বিলেতি ধনিয়া পাতার চাষ পদ্ধতি
বিলেতি ধনিয়া পাতা একটি অত্যন্ত পুষ্টিগুনসম্পন্ন এবং অধিক লাভজনক অর্থকরী মসলা ফসল। তাই আসুন জেনে নিই ধনিয়া পাতা চাষের সঠিক পদ্ধতি।
বিলাতি ধনিয়া বিলাত বা বিদেশ থেকে এসেছে কিনা কেউ সঠিক জানে না। হয়তো আসতেও পারে। তবে বিলাতি ধনিয়া বা বাংলা ধনিয়া বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের একটি অন্যতম লাভজনক অর্থকরী মসলা ফসল।
এ ধনিয়ার পাতা ও কচি পুষ্পপদও একাধারে সবজি, সালাদ এবং মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিলাতি ধনিয়া প্রধানত খরিপ মৌসুমের ফসল। এ ফসলটির পুষ্টি গুণাগুণ অত্যন্ত উচ্চমানের।
এর পাতা ও কচিকাও পাকস্থলীর প্রদাহরোধী এবং এনালজেসিক হিসেবে কাজ করে। এটি ক্ষুধা উদ্রেককারী, হজমশক্তি বাড়ায়, পাকস্থলীর ব্যাথা উপশম, ডাইরিয়া, শাস, পোকা সাপের কামড় কমায়, কোলিক সমস্যা দূর করে এবং গ্যাস উদগীরন কমায়।
এর পাতা ও কাণ্ডে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিন এবং রিবোফ্লাভিন রয়েছে। এসব উদ্বায়ী সুগন্ধি তৈল জাতীয় পদার্থ এবং এসিড জাতীয় উপাদান সংগ্রহ করে উচ্চমূল্যর সুগন্ধি ও ভেষজ ওষুধ তৈরি করা যায়।
বিলেতি ধনিয়া পাতার কিছু তথ্যবহুল ধারণা
১) বিলেতি ধনিয়া পাতার স্থানভিত্তিক নামকরণ –
পার্বত্য জেলার ওয়াগ্গা,বেতবুনিয়া, কাউখালি, ঘাঘড়া এলাকায় ব্যাপকভাবে এবং খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার কিছু কিছু এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এ ফসলটির চাষ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এখানে এই ফসলকে পাহাড়ি/বিলেতি ধনিয়া পাতা হিসেবে ডাকা হয়।
সিলেটে ঢুলা নামে পরিচিত। গ্রীষ্মমালীয় এলাকার বাহিরে এই ফসলের পরিচিতি কম এবং ইংরেজিতে এর কোনো সুনির্দিষ্ট নাম নেই।
তবে কোথায়ও কোথাও এটাকে False Coriander বা মিথ্যা ধনে নামে অভিহিত করা হয়। ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এটাকে এরিঞ্জিয়াম (Eryngium) বলা হয়।
শ্রীলঙ্কায় এটি আগাছা হিসেবে বিবেচিত। বহুকাল পূর্ব থেকেই দেশের দক্ষিণ পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে এ ফসলের চাষাবাদ করা যায়।
বিজ্ঞানী ড. মামুনুর রশিদ তাঁর সবজি চাষ বইটিতে এই ফসলটিকে বাংলা ধনিয়া নামে অভিহিত করছেন। এ ফসল চাষাবাদ পদ্ধতি উন্নয়ণ ও উদ্ভাবনের জন্য কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্র কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীতে ব্যাপক গবেষণা চলছে।
২) বিলেতি ধনিয়া পাতার উৎপত্তি ও বিস্তার –
বিলেতি ধনিয়া পাতার উৎপত্তি ও বিস্তার সুস্পষ্ট করে কিছু ধারণা পাওয়া যায় নি। প্রাপ্যতা ও বিস্তৃতির ধরন অনুযায়ি আসাম, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলকে এ ফসলের উৎপত্তিস্থল ধারণা করা হয়।
কোনো কোনো বিজ্ঞানীর মতে, দক্ষিণ আমেরিকাই এর উৎপত্তিস্থল যা ক্রমান্বয়ে পাক-ভারত উপমহাদেশসহ গ্রীষ্মম-লীয় বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করেছে।
ভিয়েতনাম এবং ওয়েস্টইন্ডিজের ত্রিনিদাদ ও টোবাগো থেকে কুলিনারি হার্ব বা সালাদ জাতীয় অর্থকরী ফসল হিসেবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। অবশ্য Eryngium yuccifolium নামে এর অন্য একটি প্রজাতি অল্প পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রে চাষ করা হয়।
আর্জেন্টিনাতে Eryngium paniculatum Cay তুরস্কে Eryngium giganteum এবং জর্ডানে Eryngium creticum নামক প্রজাতির চাষ হয়। শীতপ্রধান দেশের মধ্য জার্মানিতে গ্রীষ্মকালে Eryngium maritimum প্রজাতির চাষ হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মিয়ানমারের কিয়দংশে এর চাষাবাদের ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ হচ্ছে।
৩) বিলেতি ধনিয়া পাতা উৎপাদনে উপযোগি আবহাওয়া –
বিলাতি ধনিয়া প্রধানত খরিপ মৌসুমের ফসল। নাতিশীতোষ্ণ থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষের জন্য উপযোগী।
অত্যধিক শীতল আবহাওয়ায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিলাতি ধনিয়ার বৃদ্ধি একেবারেই কমে যায়। রবি মৌসুমে এর উৎপাদন মোটেই সন্তোষজনক নয়।
বিলাতি ধনিয়া পাতা প্রখর সূর্যালোকের চেয়ে ছায়াতে বা হালকা বিক্ষিপ্ত আলোতে ভালো পাতা উৎপাদন করে।
৪) বিলেতি ধনিয়া পাতা উৎপাদনে উপযোগি আবহাওয়া ও মাটি –
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বিলাতি ধনিয়া পাতা জন্মায়। বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষের জন্য প্রচুর জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি বেশি উপযোগী।
ভালো ফলনের জন্য মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকা প্রয়োজন। এই ফসল আবার দাঁড়ানো পানিও সহ্য করতে পারে না। এজন্য প্লাবন সেচের চেয়ে ঝর্ণা সেচ ধনিয়া চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
পাহাড়ি অঞ্চলে সাধারণত পাহাড়ের পাদদেশীয় সমতলে এর চাষ এবং চালে ও সমতলে বীজ উৎপাদন করা হয়। তবে এদেশের সমতল ভূমিতেও সাফল্যজনকভাবে এর চাষ করা যায়।
৫) বিলেতি ধনিয়া পাতার উদ্ভিদতত্ত্ব –
বিলাতি ধনিয়া পাতা Eryngium, Apiaceae or Umbelliferae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এ উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম ঊহমরস ভড়বঃরফস।
এটি একটি ক্ষুদ্রাকার দীর্ঘজীবী বিরুৎ। কান্ড অস্পষ্ট ও ভূসংলগ্ন। কিন্তু ফুল আসার সময় উপরদিকে বাড়ে এবং কান্ড- ফাঁপা হয়ে শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়।
বিলেতি পাতার দৈর্ঘ্যে ১৫-২০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ২-৩ সেন্টিমিটার হয়। এর পত্রফলকের কিনারা সামান্য খাঁজযুক্ত ও অগ্রভাগ ছোট ছোট সূক্ষ্ম কাঁটাযুক্ত হয়ে থাকে। এটি একটি ছায়াপ্রিয় উদ্ভিদ। ফুল ক্ষুদ্রাকৃতির বৃন্তবিহীন এবং মজুরি দত্তে ঘন সন্নিবেশিত হয়ে থাকে।
বিলাতি ধনিয়া পাতার বীজ দ্বিবীজপত্রী, অমসৃণ, ক্ষুদ্রাকৃতির বৃদ্ধবিহীন এবং মঞ্জরি দণ্ডে ঘন সন্নিবেশিত থাকে। এ উদ্ভিদটির পরাগায়ন বা অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় বিষয় সম্পর্কে তেমন গবেষণা না হওয়ায় এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না।
সাধারণত বীজ এবং পার্শ্ব সাকার থেকে এর বংশবিস্তার হয়ে থাকে। তবে বিএআরআই এ নিয়ে তাদের গবেষণা করে চলছে ।
৬) বিলেতি ধনিয়া পাতার জাত –
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিউটের গবেষণা কেন্দ্র থেকে ২০১৩ সালে বারি বিলাতি ধনিয়া-১ নামের একটি জাত অনুমোদিত করা হয়। এ জাতটির প্রতিটি গাছের গড় ওজন ৬.৮১ গ্রাম, পাতার সংখ্যা ৭.৪ টি. পাতার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১৪.১ ও ৩.২ হয়ে থাকে।
এর পাতা সবুজ রঙের সুগন্ধিযুক্ত, সুস্বাদু, উচ্চতর পুষ্টিমূল্য ও ঔষধি গুন সমৃদ্ধ। এই জাতটি বাংলাদেশের আবহওয়া উপযোগী ও উচ্চ ফলনশীল।
বিলেতি ধনিয়া পাতার চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিষদ আলোচনা –
১) বীজের হার ও বপন : নভেম্বর মাস থেকে জানুয়ারি মাস বা অগ্রহায়ণ-পৌষ মাস বিলাতি ধনিয়ার বীজ বপনের উত্তম সময়। মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বপন করা যায়।
তবে বীজ বপনের পরেও অন্তত ২০-২৫ দিন কম তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন। কেননা বিলাতি ধনিয়া বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো ১০-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে এর গাজানো হার কমে আসে। বিলাতি ধনিয়ার বীজে এক মাসের বেশি সাধারণ অবস্থায় অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা থাকে না। এজন্য বীজ সংগ্রহের পর যত দ্রুত সম্ভব হালকাভাবে ছায়াতে শুকিয়ে বপন করা।
বিলাতি ধনিয়ার ক্ষুদ্রাকৃতির বীজ সমানভাবে বোনা বেশ কষ্টকর এবং বিশেষ দক্ষতারও প্রয়োজন। তাই বালির সাথে মিশিয়ে বীজ বোনা টোল ফ্রি = ভালো।
১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারিতে অথবা ছিটিয়ে বীজ বপন করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি হেক্টরে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি হারে বা করুন প্রতি বর্গমিটারে ৪ গ্রাম অর্থাৎ প্রতি শতাংশ জমিতে ১৬০ গ্রাম বীজ বপন করে সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যায়।
ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজ বপনের পর মাটি ওপরের স্তরের ১-১.৫ সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। লাইনে বপন করলে ১.৫-২.৫ সেন্টিমিটার গভীর নালা করে নালাতে লাইন করে বীজ ছিটিয়ে দুই পাশে মাটি দিয়ে হালকাভাবে ঢেকে দিতে হবে।
অতি ক্ষুদ্রাকৃতির বীজ হলেও প্রতি শতাংশে ১৫০ থেকে ১৬০ গ্রাম বীজ আপাত দৃষ্টিতে অনেক বেশি বলে মনে হয়। কিন্তু এর সব বীজ এক সাথে গজায় না।
কয়েক মাস পর্যন্ত বীজ ক্রমান্বয়ে গজাতে থাকে। একই দিনে বোনা বীজ গজাতে ১৫-১২০ দিন পর্যন্ত সময় নেয়। ফলে একবার বীজ বপন করেও কৃষক অনেক বার মানে অন্তত ৮-১২ বার ফসল তুলতে পারেন।
২) সার প্রয়োগ : বিলেতি ধনিয়া পাতাজাতীয় ফসল। তাইএর জন্য ইউরিয়া ও পটাশ জাতীয় সার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বীজ বপনের আগে শতাংশপ্রতি ৮০ কেজি পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার কম্পোস্ট, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৮০০ গ্রাম টিএসপি ও ৮০০-১০০০ গ্রাম এমওপি শেষ চাষের সময় বীজ বপনের ৩/৪ দিন পূর্বে জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
চারা গজানো পর থেকে ১ মাস পর অথবা প্রতি দুইবার ফসল সংগ্রহের পর প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
এভাবে প্রতি জমিতে মোট ২০ টন কম্পোস্ট, ৩০০-৪০০ কেজি ইউরিয়া ২০০ কেজি এসপি ২০০-২৫০ কেজি এমওপি সারের প্রয়োজন হবে।
৩) ছাউনি দেয়া : বিলেতি ধনিয়ার পাতা নরম, চওড়া ও মসৃণ হওয়ায় জন্য জমিতে ছাউনি দেয়া খুবই প্রয়োজন। যদি ছাউনি দেওয়া না হয় প্রখর সূর্যালোকে পাতা শক্ত হয়, কাঁটাযুক্ত হয়ে যায়, বাজার মূলা একেবারে কমে যায়।
আবার সূর্যের আলো ফসলে না লাগলে ফলন ভালো হয় না। কৃষি গবেষণায় দেখা গেছে, মাচায় ব্যবহৃত ছাউনির মধ্যের ওপর বিলাতি ধনিয়ার নির্ভর করে না।
শুধু ছাউনি ঘরে বা আলো প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর এর শুণাগুণ ও ফলন নির্ভর করে। মোট সূর্যালোকের শতকরা ২০-৪০ ভাগ বিক্ষিপ্ত আকারে পেলেই বিলাতি ধনিয়া পাতার ভালো উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট।
এজন্য যে বাঁশের তৈরি মাচায় নারিকেল পাতা, ছন, বৈণ, কলাপাতা দিয়ে ছাউনি তৈরি করা যায়। আবার হালকা মাচার ওপর কুমড়া বা লতাজাতীয় গাছ তুলে দিয়ে তা থেকে বেশ কিছু বাড়তি ফলন পাওয়া যায়। মাচার পাশ দিয়ে সরাসরি যাতে সূর্যালোক না পড়ে সেজন্য বেড়া দেয়ারও প্রয়োজন ।
৪) সেচ ও নিকাশ : বিলেতি ধনিয়ার জন্য সব সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে। তাই গাছের গোড়ায় পানি কমতে দেয়া যাবে না। এজন্য ঝর্ণা পদ্ধতিতে মাটির অবস্থা বুঝে কয়েকদিন পরপর হালকা সেচ দেয়া ভালো। বেডের পাশের নালা দিয়ে বৃষ্টি সময়ে অতিরক্ত পানি বের করে দেয়ার সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫) অন্যান্য পরিচর্যা : বিলাতি ধনিয়া পাতার সবচেয়ে বড় শত্রু আগাছা। বীজ বপনের পরে চারা গজানো পূর্ব থেকে ফসল তোলা শেষ হওয়া পর্যন্ত জমিকে সর্বদা আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
মাঝে মাঝে বিলাতি ধনিয়ার গাছে পুষ্পদ- দেখা দিলে তা গোড়া থেকে ভেঙে দিতে হবে। তা না হলে পাতা উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং ফলন মারাত্মকভাবে কমে যাবে।
তবে আগস্ট সেপ্টেম্বর মাসে গাছ পাতলা করে এগুলো রেখে দিলে পরবর্তী বছরের জন্য বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
৬) রোগবালাই দমন : বিলাতি ধনিয়াতে রোগ বালাই খুব একটা বেশি হয় না। তবে গোড়ায় পানি জমলে বা মাটি বেশি স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেলে কচি চারা গাছের ক্ষেত্রে গোড়া পচা অথবা ডাম্পিং অফ রোগ ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে।
এজন্য খেয়াল রাখতে হবে যাতে জমিতে কোনোভাবেই যেন পানি জমে না থাকে আর জমি সর্ব সময় সুনিষ্কাশিত রাখতে হবে। তারপরও যদি এই রোগ দেখা দেই প্রতি বর্গমিটারে ১ লিটার হারে ১% বোর্দোমিশ্রণ (১০০:১:১ পানি তুতে চুন) অথবা নোইন নামক ছত্রাকনাশকের ০.০৩% দ্রবণ একই হারে গাছের গোড়ায় ও মাটিতে প্রযোগ করতে হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।
৭) ফসল তোলা : সাধারণত বিলাতি ধনিয়া পাতার সম্পূর্ণ গাছ তুলে সংগ্রহ করা হয়। ১৫-২৫ সেন্টিমিটারের মতো পাতাসহ লম্বা গাছগুলো তুলে নেয়া হয়। মরা বা পুরনো পাতা অপসারণ করে পানিতে ধুয়ে ১ কেজি বা আধা কেজির আঁটি বেঁধে বাজারজাত করা হয়।
এরপর বড় চারাগুলো তুলে নেয়ার পর ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। তারপর আগাছা বাছাই করার পর অবশিষ্ট গাছগুলো বড় হতে থাকে এবং ১৫-২০ দিনের মধ্যে বিরেতি ধনিয়া পাতার গাছগুলো পুনরায় আহরণযোগ্য হয়। এভাবে ৮-১২ বারে প্রতি হেক্টর জমি থকে সর্বমোট ৩০ থেকে ৫০ টন (প্রতি শতাংশে ১২০-২০০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়ায় যায়।
কিচেন গার্ডেনের ছোট প্লটে লাগানো গাছ থেকে গৃহিণীরা সরাসরি পাতা তুলে ও ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে একবার রোপণ করা গাছ থেকে বহুবছর পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা যায়।
৮) বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ : বিলাতি ধনিয়া পাতার বীজ উৎপাদন এবং সংরক্ষণের বিজ্ঞানসম্মত উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য বিজ্ঞানিগণ নিয়মিত গবেষণা করে চলছে। পার্বত্য এলাকার কৃষকগণ কখনও কখনও পাহাড়ের চালে বীজ বপন করে ছাউনিবিহীন ফসল আবাদ করে সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করেন।
আবার পূর্ববর্তী ফসলে অবশিষ্টাংশ থেকে উৎপাদন পুষ্পদ থেকেও বীজ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। পাহাড়ে বীজ বপন, ব্যবহার উপযোগিতা ও ভবিষ্যৎ থেকে বীজ পরিপক্ক হতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগে।
শতাংশপ্রতি ২-৪ কেজি বা হেক্টরপ্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ কেজি পর্যন্ত বীজ পাওয়া যায় বলে পাহাড়ি চাষিরা তথ্য দিয়েছেন। বিক্যালসিট্যান্ট স্বভাবের জন্য বিলাতি ধনিয়ার বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা দ্রুত কমে যায়।
ছায়াযুক্ত স্থানে হালকাভাবে বিছিয়ে শুকিয়ে সাধারণ তাপমাত্রায় বায়ু চলাচলযুক্ত মাটির পানে বা ছিদ্রযুক্ত প্যাকেটে (কাগজ, ব্রাউন পেপার ব্যাগ, সুতি কাপড়, প্লাস্টিকের পাত্র) এক থেকে দুই মাস এবং রেফ্রিজারেটরে নিম্ন আপনারা (২.৫ ডিগ্রি সে.) সংরক্ষণ করলে আরও বেশি দিন পর্যন্ত এর গ্রহণযোগ্য (৫০%) অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বজায় রাখা যায়।
প্রখর রৌদে বেশি শুকিয়ে গেলে এর তেজ এবং অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা রুমে যায়। সেজন্য মোলায়েম রোদে শুকালে বেশি ভালো হয়।
বিলেতি ধনিয়া পাতার ব্যবহার ও পুষ্টিগুণ
১) বিলেতি ধনিয়া পাতার ব্যবহার : বিলাতি ধনিয়া পাতা ও কচি পুষ্পদন্ড সবজি, সালাদ এবং মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রান্নার কাজে তরকারিতে, ডাল, ভাজি ও নিরামিষে সুগন্ধি বাড়ায়। সালাদ হিসেবে অন্যান্য উপকরণের সাথে সবজি হিসেবে এবং ভর্তা করেও খাওয়া যায়।
এছাড়াও বেসন দিয়ে বিলাতি ধনিয়া পাতার বড়া তৈরিতে, পেঁয়াজুতে, সিঙ্গাড়ায় এবং ভেজিটেবল রোলে সুগন্ধি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
২) বিলেতি ধনিয়া পাতার পুষ্টীগুনাগুন : এ ফসলটির পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কিত তথ্যর জন্য একটি অনুসন্ধান প্রয়োজন। বিলাতি ধনিয়ার ঔষধি গুণাগুণ ও রয়েছে।
এর পাতা, কাণ্ড ও ফুলে বিভিন্ন উদ্বায়ী সুগন্ধি তেলজাতীয় পদার্থ এবং ডোডেসিনোষিক এসিড (১৫.৫%) এবং ডোডেসিণোধিক সি (৫%) রয়েছে যা এ সুগন্ধির কারণ। এসব উদ্বায়ী সুগন্ধি তেলজাতীয় পদার্থ এবং এসিড জাতীয় উপাদন এক্সটার করে উচ্চমূলের সুগন্ধি ও ভেষজ ওযধ তৈরি করা যায়।
এর কোন কোন প্রজাতি যেমন Eryngium creticum সন্তানে পিতল তেনমের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অন্য একটি প্রজাতি Eryngium maritimum জার্মানিতে কনডেনয়েড স্পেক্ট্রাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, বিলেতি ধনিয়া পাতা যেমন অধিক পুষ্টিগুনাগুন সম্পন্ন তেমনি এ ফসল উৎপাদনে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব।
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com