জুম চাষ পদ্ধতি | জুম চাষ
পাহাড়ি অঞ্চলের ঐতিহ্যের মধ্যে জুম চাষ অন্যতম। এই জুম চাষের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতি কৃষক ভাইরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। তাই আসুন জেনে নিই জুম চাষ সম্পর্কে।
জুম চাষ হলো এক ধরনের স্থানান্তরিত কৃষিপদ্ধতি, যা মূলত পাহাড়ের গায়ে ঢালু এলাকায় করা হয়। এটি পাহাড়ের জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে চাষ করা হয়। এই জুম চাষ পদ্ধতিতে ফসল চাষ করতে করতে ৩/৪ বছর পর ঐ স্থানের বা পাহাড়ের জমির উর্বরতা কমে গেলে ঐ জমি হতে কৃষি জমি স্থানান্তরিত করে অন্য একটি পাহাড়ে গিয়ে কৃষি জমি গড়ে তোলা হয়। আবার র্বতমান জমি চাষ করতে করতে পূর্বের জমির উর্বরতা ফিরে এলে ৩/৪ বছর পর আবার পূর্বের জমিতে গিয়ে জুম চাষ করা হয়ে থাকে। এই জুম চাষ পদ্ধতির বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা হযয়ে থাকে।
আরোও পড়তে পারেন – ফেব্রুয়ারী মাসের সবজি চাষ
জুম চাষ পদ্ধতি
জুম চাষকে ঝুম চাষও বলা হয়ে থাকে। এই জুম চাষকে ইংরেজিতে Shifting Cultivation বলা হয়ে থাকে। এই জুম চাষ পাহাড়ি অধিবাসি চাকমা ও মারমা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। এই জুম চাষই তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। তাই চলুন জেনে আসি জুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
আরোও পড়ুন – ছাদে লাগান ৬ টি বেগুন গাছ প্রতিদিন পাবেন বেগুন | বারোমাসি বেগুন চাষ পদ্ধতি
জুম চাষের জমি নির্বাচন
জুম চাষের জমি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই পাহাড় নির্বাচন করতে হবে। কারণ, এই জুম চাষ পাহাড়েই হয়ে থাকে। খেয়াল রাখতে হবে যে, চাষের জমি বা পাহাড় যাতে উর্বর হয়। কারণ, টানা ৩ থেকে ৫ বছর একই জমি বা পাহাড়ে জুম চাষ করলে পাহাড়ের উর্বরতা কমে যায়।
আরোও জানতে পারেন – টবে সারা বছর লেবু চাষ পদ্ধতি | ছাদে লেবু চাষ লেবু খান বারোমাস
জুম চাষের জমি তৈরি
ফ্রেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস এই সময়ে পাহাড়ের জঙ্গল কেটে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে এপ্রিল মাসের মাঝামিাঝি সময় পর্যন্ত। অতঃপর এসব জঙ্গল পুড়িয়ে ছাই করে ফেলতে হবে। এমনভাবে পোড়াতে হবে যাতে পাহাড়ের ১ থেকে ২ ইঞ্চি মাটিও পুড়ে যায়। আর এই পেড়ানোর ফলে জমি আরোও উর্বর হয়। এরপর দুই-এক পশলা বৃষ্টি হলে জমি ভিজে নরম হযয়ে যায়। আর নরম ভেজা মাটিতে বীজ বপন করতে হয়।
আরো জানুন –নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি
জুম ক্ষেতে বীজ বপন বা ফসল চাষ
প্রথম বৃষ্টি শুরু হবার পর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে প্রায় সব দ্রুতবর্ধনশীল ফসলের বীজ (যেমন- পেঁপে, কলা, কাঁকরোল, বরবটি, শসা অন্যান্য শাকসবজি, স্বল্পমেয়াদি ফল ফসল যেমন- পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, গাব ইত্যাদি) একটি দাঁ দিয়ে মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে বপন করতে হয়। এছাড়াও ধান, গম, ভূট্টা চাষ করা যায়।
আরোও জানুন- লাভজনক চাষাবাদ করতে জানুন নানা কৃষি যন্ত্রপাতি ও তার মূল্য সম্পর্কে
আর এসব ফসল সংগ্রহের পর পাহাড়ের ঢল ভেদে আড়াআড়িভাবে অন্যান্য ফসল (যেমনঃ মেীসুম ভিত্তিক ফসল আনারস, ঢেড়স, বরবটি, টমাটো, বেগুন প্রভৃতি) চাষ করা যেতে পারে। পাশাপাশি জমি আচ্ছাদন করে স্বল্পমেয়াদি ফসল যেমন শাক চাষ করা হয়ে থাকে এই জুম চাষে। আর এই জুম চাষের একটি অন্যতম ফসল হলো ধনিয়া পাতা। অর্থাৎ জুম চাষ হলো একটি সমন্বিত চাষ পদ্ধতি।
ফসল সংগ্রহ
সাধারণত জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জুমের ফসল কাটার মৌসুম। তবে যেহুতু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয় সেহুতু সে হিসাব করে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।
এভাবে জুম চাষ করা হয়ে থাকে। এই জুম চাষ পাহাড়ী অঞ্চলের একটি ঐতিহ্য।
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
জুম চাষ বলতে সাধারণত কয়েক বছর অন্তর অন্তর এক পাহাড়ের উর্বরতা কমে গেলে ঐ পাহাড়ের উর্বরতা ফিরিয়ে আসা পর্যন্ত জন্য ঐ স্থান বা পাহাড় পরিবর্তন করে অন্য পাহাড়ে গিয়ে কৃষি কাজ করার পদ্ধতিকে বুঝায়। কৃষি কাজের জন্য এই স্থান বা পাহাড় পরিবর্তন করায় পদ্ধতিকে স্থানান্তরিত কৃষি (shifting cultivation) বা জুম চাষ বলা হয়।
একই জমিতে একই সময়ে একাধিক ফসল উৎপাদন বা চাষ করাকে সমন্বিত চাষ কাকে বলে। জুম চাষকেও এক প্রকার সমন্বিত চাষ পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।
জুম চাষের ক্ষতিকারক প্রভাব হলো পাহাড়ের মাটির উর্বরতা কমে যাওয়া। আর এর ফলে প্রত্যেক বছরই পাহাড় ধ্বস হচ্ছে। পাহাড়ে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস ও উপকারি কিট-পতঙ্গ কমে যাচ্ছে। এছাড়াও জুম চাষের জন্য পাহাড়ের পর পাহাড় আগুনে পুড়ে কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ ধ্বংস প্রাপ্তি হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।
জুম চাষ করা হয় পার্বত্য অঞ্চলের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়। পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীরা জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য এই জুম চাষ করে থাকে।