বানিজ্যিকভাবে পনির উৎপাদন পদ্ধতি

বর্তমানে দেশে দিন দিন পনিরের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনও শুরু হয়েছে। তাই আসুন জেনে নিই বানিজ্যিকভাবে পনির উৎপাদন পদ্ধতি।

পনির

পানির হলো দুধ থেকে উৎপাদিত দুগ্ধ আমিষ জাতীয় খাদ্য। ইহা আমিষের উত্তম উৎস। যা শিশু কিশোর ও বয়োবৃদ্ধদের আমিষের পুষ্টি চাহিদা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মিটিয়ে থাকে।

দৈনিক সামান্য পরিমাণে পনির খেয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এ ছাড়াও পনিরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন রয়েছে।

পনির দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে অন্যতম পণ্য যা রেনিন নামক এনজাইম যোগ করে দুধ জমাট বাঁধিয়ে তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে অষ্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঠাকুরগাঁসহ বিভিন্ন স্থানে পনির তৈরি হয়ে থাকে।

বর্তমানে দেশে দিন দিন পনিরের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনও শুরু হয়েছে। পনিরের প্রকারভেদ আছে। তবে এদের স্বাদের খুব একটা পার্থক্য নেই।

ইউরোপ, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, আমেরিকা ও ভারতে পনিরের ব্যবহার ব্যাপক। পনির পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।

গবেষকরা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পনির রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় প্রায় সবাই পনির পছন্দ করেন।

পনিরের উপকারিতা

শরীর সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে; হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে এবং হাড়ের ক্ষয়রোধ করে; দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং দাঁতের ক্ষয়রোধ করে; বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে; ত্বকের লাবণ্য দিপ্তি দীর্ঘদিন বজায় রাখে; নিয়মিত সেবনে ( লিনোলিক ও স্পাইনগো লিপিডম) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

পনিরে কার্বহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে; পনিরে বিদ্যমান বিভিন্ন ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

তবে বেশি লবণাক্ত পনির শরীরের জন্য ভালো না কারণ লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। এ ছাড়া স্যাচুরেটেড ফ্যাটে পূর্ণ বলে বাড়াতে পারে হৃদরোগের ঝুঁকি

পনির তৈরির উপকরণ

গরু, মহিষ বা ছাগল, ভেড়ার দুধ; Rennet অথবা মাওয়ার পানি: অ্যালুমিনিয়াম পাত্র, ভ্যাট (পানি গরম করার আধুনিক পাত্র) ও গ্যাসের চুলা; আকৃতি প্রদানের জন্য প্লাস্টিক ছাচ; প্যাকেটকরণ মেশিন; সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ এবং লবণ ইত্যাদি।

পনির প্রস্তুত প্রণালী

পাতলা সাদা কাপড় দিয়ে দুধ ছেঁকে নিতে হবে এবং পাত্রের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী মেপে নিতে হবে। একটি বড় পাত্রে পানি নিয়ে ৪৫° ডিগ্রি তাপমাত্রায় গরম করতে হবে।

এরপর অন্য আরেকটি ছোট পাত্রে দুধ মেপে নিয়ে উক্ত গরম পানিতে রেখে দুধের তাপমাত্রাও ৪৫° ডিগ্রি গরম করতে হবে। দুধের তাপমাত্রা ৪৫° ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে চুলা বন্ধ করে দিতে হবে।

পানি ও দুধের তাপমাত্রা ৪৫° ডিগ্রি হলে দুধে মাত্রামতো Rennet আস্তে আস্তে মিশাতে হবে। ১৫-৩০ মিনিটের মধ্যে ছানা হয়ে যাবে এবং জল আলাদা হয়ে যাবে।

আবার তাপমাত্রা বাড়িয়ে (চুলা জ্বালিয়ে) ৫৫° ডিগ্রি করতে হবে এবং চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। ২ ঘণ্টা পরে পনির আঠালো চুইংগামের মতো হবে।

পাতলা সাদা সুতির কাপড় দিয়ে পনির ছেঁকে পুঁটলি বানিয়ে চাপ দিয়ে রাখতে হবে, ৪-৫ ঘণ্টা পরে সব পানি বের হয়ে যাবে। ট্রেতে করে ফ্রিজে রাখতে হবে পরের দিন ।

জীবাণুমুক্ত করার জন্য লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সুবিধাজনক আকার ও পরিমাণ তৈরি করতে ছাঁচ (প্লাস্টিকের) ব্যবহার করতে হবে।

শক্ত করে ছাঁচে ভর্তি করতে হবে। শক্ত আকৃতি পাওয়ার পর ফুড গ্রেড পলিথিনে বায়ুরোধক প্যাক তৈরি করতে হবে। তবে Cheese paper অথবা Wax অথবা Parchment paper দিয়ে মোড়ানোই উত্তম।

শেষে, প্রতিষ্ঠানের নাম, BSTI এর রেজি: নং, উৎপাদনের ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ যুক্ত স্টিকার লাগিয়ে বাজারজাত করতে হবে।

পনির সংরক্ষণ পদ্ধতি

স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শীতকালে ২০ দিন গ্রীষ্মকালে ১০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। ফ্রিজে ৪° ডিগ্রি তাপমাত্রায় ২-৪ মাস এবং শক্ত পনির ৬-৯ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

পনির ড্রিপ ফ্রিজে রাখা যাবে না। দুধ একটি আদর্শ পানীয় কিন্তু অল্প সময়েই (৬-৭ ঘণ্টা) নষ্ট হয়ে যায়, সেখানে পনির অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

তাছাড়া জায়গা কম লাগে, পরিবহন করাও সহজ। পনির তৈরিতে অল্প মূলধন লাগে। খুব সহজেই একজন বেকার যুবক প্রশিক্ষণ নিয়ে এ কাজ করে সংসার আয় বাড়াতে পারেন।

দেশের যে সব স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিলিংপ্ল্যান্ট নেই বা দই মিষ্টির কারখানা নেই সেখানে পনির উৎপাদনের মাধ্যমে দুধকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানো সম্ভব।

পরিশেষে উৎপাদিত পনির বিপণনের জন্য বিভিন্ন বেকারি শপ, দই-মিষ্টির দোকান, মেগাশপ ও বিভিন্ন ফাস্ট ফুডের কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ফেসবুক, অনলাইন, বেতার, টিভি ও বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি বাড়ানো সম্ভব।

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *