পাবদা মাছ চাষ পদ্ধতি, আহরণ ও বাজারজাত করার সঠিক প্রক্রিয়া

বর্তমান সময়ে উচ্চমূল্যের এই অত্যন্ত সুস্বাদু পাবদা মাছের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসুন জেনে নিই পাবদা মাছ চাষের সঠিক পদ্ধতি।

পাবদা মাছ

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য মাছ চাষ একান্ত প্রয়োজন। দেশের সিংহ ভাগ আমিষের চাহিদা পূরণ করে মাছ।

একটা কথা আছে “মাছে ভাতে বাঙ্গালি” অর্থাৎ আমাদের খাবারে মাছ না হলে আমাদের খাওয়ার তৃপ্তি মেটে না।

বর্তমান সময়ে নদ, নদী ও সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করলেও বাংলাদেশে দিঘি, পুকুর ও বদ্ধ জলাশয়ে বাণিজ্যক ভাবে নানা জাতের মাছ চাষ হয়ে থাকে।

এর মধ্যে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে “ পাবদা” মাছ। উচ্চমূল্যের অত্যন্ত এই সুস্বাদু মাছের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের প্রায় সব ধরনের পুকুর-দিঘি ও বদ্ধ জলশয়ে এই মাছ চাষ করা যায়।

আজকের আলোচনায় থাকছে পাবদা মাছ চাষের পদ্ধতি সমূহ –

পাবদা মাছের পরিচিতি

আমাদের দেশে ৩ প্রজাতির পাবদা মাছ পাওয়া যায়। যথা – বোয়ালি পাবদা, মধু পাবদা ও ক্ষুদি পাবদা। বর্তমানে বদ্ধ জলাশয়ে মধু পাবদা মাছের চাষ প্রচলিত রয়েছে। মধু পাবদার বৈজ্ঞানিক নাম Ompok Pabda (Hamilton) এর ইংরেজি নাম Butter catfish |

পাবদা মাছ চাষ পদ্ধতি

পাবদা মাছের পুকুরের ভৌত রাসায়নিক গুণাবলী

  1. পিএইচ – পানির পিএইচ ৭.০০-৮.০০ এর মধ্যে থাকলে পাবদা মাছ চাষ করা যায়। তবে ৭.৫০- ৮.০০ মাত্রার পিএইচ পাবদা চাষের জন্য উত্তম।
  2. পানির স্বচ্ছতা – প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতির পরিমান ২৫-৩০ সে.মি সেক্কি এর মধ্যে থাকলে ভালো হয়। পাবদা মাছ চাষের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ পানির ব্যবহার উত্তম।
  3. খরতা – ৮০-২০০ মি.গ্রা/লিটার খরতা পাবদা উৎপাদনের জন্য উপযোগী।
  4. তাপমাত্রা – ২৫-৩১ ডিগ্রী সেলসিয়াস উত্তম, অক্সিজেনের মাত্রা ৫ পিপিএম এর উপরের থাকতে হবে।

পাবদা মাছ চাষে পুকুর প্রস্তুতি

এ মাছ চাষের জন্য পানির গভীরতা ৪-৬ ফুট হলে ভালো হয়। পাবদা মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। পুকুর প্রস্তুতির প্রধান ধাপগুলো হলো –

  • পুকুর শুকাতে হবে;
  • তলদেশের কাদা ও জৈব অবশেষ অপসারণ করতে হবে;
  • পুকুরের তলা মই দিয়ে সমান করে দেওয়া ভালো;
  • পুকুরের পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হবে;
  • পুকুরের চারপাশে নাইলন নেটের বেড়া দিলে সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি শিকারী সরীসৃপ অন্যান্য প্রাণীর অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশ হ্রাস করে।
  • পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করার জন্য পুকুরের পানি কমিয়ে ২-৩ ফুটে এনে ৯.১% শক্তিমাত্রায় রোটেনন ২৫ গ্রাম / শতাংশ/ফুটে পানিতে প্রয়োগ করতে হবে।

পাবদা মাছ চাষে পুকুরে চুন প্রয়োগ

পুকুরের তলদেশের মাটি ও বিদ্যমান পানির পিএইচ অনুসারে চুন দিতে হবে। তবে দোঁ-আশ ও পলি দোঁ- আশ মাটির চেয়ে লালমাটি, এটেল মাটি, কালচে কাদামাটি ও অধিক অম্লধর্মী মাটিতে বেশি মাত্রায় চুন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়।

পাবদা মাছের সুস্থ সবল পোনার বৈশিষ্ট্য

সুস্থ সবল পাবদা মাছের গাত্রোবর্ণ উজ্জ্বল ও চকচকে, পিঠের দিকে কালচে বর্ণেও পোনার গা পিচ্ছিল, কোন প্রকার ক্ষতচিহ্ন থাকবে না। লেজ এবং অন্যান্য পাখনা অক্ষত থাকবে। স্রোতের বিপরীতে ঝাঁক বেধে দ্রুত চলাচলে সক্ষম।

পাবদা মাছের পোনা পরিবহন

পাবদা মাছের পোনা ড্রামে পরিবহন করা যায়। ২-৪ সে.মি আকারের পোনা অক্সিজেনযুক্ত ব্যাগে (৩৬”x ২২” x ২৪”) ব্যাগে প্রতি ১০০০ টি হারে ৪-৬ ঘন্টার দূরত্বে পরিবহন করা যায়।

পাবদা মাছ চাষে পরিচর্যা

সপ্তাহে ১ বার বেলা ১১-২২ টার মধ্যে পুকুওে হররা টানতে হবে। পুকুরের পানি কমে গেলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।

প্রতি মাসে একবার শতকে ১৫০-২০০ গ্রাম হারে চুন দিতে হবে এবং প্রতিমাসে একবার শতকে ২০০-৩০০ গ্রাম লবণ দিতে হবে।

পাবদা মাছের পুষ্টিমান

পাবদা মাছের প্রতি ১০০ গ্রামে আমিষ ১৯.২ গ্রাম, চর্বি ২.১০ গ্রাম, শর্করা ৪.৬ গ্রাম, লৌহ ১.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.৩১ গ্রাম ও ফসফরাস ০.২১ গ্রাম পাওয়া যায়।

পাবদা মাছের বৈশিষ্ট্য

পাবদা মাছের দেহ আঁইশ বিহীন, চকচকে, উজ্জ্বল রূপালী বর্ণের, দেহের উপরিভাগে ধূসর রূপালী ও পেটের দিক রূপালী বর্ণের এবং দুই জোড়া গোঁফ আছে। পরিপক্ক মাছের দৈর্ঘ্য ১৫-২৫ সে.মি হয়।

ছোট কিংবা বড় জলাশয়ে সহজ ব্যবস্থাপনায় চাষ করা যায়। বাজারে প্রচুর চাহিদা ও সরবরাহ কম থাকায় এর মূল্য অন্যান্য মাছের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি।

পাবদা মাছেরখাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস

কাইরোনমিড লার্ভা, টিউবিফেক্স ওয়ার্ম, কুচো চিংড়ি, কেঁচো, জলজ পোকা-মাকড়, শ্যাওলা ও পাতার নরম অংশ খায়।

এ মাছ সর্বভূক, বটম ফিডার এবং সম্পূরক খাদ্য হিসেবে সরিষার খৈল, চালের কুড়া, ফিসমিল দিয়ে তৈরি খাবার খায়।

পাবদা মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ

সাধারনত ৫-৬ মাসে ২০-৩০ টি পাবদা মাছ ১ কেজি হয়। বাজারে বেশি মূল্য পাওয়ার জন্য জীবন্ত অবস্থায় সরবরাহ করার লক্ষ্যে আহরণ করার পর ট্যাংকে ৮-১২ ঘন্টা পানির ধারায় রাখতে হবে।

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *