জৈব ও অজৈব সারের পার্থক্য
সার ছাড়া কৃষি কাজ অসম্পূর্ণ। অনেকে আবার ইচ্ছামতো সার ব্যবহার করে থাকে কৃষিকাজে। কারণ, তারা জৈব ও অজৈব সার সম্পর্কে অবগত নয়। তাই চলুন জৈব ও অজৈব সারের পার্থক্য সম্পর্কে জানি।
সার ছাড়া কৃষি কাজ করা একেবারে অকল্পনিয় একটি ব্যাপার। কৃষি কাজ করতে দুই ধরণের সার লাগে। একটি হলো জৈব সার ও অপরটি হলো অজৈব সার। এক একটি সারের রয়েছে এক এক ধরণের উপকারিতা। আর কৃষি কাজে জৈব ও অজৈব সার উভয়ই প্রয়োজন হয় এবং কার্যভেদে এই জৈব ও অজৈব সারের মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। তাই আসুন জেনে নিই জৈব ও অজৈব সারের পার্থক্য সম্পর্কে।
জৈবসার কি
জৈবসারকে ইংরেজিতে Organic Fertilizers বলা হয়। বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও প্রানি বা জীব প্রভৃতি থেকে প্রাপ্ত কিংবা প্রস্তুতকৃত সারকে জৈব সার বলে। আর জৈবসার তৈরী করা হয় উদ্ভিদ, লতা-পাতা, প্রানীর মল-মূত্র প্রভৃতিকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পঁচিয়ে। জৈব সারের উদাহারণ হলোঃ গোবরসার, কম্পোষ্ট, খৈল ইত্যাদি।
আরো পড়ুন
অজৈব সার কি
অজৈব সারকে রাসায়নিক সারও বলা হয় এবং অজৈব সারের ইংরেজি নাম হলো Inorganic Fertilizers. অজৈব উৎস থেকে বা কল-কারখানা থেকে কৃত্রিম বা রাসায়ানিক উপায়ে বিভিন্ন উপাদান একসাথে মিশিয়ে যে সার তৈরী করা হয় তাকে অজৈব বা রাসায়ানিক সার বলে। অজৈব সারের উদাহারণ হলোঃ ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ইত্যাদি।
জৈব ও অজৈব সারের মধ্যাকার পার্থক্য
জৈব সার | অজৈব সার |
---|---|
১) জৈব সার প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরী হয়। | ১) অজৈব সার বিভিন্ন রাসায়নিক যেীগ দ্বার যুক্ত হয়। |
২) জৈব সার উদ্ভিদ বা প্রাণী কে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে তৈরী করা হয়। | ২) অজৈব সার খনিজ আমানতের খনন থেকে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক যেীগ উপাদানের মিশ্রণের মাধ্যমে তৈরী করা হয়। |
৩) জৈব সারকে প্রাকতিক সার বা পরিবেশ বান্ধব সার বলা হয়। | ৩) অজৈব সারকে রাসায়নিক সার বা খনিজ সার বলা হয় |
৪) জৈব সারের ইংরেজি নাম Organic Fertilizers. | ৪) অজৈব সারের ইংরেজি নাম Inorganic Fertilizers. |
৫) জৈবসার তৈরী করা হয় উদ্ভিদ, লতা-পাতা, প্রানীর মল-মূত্র প্রভৃতিকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পঁচিয়ে। | ৫) অজৈব সার তৈরি করা হয় অজৈব উৎস থেকে বা কল-কারখানা থেকে কৃত্রিম বা রাসায়ানিক উপায়ে বিভিন্ন উপাদান একসাথে মিশিয়ে। |
৬) জৈব সারের উদাহারণ হলোঃ গোবরসার, কম্পোষ্ট, খৈল ইত্যাদি। | ৬) অজৈব সারের উদাহারণ হলোঃ ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ইত্যাদি। |
৭) সবুজ সার, পশুপালনের সার, কম্পোস্ট, গৃহস্থালি বর্জ্য, ফসলের অবশিষ্টাংশ, কাঠের জঞ্জাল ইত্যাদি হলো জৈব সারের উদাহরণ। | ৭) ফসফেট, চুন, শিলা, পটাশ ইত্যাদি হলো অজৈব সারের উদাহারণ। |
৮) জৈব সারে প্রচুর পরিমাণে মাটির জন্য জৈব বা উপকারি পদার্থ থাকে। | ৮) অজৈব সারে কেবল ফসলের জন্য অজৈব পুষ্টি থাকে। |
৯) জৈব সার মাটি উন্নত করতে সাহায্য করে এবং মাটিতে পুষ্টি সরবরাহ করে। | ৯) অজৈব সার মাটি উন্নত করতে তেমন একটা সাহায্য করে না তবে অতিরিক্ত পরিমাণে এই সার ব্যবহার করলে মাটি সহ ফসলের ক্ষতি করে। |
১০) জমিতে জৈব সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে জৈব পদার্থ ফসলের পুষ্টি উপাদান, ফসলের ক্ষয়ের হার এবং সার ব্যবহারের সময় দ্বারা প্রভাবিত হয়। | ১০) কিন্তু অজৈব সার তাৎক্ষণিক জমিতে এবং ফসলে পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। |
১১) জৈব সার তৈরী করতে প্রচুর শ্রমের প্রয়োজন। | ১১) অজৈব সার তৈরী করতেও প্রচুর শ্রমের প্রয়োজন হলেও তুলনামুলক জৈব সার থেকে কম। |
১২) জৈব সার তৈরী করতে তেমন খরচের প্রয়োজন হয় না। | ১২) তবে অজৈব সার তৈরী ব্যয়বহুল। |
১৩) ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জৈব সার সবসময় প্রয়োগ করতে হবে। | ১৩) কিন্তু ফসলের মেীশুম বিবেচনা করে অজৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। |
১৪) প্রকৃতি থেকে সৃষ্ট হয় জৈব সার। | ১৪) কিন্তু অজৈব সার প্রকৃতি থেকে সৃষ্ট নয়। |
১৫) জৈব সারে কোন ধরণের রাসায়নিক সিন্থেটিক পদার্থ নেই। | ১৫) কিন্তু অজৈব সারে রাসায়নিক সিন্থেটিক পদার্থ আছে। |
১৬) জৈব সার ফসলের গুণগত মান বাড়ায়। | ১৬) অজৈব সার অতিরিক্ত বা অনুপযোগী প্রয়োগ করলে ফসলের গুণগত মান কমে যায়। |
১৭) জৈব সারে মাটির জন্য উপকারী অনেক অণুজীব রয়েছে। | ১৭) তবে মাটিতে অজৈব সারের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করলে মাটির অণুজীবের ক্রিয়াকলাপকে এটি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। |
১৮) জৈব সার মাটিতে বায়োট্রান্সফর্মেশন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। | ১৮) কিন্তু অজৈব সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। |
১৯) জৈব সার তৈরী করতে তেমন জনশক্তি প্রয়োজন হয় না। | ১৯) অজৈব সার তৈরী করতে জনশক্তির প্রয়োজন হয়। |
২০) জৈব সার উৎপাদন করতে অর্থের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। | ২০) অজৈব সার তৈরী করতে অর্থের প্রয়োজনীয়তা বেশি রয়েছে। |
২১) কৃষি পণ্যের মান উন্নত করে জৈব সার। | ২১) কৃষি পণ্যের মান ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে অজৈব সার। |
আরোও জানুন – কোন সার কি কাজ করে
পরিশেষে বলা যায়, জৈব ও অজৈব উভয় সারেরই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কুষি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে। তবে কৃষি কাজে যে সারই ব্যবহার করা হোক না কেন অবশ্যই তা নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে।
FAQs
বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও প্রানি বা জীব প্রভৃতি থেকে প্রাপ্ত কিংবা প্রস্তুতকৃত সারকে জৈব সার বলে। আর জৈব সারের উদাহারন হলোঃ- সবুজ সার, পশুপালনের সার, কম্পোস্ট, গৃহস্থালি বর্জ্য, ফসলের অবশিষ্টাংশ, গোবরসার, কম্পোষ্ট, খৈল, কাঠের জঞ্জাল ইত্যাদি।
না ইউরিয়া জৈব সার নয়। ইউরিয়া হচ্ছে রাসায়নিক সার।
দুটি জৈব সারের নাম হলো সবুজ সার, খৈল।
রাসায়নিক সারের উদাহরণ হলো ইউরিয়া, টিএসপি, ডিটিপি।
জৈব সারের উপকারিতা হলো ফসলের জমিতে জৈব সার ব্যবহার করলে জমির মাটিতে উপকারী জিবানুর কার্য্যকলাপ বৃদ্ধি পায় এবং তা মাটির উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও জৈব সারের বিশেষ উপকারিতা হলো এই সার গ্রিষ্মকালে মাটির তাপমাত্রা কমিয়ে রাখতে এবং শিতকালে মাটিকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। মাটিতে জৈব সার ব্যবহারের ফলে সব ঋতুতেই গাছের শিকড় বাড়তে থাকে। এছাড়াও জৈব সার ব্যবহারের উপকারিতা হলো মাটিতে রস মজুদ রাখা।