বারি সরিষা-১৪ চাষ পদ্ধতি: সঠিক উপায়ে বারি সরিষা চাষ করুন
সরিষার অন্যান্য জাতের তুলনায় বারি সরিষা-১৪ জাতের তুলনামূলক উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা এই জাত চাষ করে লাববান হচ্ছেন। তাই চলুন বারি সরিষা-১৪ চাস পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি।
বাংলাদেশের তেল ফসল হিসাবে সরিষা ,সয়াবিন, তিল, তিসি, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী প্রভৃতির চাষ করা হয়ে থাকে। তবে এ দেশের চাষীরা সরিষাকেই প্রধান ভোজ্য তৈল বীজ ফসল হিসেবে বেশি চাষ করে থাকে।
আর সরিষা জাতের মধ্যে বর্তমানে সরিষার উচ্চ ফলনশীল জাত বারি সরিষা ১৪ খুবই জনপ্রিয়। সরিষার এই জাত চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হচ্ছেন। তাই আসুন নিম্নে বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি।
বারি সরিষা-১৪ জাতের বৈশিষ্ট্য
এই বারি সরিষা ১৪ জাতের বৈশিষ্ঠ্য হলো এর বীজে তেলের পরিমাণ থাকে ৪৩ থেকে ৪৪ শতাংশ, এই জাতটি টরি-৭ এর বিকল্প জাত হিসেবে চাষ করা যায় এবং এই জাতের শুটি ৪ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট হয়।
বিষয় | বৈশিষ্ট্য |
---|---|
জীবনকাল | গড় জীবনকাল প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ দিন |
গাছের উচ্চতা | ৩০ থেকে ৩৫ ইঞ্চি |
চাষের মাটি | দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি |
চাষের সময় | রবি মেীসুম- মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক মাস |
আরো পড়ুন:
বারি সরিষা-১৪ চাষ পদ্ধতি
বারি সরিষা ১৪ জাতটি চাষের জন্য মাঝারি উঁচু ধরণের জমি খুবিই উপযোগী এবং এই জাত চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি খুবই উপযোগি। চাষের উপযোগী মৌসুম হলো রবি মেীসুম এবং এই জাত চাষের উপযোগী সময় হলো মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক মাস পর্যন্ত।
জমি তৈরির পদ্ধতি
জমির প্রকারভেদ অনুযায়ী মাটির “জো” অবস্থায় ৪-৫ আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে জমি তৈরি করতে হবে। সরিষার বীজ ছোট বিধায় ঢেলা ভেঙ্গে মই দিয়ে মাটি সমান ও মিহি করতে হবে। জমির চারদিকে নালার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে প্রয়োজনে সেচ এবং পানি নিকাশের সুবিধা হয়।
শতক প্রতি সরিষা ক্ষেতের বীজতলায় ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম বীজ প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপনের পদ্ধতি
শতক প্রতি সরিষা ক্ষেতের বীজতলায় ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম বীজ প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত সরিষা বীজ ছিটিয়ে বপন করা হয়। তবে,লাইন করে বুনলে সার, সেচ ও নিড়ানী দিতে সুবিধা হয়।
লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১ ফুট রাখতে হবে। বপনের সময় জমিতে প্রয়োজনীয় রস থাকা দরকার। কারণ, মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে চারা গজাবে।
নিড়ানী দেওয়া
বারি সরিষা ১৪ বীজ বপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর একবার এবং ফুল আসার সময় দ্বিতীয়বার নিড়ানি দিতে হবে। আরোও জানুন – জিরা চাষ পদ্ধতি
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
- জাত, মাটি ও মাটিতে রসের তারতম্য অনুসারে সরিষার জমিতে কমপোস্ট সার, ইউরিয়া, টিএসপি,এমওপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট, বোরাক্স/বোরিক ইত্যাদি সার সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে।
- ইউরিয়া সারের অর্ধেকসহ বাকি সব সার জমি প্রস্তুত করার সময় মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ফুল আসার সময় উপরি প্রয়োগ করতে হয়।
- সার প্রয়োগের সময় মাটিতে রস থাকা দরকার।
সারের পরিমাণ
জাত, মাটি এ মাটিতে রসের তারতম্য অনুসারে সার দিতে হবে। নিম্নে শতক প্রতি সার প্রয়োগের পরিমান দেওয়া হলো
সারের নাম | পরিমাণ |
---|---|
ইউরিয়া | ১২০০ গ্রাম |
টিএসপি | ৬৫০ গ্রাম |
এমওপি | ৩৫০ গ্রাম |
জিপসাম | ৬৫০ গ্রাম |
জিংক সালফেট | ২০ গ্রাম |
বোরাক্স বা বরিক এসিড | ২৫ গ্রাম |
পঁচা গোবর | ১৫ টন |
আরো পড়তে পারেন – জুম চাষ পদ্ধতি
সেচ প্রয়োগ
- বারি সরিষা-১৪ জাতের বীজ বপনের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে বা গাছে ফুল আসার সময় প্রথম সেচ দিতে হবে।
- তারপর ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর বা ফল ধরার সময় দ্বিতীয় সেচ প্রদান করতে হবে।
- আর বীজ বপনের সময় মাটিতে রস কম থাকলে বারি সরিষা ১৪ জাতের চারা গজানোর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে একটি হালকা সেচ দিতে হবে।
আরো পড়ুন – ছাদে লাগান ৬ টি বেগুন গাছ প্রতিদিন পাবেন বেগুন
ফসল উত্তোলনের সময়
সাধার বারি সরিষা ১৪ জাতের বীজ বোনার ৮০ থেকে ৯০ দিন পর বা সরিষা গাছের শুটি শতকরা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ পাঁকলে তখন ফসল কর্তন করে উত্তোলনের উপযোগী সময়।
ভালো ভাবে পরিচর্চা করলে বারি সরিষা ১৪ জতের শতক প্রতি ৫.৮ কেজি থেকে ৬.৫ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ১.৪ থেকে ১.৬ টন ফলন পাওয়া যায়।
আরো জানুন – টবে সারা বছর লেবু চাষ পদ্ধতি
FAQs
সরিষা ফসলের প্রধান রোগ হলো পরজীবী উদ্ভিদজনিত রোগ। এই রোগের ফলে সরিষার গাছ দুর্বল হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায় সাতে সাথে ফলনও হ্রাস পায়।
বারি সরিষা জাতের ফলন অন্যান্য সরিষা জাতের তুলনায় তুলনামূলক ভালো। ভালো ভাবে পরিচর্চা করলে বারি সরিষা ১৪ জতের শতক প্রতি ৫.৮ কেজি থেকে ৬.৫ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ১.৪ থেকে ১.৬ টন ফলন পাওয়া যায়।
বারি সরিষা চাষ করতে প্রথমে জমি নির্বাচন করে ভালো মতো জমি তৈরী করে সেখনে বীজ প্রয়োগ, সার প্রয়োগ ও সেচ প্রয়োগ করে ভালোমতো পরিচর্চা করতে হয়।