শিম চাষ পদ্ধতি

শিম বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি এবং এটি শীতকালে চাষ করা হয়ে থাকে। শিম চাষের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো।

শিম চাষ পদ্ধতি

শিম বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি এবং এটি শীতকালে চাষ করা হয়ে থাকে। এতে প্রচুর পরিমানে আমিষ থাকে।

শিম চাষের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো।

শিমের জাত

বারি শিম – ১,বারি শিম – ২,বারি শিম – ৩,বারি শিম – ৪,ইপসা শিম,ঘৃত কাঞ্চন,কার্তিকা,নলডক,বাঘনখা,বারোমাসি প্রভৃতি শিমের জনপ্রিয় জাত।

শিম চাষ পদ্ধতি

শিম চাষে মাটি তৈরি

দো-আঁশ মাটি শিম চাষের জন্য উত্তম। তবে উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সব ধরনের মাটিতে শিম চাষ করা যায়।

শিমের বীজ বপনের সময়

মধ্য জুন – সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শিমের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

শিম চাষে জমি তৈরি

বেশি জমিতে আবাদ করলে জমি কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে ঢেলা ভেঙে সমান কর‍তে হবে। তবে বসতবাড়ীর আশেপাশে, পুকুর পাড়ে, পথের ধারে, জমির আইলে শিমের চাষ করা হয়।

মাদা তৈরি

জমিতে মাদা (গর্ত) ৪৫ সেঃমি x ৪৫ সেঃমিঃ x ৪৫ সেঃমিঃ আকারে তৈরি করতে হবে। এক মাদা থেকে আরেক মাদার দূরত্ব ২.৫-৩ মিটার।

শিম চাষে সার প্রয়োগ

প্রতিটি মাদা পচা আবর্জনা সার দিয়ে পূরণ করতে হবে। তারপর প্রতিটি মাদায় খৈল গুড়া, ছাই, টিএসপি, মিউরেট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

মাদাটি এমনভাবে ভরতে হবে যেন মাটি থেকে ভরাটকৃত মাদার উচ্চতা ১০ সেঃমি হয়। শিম ফসলটিতে নাইট্রোজেন সারের দরকার হয় না।

এদের শিকড়ে নডিউল বা গুটি তৈরি হয় যাতে প্রচুর বায়োমন্ডলীয় নাইট্রোজেন জমা থাকে।

শিমের বীজ বপন

সার প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর প্রতি মাদায় ৫-৬ টি বীজ বপন করতে হবে। চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় ২ টি সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।

পরিচর্যা

গাছ ঠিকমতো বাড়ার জন্য মাচা দিতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি শক্ত হলে নিড়ানি দিয়ে তা আলগা করে দিতে হবে।

মাটিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে। বর্ষায় যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে সেজন্য গোড়ায় মাটি উঠিয়ে দিতে হবে।

চারা বড় হতে থাকলে ১৫-২০ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে ৬০ গ্রাম টিএসপি ও ৬০ গ্রাম এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

শিমের বালাই ব্যবস্থাপনা

শিম গাছে জাব পোকা, থ্রিপস, পড বোরার ইত্যাদির আক্রমণ হতে পারে। জাব পোকা নতুন ডগা, পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদির রস চুষে খায়।

নিমের বীজের শাঁস পিষে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এদের দমন করা যায়। ভাইরাস আক্রান্ত গাছগুলো মাটিসহ উঠিয়ে গভীর গর্তে পুঁতে দিতে হবে।

ফসল সংগ্রহ

জাত ভেদে বীজ বপনের ৯৫-১৪৫ দিন পর শিম গাছ থেকে শিম উঠানো যায়। বীজ হিসেবে শিম সংগ্রহ করতে শিম যখন গাছে শুকিয়ে হলদে বর্ণ হয়, তখন সংগ্রহ করা হয়।

শিম থেকে বীজ বের করে পরিস্কার ও শুষ্ক পাত্রে নিমের শুকনো পাতার গুঁড়াসহ সংরক্ষণ করতে হবে।

ফলন

জাতভেদে শিমের ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে। যেমন – বারি শিম-১ জাতের শিমের বীজ হেক্টরপ্রতি ২-৩ টন (৮-১২ কেজি/শতক) উৎপাদিত হয়।

সবজি হিসেবে শিম পুরা মৌসুমে উঠানো যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে শিম ধরে। শিম গাছ ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফলন দেয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *