গাব চাষের সঠিক নিয়ম ও পরিচর্চা

গাব পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু একটি ফল। দিন দিন বাজারে এর চাহিদা বাড়ছে। তাই কৃষকরা গাব চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আসুন জানি গাব চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে।

গাব চাষ পদ্ধতি

গাব বা বিলাতি গাব হলো এমন একটি ফল, যা খেতে খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি। গাব গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Diospyros discolor বা Diospyros blancoi এবং গাব গাছকে ইংরেজিতে velvet apple, velvet persimmon, kamagong, বা mabolo tree বলা হয়। গাব ফলটি দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় বর্তমানে বাজারে গাবের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই র্ষকরা গাব গাছ চাষে মনযোগী হচ্ছেন। আসুন জেনে নিই গাব গাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।

আরোও পড়তে পারেন – কাঁচা আম পাকানোর সহজ ও সঠিক নিয়ম

গাব গাছের চাষের সময়

গাব গাছ চাষের উপর্যুক্ত সময় হলো আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস। তবে সারা বছরই গাব গাছ চাষ করা যায়। কারণ, গাব গাছ রোপন করার ৩-৪ বছর পর ফল দেয়। আর গাব গাছ একবার ফল দেওয়া শুরু করলে সারা বছরই ফল দিতে থাকে।

গাব গাছ চাষের মাটি ও জমি নির্বাচন

সাধারণত প্রায় সব ধরণের মাটিতে গাব চাষ বা রোপণ করা যায়। তবে গাব গাছ চাষের জন্য স্যাতস্যাতে মাটি খুবই উপযোগী। কারণ গাব গাছ স্যাঁতস্যাতে মাটি খুবই পছন্দ করে। যদিও জলবদ্ধতা সহ্য করতে পারেনা গাব গাছ। তাই গাব গাছ চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেন জমিটিতে সামান্য উঁচুু হয় এবং জমিটিতে যেন পানি জমে না থাকে। যদি গাব গাছের চারপাশে পানি জমে থাকে তাহলে গাব গাছ মরে যেতে পারে।

গাব গাছ চাষের তাপমাত্রা

গাব গাছ চাষের জন্য উপর্যুক্ত আবহাওয়া বা তাপমাত্রা হলো ১৫-৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রায় গাব গাছ দ্রুত বড় হয় এবং খুব দ্রুতই ফল প্রদান করে।

আরোও জানতে পারেন – আধুনিকভাবে চাষ করুন ধনিয়া সারা বছরই ইনকাম

গাব গাছের চারা সংগ্রহ

গাব গাছের চাষের পূর্বে গাব গাছের চারা সংগ্রহ করতে হবে নিকটবর্তী কোনো নার্সারী বা কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে। এছাড়াও গাব গাছের ডাল ভেঙ্গে কলম করেও তা সংগ্রহ করে গাব গাছ চাষ করা যায়।

গাব গাছ চাষের জমি তৈরী

সাধারণ গাব গাছ চাষের জন্য বিশেষ ভাবে জমি তৈরীর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। গাব গাছের জন্য বরাদ্ধকৃত জমিতে গাব গাছের চারার সংখ্যা অনুযায়ী গর্ত করতে হবে এবং ঐ গর্তগুলোতে পরিমাণ মতো জৈব সার দিতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে।

গাব গাছ চাষ বা রোপন পদ্ধতি

  • গাব গাছ রোপন করার জন্য প্রথমে কোনো গাছ থেকে গাব গাছের ডাল বা কলম স্যগ্রহ করতে হবে অথবা নিকটবর্তী কোনো নার্সারি বা কৃষি গবেষণা থেকে চারা সংগ্রহ করতে হবে।
  • তারপর সেই গাব গাছের চারা বা কলমটি গাব গাছ চাষের জমির গর্তে নিয়ে যেতে হবে।
  • এরপর সেই গর্তগুলোতে গাব গাছের কলম বা চারগুলো প্রতিস্থাপন করতে হবে।
  • গাব গাছের চারাগুলো এমনভাবে জমির গর্তে স্থাপন করতে যেন গাছ হেলে না যায়। অর্থাৎ সোজাসোজি ভাবে গাব গাছের কলম গুলো গর্তে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
  • গাব গাছের চারা যাতে হেলে না যায় সেজন্য গাব গাছের চারার সাথে একটি লম্বা শক্ত খুটি বেঁধে দেওয়া যেতে পারে।
  • গর্তে গাব গাছের চারার বসানোর পর গর্তগুলো মাটি ও সার দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিতে হবে এবং ভালোভাবে গর্তে মাটি চেপে দিতে হবে।

আরোও জানুন – কাঁঠাল চাষ পদ্ধতি: সঠিক নিয়মে কাঁঠাল চাষ করে পান সফলতা

গাব গাছ চাষে সার প্রয়োগ

গাব গাছে বিশেষ কোনো সার দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে গাব গাছ চাষের ক্ষেত্রে জৈব সারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই গাব গাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর নির্দিষ্ট পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন সার প্রয়োগ করতে পারেন গাব গাছ চাষে।

গাব গাছ চাষে পরিচর্চা

  • গাব গাছ চাষের ক্ষেত্রে তেমন সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে আবহাওয়া ও মাটির অবস্থা বুঝে গাব গাছ চাষের জমিতে সেচ দিতে হবে। যাতে গাব গাছ চাষের জমির মাটি স্যাঁতস্যাতে থাকে।
  • গাব গাছের চারপাশের আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

আরোও পড়ুন – সঠিক নিয়মে রামবুটান চাষ করে আয় করুন লক্ষ টাকা

গাব ফল সংগ্রহ

গাব গাছ জমিতে রোপন করার গাব বড় এবং ফল দিতে প্রায় ৪/৫ বছর সময় লাগে। তবে গাব গাছ একবার ফল দেওয়া শুরু করলে সারা বছরই ফল দিতে থাকে। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে গাব গাছে ফুল আসে এবং গ্রীষ্মকালে এপ্রিল থেকে মে মাসে গাব ফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ গ্রীষ্মের মৌসুমে গাবের ফলন বেশি হয়।

FAQs

গাবের উপকারিতা কি বা গাব খাওয়ার উপকারিতা কি?

গাবে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় গাব খাওয়ার উপকারিতা হলো গাব আমাদের শরীরকে সর্দি, জ্বর, কফ-কাশি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও গাবের উপকারিতা হলো এটিতে উচ্চমাত্রায় খাদ্যশক্তি থাকায় গাব আমাদের শারীরিক দুর্বলতা কমায়। নিয়মিত গাব খেলে গাবে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়কে মজবুত করে। এছাড়াও গাব আমাদের রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিলাতি গাব খেলে কি হয়?

বিলেতি গাব খেলে এটি আমাদের শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে এবং আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর চাপ কমিয়ে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। বিলেতি গাবে থাকা আঁশ আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়াও বিলেতি গাবের উপকারিতা হলো এটি আমাদের রক্ত চাপ, হার্টঅ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। বিলেতি গাব খাওয়ার উপকারিতা হলো গাবে থাকা আয়রন আমাদের দেহে লোহিত কণিকার কোষের উন্নতি ঘটায়।

গাব গাছ কেমন?

গাব গাছ খুবই লম্বা হয়। গাব গাছ ৩০-৩৫ মিটার লম্বা আর ৬৫-৭০ মিটার ব্যাসের হয়। গাব গাছের ফল গোলাকার এবং সোণালী হলুদ রং এর হয়। দেশি গাব গাছ একটি বহুববর্ষজীবি গাছ। গাব গাছের কান্ড ৭০ সে.মি ব্যাসের হয়।

গাবে কি কি বিটামিন আছে?

গাবে ভিটামিন এ থাকে।

গাব ফল দেখতে কেমন?

গাব ফল দেখতে গোলাকার এবং হলুদ সোণালী রঙের হয়। গাব ফল পাকলে গাঢ় লাল রঙ হয়। গাব ফলের ভেতরের অংশটা নরম এবং ক্রিমের মতো সাদা বা গোলাপী শাঁস যুক্ত হয়। গাব ফলের স্বাদ মিষ্টি হয় এবং গাব ফল সুগন্ধযুক্ত হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *