ফুল চাষ পদ্ধতি | টবে ফুল চাষ পদ্ধতি
বর্তমান সময়ে দিন দিন ফুলের চাহিদা বাড়ছে। তাই কৃষকরাও ফুল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আমাদের দেশ সহ বাইরের দেশেও ফুলের চাহিদা ও অর্থথানৈতিক গুরুত্ব থাকায় ফুল চাষ খুবই লাভজনক ব্যবসা। তাই আসুন জেনে নিই টবে ফুল চাষ সম্পর্কে ।
বর্তমান সময়ে ফুল চাষ শুধু সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্যই করা হয় না বরং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে ফুলের অনেক গুরুত্ব থাকায় ব্যাপকভাবে ফুল চাষ করছে কৃষক ভাইরা। আর গৃহের সেীন্দর্য বাড়ানোর জন্য যারা ফুল বা সেীন্দর্যের প্রেমিক তারাও তাদের বাড়ির ছাদে ঘরের আঙ্গিনায় টবে নানান ধরণের ফুল চাষ করছেন প্রতিনিয়ত।
আরোও পড়তে পারেন – https://krishakbd.com/cultivation-method-of-gladiolus-flower/
আর ফুল চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকায় চাষিরা যে সমস্ত ফুল চাষ করছেন সেগুলো হলঃ- গোলাপ, গাঁদা, চামেলি, বেলি, জুঁই, শেফালি, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, গ্লাডিওলাস, শেফালি, দোপাট্টি, হাসনাহেনা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, রঙ্গন, দোলনচাঁপা, কনকচাঁপা, অপরাজিতা জবা, মালতি, কামিনী ইত্যাদি ফুল।
আরোও পড়ুন – গাঁদা ফুলের চাষ পদ্ধতি
বর্তমান বাজারে এই ফুল গুলোর বেশ চাহিদা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, প্রতিদিনই বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে (যেমনঃ বিয়ে, মেহিদি অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান)। আর এই অনুস্ঠান গুলোকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য ফুলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আর সেকারণেই কুসকরা ফুল চাষে মনযোগী হচ্ছেন এবং লাভবান হচ্ছেন। তাই চলুন টবে ফুল চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি।
আরোও জানতে পারেন – গোলাপ ফুল চাষ পদ্ধতি
ফুল চাষ পদ্ধতি | টবে ফুল চাষ পদ্ধতি
টবে বা জমিতে ফুল রোপণের সময়
বেশিরভাগ ফুলের বীজ, ফুলের চারা, ফুলের কলম বা কন্দ অশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে রোপর করা হয়। কারণ, অশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত সময়টি হলো ফুল রোপণের উপর্যুক্ত সময়।
টবে ফুল চাষের পূর্বে টব নির্বাচন
ফুল গাছের চারা রোপনের জন্য উপযুক্ত সাইজের টব নির্বাচন করতে হবে। ছোট ফুল গাছের জন্য বড় টব হলে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু বড় গাছের জন্য ছোট টব নির্বাচন করা উচিৎ নয়। অর্থাৎ আমাদের ফুল গাছ চাষের জন্য গাছের সাইজ অনুযায় িটব সংগ্রহ করতে হবে।
ফুল চাষের জমি নির্বাচন
ফুল চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যে জমিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পেীছায় এবং জমি উর্বর ও উঁচু হতে হবে।
ফুল চাষের মাটি
ফুল চাষের উপর্যক্ত মাটি হলো দো-আঁশ মাটি।
ফুল বাগানে চারপাশে বেড়া দেওয়ার নিয়ম
ফুল বাগানের চারপাশে এমন ভাবে বেড়া দিতে হবে যেন গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী ফলের বাগানে ঢুকে ফুল নষ্ট না করতে পারে। আর সেজন্য বাগানের চারপাশে বাঁশ, কাঁঠ বা লোহা দিয়ে বেড়া দিতে হবে।
ফুল গাছের চারা বা বীজ সংগ্রহ
আমাদের আশেপাশে শহরে বা গ্রামে বর্তমানে ভালো নার্সারি রয়েছে। এসব নার্সারীতে উন্নতজাতের ফুলের বীজ, কলম ও চারা পাওয়া যায়। অথবা পাশবর্তী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করে ফুলের চারা পেতে পারেন।
টবে ফুল গাছ রোপনের জন্য মাটি বা মিশ্রণ তৈরী
টবে ফুল গাছ রোপনের জন্য প্রতি টবের জন্য টবের তিন ভাগের দুইভাগ দো-আঁশ মাটির সঙ্গে তিন ভাগের একভাগ পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর মিশিয়ে মাটি বা মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। তবে জৈব সারের সাথে সাথে ঐ মিশ্রণে একমুঠো হাড়ের গুড়ো, দুই চা-চামচ চুন, দুমুঠো ছাই টবের মাটিতে মিশিয়ে নিলে টবের চারার জন্য ভালো হবে। আর এর ফলে টবের মাটি বহুদিন ধরে উর্বর থাকে।
ফুল চাষের জমি তৈরী
- ফুল চাষের জুম তৈরী করার ক্ষেত্রে আগে বিবেচনা করতে হবে জুমতে কি কি ফুল চাষ করা হবে এবং সেই অনুযায় জমির পরিমাণ অনুযায়ী জমিটাকে ভাগ করে নিতে হবে।
- তারপর ফুলের চারা রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন পূর্বে জমি ভালোভাবে কুপিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুড়ে করে জমিকে উপর্যুক্ত করতে হবে।
- তারপর জমিতে ভালোভাবে সার মেশাতে হবে।
ফুল চাষের জমিতে সার প্রয়োগ
ফুল চাষের জন্য জমিতে যেসব সার প্রয়োগ করতে হবে সেগুলো হলোঃ- পচা গোবর, টিএসপি, হাঁড়ের গুঁড়া, এমওপি, ইউরিয়া, খৈল, চায়ের উচ্ছিষ্টাংশ, ছাই ইত্যাদি। আর এসব সার জমিতে ভালোভাবে মিশিয়ে জমির মাটি ঝরঝরে করতে হবে। তবে সার প্রয়োগের মধ্যে জৈব সারের প্রয়োগকে প্রাধান্য দিতে হবে।
ফুল চাষের জমিতে ফুলের চারা রোপণ
ফুল চাষের ক্ষেত্রে সবসময় স্বাস্থ্যবান ও নিরোগ চারা বা কন্দ রোপন করা উচিৎ এত ফুলে বালো উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। ফুলের চারা রোপনের পূর্বে সামান্য গর্ত করে সে গর্তে চারা রোপন করে তার উপরে মটি শক্তভাবে চেপে দিতে হবে এবং প্রয়োজনমত ফুলের চারা গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। তবে চারাভেদে চারার পামে একটি খুঁটি পুঁতে চারার সাথে বেঁধে দিতে হবে যাতে চারা সোজা থাকে।
আরোও পড়তে পারেন – বেলিফুল চাষ পদ্ধতি
ফুল বাগানের পরিচর্যা
- ফুল গাছের আশেপাশের আগাছা নিড়ানী দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে এবং ফুল গাছের গোড়ার মাটি মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে
- প্রয়োজনে ফুলের বাগানে পানি সেচ দিতে হবে।
- পিঁপড়া ও মাকড়সার আক্রমণ থেকে ফুলে গাছকে রক্ষা করার জন্য হিপ্টেক্লোন-৪০ পরিমাণমতো দিতে হবে এবং সাধারণ পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মেলতিয়ন বা ডাইমেক্রন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
- ফুল গাছে ফুল ধরার কিছুদিন আগে থেকে ফুল গাছের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
- ফুল গাছ ভেদে পুরানো ও রোগা ডাল-পালা ছাঁটাই করে দিতে হবে।
ফুল গাছ থেকে ফুল সংগ্রহ
- ফুল গাঝে ফুল সম্পূর্ণভাবে ফোটার আগে ডাঁটাসহ কেটে ফুল সংগ্রহ করতে হবে।
- ফুলের ডাঁটার নিচের অংশ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ফুল সজীব থাকবে।
- ফুলের মান ভালো রাখার জন্য ডাঁটাসহ ফুলের আঁটি বেঁধে পরিপাটি করে কালো পলিথিনে বেঁধে বাজারজাত করতে হবে।
ফুল গাছে অধিক ফুল ফলনের উপায়
সাধারণত শীতকলে ফুল গাছে ফুল কম ফলে। তাই গাছে অনেকদিন ধরে ফুল ফোটানোর জন্য গাছের ফুল শুকাতে দেওয়া যাবে না, যদি গাছের ফুল শুকানো শুরু করে সাথে সাথে গাছের ফুল ছেটে দিতে হবে।। এতে ফুলের ভালো ফুল পাওয়া সম্ভব।
আরোও পড়ুন – ফুলকপি চাষ পদ্ধতি
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
ফুল চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক। ফুল শুধু মানুষের মুগ্ধতা, সেীন্দর্যতা ও ভালোবাসারই প্রতীকই নয় বরং ফুল একটি লাভজন রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য।
হ্যাঁ ফুল চাষ অত্যন্ত লাভজনক। অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফুল চাষ করতে খুবই কম সময় লাগে এবং ফুল চাষ করে কৃষকরা খুবই লাভবান হয় কম সময়ে।
ফুল চাষ করার জন্য প্রথমে ভালো ফুলের চারা নিয়ে তারপর ফুল চাষের জমি তৈরী করে সেখানে মাটিতে গর্ত করে ফুলের চারা রোপন করে মাটি ভালোভাবে চেপে দিতে হবে। তারপর ফুল গাছের চারার ভালোভাবে পরিচর্চা করতে হবে।
ফুল গাছ চাষের জন্য জমিতে এবং ফুল গাছে যেসব সার দিতে হবে সেগুলো হলোঃ- পচা গোবর, টিএসপি, হাঁড়ের গুঁড়া, এমওপি, ইউরিয়া, খৈল, চায়ের উচ্ছিষ্টাংশ, ছাই ইত্যাদি। আর এসব সার জমিতে ভালোভাবে মিশিয়ে জমির মাটি ঝরঝরে করতে হবে। তবে সার প্রয়োগের মধ্যে জৈব সারের প্রয়োগকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ফুল হলো সূর্যমুখী ফুল।
ফুল ও ফলের জন্য যে সার সবচেয়ে ভালো অথবা ফুল ফোটার জন্য যে পুষ্টি উপাদান ভালো সেটি হলো ফসফরাস বা ফসফেট।
পৃথিবীর সবথেকে ছোট ফুলের নাম হলো উলফিয়া বা WOLFFIA.