ফল সংরক্ষণ পদ্ধতি ও ফল ভালো রাখার উপায়
বর্তমান ফরমালিনের যুগে ফল ভালো ও সুরক্ষিত রাখা খুবই কষ্টসাধ্য। কারণ, এখনে ফল তাড়াতাড়ি পঁচে যায়। তাই চলুন ফল সংরক্ষণ পদ্ধতি ও ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে জানি।
আমরা অনেকেই কিভাবে ফল সংরক্ষণ করবো বা ফল ভালো রাখব, সে সম্পর্কে অবগত নয়। কারণ, বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে ফল ক্রয় করার কয়েকদিনের মধ্যে ফল নষ্ট হয়ে যায়। তাই, দীর্ঘদিন ধরে ফল ভালো বা সতেজ রাখার একটি অন্যতম উপায় হল ভিনেগার দিয়ে ফল সংরক্ষণ করা। আর ফল সংরক্ষণ করার জন্য বাড়িতে ফল এবং সবজি ক্রয় করে আনার পর ঠান্ডা পরিষ্কার পানির সাথে কিছুটা ভিনেগার ও লবণ মিশিয়ে সেই দ্রবণে ৮-১০ মিনিট ভিজিয়ে ফল পরিষ্কার করা। এতে ফল সুরক্ষিত ও ভালো থাকবে। তাই আসুন ফল সংরক্ষণ পদ্ধতি ও ফল ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে জেনে নিই।
আরোও পড়তে পারেন – আতা ফল চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই
রস হিসেবে ফল সংরক্ষণ করার পদ্ধতি
ফলের রস যে কোন রসালো ফল থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে। আর এই ফলের রস সংরক্ষণ করতে হয় টিনের কৌটায় রস ভর্তি করে দ্রুত পাস্তুরীকরণ করার মাধ্যমে। আর ফলের রস সংরক্ষণ করার পর সেই কৌটা অবশ্যই বায়ুরোধী করতে হবে। এর ফলে ফল বা ফলের রস ভালো থাকবে। আর যদি এভাবে ফলের রস সংরক্ষণ করা না হয় ফলের রস নষ্ট হয়ে হবে।
এছাড়াও ফলের রস দির্ঘদিন ভালো রাখার জন্য ফলের রসের সাথে খাদ্য সংরক্ষণকারী রাসায়নিক সংরক্ষক দ্রব্য মেশাতে হবে। আর বাড়িতে ফলের রস তৈরি করে বোতলেও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। রাখা যেতে পারে।
ফলের আচার তৈরি করার মাধ্যমে ফল সংরক্ষণ বা ভালো রাখার উপায়
ফলের আচার পছন্দ করে না এমন মানুষ খুবই কম পাওয়া যাবে। কারণ, আচার অত্যন্ত সুস্বাদু, লোভনীয় ও আকর্ষণীয় এবং মুখরোচক খাদ্য। আচারে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। তাই সঠিক নিয়ম মেনে আচার তৈরী করলে ফলের আচার বা ফল দির্ঘদিন সুরক্ষিত ও ভালো থাকবে।
আরোও পড়ুন – ফলন বৃদ্ধির উপায়
লবণের দ্রবণের সাহায্যে ফল ভালো রাখার বা সংরক্ষণ করার পদ্ধতি
প্রথমে ফল পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফলের আকার অনুযায়ী কয়েক টুকরা করে কেটে নিতে হবে। তারপর সেই ফলের টুকরাগুলো লবন মিশানো গরম পানিতে ৩ মিনিট হালকা নাড়াচার করতে হবে। এরপর সেই ফলগুলো একটি ধোয় জীবাণুমুক্ত প্লাস্টিক ড্রামে পরিষ্কার জায়গায় স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।
ফল শুকানোর মাধ্যমে বা ডিহাইড্রেশন প্রক্রিয়ায় ফল সংরক্ষণ পদ্ধতি
যদিও ডিহাইড্রেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফল সংরক্ষণ করা যায়, তবে সব ফল সংরক্ষণ বা ভালো রাখা যায় না। সাধারণত ডিহাইড্রেশন পদ্ধতিতে কুল বা বড়ই, আঙ্গুর বা কিসমিস, ডুমুর, নাসপাতি ও খেজুর ইত্যাদি ফল শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে ফল সংরক্ষণ করার জন্য ফল রোদে শুকানোর পূর্বে এনজাইমের কার্যকারিতা নষ্ট করার জন্য ফল সিদ্ধ করতে হবে। তারপর ফলগুলো রোদ শুকিয়ে বায়ুরোধী এমন পাত্রে অথবা পলিথিনের ব্যাগে সংরক্ষণ করতে হবে।
আরোও জানতে পারেন – মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায়
চিনির দ্রবণের সাহায্যে ফল সংরক্ষণ বা ভালো রাখার উপায়
চিনির দ্রবণের সাহায্যে ফল সংরক্ষণ করলে ফলের স্বাদ এবং সুগন্ধ বেড়ে যায়। আর এই পদ্ধতিতে আনারস, লিচু, পিচ, আম, পেঁপে, কমলা, আঙ্গুর, নাসপাতি, মাল্টা ইত্যাদি এভাবে সরংক্ষণ করা যায়। সাধারণত কেজি প্রতি ফলের জন্য ২৫০ গ্রাম চিনির প্রয়োজন হয়। তবে ফলের মিষ্টতা অনুযায়ী এই চিনির পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। চিনির দ্রবণে ফল সংরক্ষণের জন্য প্রথমে পাকা ফল সুবিধামতো টুকরা এবং পরিষ্কার করে নিয়ে চিনির দ্রবণের সাথে সিদ্ধ করতে হবে।
ফলের উপর চিনির সিরার প্রলেপ দিয়ে ফল সংরক্ষণ পদ্ধতি
চিনির সিরার প্রলেপ দিয়ে সাধারণত কাঁঠাল, আম এবং আনারস ফল সংরক্ষণ করা হয়। চিনির সিরার সাহায্যে ফল সংরক্ষণ করার জন্য ফলগুলো টুকরো করে কেটে নিতে হবে। তারপর সেই ফলের উপর চিনির প্রলেপ দিতে হবে। এভাবে প্রায় ১ বছর ফল সংরক্ষণ করা যাবে এবং ফল ভালো থাকবে।
জ্যাম ও জেলি তৈরি করার মাধ্যমে ফল সংরক্ষণ পদ্ধতি
সাধারণত জ্যাম বলতে ফলের পাল্প নিয়ে সেটাকে সংরক্ষণ করাকে বুঝায়। আর ফলের রস নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করাকে জেলী বুঝায়। অর্থাৎ ফলের জ্যাম অথবা জেলি তৈরী করে ফ্রীজে একটি বায়ৃরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
ক্যানিং বা টিনজাত করে পাত্রে ফল সংরক্ষণ এবং ভালো রাখার উপায়
এই ক্যানিং বা টিনজাত পদ্ধতিতে ফল সংরক্ষণ করার পূর্বে ফল সংরক্ষণ করার পাত্রটিকে স্টেরিলাইজড করতে হবে। আর টিনের পাত্রে ফল রাখার পর সেই পাত্রটি বায়ুরোধী করতে হবে। তারপর টিনজাত ফলের পাত্রটি ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে। এভাবে ফল সুরক্ষিত থাকবে।
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
ফল ও শাক-সবজি সংরক্ষণের সহজ উপায় হলো ফল ও শাক-সবজি গুলোকে ফ্রিজে রাখা। এতে করে ফ্রিজে সবজি ও ফল সতেজ ও ভালো থাকবে এবং সুরক্ষিত থাকবে।
কাটা সবজি বায়ুরোধি পাত্রে বা পলিথিনে ভর্তি করে ফ্রিজে রাখতে হবে।
১ লিটার পানিতে যত খুশি সোডিয়াম বেনজয়েট মিশানো যায়। তবে প্রতি লিটার পানিতে ৫০০ গ্রাম সোডিয়াম বেনজয়েট মিশোলে ভালো দ্রবীভূত হবে।