ বর্গমিটার জমিকে সমান ৫টি খণ্ডে বিভক্ত করতে হবে।

২টি খণ্ড বা বেড এর মাঝে ২৫ সেন্টিমিটার চওড়া নালা রাখতে হয়। প্রতিটি নালা অন্তত ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার গভীর রাখা দরকার। প্রতিটি বেড ৫ মিটার লম্বা ও ৮০ সেন্টিমিটার প্রস্থ হবে।

বেড়া তৈরি

সবজি রক্ষার জন্য ১ মিটার উঁচু বাঁশের বেড়া দিতে হবে। পরে ঝোপজাতীয় গাছ পাতাবাহার, কাটামেহেদি ঘন করে লাগাতে হবে যাতে পরবর্তীতে জীবন্ত বেড়া হয়। জীবন্ত বেড়ার গাছগুলি প্রায় ১ মিটার উচ্চতায় রাখার জন্য মাঝে মাঝে ছাঁটাই করতে হবে।

সবজির উৎপাদন পদ্ধতি

সবজি বাগানের ৫টি বেডে সারা বছর মোট ১৪ ধরনের সবজি চাষ করা যায়। বাগানে বেড়ার ছাউনিতে শীত মৌসুমে দেশি শিম, উচ্ছে, মটরশুটি এবং গরম মৌসুমে বরবটি, ধুন্দল ও কাকরোল চাষ করা যেতে পারে। এছাড়া বাগানের কোনায় পেপে গাছ লাগানো যায়।

৫ ভাগে সবজি বিন্যাস

  • ১ম ভাগে – মূলা টমেটো-লালশাক-পুইশাক।
  • ২য় ভাগে – লালশাক + বেগুন-লালশাক-ঢেড়শ।
  • ৩য় ভাগে – পালংশাক-রসুন-লালশাক-ডাটা-লালশাক।
  • ৪র্থ ভাগে – পেঁয়াজ- কলমিশাক-লালশাক।
  • ৫ম ভাগে – বাঁধাকপি-লালশাক-করলা লালশাক।

তবে পরিবারের চাহিদা এবং পছন্দ অনুযায়ী প্রতি খণ্ডের সবজির বিন্যাস পরিবর্তন করা যেতে পারে। বসত বাড়িতে আরো কিছু জায়গা থেকে সেগুলোকেও সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন-

  • ঘরের চাল – মানা বা বস্তা পদ্ধতিতে লতানো জাতীয় সঙ্গি (চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, লাউ) লাগানো যেতে পারে।
  • মাঁচা/বেড়া – রিঙ্গা, করলা, শীম, উচ্ছে, বরবটি প্রভৃতি লাগানো যেতে পারে।

ছায়াযুক্ত স্থান

আদা কিংবা হলুদ লাগানো যেতে পারে। স্যাঁতস্যাঁতে স্থান কচু জাতীয় সঙ্গি লাগানো যেতে পারে।

সবজি চাষের জমি তৈরি

জমিকে উত্তমরূপে চাষ এবং মই দিয়ে আগাছা, মরা ডালপালা, নুড়ি পাথর ইত্যাদি পরিষ্কার করে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে। জমির মাটি ঝুর ঝুরে হলে, গাছের শিকড় বৃদ্ধি সহজতর হয়। সাধারণত জমি তৈরির সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করলে পরবর্তীতে কোন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না।

সবজি বীজ বপন ও চারা রোপণ

অধিকাংশ সবজির বীজ বেডে সরাসরি বোনা হয়। বেগুন, টমেটো, ওলকপি, পুঁই ও পেঁয়াজের চারা এবং রসুনের কোয়া রোপন করা হয়। লালশাক, ডাটাশাকের বীজ খুব ছোট বিধায় এগুলো বালু কিংবা ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে বুনতে হয়। পালংশাকের বীজ দুই দিন ধরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে বপন করলে অংকুরোদগম ভালো হয়।

বীজ ও চারা যথাসম্ভব সারি করে সঠিক দূরত্ব বজায় রেখে বপন বা রোপণ করলে রোগ বালাই কম হয় ও অধিক ফলন পাওয়া যায়। চারা রোপণের পর কয়েকদিন চারার নিবিড় পরিচর্যার দরকার হয়। সবজির বিভিন্ন বৃদ্ধি-পর্যায়ে নিয়মিত সেচ দিতে হবে এবং ক্ষেতকে আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

সবজি চাষে সার প্রয়োগ

সারের প্রকারভেদে প্রয়োগ পদ্ধতি ও সময়ের তারতম্য হয়। যেমন ইউরিয়া ও পটাশ সার সাধারণত সবজির জমিতে দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়, যাতে গাছ সহজে গ্রহণ করতে পারে এবং তাদের অপচয় কম হয়। কিন্তু টিএসপি, জিপসাম, দস্তা সার জমির শেষ চাষের সময় দিতে হয়, কারণ এই সার ধীরে ধীরেউদ্ভিদের গ্রহণোপযোগী হয়।

সবজি ক্ষেতের বালাই দমন

সবজিতে বিভিন্ন প্রকার পোকা-মাকড় ও রোগ দেখা যায়। পাতা ও সীমজাতীয় সবজিতে জাব পোকা, কুমড়া জাতীয় সবজিতে ফলের মাছি পোকা, লাল-পাম্পকিন বিটল এবং বেগুন এর ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ বেশী হয়।

আর রোগের মধ্যে ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগই অধিক দেখা যায়। জাব পোকা দমনে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি অথবা যিথিয়ল ৫৭ ইসি, প্রতি ৫ লিটার পানিতে দুই চা চামচ (১০ মিলি) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

করলা, কাকরোল, শশা, লাউ, কুমড়া, চিচিংগার মাছি পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ বেশ কার্যকর এবং নিরাপদ। আবার টমেটো, আলুর আগাম বা নারিশা রোগ দমনে রোগ দেখা দেওয়া মাত্র বর্দোমিকচার অথবা ডায়থেন এম-৫৪ (২ গ্রাম, প্রতি লিটার পানিতে) মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।

বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষে নিম, বিষকাঠালী, রসুন, মেহগনির বীজ ইত্যাদি উপাদান দিয়ে তৈরি জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করলে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হয়। তবে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা ও আইপিএম পদ্ধতিতে বসত বাড়ির সবজি ক্ষেতের রোগ পোকা দমন করা উত্তম।

সবজি সংগ্রহ

বিভিন্ন ধরনের সবজি বিভিন্ন সময়ে সংগ্রহ করা হয়। পাতা জাতীয় সবজি যেমন – পুঁইশাক, লালশাক, গিমাকলমি, পালংশাক কচি অবস্থায় সংগ্রহ করলে স্বাদ ও পুষ্টি গুণাগুণ ভাল থাকে।

ফল জাতীয় সবজি সাধারত ফল আসার ১০-১৪ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করলে খেতে সুস্বাদু, নরম ও পুষ্টি গুণাগুণ ভাল থাকে। মুলার পাতা, মুলার চেয়ে বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং কচুর চেয়ে কচুর পাতা বেশি পুষ্টিকর। মিষ্টি কুমড়া ও চাল কুমড়া কচি ও পরিপক উভয় অবস্থাতেই সংগ্রহ করা যায়।

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *