তামাক চাষ পদ্ধতি
আমাদের দেশে তামাক থেকে উৎপাদিত নেশাজাতীয় দ্রব্য, (যেমনঃ সিগারেট, বিড়ি, যর্দ্দা ইত্যাদি) এর চাহিদা খুবই বেশি এবং এসব দ্রব্য বিক্রি করে বিক্রেতা ও কৃষক উভয়ই অধিক লাভবান হন। তাই চলুন তামাক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।
তামাকের ইংরেজী নাম হলো Tobacco এবং তামাকের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Nicotiana Tabacum. এই তামাকের উৎপত্তি স্থল বা আদি নিবাস হলো দক্ষিণ আমেরিকা। বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল সমূহের মধ্যে তামাক অন্যতম। রবি মেীসুমে বাংলাদেশের বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে তামাক বেশি চাষ করা হয়। বাংলাদেশে তামাক উৎপাদনে শীর্ষ জেলা হলো রংপুর, ঝিনাইদহ, যশোর ও কুষ্টিয়া।
প্রতি বছর আমাদের দেশর সরকার তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যাদি হতে উল্লেখযোগ্য পরিমানে রাজস্ব আদায় বা গ্রহণ করে থাকে। আমরা সবাই জানি, তামাক নেশাজাতীয় দ্রব্য এবং এটি মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক, কিন্তু তামাকেরও উপকারিতা রয়েছে। তাই তামাক চাষ পদ্ধতি এবং তামাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি।
আরোওও পড়তে পারেন – গ্লাডিওলাস ফুল চাষ পদ্ধতি
তামাক চাষের জলবায়ু ও মাটি নির্বাচন
তামাক চাষের জন্য উপর্যুক্ত জলবায়ু হলো উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু। ২২ থেকে ২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাতাং তামাকের ভালো উৎপাদন হয়। প্রায় সব ধরণের মাটিতেই তামাক চাষ করা যায়। তবে হালকা দোআঁশ মাটিতে তামাকের উৎপাদন ভালো হয়।
তামাকের বীজ বাছাই
জমিতে তামাক চাষের পূর্বে তামাকের বীজ ভালোভাবে বাছাই করে পরিশোধন করতে হবে। আর সেজন্য কৃষি সমপ্রসারন বিভাগের স্থানীয় উপসহকারী কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে তামাকের ভাল বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
তামাকের বীজতলা বা জমি তৈরী
তামাকের বীজতলা তৈরীর জন্যে উঁচু, ছায়াহীন এবং নতুন জমি বাছাই করতে হবে। শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময় হতে মাটির ‘জো’ এর অবস্থা বুঝে ৮-১০ বার লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে জমির মাটি মই দিয়ে ঝুরঝুরা করতে হবে। তারপর তামাকের জমির চারদিকে নালা কেটে ১২০ x ৩০৫ x ১৫ সেন্টিমিটার আকারের কয়েকটি বীজতলা তৈরি করতে হবে।
আরোও পড়ুন – রজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতি
তামাকের বীজতলায় সার প্রয়োগ
তামাকের প্রতি খন্ড বীজতলায় ৫-৬ কেজি গোবর সার তামাকের বীজতলা তৈরী করার সময় দিতে হবে। এরপর বীজতলা তৈরির শেষ পর্যায়ে প্রতি বীজতলায় ২০-২৫ কেজি আবর্জনা সার, ৪৫ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৪৫ গ্রাম K2SO2 বা ১৮০ গ্রাম ছাই দিতে হবে।
তামাকের বীজ বপন
তামাকের বীজ বপনের সময় হলো ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। তামাকের প্রতি বীজতলায় ১০ গ্রাম করে বীজ বপন করতে হবে।
তামাক চারা বীজতলা থেকে উত্তোলন এবং জমিতে রোপন
তামাকের চারাকে শক্ত ও কষ্টসহিষ্ণু করতে তামাকের বীজতলা থেকে চারা তোলার ৩/৪ দিন আগে হতেই বীজতলায় পানি সেচ বন্ধ করতে হবে যাতে তামাকের চারা নতুন জমিতে লাগানোর সময় আঘাত সহ্য করতে পারে। কিন্তু বীজতলা থেকে তামাকের চারা তোলার কিছুক্ষণ আগে পানি দিয়ে বীজতলা ভিজিয়ে নিতে হবে, যাতে অতি সহজেই তামাকের শিকড়সহ চারা উত্তোলন করা যায়।
তামকের চারা রোপনের সময়
সিগারেট ও বিড়ি তামাকের চারা লাগানোর উপর্যুক্ত সময় হলো কার্তিক মাস এবং হুক্কা তামাকের চারা রোপনের সময় হলো অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ।
তামকের চারা রোপন বা চাষ পদ্ধতি
- সারিবদ্ধভাবে তামাকের চারা রোপণ করতে হবে।
- তামাকের এক সারি হতে অন্য সারির দুরত্ব হবে ১ মিটার বা ৩ ফুট এবং তামাকের একটি চারা হতে অন্য চারার দুরত্ব হবে ৬০ সেঃমিঃ বা ২ ফুট।
- সকালের দিকে তামাকের বীজতলা হতে তামাকের চারা তুলে ঐ সকাল বেলার মধ্যে জমিতে তামাকের চারা রোপণ করা উচিত।
- জমিতের তামাকের চারা রোপণের পর প্রথম ৩/৪ দিন নিয়ম করে সকাল-বিকাল জমিতে পানি দিতে হবে।
তমাক চাষে সার প্রয়োগ
সারের নাম | পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) |
ইউরিয়া | ৭৫-৮৫ কেজি |
টি.এস.পি | ৫০-৫৫ কেজি |
পটাশিয়াম সালফেট | ৭৫-৮৫ কেজি |
পটাশ সার বা কচুরীপানার ছাই বা সাধারণ ছাই | ১৪০ কেজি |
আরোও জানুন – বারি সরিষা-১৪ চাষ পদ্ধতি
তমাক চাষে পরিচর্চা
- জমিতে তামাকের চারা রোপণের ৭/৮ দিনের মধ্যে তামাক চারার নতুন শিকড় গজায়। তাই, এসময় কোদাল বা খুরপি দিয়ে তামাকগাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।
- তামাকের জমিতে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
- নিয়মিত তামাকের জমিতে সেচ দতে হবে এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে হেব।
তামাকের রোগ ও কীট দমন
তামাকের জমিতে নানান রকম রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। তাই, তামাকের ভাল ও উন্নত মানের ফলন পেতে হলে যথা সময়ে তামাকের রোগ ও পোকা প্রতিরোধী ঔষধ তামাক গাছে ও জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
তামাক ফসল তোলা বা উত্তোলন
তামাক পাতা হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের ফসল। তাই উপর্যুক্ত সময়ে তামাক পাতা সংগ্রহ করতে হবে। যেমনঃ সিগারেট ও বিড়ির তামাকের পাতা মাঘ-ফাল্গুন মাসে সংগ্রহ করতে হয় এবং হুক্কা তামাক পাতা চৈত্র মাস হতে তামাকের জমি হতে সংগ্রহ করতে হয়। তামাক পাতা সংগ্রহ করে গর্তে, রোদে, ছায়ায় অথবা তাপে শুকাতে হবে এবং বিভিন্ন সিগারেটের কোম্পানিতে সরবরাহ করতে হবে। কারণ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০২২ অনুযায়ী তামাক বাইরে বিক্রি করা নিষিদ্ধ।
আরোও পড়তে পারেন – মেহগনি গাছ চাষ পদ্ধতি
তামাক পাতার ফলন
বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি তামাকের উৎপাদন হয় গড়ে ৭৫০-৯০০ কেজি বা একরে ৮-১০ মণ। আর তামাকের যথাযথ পরিচর্যা করলো হেক্টর প্রতি ১৪ কুইন্টাল পর্যন্ত তামাকের ফলন পাওয়া যায়।
তামাক পাতার উপকারিতা
আমরা জানি তামাক নেশাজাতীয় দ্রব্য উৎপাদনের মূল উপাদান। আর এই তামাক পাতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। কিন্তু এমন ক্ষতিকারক তামাক পাতার উপকারিতা হলো তামাক পাতায় থাকা থেরাপেটিক উপাদান আমাদের শরীরের টাইপ টু ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া, আর্থারাইটিস কমাতে খুবই কার্যকরী ভুুমিকা পালন করে।
তামাক পাতার অপকারিতা
তামাক পাতাযে শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর তা জানে না এমন কেউ নেই। নিয়মিত তামাক সেবন করলে ধীরে সে ব্যক্তি মৃত্যুর দিকে পতিত হয়। এমনকি ক্যান্সার সহ ভয়ঙ্কর অসুখের কবলে পড়ে। তামাক পাতার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক হলো এটি মূলত মানুষের হৃৎপিণ্ড, লিভার ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। তাই ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), এমফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস এবং ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
তামাক পাতার সবচেয়ে বিষাক্ত উপাদানট হলো নিকোটিন।
তামাক একধরণের গাছ বা পাতা। যা নেশাজাতীয় দ্রব্য তৈরীতে ব্যবহার করা হয়।
তামাক আসক্তির কারণ হলো তামকে থাকা নিকোটিন। যা আসক্তি সৃষ্টির জন্য দায়ী।
বিশ্বে তামাক উৎপাদনে শীর্ষ দেশ হলো চীন।
তামাক আরাওয়াকান ভাষার শব্দ।
তামাক উৎপাদনে দক্ষিণ ভারতের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ প্রথম।