পেয়ারা চাষ পদ্ধতি – পেয়ারা চাষে সার প্রয়োগ, পরিচর্যা, রোগ ও প্রতিকার

পেয়ারা বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফল এতে ভিটামিন সি রয়েছে।বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন এলাকায় এর চাষ হয়ে ।তাই আসুন জেনে নিই পেয়ারা চাষের সঠিক পদ্ধতি।

পেয়ারা চাষ পদ্ধতি

আপনি কি পেয়ারা চাষ সম্বন্ধে জানতে চান? আমি শেয়ার করলাম কিভাবে সঠিক পদ্ধতিতে পেয়ার চাষ করবেন এবং পেয়ারার বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে।

পেয়ারা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। পেয়ারা ভিটামিন সি এর একটি প্রধান উৎস। দেশের সর্বত্র কম বেশি এ ফল জন্মে থাকে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা প্রভৃতি এলাকায় এর চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে অনেক ধরনের পেয়ারা দেখা যায় তারমধ্যে কাঞ্চন বারি পেয়ারা-৩ জাতগুলো অন্যতম।

তাই আসুন জেনে নিই পেয়ারা চাষের সঠিক পদ্ধতি।

মাটি

পেয়ারা খরা সহিষ্ণু উদ্ভিদ এবং অনেক ধরনের মাটিতে জন্মাতে পারে। এটা কিছুটা লবণাক্ততাও সহ্য করতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য উর্বর ও গভীর দোআঁশ মাটি উত্তম।

পেয়ারা চাষ পদ্ধতি

গর্ত তৈরি

পেয়ারার চারা প্রধানত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ করা হয়। চারা রোপণের জন্য ৪ মিটার x ৪ মিটার দূরত্বে ৬০ সেন্টিমিটার x ৬০ সেন্টিমিটার x ৬০ সেন্টিমিটার গর্ত তৈরি করা হয়।

গর্তের উপরে ৩০ সেন্টিমিটার মাটি একদিকে এবং নিচের ৩০ সেন্টিমিটার মাটি অন্যদিকে রাখতে হবে। এবার জমাকৃত উপরের মাটি গর্তের নিচে দিয়ে এবং নিচের মাটির সাথে ৫-৭ কেজি পচা গোবর সার, ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১৫০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে।

চারা রোপণ 

বীজ থেকে এবং গুটি কলমের মাধ্যমে পেয়ারার চারা তৈরি করা হয়। বীজ অথবা কলমের মাধ্যমে তৈরিকৃত চারা লাগানো হয়। চারটিকে একটি শক্ত খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে যেন বাতাসে হেলে না পরে। গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের তৈরি খাঁচা বা বেড়া দিতে হয়।

পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি

পেয়ারা গাছে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি, মে ও সেপ্টেম্বর মাসে সমান তিন কিস্তিতে সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। একেবারে গাছের গোড়ায় না দিয়ে যতদূর পর্যন্ত ডালপালা বিস্তার লাভ করে সে এলাকার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পর পানি সেচ অত্যাবশ্যক।

বয়স অনুযায়ী গাছ প্রতি সারের পরিমাণ

সারের নাম১-৩ বছর
গোবর/কম্পোস্ট১০-২০ কেজি
ইউরিয়া১৫০-৩০০ গ্রাম
টিএসপি১৫০-৩০০ গ্রাম
এমওপি১৫০-৩০০ গ্রাম 

পেয়ারা গাছের পরিচর্যা

বয়স্ক গাছের ফল সংগ্রহের পর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে অঙ্গ ছাঁটাই করা হয়। অঙ্গ ছাঁটাই করলে গাছে নতুন ডালপালা গজায়, ফলন ধারণ বৃদ্ধি পায়। গাছকে নিয়মিত ফলবান রাখতে এবং মানসম্পন্ন ফল পেতে কচি অবস্থায় শতকরা ২৫-৫০ ভাগ ফল ছাঁটাই করা প্রয়োজন। ফল ধারণের সময় এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৭-১০ দিন পর পর পানি সেচ দিলে ফলন বৃদ্ধি পায়। 

পেয়ারা গাছের রোগ ও প্রতিকার

পেয়ারা গাছে অনেক সময় ছত্রাকজনিত রোগ হয়। এ রোগের কারণে প্রথমে ফলের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগ দেখা যায় যা ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে পেয়ারার গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে।

ফল ফেটে বা পচে যেতে পারে। এ রোগ দমনের জন্য গাছের নিচে ঝরে পড়া পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গাছে ফল ধরার পর ২৫০ ইসি টিল্ট (প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি) ১৫ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ 

কাজী পেয়ারা ও বারি পেয়ারা বছরে দুইবার ফল দিয়ে থাকে। পেয়ারা পাকার সময় হলে এর সবুজ রং আস্তে আস্তে হলদে সবুজে পরিণত হয়। পেয়ারা গাছের বয়স ও জাত ভেদে ফলন পার্থক্য দেখা যায়। ৪-৫ বছরের একটি গাছ থেকে বছরে ১৫-২০ কেজি ফল দেওয়া যায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *