শসা চাষ পদ্ধতি ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

বর্তমান সময়ের জন্য শসা একটি জনপ্রিয় খাদ্য এবং এর চাষ বেশি পরিমানে হয়ে থাকে। কিন্তু অনেকে সফল হয় অনেকে আবার হয় না। এর জন্য জানা প্রয়োজন সঠিক চাষ পদ্ধতি ও এর রোগ বালাই দমন সম্পর্কে।

শসা চাষ পদ্ধতি ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশের জনপ্রিয় সবজির মধ্যে শসা অন্যতম। আমাদের দেশে বিশেষ করে সালাত ও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। যত দিন যাচ্ছে তত এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন প্রায় সময় মানুষ খেয়ে থাকে। ১০০ গ্রাম শসার মধ্যে আছে ৯৬% জলীয় অংশ, ২.৬ গ্রাম শ্বেতসার, ০.৬ গ্রাম আমিষ, ১৮ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.২ মিলি গ্রাম লৌহ, ৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন, ১০ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি। আজকের আলোচনা থাকছে শসার চাষাবাদ পদ্ধতি ও এর রোগ বালাই দমন ব্যবস্থা সর্ম্পকে।

শসা চাষ পদ্ধতি

বর্তমান সময়ে ব্যাপক ভাবে শসার চাষাবাদ হয়ে থাকে। কারণ বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকগণ নানা ভাবে এর চাষাবাদ করে। তবে অনেকে এর থেকে ভালো ফলন পায় না সঠিক চাষের কারণে।

তবে আশা করা যায় যদি সঠিক জমি নির্বাচন, সার প্রয়োগ, ভালো জাত নির্বাচন, চারা উৎপাদন ইত্যাদি বিষয় গুলোর উপর যদি মনোযোগ দেওয়া যায় তাহলে এর থেকে ভালো ফলন ও অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

আসুন জেনে নিই শসা চাষের পদ্ধতি গুলো কি কি-

১) শসার জন্য মাটি ও জলবায়ু

শসা চাষের প্রধান উপাদান হলো মাটি নির্বাচন করা। সঠিক মাটি নির্বাচন করতে না পারলে এর থেকে ভালো ফলন আশা করা যায় না। তাই এর জন্য প্রয়োজন উর্বর দো-আঁশ মাটি এর যায় অম্লক্ষারত্বের পরিমান হবে ৫-৫-৬.৮ এবং গড় তাপমাত্রা প্রয়োজন ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

২) শসার জাত নির্বাচন

শসা চাষে অধিক ফলন নির্ভর করে ভালো জাতের বীজ সংগ্রহের উপর। তাই  এই দিকটিকে ভালো ভাবে নজর দিতে হয়। বাংলাদেশে এখন অনেক জাতের শসার বীজ পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগ হযে থাকে বিদেশী জাতের। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাত হলো- গ্রীন কিং, শীলা, আলভী, বীরশ্রেষ্ঠ, শীতল, হিমেল,গ্রীন ফিল্ড, পান্ডা, ভেনাস, মাতসুরী, মধুমতী, নওগা গ্রীন, লাকি-৭ ইত্যাদি।

৩) শসার জীবন কাল

সাধারনত শসার জাত ভেদে ৭৫ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত হতে পারে।

৪) শসার বীজ বপনের সময়

ভালো ফলন অনেক সময় ভালো বীজ বপনের উপর ও নির্ভর করে। তাই সঠিক সময়ে বীজ বপন করা উত্তম। শসার বীজ বপনের উত্তম সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।

৫) শসার চারা উৎপাদন

শসার বীজ বীজতলায় চারা তৈরি করে তারপর জমিতে রোপণ করা উত্তম। এক্ষেত্রে ৫০ঃ৫০ অনুপাতে পঁচা গোবর বা কম্পোষ্ট সার ও মাটি একসাথে মিশিয়ে ৬x৭ ইঞ্চি সাইজের পলিথিন ব্যাগে ভরতে হবে।প্রতি ব্যাগে দুইটি করে বীজ রোপণ করতে হবে।

৬) সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

সারের নামমোট পরিমান( শতাংশ প্রতি)জমি তৈরির সময় ( শতাংশ প্রতি)চারা রোপনের ৫-৬ দিন পূর্বেচারা রোপণের ১০-১৫ দিন পরফুল আসার পরচারা রোপণের ৫০-৫৫ দিন পরফল ধরার সময় ( ২ বার ১৫ দিন অন্তর)
পঁচা গোবর৬০ কেজি৩০ কেজি২ কেজি
টিএসপি৬০০ গ্রাম২০০ গ্রাম১২ গ্রাম৫ গ্রাম
ইউরিয়া৭০০ গ্রাম১০০ গ্রাম১০ গ্রাম৫ গ্রাম১৫ গ্রাম১৫ গ্রাম৫+৫ ১০+১০ গ্রাম
এমওপি৭০০ গ্রাম২০০ গ্রাম২০ গ্রাম
জিপসাম৪০০ গ্রাম৪০০ গ্রাম
দস্তাসার৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম
বোরাক্স৪০ গ্রাম৪০ গ্রাম
শসা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

৭) চারা রোপণ

চারার বয়স ১৬-২০ দিন হলে পলিব্যাগ সরিয়ে মাদায় চারা রোপণ করতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২ টি চারা থাকলে দূর্বল চারা সরিয়ে সবল চারা রোপণ করতে হবে। প্রতিটি চারার দূরত্ব হবে ১.৫x১.৫ মিটার।

৮) ছাউনি দেওয়া

শসা চাষে চারায় অব্যশই ছাউনি বা মাচা দিতে হবে। এর জন্য তারের নেট অথবা সুতলি অথবা বাশেঁর কঞ্চির সাহায্যে মাচা/বাউনি দিতে হবে। বাউনি বা মাচা নিকাশ নালার উভয় পাশের ২ বেড বরাবর ১ টি দিলে চলবে।

৯) ফসল তোলা

শসার জাত ভেদে বীজ রোপণের ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়।

শসার রোগ বালাই দমন ব্যবস্থা

শসা রোপণ করলে হয় না এর জন্য প্রয়োজন খুব ভালো করে পরিচর্যা। সঠিক পরিচর্যায় ফলনকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে শসা নানা রকম রোগ বালাই দেখতে পাওয়া যার ফলে ফলন অনেকাংশ কমে যায়। এতে কৃষক ভাইগণ অনেক হতাশ হন এবং অনেক ক্ষতির মুখে পড়ে। তাই শসার রোগ বালাই সর্ম্পকে ধরণা থাকা অনেক প্রয়োজন। যা আপনাকে অনেকাংশ ফলন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

আসুন জেনে নিই শসার রোগ বালাই দমন ব্যবস্থা সর্ম্পকে-

১) শসার পাতা কোকড়ানো রোগ

শসার এই রোগ হলে পাতা কুঁকড়ে যায়। পাতার আকার ছোট হযে যায়। পাতা হলদে হয় এবং বয়স্ক পাতা মচমচে হয়। এই রোগরে বাহক সাদা মাছি, লিফ হোপার।

দমন ব্যবস্থা

জমি থেকে আক্রান্ত গাছকে তুলে ফেলুন। পোকা দমনের জন্য এসিফেট ১গ্রাম/লিটার পানিতে মিশেয়ে বিকালে স্প্রে করুন।

২) শসার মোজাইক রোগ

এই রোগ শসা আক্রান্ত হলে গাছের পাতা হলুদ ও পাতা সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইক দাগ দেখা যায়। এই রোগের বাহক জাব পোকা ও সাদা মাছি। 

দমন ব্যবস্থা

জমি থেকে আক্রান্ত গাছকে তুলে ফেলুন। পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক এডমায়ার ১ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকালে স্প্রে করুন।

৩) শসার ডাউনি মিলিউড রোগ

এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ। শসা ডাউনি মিলিউড রোগে আক্রান্ত হলে পাতার উপর ছোট ছোট কোণা আকৃতির দাগ দেখা যায়। পাতার নিচে গোলাপী দাগ দেখা যায়।

দমন ব্যবস্থা

এই রোগ বীজ থেকে ছড়ায় তাই আক্রান্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ না করা। আক্রান্ত গাছকে জমি থেকে সরিয়ে নেওয়া। এর জন্য ডাইমিথেন এম ৪৫ ২.৫ গ্রাম এবং ম্যানকোজেব মেটালেক্সিল ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকালে স্প্রে করুন।

৪) শসার পাউডারি মিলিউড রোগ

এই রোগ একটি ছত্রাক জনিত রোগ। এই রোগে গাছ আক্রান্ত হলে পাতার উপর সাদা পাউডার জমে ও ফসল নষ্ট হয়ে যায়।

দমন ব্যবস্থা

এর জন্য প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন গাছ রোপণ করা। পরিত্যাক্ত পাতা সংগ্রহ করা। রোগ দমনের জন্য কীটনাশক ম্যাকসালফার ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকালে স্প্রে করা।

৫) শসার ঢলে পড়া রোগ

শসার ঢলে পড়া একটি ছত্রাক জনিত রোগ। এই রোগ আক্রান্ত হলে গাছের শিকড় নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে গাছ প্রয়োজনীয় রস শোষন করতে পারে না এবং গাছ শুকিয়ে ঢলে পড়ে যায়।

দমন ব্যবস্থা

আক্রান্ত গাছ জমি থেকে অপসরন করা। কার্বেন্ডাজিম দিয়ে বীজ রোপণের পূর্বে শোধণ করা। চারার ক্ষেত্রে চারা গোড়ায় কমপ্যানিয়ন ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে দিন।

সর্তকতা: যেকোনো বালাই নাশক বা কীটনাশক ব্যবহারের ১৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করুন।

পরিশেষে কৃষক ভাইদের বলি, আপনারা ভালো ফলনের জন্য উপরের বিষয় গুলোকে অনুসরণ করতে পারেন এবং যেকোনো পরামর্শ প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনাদের সোবাই নিয়োজিত সর্বদা সর্বক্ষণ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ও নিরাপদে থাকুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *