আমের মাছি পোকা দমন ব্যবস্থা

আমাদের দেশে আমের যে হারে ফলন হয় তার অর্ধেক আম নষ্ট হয় আমে মাছি পোক আক্রমণের কারণে। ফলে কৃষকরাও আম চাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই আসুন আমের মাছি পোক দমন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানি।

আমের মাছি পোকা দমন ব্যবস্থা

আম খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। আম খেতে ভালোবাসেনা এমন মানুষ খুবই কম পাওয়া যাবে। গ্রীষ্মকালে বাজারে আমের খুবই চাহিদা থাকে। তাই কৃষকরা ভালো দাম ও মুনাফা পাওয়ার জন্য প্রতিবছর আম গাছ চাষ করে। কিন্তু এই আম চাষ করার সময় কিছু পোকামাকড় (যেমন: মাছি পোকা) আমে আক্রমণ করে এবং আমের ফলন ব্যাহত করে। তাই  চলুন আমের মাছি পোকা দমন ব্যবস্থা সম্পর্কে জেনে নিই।

আমে মাছি পোকার আক্রমণের লক্ষণ

  • স্ত্রী মাছি পোকা গাছে আম থাকা অবস্থায় আমের খোসা বা গায়ের উপর ডিম পাড়ে। আর আমের উপর মাছি পোকার এই ডিম পাড়ার ফলে আমের আক্রান্ত স্থান থেকে প্রায় সময় রস বের হতে থাকে।
  • আর আমের খোসায় মাছি পোকা আক্রমণের একটি বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য হলো আমগুলো দেখে বাইরে থেকে বেঝা যায় না যে, আমগুলো আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ কোন আমটি আক্রান্ত আম তা সাধারণত বোঝা যায় না মাছি পোকা আক্রমণ করলে আমের খোসায়।
  • মাছি পোকা আমে আক্রমণ করলে মাছি পোকার কীড়াগুলো পাকা আমের মধ্যে প্রবেশ করে আমের শাঁস খেয়ে ফেলে।
  • আমে মাছি পোকা আক্রমণের ফলে আম পঁচে যায় এবং গাছ থেকে আম ঝরে পড়ে যায়।
  • মাছি পোকা আক্রান্ত আম কাটলে আমের ভিতের সাদা রঙের অনেক কীড়া দেখা যায়।
  • সাধারণত এই মাছি পোকা আমের উপর এবং নিচ উভয় দিকে আক্রমণ করে থাকে।
  • আম গাছে মাছি পোকার আক্রমণ বেশি হলে গাছের প্রায় সব আম খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়।

আমে মাছি পোকার আক্রমণে প্রতিকার

  • আমে মাছি পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের রসের সাথে সেভিন ৫ গ্রাম ভালোভাবে মিশিয়ে বিষটোপ বানাতে হবে এবং এই বিষটোপ আম বাগানে রেখে আমের মাছিপোকা দমন করতে হবে।
  • অথবা আম গাছে আম পরিপক্ক হওয়ার আগে যখন আম পূর্ণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে তখন ডিপটেরেক্স ৪ চা চামচ ৮.৫ লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর আম গাছে ২ বার স্প্রে করতে হবে।
  • নাহলে ডিপটেরেক্স এর পরিবর্তে ডায়াজিনন ৫০ ইসি ২মিলি হারে ১ লিটার পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর আম গাছে ২ বার স্প্রে করতে হবে।
  • আম গাছে মাছি পোকা দমনের জন্য যে গাছে ঔষুধ স্প্রে করা হবে সে গাছের আম খাওয়া যাবে না।
  • আম গাছের আম পরিপক্ব বা পাকার সময়ে ৫ গ্রাম হারে ব্লিচিং পাউডার প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পুরো আম বাগানে স্প্রে করতে হবে।
  • এছাড়াও আমের মাছি পোকা দমনের জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে প্রচুর পুরুষ পোকা মারা যাবে এবং বাগানে মাছি পোকার আক্রমণ অনেকটা হ্রাস পাবে।
  • আম গাছের মাছি পোক দূর করা উপায় হলো আম পরিপক্ব হওয়ার সময় আম গাছের প্রতিটি আম ব্রাউন পেপার দ্বারা মুড়িয়ে দিলে আমে আর মাছি পোকার আক্রমণ করতে পারবে না।
  • এছাড়াও মাছি পোকা দ্বার আক্রান্ত আম গাছে ২২৫ লিটার পানিতে ৩০০ মিলি হারে ডাইমেক্রন ১০০ ইসি বা ৪০০ মিলি ডায়াজিনন ৫০ ইসি অথবা সুমিথিয়ন ৪৫৪ মিলি হারে ৫০ ইসি ভালোভাবে মিশিয়ে আম গাছে স্প্রে করতে হবে।

আরোও জানুন – বারোমাসি আম চাষ

কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com

FAQs

ফলের মাছি পোকা দমন ব্যবস্থা কিভাবে করা যায়?

তুলসি পাতার নির্যাস নিয়ে তুলোর প্যাডে ভর্তি করে ফল গাছ থেকে ০.৮ কিলোমিটারের দূরত্বে রাখতে হবে। এর ফলে তুলসির নির্যাসের সুগন্ধ মাছিকে আকর্ষণ করবে, যার ফলে মাছি পাকা আর ফলের গাছে আক্রমণ করবে না। এত ফল গাছ সুরক্ষিত থাকবে।

আম গাছে কি কি স্প্রে করতে হয়?

আম গাছে রোগ-বালাই দমনের জন্য বিভিন্ন ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়।

ইমিটাফ এর কাজ কি?

ইমিটাফ এর কাজ হলো বীজ শোধন করা এবং মাটিতে বসবাসকারী পোকা দমন করা। 

জিব্রেলিক এসিড এর কাজ কি?

জিব্বেরিলিক এসিড এর কাজ হলো এটি ফসলের ফলন, পুষ্টি গুণাগুণ এবং স্বাদ বৃদ্ধি করে। 

বাংলাদেশের আমের রাজধানীর নাম কি?

বাংলাদেশের আমের রাজধানীর নাম হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *