স্বল্প সময়ে বিপুল অর্থ পেতে জাননি কফি চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই

কফি বাণিজ্যিক ও অর্থকরী ফসল। সারা বিশ্বে কফির ব্যপক চাহিদা রয়েছে। তাই আমাদের কফির সঠিক ও উত্তম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। 

কফি গাছ

কফি হলো বাণিজ্যিক ও অর্থকরী ফসল। প্রতিদিন প্রায় মানুষ কফি পান করে। এছাড়া অনুষ্ঠান ও রেস্টুরেন্ট কিংবা বন্ধুমহলের আড্ডায় শরীর রিফ্রেশ বা স্বাদের জন্য কফি পান করা হয়। কফি একটি অর্থকরী ফসল বিধায় এটি চাষ করে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন হবে তেমনি এটি বহুমাত্রিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করবে।

পাহাড়ি এলাকা বাদে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকায় ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের পাহাড়ি মানুষের বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে কফি। কফি হালকা ছায়ায় ভালো হয় এবং অতিরিক্ত সার ও সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। স্থানীয় চাহিদা অনেক বেশি ও রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বলে এটির উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তাই আসুন জানি কফি চাষ সম্পর্কে।

আরোও পড়তে পারেন – জুন মাসে কি কি সবজি চাষ করে ভালো লাভ করা যায়

কফি চাষে আবহাওয়া ও জলবায়ু 

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় রোবাস্টা জাতের কফি চাষ উপযোগী। এটি সাধারণত বৃষ্টিপাতে ভালো ফলে, সেজন্য বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় পার্বত্য অঞ্চল ও টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের আবহাওয়ায় এটির সম্প্রসারণ সম্ভব। রংপুর এলাকার মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের জন্য উপযোগী।

কফি চাষের মাটি 

সাধারণত পাহাড়ি জমিতে বা দোআঁশ মাটিতে কফি চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

কফির চারা রোপণ

  • প্রথমে বালাইমুক্ত বীজ সংগ্রহ করে ফলের খোসা ছাড়িয়ে পানিতে ধুয়ে ফল থেকে বীজ আলাদা করে ফেলতে হবে। তারপর বীজগুলো শুকিয়ে শুকনা কাঠের গুড়া বা ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানের রাখতে হবে।
  • ৫ দিন পর আলাদা করে বীজ তলায় বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে বীজ গজিয়ে চারা হয়। মে থেকে জুন মাসে জমিতে চারা রোপণ করার উপযুক্ত সময়।
  • জমি তৈরীর জন্য গর্ত করতে হবে এবং গর্তে গোবর সার এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • কফি গাছ উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। তাই চারা লাগানোর সময় ছায়াযুক্ত স্থানে চারা রোপণ করতে হবে।
  • কফি ক্ষেতের মাঝে মাঝে কাঁঠাল, ডুমুর, সুপারি, পেঁপে প্রভৃতি ছায়া প্রদানকারী গাছ রোপণ করা যেতে পারে।

আরোও জানুন – বারোমাসি লেবু চাষ বারোমসি অর্থলাভ জানি লেবু চাষের সঠিক নিয়ম

কফি চাষে সার প্রয়োগ 

রোবাস্টা জাতে সার কম লাগে। বছরে চারবার অন্তর অন্তর গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

প্রথম বছরের কফি চাষে সার প্রয়োগ:

সারের নাম প্রতি শতকে
ইউরিয়া২০ গ্রাম
টিএসপি১৫ গ্রাম
পটাশ ২০ গ্রাম

চতুর্থ বছরে কফি চাষে সার প্রয়োগ :

সারের নামপ্রতি শতকে
ইউরিয়া৩৫ গ্রাম
টিএসপি২৫ গ্রাম
পটাশ ২৫ গ্রাম

আরোও পড়তে পারেন – টবে সারা বছর লেবু চাষ পদ্ধতি

সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে কফি গাছের বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতা ভেদে বিভিন্ন বয়সে সার প্রয়োগ করা যায়।

  • গাছের গোড়া থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে নালা করে সার প্রয়োগ এবং সেচ দিয়ে গাছের গোড়ায় মালচিং করতে হবে। গাছে অন্তত ছয় কেজি পর্যন্ত জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • গাছের গোড়ায় মালচিংসহ দুই সারির মাঝে সিম জাতীয় ফসল চাষ করলে মাটিতে নাইট্রোজেন সার যুক্ত হবে। এপ্রিল থেকে মে মাসে সেচ দেওয়া প্রয়োজন।

কফি চাষে রোগবালাই দমন 

কফি গাছের রোগ হলো পাতার রাস্ট। কফি গাছে মিলিবাগ , গ্রীনবাগ, সাদা কান্ড ছিদ্রকারী পোকা আক্রমণ করে। এছাড়াও কালো পঁচা, মূল পঁচা, বাদামী ঝলসানো রোগ অনেক সময় দেখা যায়।

ম্যালাথিয়ন, কার্বারিল, সাইপারমেথ্রিন কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা দমন করা যায়। বর্দো মিক্সার স্প্রে করে রোগ দমন করা যায়।

আরোও পড়ুন – জিনসেং চাষ পদ্ধতি

কফি ফসল সংগ্রহ

কফি গাছের চারা রোপণের তিন বছর পর কফি সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত দশ থেকে পনেরো দিন পর পর পাঁচ থেকে ছয় কিস্তিতে বছরে দুইবার ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল সংগ্রহ থেকে শুরু করে পানযোগ্য পর্যন্ত কতগুলো ধাপ রয়েছে তা নিম্নরূপ :

  1. কফির ফল যখন গাঢ় লাল বা হলুদ রং হয় তখন এগুলো গাছ থেকে সংগ্রহ করা।
  2. প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর এর কার্যক্রম শুরু করে দিতে হবে না হলে পঁচন শুরু হতে পারে। 

FAQs

কফি তৈরির উপাদান কি কি?

কফি তৈরির উপাদান হলো গরম পানি, প্যাকেটজাত কফির ‍গুড়া আর সামান্য পরিমাণ চিনি।

কফি উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম দেশ কোনটি?

কফি উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম দেশ হল ব্রাজিল।

কফিতে ক্যাফেইন ছাড়া আর কি থাকে?

কফিতে ক্যাফেইন ছাড়া ফ্ল্যাভোনয়েডস, লিগনানস, উদ্ভিদ অ্যালকালয়েড এবং ম্যাগনেসিয়া থাকে।

কফি সবচেয়ে ভালো কেন বা কফির উপকারিতা কি?

কফি সবচেয়ে ভালো কারণ কফি মস্তিষ্ক বা মাইন্ড রিফ্রেশ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কফির উপকারিতা হলো কফিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য সক্রিয় পদার্থ সমূহ আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমাতে এবং রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *