আগর গাছ চাষ পদ্ধতি

আগর এমন একটি গাছ যে গাছের কাঠের দাম ২ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এই আগর গাছের দাম যেমন বেশি তেমন এই গাছ পরিপক্ক বা বড় হতে ১৫-২০ বছর সময় প্রয়োজন হয়। ধুপকাঠি ও সুগন্ধি আতর তৈরীর জন্য বর্তমানে আগর গাছের চাহিদা প্রচুর। তাই চলুন আগর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।

আগর গাছ চাষ পদ্ধতি

আগর গাছ চাষ পদ্ধতি খুবই সহজ একটি পদ্ধতি। কারণ, আগর গাছ যেকোনো জায়গায় চাষ করা যায়। আগর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Aquilaria malaccensis এবং আগরের ইংরেজি নাম হলো Aloe Wood বা Wagle Wood. আগর শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো উৎকৃষ্ট বা সুগন্ধিযুক্ত কাঠ।

এই আগর গাছ ধুপকাঠি বা আগরবাতি এবং আতর তৈরীতে বিশেষভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এজন্য বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশে আগরের চাহিদা ও দাম বেশি। তাই চাষীরাও এই আগর চাষে মনযোগী হচ্ছেন। আর আগর যেকোনো স্থানে জন্মায়। তাই চাইলে ঘরের আঙ্গিনা আগর চাষ করা যায়। আসুন আগর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।

আরোও পড়তে পারেন – চারা গাছ রোপন পদ্ধতি

আগর গাছ চাষের জমি নির্বাচন

আগর এমন একটি গাছে যে গাছ প্রায় সব জায়গায় চাষ করা যায়। যদিও উঁচু জায়গায় (যেমন: পাহাড় বা টিলা) আগর গাছ চাষ করলে আগরের উৎপাদন ভালো হয়। তবে বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে অথবা পরিত্যক্ত জায়গায় আগর গাছের চাষ করা যায়। অর্থাৎ এই আগর গাছ চাষের জন্য বিশেষ কোন জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। 

আগর গাছ চাষের মাটি ও জলবায়ু নির্বাচন

আগর গাছ চাষের জন্য সুনিষ্কাশিত পাহাড়ী মাটি অথবা অম্লীয় মাটি খুবই উপযোগী। তবে আগর গাছ চাষের মাটির প্রতিক্রিয়া বা পিএইচ মান ৪.০০ থেকে ৬.০০ হলে আগর গাছের জন্য খুব ভালো হয়। আর আগর গাছ চাষের স্থানে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০০ সেমি এর কম হতে হবে এবং গড় তাপমাত্রা ২৭ থেকে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলে আগর গাছের উৎপাদন ভালো হয়।

আগর গাছের বীজ বপন বা চাষের সময়

আগর গাছের চারা তৈরীর জন্য আগর গাছের বীজ বপনের উৎকৃষ্ট সময় হলো মার্চ-এপ্রিল মাস। আগর গাছের চারা রোপণ বা চাষের উৎকৃষ্ট সময় হলো বর্ষা মৌসুমে। বাংলাদেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে আগর চাষ করার উপর্যুক্ত সময়। 

আগর গাছের চারা তৈরির জন্য আগর বীজ সংগ্রহ

  • আগর গাছের গাঢ় বাদামী বর্ণের ক্যাপসুল জাতীয় আগর ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। প্রতি আগর ফলে দুটি করে বীজ হয়ে থাকে।
  • আগর বীজের অঙ্করোদগম ক্ষমতা খুবই কম সময়ে বা ৭ থেকে ১০ দিনের জন্য থাকে।

আগর গাছের চারা তৈরি

  • আগরের চারা তৈরীর জন্য প্রথমে বালুর বেড তৈরী করতে হবে।
  • তারপর আগর বীজগুলো বালুর বেডের উপর বিছিয়ে দিয়ে তার উপরে আবারো বালু দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আর এখানে আগরের বীজগুলো অঙ্কুরিত হবে।
  • বালুর বেডে প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন থাকার পর আগরের বীজ গুলো আগর চারাতে রূপান্তরিত হবে।
  • তারপরে সেই আগর চারা গুলো পলিব্যাগে স্থানান্তরিত করতে হবে। আগরের চারা ভালোভবে গজানোর জন্য অস্থায়ী শেডের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • আগর চারায় নিয়মিত পানির সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

আগর গাছ চাষের পূর্বে জমি তৈরী

আগর গাছ চাষের পূর্বে চাষের জমির মাটিতে আগর গাছের সংখ্যা অনুযায়ী গর্ত করতে হবে। আগরের চারা রোপণের সেই  গর্তটির পরিমাপ হবে দৈর্ঘ্য ৫০ সেমি, প্রস্থ ৫০ সেমি এবং গভীরতা ৫০ সেমি। তারপর আগর চারার সেই গর্তগুলোতে পঁচা গোবর ও অন্যান্য সার (যেমনঃ জৈব সার/ কম্পোস্ট সার, টিএসপি সার, এমওপি সার, জিপসাম সার) আগর গাছের বয়স অনুযায়ী প্রয়োগ করলে আগরের ফলন ভালো হবে।

আরোও জানুন – মেহগনি গাছ চাষ পদ্ধতি

আগর গাছের চারা চাষ বা রোপণ পদ্ধতি

  1. আগর গাছের চারা মাটির গর্তে সোজা করে রোপন করতে হবে।
  2. সাধারণত আগর চাষের জমিতে ১-২ বছর বয়সী আগরের চারা লাগালে দ্রুত আগরের ফলন পাওয়া যায়।
  3. আগর চাষের জমিতে আগরের চারা সারিবদ্ধ করে রোপণ করতে হবে।
  4. আগর চাষের জমিতে আগরের চারা রোপনের সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে জমির পরিমাপ অনুযায়ী ৫-৬ ফুট এবং চারা থেকে চারার দুরত্ব ৩-৪ ফুট। 

আগর চাষে আগর গাছের পরিচর্যা

  1. খরা মৌসুমে আগর চাষ করলে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে।
  2. নির্দিষ্ট সময় পর পর আগর গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
  3. তাছাড়া নিয়ম করে আগর গাছে কিছু রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে আগর গাছের দ্রুত বৃদ্ধি হয়।

আরোও পড়তে পারেন – কিভাবে ভালো চারা বাছাই করতে হয়

আগর চাষে আগর গাছের রোগ ও পোকা-মাকড় দমন ব্যবস্থাপনা

আগর গাছের গোড়া পচা রোগ এবং ডাইব্যাক রোগ ও প্রতিকার

আগর গাছে মাঝের মধ্যে আগর গাছের গোড়া পচা রোগ এবং ডাইব্যাক রোগ হয়। এই ডাইব্যাক রোগের কারণে আগর গাছের ডালপালাগুলো শুকিয়ে যায়।

আর এই আগর গাছের গোড়া পচা রোগ এবং ডাইব্যাক রোগের প্রতিকার হলো আগর গাছে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক (যেমন: টিল্ট অথবা স্কোর) প্রয়োগ করা। এত আগরের ভালো ফলন পাওয়া যায়।

আগর চাষে বিছা পোকার আক্রমণ

আগর চাষের ক্ষেত্রে আগর গাছের পাতায় বিছা পোকা আক্রমণ করে পাতা ঝাঝরা করে ফেলে। তাই আগর গাছের পাতায় এই বিছা পোকার আক্রমণ রোধ করার জন্য সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

আগর সংগ্রহের সময়

প্রাকৃতিকভাবে ২৫-৩০ বছর সময় লাগে আগর গাছে আগর তৈরি হতে। তবে কৃত্রিমভাবে আগর গাছ চাষ করলে আগর গাছের ৫-৬ বছর বয়সের সময় আগর গাছে পেরেক মারলে আগর গাছের ১৫-১৬ বছর বয়স হলেই আগর কাঠ সংগ্রহ করা যায়।

যদিও আগর কাঠ সারা বছরই সংগ্রহ করা যায়। তবে আগর কাঠ সংগ্রহের উৎকৃষ্ট সময় হলো জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক আগর গাছ থেকে ২ থেকে ২.৫ কেজি আগর কাঠ পাওয়া যায়।

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

FAQs

আতর কি দিয়ে তৈরি করা হয়?

আতর আগর গাছে উৎপাদিত রক্তের মতো ঘন রস থেকে তৈরি করা হয়।

আগর কাঠ কোনটি ভালো?

ভিয়েতনামের অ্যাকুইলারিয়া ক্রাসনা প্রজাতির আগর কাঠ সবচেয়ে ভালো।

আগর কাঠের দাম কত?

আগর গাছের ভিতরে থাকা কালো রসের উপর ভিত্তি করে ১ কেজি আগর কাঠের দাম সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

বাংলাদেশে আগর চাষ করা হয় কোন জেলায় বা কোন কোন কোন জায়গায়?

বাংলাদেশে আগর চাষ করা হয় বর্তমানে সিলেট তথা মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *