রাবার চাষ পদ্ধতি
রাবার আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহার্য বস্তু। আমরা প্রতিনিয়ত কোনো না কোন ভাবে রাবার ব্যবহার করে থাকি। আর এই রাবার চাষ বর্তমানে অনেক জনপ্রিয়। তাই আসুন রাবার চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।

রাবার গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Hevea brasiliensis এবং রাবারের ইংরেজি হলো Rubber. রাবার চাষ বা রাবার গাছের চাষ পদ্ধতি খুব সহজ হলেও রাবার চাষ খুবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার| কারণ, রাবার গাছ পরিপক্ক বা বড় হতে প্রায় ৬-৭ বচর সময় লাগে। আর তারপর রাবার গাছ থেকে গাছের কষ বা রাবার সংগ্রহ করে রাবার প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়।
রাবার গাছের উপকারিতা হলো এটি বায়ু শোধন করে পরিবেশকে ভালো রাখে। যদি ভালো যত্ন পায় রাবার গাছ প্রাকৃতিক পরিবেশে সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে এবং রবার গাছের উচ্চতা হয় ৫০ ফুটেরও বেশি। তাই আসুন রাবার গাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি।
আারোও পড়তে পারেন – আতা ফল চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই
রাবার গাছ চাষ উপযোগী ভূমি ও মাটি নির্বাচন
রাবার গাছ চাষের ক্ষেত্রে জলবায়ু, আবহাওয়া ও মাটির গঠন খুবই বিবেচ্য বিষয়। কারণ, এসবের উপর রাবার চাষের সফলতা অনেকটা নির্ভরশীল। রাবার চাষের জন্য সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১০০-২০০ মিটার উচ্চতার ভূমি সর্বাধিক উপযোগী। রাবার গাছ চাষের জন্য মাটির গঠন ৩৫% কাদা ও ৩০% বালি হলো ভালো এবং রাবার গাছ চাষের জন্য বেলে দোঁআশ মাটি খুবই উপযোগী|
এছাড়াও রাবার চাষের জমির মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফেট, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাংগানিজ ইত্যাদি উপকারি পদার্থ কম অথবা বেশি পরিমাণে থাকা প্রয়োজন। তাছাড়াও রাবার গাছ চাষের জমি ভূপৃষ্ট থেকে অন্তত ১০০সেঃমিঃ নিচ পর্যন্ত পাথরের স্তর মুক্ত ও জলের স্তর ১০০-১৫০ সেঃমিঃ থাকা উচিত। এছাড়াও রাবার গাছ চাষের মাটির পি এইচ রেঞ্জ থাকতে হবে ৪-৫.৫ এর মধ্যে এবং রাবার চাষেরএলাকায় পানি জমে থাকতে পারবে না এবং জল নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করতে হবে।
আরোও পড়ুন – তামাক চাষ পদ্ধতি
রাবার গাছ চাষের উপযোগী আবহাওয়া
রাবার গাছ যেখানে চাষ বা রোপন করা হবে সে জায়গায় সারা বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০-২৫০ সেঃমিঃ এবং গড় তাপমাত্রা ২৫-৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস হওয়া বাঞ্চনীয়।
রাবার গাছ চাষে আগাছা দমন
রাবার চাষের পূর্বে জমি থেকে আগাছা খুব ভালভাবে কেটে পরিষ্কার করে কিছুদিন পর সেই আগাছাগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আর এ কাজটি কমপক্ষে দুই বার করতে হবে। আর আগাছা কাটা ও পোড়ানোর পর অবশিষ্ট ছাই বা ষ্ট্যাম্প এবং আগাছা ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ঔষধ (যেমনঃ গ্লাইফোসেট) কমপক্ষে ৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।
আরোও জানতে পারেন – গ্লাডিওলাস ফুল চাষ পদ্ধতি
রাবার গাছ চাষের পূর্বে বীজতলা তৈরী এবং রাবারের বীজ বপন বা চাষ পদ্ধতি
- সমতল জমিতে রাবার গাছের চার তৈরীর জন্য বীজতলা তৈরী করতে হবে।
- রাবার চাষে বীজতলারবেডে ২˝- ৩˝ ইঞ্চি পুরু নদীর বালি ব্যবহার করতে হবে অথবা মাটির গভীরে ৬˝ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত ভালোভাবে কর্ষন করতে হবে।
- রাবারের বীজতলার উপর ছাউনি বা শেড দিতে হবে।
- রাবারের বীজ সংগ্রহ করে বীজের চ্যাপটা পাশ নিচের দিকে বা মাটির দিকে এমনভাবে বেডে বসাতে হবে যাতে করে রাবার বীজের উপরের অংশ মাটির উপরে দৃশ্যমান থাকে।
- তাজা/টাটকা রাবারের বীজ বালিতে বপন করলে ৫-৭ দিনের মধ্যে অংকুরিত হয়, আর মাটিতে বপন করলে ১০-১৪ দিনের মতো সময় লাগে। তবে ১৪ দিনের মধ্যে যেসব রাবারের বীজ অংকুরিত হয় না, তা পরিত্যাগ করতে হবে।
- রাবারের বীজ থেকে যখন ভ্রুনমূল গজাতে শুরু করবে তখন খুব সতর্কতার সাথে জমিতে থেকে রাবারের বীজ নিয়ে পলিব্যাগ স্থানান্তর করতে হবে। আর রাবারের বীজ স্থানান্তরের সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অংকুরিত রাবারের বীজে কোন ক্রমেই সূর্যের আলো না লাগে এবং বীজে শুক্ষতা না আসে।
আরোও জানুন – টবে সূর্যমুখী ফুল চাষ পদ্ধতি
রাবার গাছের চারা রোপন বা চাষ পদ্ধতি
- রাবারের বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করতে হবে।
- রাবারের চারা সংগ্রহের পূর্বে নির্দিষ্ট দুরুত্ব অনুযায়ী সারি সারি করে ছোট ছোট গর্ত করতে হবে।
- এরপর সেসব গর্তে রাবারের চারা সোজা বা লম্বাভাবে রোপন করতে হবে।
- তারপর মাটি দিয়ে ভালোভাবে চেপে দিতে হবে।
- রাবারের চারা মাটিতে রোপন বা চাষের পর নিয়মিত পরিচর্চা করতে হবে প্রায় ৫-৬ বছর। কারণ, রাবার গাছ বড় হতে ৫-৬ বছরের উপরে সময় লাগে আর তারপর রাবার বা রাবার গাছের কষ পাওয়া যায়।
রাবার চাষের জমিতে সেচ প্রদান
রাবার গাছে জল বা সেচ দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। কারণ, বেশি জলে রাবার গাছের শিকড় বা গোড়া পচে যেতে পারে। আবার রাবার গাছের গোড়ার মাটি একেবারে শুকিয়ে গেলেও রাবার গাছের ক্ষতি হয়। তাই অতিরিক্ত সেচ দেওয়া যাবে না।
আরোও পড়তে পারেন – ফুল চাষ পদ্ধতি
রাবার চাষে রাবার গাছের রোগ ও প্রতিকার
রাবার গাছের রোগ খুব কমই হয়। তারপরও মাঝে মাঝে অ্যাফিড, মিলি বাগ, মাইটস, স্কেল ইত্যাদি পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয় রাবার গাছে। সেক্ষেত্রে গাছের আক্রান্ত অংশটা খুবই যত্ন সহকারে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে অথবা রাবিং বা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলে তুলো ভিজিয়ে মুছে ফেলতে হবে। এছাড়াও এই পরিস্থিতিতে রাবার গাছে নিম তেল স্প্রে করলেও রাবারের ভালো ফলণ পাওয়া যায়।
রাবার প্রক্রিয়াকরণ বা রাবার সংগ্রহ
রাবার গগাছের বাকলই হচ্ছে রাবার গাছের একমাত্র উৎপাদনশীল অংশ। রাবার গাছের এই বাকলের ভিতরের রয়েছে লেটেক্স ভেসেল বা রাবার উৎপাদনকারী কষনালী। আর এই কষনালীগুলোতেই দুধের মত সাদা রাবারের কষ সঞ্চিত থাকে। রাবারের গাছে টেপিং করার সময় বাকলের বাইরের দুটি স্তর ভেদ করে এই কষনালীর স্তর কেটেই রাবার কস সংগ্রহ করা হয়। তারপর তা নানাভাবে প্রক্রিয়াকরন করা হয় এবং বাজারজাত করা হয়।
আরোও পড়ুন – জুম চাষ পদ্ধতি
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
১৯৬১ সালে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথম চট্টগ্রাম ও সিলেটের পার্বত্য এলাকায় রাবার চাষ শুরু হয়।
রাবার দুই প্রকার। যথাঃ ১) প্রাকৃতিক রাবার ও ২) কৃত্রিম রাবার।
রাবার চাষের জন্য বিখ্যাত জেলা হলো কক্সবাজার, আর রাবার চাষের জন্য বিখ্যাত স্থান কক্সবাজারের রামু।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ রাবার বাগানের নাম হলো দাঁতমারা রাবার বাগান। আর এই দাঁতমারা রাবার বাগান সর্বপ্রথম ১৯৬৮ সালে যাত্রা শুরু করে।
১৮০০ সালে রাবার পায়ের পাতার মোজাবিশেষ, টায়ার, শিল্প ব্যান্ড, চাদর, জুতা, জুতার তলা এবং অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহার হতো।
রাবার বেলুন দ্রব্যাদি, অস্ত্রপাচার দ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরীতে ব্যবহার করা হয়।