বারোমাসি লেবু চাষ বারোমসি অর্থলাভ জানি লেবু চাষের সঠিক নিয়ম

লেবু মুখরোচক,উপাদেয় বলবর্ধক রসালো ফল। সারা বছরই এর ভালো ফলন পাওয়া যায় বলে এটি অত্যন্ত লাভজনক। আসুন লেবু চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।

লেবু চাষ পদ্ধতি

লেবু বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। লেবু মুখরোচক, উপাদেয় বলবর্ধক রসালো ফল। লেবু চাষ করা হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। লেবু সাইট্রাস জাতীয় ভিটামিন ’সি’ সমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। খাবার টেবিলে এবং সালাদে লেবু ছাড়া তো ভাবাই যায় না।এর স্বাদ বৃদ্ধির ভূমিকা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বিশেষ খাদ্যগুণ। বিশেষ করে পাতি লেবুকে ‘সি’ ভিটামিনের ডিপো বলা হয়ে থাকে।

গরমে ঠান্ডা এক গ্লাস লেবুর সরবত মূহুর্তে ক্লান্তি- দূর করে। ছোট বড় সবার জন্য লেবু এক আশ্চর্য গুণসম্পন্ন সবজি এবং ভেষজ। আমাদের দেশে শতকরা ৯১ জন লোক ভিটামিন ’সি’ এর অভাবে ভুগছেন। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের দৈনিক গড়ে ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ’সি’ খাওয়া দরকার। ভিটামিন ’সি’ সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে লেবুই একমাত্র ফল যা সারা বছর কম বেশি পাওয়া যায়। তাই আসুন লেবু চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।

আরো পড়তে পারেন – স্বল্প সময়ে বিপুল অর্থ পেতে জাননি কফি চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই

লেবুর বৈজ্ঞানিক নাম কি?

  • কমলালেবুর বৈজ্ঞানিক নাম – ‘Citrus sinensis’
  • কাগজী লেবুর বৈজ্ঞানিক নাম – ‘Citrus aurantifolia’
  • বাতাবী লেবুর বৈজ্ঞানিক নাম – ‘Citrus paradeceae’ 

লেবুর জাত

কাগজী লেবু, এলাচী লেবু, রংপুর লেবু, জামীর, সাতকরা, নাগপুরী, খাসিয়া, ক্যানু, মাল্টা ইত্যাদি জনপ্রিয় ফল।

লেবুর বংশবিস্তার পদ্ধতি

বীজ থেকে বংশবিস্তার করা হয়। কমলায় চোখ কলম করা হয়। কাগজীলেবু বা অন্যান্য জংলী জাতেও চোখ কলম করা হয়।

লেবুর মান উন্নয়ন কৌশল

সুবিধামত লেবুর চারা স্টক হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মাটি থেকে ২০-২৫ সেঃ মিঃ উচ্চতার চোখ কলম করা হয় এবং ২০-২৫ দিনের মধ্যে কুঁড়ি থেকে শাখা গজাতে আরম্ভ করে। চোখ কলম করার পর কুঁড়ি সংযোজনের উপরের ডাল বা অংশ বাঁকিয়ে রাখা হয়। পরে ৩-৪ সপ্তাহ হয়ে গেলে আগার আশ ছেঁটে দিতে হয়।

আরোও পড়ুন –সঠিক নিয়মে রামবুটান চাষ করে আয় করুন লক্ষ টাকা

লেবু চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই দমন

লেবু চাষে জলবায়ু ও মাটি

  • জলবায়ু – ঊষা, আর্দ্র ও নাতিশীতোর জলবায়ুতে লেবুর ফলন ভালো হয়।
  • মাটি – গভীর, পানি নিকাশ সুবিধাযুক্ত পলি ও দোঁ লাশ মাটি লেবু চাখের জন্য উপযোগী।

লেবুর বীজ রোপনের সময়

মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত লেবু চাষের উপযুক্ত সময়।

লেবু চাষে জমি তৈরি

জমি ৩-৪ বার চাষ দিয়ে, আগাছা বেছে সমতল করে নিতে হবে।

লেবুর চারা বা কলম রোপন

কাগজী এলাচি, বীজবিহীন লেবু ৪-৫ মিটার দূরত্বে, কমলালেবু ৬-৭ মিটার দূরত্বে, বাতাবী লেবু ৭-৮ মিটার দূরত্বে গর্তে লাগাতে হবে।

আরোও জানতে পারেন – অল্প খরচে ভূট্টা চাষ জানবো ভূট্টা চাষের সঠিক নিয়ম

লেবু চাষে সার প্রয়োগ

নিম্নবর্ণিত সার গাছ প্রতি তিন কিস্তিতে গাছের গোড়া হতে কুপিয়ে বা ডিবলিং করে বর্ষার প্রারম্ভে মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিকে এবং মাঘ ফাল্গুনে বাকী সার মিশাতে হবে।

গাছের বয়সগোবরইউরিয়াটিএসপিএমওপি
১-২ বছর১৫ কেজি২০০ গ্রাম২০০ গ্রাম২০০ গ্রাম
৩-৫ বছর২০ কেজি৪০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম
৫-৬ বছর২৫ কেজি৫০০ গ্রাম৪০০ গ্রাম৪০০ গ্রাম

লেবু চাষে অন্তবর্তী পরিচর্যা

  • মাটি যাতে কোনভাবেই স্যাতস্যাতে অথবা অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়।
  • কমলা জাতীয় গাছে চুন ও ফসফরাস বেশি দিতে হবে।
  • লেবুর শিকড় খুব বেশি গভীরে যায় না তাই নিষ্কাশন অবশ্যই উত্তম হতে হবে।
  • বাগান সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
  • সাথী ফসল হিসেবে সবজি ও ডালের চাষাবাদ রাখা যেতে পারে।
  • গাছের গোড়ার দিকে জল শোষক পাতা, অসুস্থ রোগাক্রান্ত পাতা কেটে তাতে বোর্দোপেস্ট লাগিয়ে দিতে হবে।

আরোও জানুন – বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ

লেবু চাষে রোগবালাই দমন ও প্রতিকার

  • লিফমাইনার – এর আক্রমনে আক্রান্ত স্থানে কচি পাতা, ফলে ধূসর বা বাদামী রংয়ের গুটি বসন্তের মত দাগ হয়। এই সংক্রমণে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। ফলে ক্যান্কার রোগের সৃষ্টি হয়।
  • স্ক্যাব –  পাতা ও ডালে কাল অসমান বিন্দু বিন্দু দাগ দেখা যায়।
  • ডাইব্যাক – আগা থেকে ডালপালা শুকিয়ে আসতে থাকে ফলে গাছটি মারা যেতে থাকে।

প্রতিকার – কপার অক্সিক্লোরাইড ১.৩৮ কেজি/একর প্রয়োগ করতে হবে।

লেবু চাষে পোকামাকড় দমন ও প্রতিকার

কীড়ার প্রজাপতি পোকা – এ গাছের কীড়া পাতা খেয়ে ফেলে।

প্রতিকার – সুমিথিয়ন ৫০ ইসি/লিবাসিড ৫ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে।

আরোও পড়তে পারেন – আগর গাছ চাষ পদ্ধতি

ফল সংগ্রহ

ফুল আসা থেকে আরম্ভ করে পাকতে ৯ মাস সময় লাগে। অগ্রহায়ন মাস থেকে আরম্ভ করে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এ দেশে কমলা পাওয়া যায়।

ফলন

  • কমলালেবু – ৪০০-৬০০ টি।
  • কাগজী লেবু – ২০০০-৪০০০ টি।
  • পাতিলেবু – ৬০০-৮০০ টি।
  • বাতাবিলেবু – ২০০-৫০০ টি।

বাজারজাতকরণ

অন্যান্য ফলের বাজারজাতকরণের মতো একইভাবে লেবু বাজারজাত করা হয়। এটি অত্যন্ত সহজলভ্য হওয়ায় সব বাজারেই পাওয়া যায় এবং সারাবছরেই এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে লেবুর চাহিদা খুব বেশি। তাই এই সময়ে এর ভালো দাম পাওয়া যায়।

আরোও জানুন – তিল চাষ পদ্ধতি

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

FAQs

লেবু চাষ কিভাবে করা হয়?

লেবু চাষ ২ ভাবে করা হয়। যথাঃ ১) বানিজ্যিকভাবে জমিতে এবং ২) টবে।

লেবু গাছে কি সার প্রয়োগ করতে হবে?

লেবু গাছে বোরণ ও ম্যাগনেশিয়াম সার প্রয়োগ করতে হবে।

লেবুর কোন জাত ভালো?

লেবুর মেয়ার লেবু জাত ভালো।

মিরাকল গ্রো লেবু গাছের জন্য ভালো কি?

হ্যাঁ মিরাকল-গ্রো সাইট্রাস ট্রি সার লেবু গাছের জন্য ভালো।

মেয়ের লেবু ও সাধারণ লেবুর মধ্যে পার্থক্য কি?

মেয়ের লেবু ও সাধারণ লেবুর মধ্যে পার্থক্য হলো মেয়ার লেবু আকারে ছোট এবং মিষ্টি স্বাদের কিন্তু সাধারণ লেবু আকারে বড় এবং সামাণ্য কম মিষ্টি স্বাদের।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *