তিল চাষের সঠিক সময় ও তিল চাষ পদ্ধতি
তিল একটি অর্থকারী ও মসলা জাতীয় ফসল। তাই বাজারে এই তিলের চাহিদা প্রচুর। ফলে কৃষকরাও তিল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাই চলুৃন তিল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি।
তিলের ইংরেজি নাম হলো Sesame এবং তিলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Sesamum indicum. তিল একটি মূল্যবান ও মসলা জাতীয় ফসল। আর অন্যান্য ফসলের থেকেও তিল চাষ খুবই সহজ। যেকোন পরিত্যক্ত জমিতে তিলের চাষ করা যায় এবং তিল চাষের তেমন খরচও হয় না।
তাই কৃষকরা বর্তামানে তিল চাষে মনযোগী হচ্ছেন এবঃং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাই আসুন তিল চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
তিল চাষ করার নিয়ম
ধাপ ১: জমি ও মাটি নির্বাচন
তিল চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যে জমিতে পানি জমে থাকে না। অর্থাৎ তিল চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি জমি নির্বাচন করতে হবে এবং সেই জমিতে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করতে হবে। আর তিল চাষের জন্য বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি খুবই উপযোগী।
ধাপ ২: তিল চাষের পূর্বে তিলের বীজ সংগ্রহ
বর্তমাণে তিলো উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ পাওয়া যায়। তাই আমাদের তিল চাষের তিলের কিছু উচ্চফলনশীল জাত যেমন: টি ৬, বারি তিল ২/৩, বিনাতিল ১/৩/৪ প্রভৃতি।
নার্সারী বা সার বিক্রয় কেন্দ্র থেকে তীলের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। আর হেক্টর প্রতি তীলের বীজ সংগ্রহ বা প্রয়োগ করতে হবে ৫.৫-৬.৫ কেজি।
ধাপ ৩: তিল চাষের জন্য জমি তৈরি
তিল চাষের পূর্বে তিল চাষের জমির মাটি আড়াআড়িভাবে লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে মই দিয়ে জমির মাটি ভালভাবে ঝুরঝুরে করে তিল চাষের জমি প্রস্তুত করতে হবে।
ধাপ ৪: তিলের বীজ বপন
তিলের চাষ খরিপ মেীশুম ও রবি মেীশুম উভয় সময়েই করা যায়। খরিফ-১ মেীশুমে তিল চাষের উপর্যুক্ত সময় হলো ফাল্গুন-চৈত্র মাস বা মধ্য-ফেব্রুয়ারি হতে মধ্য-এপ্রিল মাস এবং খরিফ-২ মৌসুমে তিল চাষের উপর্যুক্ত সময় হলো ভাদ্র মাসে বা মধ্য-আগষ্ট হতে মধ্য-নভেম্বর মাস। আর রবি মেীশুমে তিল চাষের উত্তম সময় হলো নভেম্বর থেকে মার্চ মাস। অর্থাৎ সারা বছরই তিল চাষ করা যায়।
নার্সারী বা সার বিক্রয় কেন্দ্র থেকে তীলের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। আর হেক্টর প্রতি তীলের বীজ সংগ্রহ বা প্রয়োগ করতে হবে ৫.৫-৬.৫ কেজি।
তিল চাষে বীজ বপন পদ্ধতি
তিলের বীজ সাধারণত তিল চাষের জমিতে ছিটিয়ে বপন করা হয়। তবে তিলের চাষ সারিবদ্ধ করে বপন করলে তীলের ফলন ভালো হয়। আর তীল সারিবদ্ধ করে চাষ করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৩০ সেমিেএবং তীলের গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৫ সেমি।
তিল চাষে জমিতে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
তীল চাষের জন্য জমি তৈরীর সময় জমিতে শেষ চাষের সময় মোট ইউরিয়া সারের অর্ধেক পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে এবং বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার জমিতে তীলের বীজ প্রয়োগর ২৫-৩০ দিন পর তিল গাছে ফুল আসার সময় তিলের জমিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। নিম্নে তিল চাষে সার প্রয়োগের পরিমাণ দেওয়া হলোঃ
সারের নাম | সারের পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) |
---|---|
ইউরিয়া | ১০০-১২৫ কেজি |
টিএসপি | ১৩০-১৫০ কেজি |
এমপি | ৪০-৪৫ কেজি |
জিপসাম | ১০০-১১০ কেজি |
জিংক সালফেট (প্রয়োজনে) | ৫০০ গ্রাম |
বরিক এসিড (প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে) | ৮-১০ কেজি |
আরোও পড়ুন – গম চাষ পদ্ধতি
তিল চাষে জমির পরিচর্চা
- তিল চাষের জমিতে তিলের বীজ বপন করার ২৫-৩০ দিন পর তিলে ফুল আসার সময় তিলের জমিতে ১ বার পানির সেচ দিতে হবে। আর তিল চাষের জমিতে রস না থাকলে তিল চাষের ৫৫-৬০ দিন পর তিলের ফল আসার সময় তিলের ক্ষেতে আরো ১ বার পানির সেচ দিতে হবে।
- সব সময় তিলের জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
জমিতে তিলের বীজ বপন করার ৮৫-৯৫ দিন পর তিলের ফল পরিপক্ক হলে তিলের জমি থেকে তিল ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
আরোও পড়তে পারেন – ধান চাষ পদ্ধতি
তিলের রোগ-বালাই দমন ব্যবস্থাপনা
তিল গাছের পাতার দাগ রোগ
তিল গাছের তিলের পাতার দাগ রোগটি সারকোস্পোরা সিসেমী নামক এক ধরণের ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে। তিলের এই পাতার দাগ রোগের কারণে তিল গাছের পাতায় প্রথমে ছোট , গোলাকার, বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি রঙের দাগ পড়ে। তারপর পাতার সেই দাগ বিভিন্ন আকৃতির হয় এবং ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।
তিল গাছের পাতার দাগ রোগের প্রতিকার
তিল গাছের পাতায় এই রোগ দেখা দেওয়ার সাথে বেভিষ্টিন ১ গ্রাম হারে অথবা ডাইথেন এম-৪৫ ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর তিল চাষের জমিতে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
তিল গাছের কান্ড পঁচা রোগ
তিল গাছ এই কান্ড পঁচা রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। আর তিলের এই কান্ড পঁচা রোগ হয় ম্যাক্রোফোমিনা ফাসিওলিনা নামক ছত্রাকের কারণে। এই কান্ড পঁচা রোগে আক্রান্ত তিল গাছের কান্ডে ছোট, লম্বা, আঁকা বাঁকা বিভিন্ন ধরনের গাঢ় খয়েরি ও কালচে দাগ দেখা যায় এবং তিলের কান্ডে এই দাগ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং তিল গাছের সমস্ত কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। আর আক্রান্ত তিল গাছের পাতা মরে যেতে শুরু করে।
তিল গাছের কান্ড পঁচা রোগের প্রতিকার
- তিল চাষের জমিতে তিলের বীজ বপনের পূর্বে তিলের বীজগুলো ভিটাভেক্স-২০০ ছত্রাকনাশক দ্বার পরিশোধন করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ভিটাভেক্স-২০০ ছত্রাকনাশক ২-৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১ কেজি তিলের বীজ শোধন করতে হবে।
- তিল গাছের কান্ড পঁচা রোগ তিল গাছে দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ১ গ্রাম হারে ব্যাভিস্টিন বা ২ গ্রাম হারে ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানির সাথে ভালোভবে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- তিল ফসল কাটার পর তির গাছের শিকড়, আগাছা, আবর্জনা ইত্যাদি পুড়ে ফেলতে হবে।
আরোও জানুন – ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
১০০ গ্রাম কালো তিলের দাম ৩৫ টাকা এবং ২৫০ গ্রাম সাদা তিলের দাম ১৩০-১৫০ টাকা।
তিলের উপকারিতা হলো তিল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত তিল খেলে এটি ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আর তিল খাওয়ার উপকারিতা হলো তিলে থাকা জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আমাদের হাড় ও দাঁত মজবুত করে।
তিল ৮৫-১০০ দিনের ফসল। তিলের বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর তিল গাছে ফুলের কুঁড়ি আসে এবং ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে তিল গাছে ফুল ফোটা শুরু করে।
এক একর জমিতে তিলের ফলন ৬০০-৭০০ কেজি পাওয়া যায়।
ভারতের সর্বাধিক তিল উৎপাদনকারী চারটি রাজ্য হলো গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশ।
কালো তিল তিলের ফুল থেকে আসে।