অধিক লাভ করতে জানুন কুল চাষের সঠিক নিয়ম

কুল একটি শীতকালীন ফল। শীতকালে অত্যধিক পরিমাণে কুলের চাহিদা থাকেঃ। তাই কুল বিক্রি করে অধিক লাভ পাওয়া যায়। চলুন কুল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।

কুল চাষ পদ্ধতি

চমৎকার স্বাদ ও পুষ্টিমানের বিচারের কোন বাংলাদেশের এক্টিভিষ্ট মৌসুমী ফল ভিটামিন সি এর দিক থেকে আমলকি ও পেয়ারার পরের স্থান মানব দেহের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন এ ও সি এর উৎস হচ্ছে কুল।কুল শুধু ফল হিসেবেই নয় এর থেকে আচার চাটনি ইত্যাদি মুখরোচক খাবারও তৈরি করা হয়। তাছাড়া পেটে বায়ু অরুচি ইত্যাদি সমস্যায় কুলের ব্যবহার হয়েছে।

কুল একটি শীতকালীন মেীশুমি ফল। শীতকালে কুলের ব্যাপক চাহিদা ও ভালো থাকে। তাই কৃষকরা বর্ষাকাল থেকে কুল চাষ শুরু করে দেয়। তাই আসুন জেনে নিই কিভাবে কুল চাষ করলে অধিক লাব করা যাবে সে সম্পর্কে।

আরেও পড়ুন – কলা চাষ পদ্ধতি

কুলের বিভিন্ন জাত

  • আপেল কুল
  • বাউ কুল 
  • বল সুন্দরি
  • কাশ্মীরি
  • বারি কুল

আরোও পড়তে পারেন – ভূট্টা চাষের সঠিক নিয়ম

কুল চাষের সঠিক নিয়ম

যেকোনো ধরনের মাটিতে বিশেষ করে দোআঁশ মাটিতে কুল চাষ ভালো হয়। এছাড়াও কুল গাছ কিছুটা লবণাক্ততা সম্পন্ন মাটি ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। ২ ভাবে কুলের বংশবিস্তার করা যায়। যথা: ১) কুল বীজ থেকে এবং কলম তৈরি করে এবং ২) কুল গাছের কলম থেকে চারা তৈরি করে।

বীজ থেকে চারা পেতে হলে বিছকেট ভেজা গরম পানির ভেতর দেড় থেকে দুই মাস রেখে দিলে তারা তাড়াতাড়ি কথায় কথায় যাতে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগে।

কলমের চারা পেতে হলে নির্বাচিত স্থানে বীজ বপন ও চারা তৈরী করে তারপর বাডিং এর মাধ্যমে কলম করে নেয়া হয়।

কুল চাষের জমি তৈরি ও কুল চারা রোপন পদ্ধতি

  1. সমতল এলাকায় বাগান আকারে গাছ লাগাতে হলে গভীরভাবে চাষ দিয়ে কুল চাষের জমি তৈরি করতে হয়।
  2. কুলের জমিতে কুলের দীর্ঘজীবী আগাছা দমন করতে হয়।
  3. বাড়ির আশেপাশে পুকুর পারে কিংবা রাস্তার ধারে গাছ লাগালে চাষ না দিয়ে সরাসরি গর্ত করে কুলের চারা লাগানোর জন্য ৫ থেকে ৬ মিটার দূরত্বে ১*১*১ মিটারের গর্ত তৈরি করতে হবে।
  4. কুলের চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন পূর্বে মাটিতে গোবর ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম এবং ২৫০ গ্রাম এমওপি এবং ২৫০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রাখতে হবে। 
  5. জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় ও ভাদ্র-আশ্বিন মাস হলো কুলের চারা রোপণের বা কুল চাষের উপযুক্ত সময়।
  6. জমিতে কুলের চারা রোপণের পূর্বে গর্তের মাটি কোদাল দিয়ে ভালোবাবে উলটপালট করে দিতে হবে।
  7. জমিতে কুলের চারা রোপনের পর চারাটিকে একটি খুঁটির সাথে চারাটি বেঁধে দিতে হবে এবং কুলের গোড়ায় পানি দিতে হবে।

আরোও পড়তে পারেন – আনারস চাষ পদ্ধতি

কুল চাষে সার প্রয়োগ

স্ষ্ঠু বৃদ্ধি ও অধিক ফলনের জন্য গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ অপরিহার্য। সারের মাত্রা নির্ভর করে গাছের বয়স ও মাটির উর্বরতার উপর। বিভিন্ন বয়সের কাছের সারের মাত্রা বিভিন্ন হয়।

কুল গাছের বয়স (বছর)গোবর (গ্রাম)ইউরিয়া (গ্রাম)টিএসপি (গ্রাম)এমওপি (গ্রাম)
১-২১০৩০০২৫০২৫০
৩-৪১৫৫০০৪০০৪০০
৫-৬২০৭৫০৭০০৭০০
৭-৮২৫১০০০৮৫০৮৫০
৯ বছরের থেকে বেশি৩০১২৫০১০০০১০০০

উল্লিখিত সার সমান দুই কিস্তিতে জ্যৈষ্ঠ এবং আশ্বিন মাসে প্রয়োগ করতে হবে।  মাটিতে ভালোভাবে মেশাতে হবে এবং প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে।  পাহাড়ের ঢালে বাড়ির আঙ্গিনা পুকুর বা রাস্তার ধারে লাগানো গাছের চারপাশে শাহদারা গর্ত করে তাতে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

 গাছের গোড়া থেকে কতটুকু দূরে এবং কতদূর পর্যন্ত সার প্রয়োগ করা যাবে তা নির্ভর করে গাছের বয়সের উপর। সাধারণত পূর্ণ বয়স্ক গাছের গোড়া থেকে ১ থেকে ১.৫ মিটার দূর থেকে শুরু করে ৩.৫ মিটার পর্যন্ত সার প্রয়োগ করা হয়।

কুল চাষে পানি সেচ পদ্ধতি

শুষ্ক মৌসুমে বিশেষত চারাগাছে এবং বয়স্ক গাছের ফলের বাড়ন্ত অবস্থায় অগ্রহায়ন  পৌষ মাসের সেচ দিলে ফলাফলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। কুল গাছে ফুল আসার একমাস আগে অর্থাৎ আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গাছে কোন সার ও পানি দেওয়া যাবে না।

 কারণ এ সময় খাবার দিলে গাছের অঙ্গঁজ বৃদ্ধি বেশি হবে। এতে ফুল ও ফল ধারণের ব্যাহত হবে।  চাষ দিয়ে বা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে কুল বাগানের আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

কুল চাষে রোগ ও প্রতিকার

১. পাউডারী মিলডিউ

এ রোগের আক্রমণে ফলন হ্রাস পায়। গাছের পাতা ফুল ও কচি ফল পাউডারী মিলডিউ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ফুল ও ফল গাছ পাতা ঝরে পড়ে। পরিত্যক্ত অংশ এবং অন্যান্য উদ্ভিদের রোগের জীবাণু বেঁচে থাকে এবং বাতাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। ভেজা আবহাওয়ায় বিশেষ করে মেঘাছন্ন অবস্থায় এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

পাউডারী মিলডিউ রোগের প্রতিকার

গাছের ফুল দেখা দেওয়ার পর থিয়োভিট নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে 2 গ্রাম অথবা 250 ইসি প্রতি লিটার পানিতে 0.5 মিলি মিশিয়ে 10 অথবা 15 দিন পরপর দুই থেকে তিনবার স্প্রে করতে হবে।

২. ফল ছিদ্রকারী পোকা

কুলের প্রায় সব জাতেই ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। কচি ফলে ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়ে ফল খেয়ে নষ্ট করে। আক্রান্ত ফলের নিচে কালো দাগ পড়ে এবং বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। আক্রান্ত ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে বা শুকিয়ে যায়।

প্রতিকার

  • কুল বাগানের আশেপাশের ঝোপজঙ্গল ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।বেশি আক্রান্ত এলাকায় ফল ধরার আগেই সমস্ত বাগান ও এলাকা অনুমোদিত কার্বারাইল জাতীয় কীটনাশক বা ডাইমেথোয়েট জাতীয় কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। 
  • যেহেতু পোকাটি ফলে ডিম পাড়ে এবং লার্ভা ফলের ভিতর  বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় সেজন্য আক্রমণের আগেই অগ্রিম অনে আক্রমণের আগেই পোকা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। 
  • এজন্য সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে অথবা ডেসিস 10 লিটার পানিতে 22.5 মি.লি মিশিয়ে প্রয়োগ করলে পোকা দমন করা সম্ভব।

আরোও জানতে পারেন – সঠিক নিয়মে রামবুটান চাষ

ফল সংগ্রহ

জাত অনুসারে মধ্য-পৌষ থেকে মধ্য চৈত্র (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। পরিপক্ক  অবস্থায় ফল সংগ্রহ করা উচিত। অপরিপক্ক ফল আহরণ করা হলে তা কখনই কাঙ্ক্ষিত মানসম্পন্ন হবে না।

এতে ফলের সংরক্ষণ গুন কমে যায় এবং ফল দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। সংগ্রহকালে যাতে ফলের গায়ে কোন ক্ষত না হয় এবং ফল ফেটে না যায়।

আরও পড়তে পারেন- পেঁপে চাষ পদ্ধতি

FAQs

কুল গাছের উপকারিতা কি?

কুল গাছের বা কুল বড়ইয়ের উপকারিতা হলো বরই বা কুল আমাদের রক্ত শোধন বা পরিস্কার করে এবং কুল হজমিকারক হিসেবেও কাজ করে। তাছাড়াও বড়ই বা কুল খাওয়ার উপকারিতা হলো পেটে বায়ু, অরুচি ও প্রদহ রোগ দূর করতে সাহায্য করে। কুল খেলে আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ক্যানসার প্রতিরোধ হয়।

কাশ্মীরী আপেল কুল চাষ পদ্ধতি কি?

কাশ্মীরী আপেল কুল চাষ পদ্ধতি হলে বর্ষার পর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই কুলের চারা লাগানো বা রোপন করা। এই কাশ্মীরী আপেল কুলের গাছ থেকে গাছ ও সারি থেকে সারির দূরত্ব রাখতে হবে ১০ ফুট।

কুল গাছের পরিচর্যা কিভাবে নিতে হয়?

কুল গাছের আগাছা দমন এবং কুল গাছে পানি সেচ দেওয়ার মাদ্যমে কুল গাছের পরিচর্চা নিতে হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *