নাশপাতি ফলের জাত পরিচিতি ও উৎপাদন প্রযুক্তি 

নাশপাতি একটি বিদেশী ফল হলেও আমাদের দেশে কম বেশি সকলেই ফলটির সাথে পরিচিত এবং আমাদের দেশে এই ফলটি ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় এর উৎপাদন বৃদ্ধি করা খুবই জরুরী।

নাশপাতি

নাশপাতি ( Pyrus pyrifolia) পূর্ব এশিয়ার নাশপাতি গাছের একটি প্রজাতি। এই প্রজাতিটি এশিয়ান নাশপাতি নামে বেশি পরিচিত।

সারা পৃথিবীতে নাশপাতির অনেক প্রজাতি রয়েছে। এগুলো হলো এশিয়ান নাশপাতি, জাপানিজ নাশপাতি চীনা নাশপাতি, কোরিয়ান নাশপাতি, তাইওয়ানের নাশপাতি, আপেল নাশপাতি, প্যাপেল নাশপাতি এবং বালি নাশপাতি।

নাশপাতি মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। তবে এগুলোর মধ্যে এশিয়ান নাশপাতি অপেক্ষাকৃত উচ্চতাপমাত্রায় জন্মাতে ও ফলন দিতে পারে।

এটি একটি বিদেশী ফল হলেও আমাদের দেশে কম বেশি সকলেই ফলটির সাথে পরিচিত। আমদানিকৃত নাশপাতিগুলো কখনও স্বাদে মিষ্টি, কখনও স্বাদে কিছুটা পানসে প্রকৃতির হয়ে থাকে।

তারপরও প্রতি বছর বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে এই ফলটি আমদানি করতে হয়। নাশপাতি একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল।

এ ফলে শর্করা, ক্যালরি, চিনি, বিভিন্ন ডায়েটারি ফাইবার, চর্বি, প্রোটিন, বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিনস এবং খনিজ বিদ্যমান।

এ দেশের মাটি ও জলবায়ু এশিয়ান নাশপাতি জন্মানোর জন্য উপযোগী। দেশের বরেন্দ্র ও পাহাড়ি অঞ্চলে এই ফলটির চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে।

নাশপাতির চাহিদা বিবেচনায় ২০০৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি নাশপাতি-১ নামে একটি জাত অবমুক্ত করেছে।

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, আকবরপুর, মৌলভীবাজার এ ২০১০ সালে একটি মাতৃবাগান স্থাপন করা হয়। এই জাতটি নিয়মিত ফলদানকারী ও উচ্চফলনশীল।

নাশপাতির গাছ খাড়া ও অল্প ঝোপাল। এই জাতটি চাষ সম্প্রসারণের জন্য এই কেন্দ্র হতে প্রতি বছর গড়ে ২০০টি করে কলম সরবরাহ করা হয়।

চৈত্র মাসে ফুল আসে এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল সংগ্রহ উপযোগী হয় । ফলের গড় ওজন ১৩৫ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৮.৪০ সেমি. এবং প্রন্থ ৫.৬৩ সেমি. ।

ফল বাদামি রঙের, ফলের উপরিভাগের ত্বক সামান্য খসখসে। শাঁস সাদাটে, খেতে কচকচে ও সুস্বাদু এবং ব্রিক্সমান ১০%।

তবে এই কেন্দ্রটিতে ব্রিক্সমান ১২% পর্যন্ত পাওয়া গেছে যা বিদেশ থেকে আমদানিকৃত নাশপাতির চেয়ে অনেক সুস্বাদু। গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৬০-৭০টি।

জাতটি চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলাসমূহ ও সিলেট অঞ্চলে চাষ উপযোগী। যে কোন ধরনের সুনিষ্কাশিত মাটিতে নাশপাতি চাষ করা যায়। তবে উর্বর, সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ মাটি উত্তম।

নাশপাতি চাষের জন্য সূর্যালোক প্রয়োজন। শুষ্ক গরম বায়ু নাশপাতির জন্য ক্ষতিকর। মাটির পিএইচ মান ৫.৫-৭.৫ উত্তম। তবে এর চেয়ে কম বা বেশি হলেও নাশপাতি জন্মাতে ও ফলন দিতে পারে।

নাশপাতি গাছ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে না। সাধারণত স্টেম কাটিং বা শাখা কর্তন এবং গুটি কলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। বর্ষাকাল কলম করার উপযুক্ত সময়।

নাশপাতি ফলের উৎপাদন প্রযুক্তি

নাশপাতি গাছের ডালপালা বেশ লম্বা প্রকৃতির হয়ে থাকে। লাইন হতে লাইনের দূরত্ব ৫ মিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫ মিটার হলে ভালো হয়।

চারা কলম লাগানোর কমপক্ষে ১৫ দিন আগে গর্ত ভালোভাবে তৈরি করতে হবে এবং গর্তের মধ্যে ১০ কেজি পচা গোবর সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি ১৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে

কলমের চারা লাগানোর আগে গর্তের মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে গর্তের মাঝখানে চারা রোপণ করতে হবে। এরপর একটি খুটির মাধ্যমে চারাটি সোজা করতে হবে।

লাগানোর প্রথম কয়েক দিন নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। গাছের আকার ছোট রাখার জন্য গাছের উচ্চতা ৪০-৫০ সেন্টিমিটার হলে ভেঙে বা ছোট দিতে হবে।

নাশপাতির খাঁড়া ডালে নতুন শাখা-প্রশাখা কম হয়। এ জন্য খাড়া ডালে ওজন বা টানার সাহায্যে নুয়ে দিলে প্রচুর সংখ্যক নতুন শাখা গজায়। এতে ফলন ও ফলের গুণগতমান বৃদ্ধি পায়।

ফলন ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

কলমের চারা লাগানোর ৩-৪ বছরের মধ্যে গাছে ফল ধারণ শুরু হয়। ফল আলাদাভাবে এবং থোকায় থোকায় আসে।

ছয়-সাত বছর বয়সী গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৬০-৭০টি এবং হেক্টরপ্রতি ফলন ৬-৭ টন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলনও বাড়তে থাকে।

শুধুমাত্র নাশপাতির বাণিজ্যিক বাগান স্থাপন না করায় ভালো । তবে অন্যান্য উচ্চমূল্যের ফসলের সাথে মিশ্রভাবে চাষাবাদ করলে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *