ছাদে লাগান ৬ টি বেগুন গাছ প্রতিদিন পাবেন বেগুন | বারোমাসি বেগুন চাষ পদ্ধতি
বেগুন একটি অত্যন্ত সুস্বাদু সবজি ও বারোমসি ফসল। বেগুনের চাষ অত্যন্ত লাভজনক। তাই আসুন টবে বা ছাদে বেগুন চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
বেগুন শীতকালের অন্যতম প্রধান সবজি হলেও এটি একটি বারোমাসি ফসল। বেগুনের ইংরেজি নাম হলো Eggplant এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Solanum melongena. বাংলাদেশের ব্যপক জনসাধারণ বেগুন খেতে পছন্দ করে। আর বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ ঘরের আঙ্গিনায় বা ছাঁদে বেগুনের চাষ করছে এবং প্রতিদিন বেগুনের ফলন পাচ্ছে। তাই আসুন জেনে নিই কিভাবে ঘরের ছাদে টবে ৬টি গাছ লাগিয়ে বারোমাস বেগুনের ফলন পেতে পারি।
আরো পড়তে পারেন – টবে সারা বছর লেবু চাষ পদ্ধতি
ঘরের ছাদে বা টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি
বেগুনের জাত নির্বাচন
বেগুনের অনেক ভালো বালো জাত রয়েছে। যেগুলো উচ্চফলনশীল জাতের। বেগুনের কিছু জাতের নাম হলো ইসলামপুরী, খটখটিয়, লফা, বারি বেগুন-১, নয়ন কাজল, শিংনাথ, ঝুমকো, মুক্তকেশী, শুকতারা সংকর জাত, তারাপুরী বিজয়, এফ কালো বেগুন, কাজল এফ-১ প্রভৃতি।
বেগুন চাষের মাটি নির্বাচন
বেগুন চাষের জন্য এটেল বা পলি দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগী। এই এটেল দো-আঁশ এবং পলি দো-আঁশ মাটিতে বেগুনের ফলন বেশী ভালো হয়।
আরোও জানতে পারেন – নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি
বেগুন চাষের জন্য বীজতলা তৈরী
- বেগুন চাষের জন্য প্রথমে বীজতলা তৈরী করতে হবে তারপর বেগুনের বীজ রোপন করতে হবে।
- তাই ছাদে অল্প সংখ্যক বেগুনের চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা হিসেবে কাঠের অথবা প্লাস্টিকের গামলা বা হাফ ড্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
- আর বীজতলার পানি যাতে দ্রুত নিষ্কাশিত হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
- তারপর জৈবসার মিশ্রিত এটেল বা পলি দোআঁশ মাটি দিয়ে বীজতলার পাত্রটি ভর্তি করতে হবে।
আরোও জানতে পারেন – কম খরচে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি পাবেন দ্বিগুণ লাভ
বেগুন চাষের বীজতলায় বীজ বপন করার নিয়ম
বেগুনের বীজ তলা তৈরী হওয়ার পর বীজ বপন করতে হবে। তাই চলুন জেনে নিই কিভাবে বীজতলায় বীজ বপন করব।
- বীজ বপনের আগে বীজ ভালো কোন ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। কারণ, বেগুনের বিভিন্ন রোগ বেগুনের এই বীজের দ্বারা বাহিত হয়।
- অতঃপর ছত্রাকনাশক দিয়ে ভালো ভাবে শোধন করে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা ছায়াতে শুকিয়ে নিতে হবে।
- এরপর বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে।
- তারপর বীজ বোনার পর বীজতলার মাটি হাত দিয়ে সমান করে চেপে দিতে হবে।
আরো জানুন – লাভজনক চাষাবাদ করতে জানুন নানা কৃষি যন্ত্রপাতি ও তার মূল্য সম্পর্কে
বীজতলা থেকে বেগনের চারা সংগ্রহ
বীজতলায় বীজ বপনের একমাস পর বেগুনের চারা ছাদে লাগানোর উপযোগী হয়। তাই আসুন জেনে নিই কিভাবে বীজতলা থেকে বেগুনের চারা সংগ্রহ করব।
- বেগুনের চারা বীজতলা থেকে উঠানো বা সংগ্রহের কয়েকঘন্টা পূর্বে বীজতলায় পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। যাতে সহজে বীজতলা থেকে বেগুনের চারা উঠানো যায়।
- বীজতলা খেকে বেগুনের চারা উঠানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে চারার শিকড় যাতে বেশী কেঁটে বা ছিঁড়ে না যায় এবং শিকড়ের সাথে যাতে বীজতলার কিছুটা মাটি থাকে।
টবে বেগুনের চারা রোপন বা চাষ পদ্ধতি
- ছাদে বেগুনের চারা লাগানোর জন্য ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি মাটির টব সংগ্রহ করতে হবে এবং টবের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।
- এরপর ঐ টবের ৩ ভাগের ২ ভাগ এঁটেল দোআঁশ বা পলি দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ২০/৩০ গ্রাম টি,এস,পি সার এবং ২০/৩০ গ্রাম পটাশ সার একত্রে মিশিয়ে টবে ভর্তি করে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ১০ থেকে ১২ দিন।
- অতঃপর টবে বসেম যাওয়া মাটি কিছুটা খুচিয়ে আলগা করে দিয়ে আবার ৪ থেকে ৫ দিন রেখে দিতে হবে।
- যখন টবের মাটি ঝুরঝুরে হয়ে যাবে তখন বেগুনের ৬ টি চারা ৬টি টবে রোপন করতে হবে।
- তবে বিকেল অথবা রাতে চারা রোপন করতে পারলে ভালো হয়।
- চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে বা রোপন করতে হবে।
- এরপর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে হাত দিয়ে ভালো করে চেপে দিতে হবে। যাতে বেগুন গাছের চারার গোড়া দিয়ে অতিরিক্ত পানি ঢুকতে না পারে।
- তারপর একটি সোজা কাঠি দিয়ে চারা গাছটিকে বেধে দিতে হবে।
- চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে। অতঃপর আস্তে আস্তে পানি দেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। তবে খেয়অল রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে। এতে গাছের ক্ষতি হতে পারে।
আরোও জানুন – লবণ চাষ পদ্ধতি
বেগুন গাছের অন্যান্য পরিচর্যা
বেগুন গাছের টবের মাটি কয়েকদিন পর পর হালকা নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। যাতে বেগুন গাছে কোনো ধরণের আগাছা জন্মাতে না পারে। আর এছাড়াও বেগুন গাছের গোড়ার মাটি কিছুটা আলগা করে দিলে গাছের শিকড়ের ভাল বৃদ্ধি হয়।
আর যখন বেগুনের ফল বা বেগুন গাছে বেগুন ধরা শুরু করবে তখন সরিষার খৈল পচা পানি পাতলা করে ১৫ থেখে ২০ দিন পর পর নিয়মিত বেগুন গাছের গোড়ায় দিতে হবে।
আরো পড়তে পারেন – শসা চাষ পদ্ধতি ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা
বেগুনের পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা
বেগুনের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। এছাড়াও বেগুনকে জাব পোকা, বিছা পোকা, পাটা মোড়ানো পোকা ও লাল মাকড় আক্রমণ করে থাকে।
আর বেগুনের রোগবালাইয়ের মধ্যে গাছ ঢলে পড়া আর গোড়া পচা রোগ অন্যতম। এছাড়াও বেগুন ফল পচা রোগেও আক্রান্ত হয়।
আর বেগুন গাছকে রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে মাঝের মধ্যে বেগুন গাছে ভালো কিটনাশক ও ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আরো জানতে পারেন – ফেব্রুয়ারী মাসের সবজি চাষ
এভাবে চাষ করলে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করলে বেগুনের ফলন খুব ভালো হবে। প্রয়োজনে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
বীজ থেকে বেগুন চাষ করতে প্রায় ১.৫ মাস বা ৪৫ থেকে ৫০ দিন সময় লাগে।
বীজ বপনের প্রায় ৭০ দিনের মধ্যে বেগুন গাছে বেগুন ফল ধরে বা বেগুন ধরতে শুরু করে।
বেগুন গাছের মেয়াদকাল ১৮ থেকে ২০ মাস থাকলেও এক বছর পর প্রকৃতিগতভাবে এই বেগুন গাছের কিছুটা বয়স বৃদ্ধি হয়। যদিও তখন তুলনামূলকভাবে ফসল কম আসে বা কম উৎপাদন হয়। অর্থাৎ বেগুন গাছ সর্বোচ্চ ২ বছর বা তার চেয়ে সামান্য অধিক সময় পর্যন্ত বাঁচে।
রূপকথা জাতের বেগুন খেতে খুবই সুস্বাদু। এটি একটু নরম এবং মিষ্টি স্বাদের। আর এই রূপকথা জাতের বেগুনের রং সাদা হয়।