সঠিক নিয়মে রামবুটান চাষ করে আয় করুন লক্ষ টাকা

রামবুটান একটি অর্থকারী ফল। এই ফল চাষ করলে খুব সহজে প্রায় লক্ষ টাকা উপার্জন করা সম্ভব। তাই কৃষকরা বর্তমানে রামবুটান চাষে খুবই মনযোগী হচ্ছেন। আসুন রমবুটান চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।

রামবুটান চাষ পদ্ধতি

রামবুটান ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Nephelium lappaceum, রামবুটান ফলকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় ফল বলা হয়। এই রাম্বুটান ফলটি খেতে এবং দেখতে অনেকটা লিচুর মতো। তব লিচু ফলের শরীর বা চামড়া কন্টক বিশিষ্ট হলেও এই রাম্বুটান ফলের গায়ে দাড়ির মতো অংশ বিদ্যমান। এই রাম্বুটান ফল দেখতে সাদা, স্বচ্ছ ও অম্লীয় মিষ্টি গন্ধযুক্ত এবং এর শাঁসই হলো এই ফলের ভক্ষনযোগ্য অংশ। 

এই রাম্বুটান ফল চাষ করে একটি রাম্বুটান গাছ থেকেই প্রায় লক্ষ টাকা উপার্জন করা সম্ভব। কারণ, কেজি প্রতি রাম্বুটান ফলের দাম হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। আর একটি রাম্বুটান গাছ থেকে প্রায় ২০ কেজি বা এর বেশি রাম্বুটান ফল পাওয়া যায়। তবে এই উপার্জন করার জন্য প্রয়োজন একটু ধৈর্যের এবং জানা প্রয়োজন রাম্বুটান ফলের সঠিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। তাই, আসুন জানি কিভাবে সঠিক নিয়মে রাম্বুটান চাষ করে লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব সে সম্পর্কে।

আরোও পড়তে পারেন – অল্প খরচে ভূট্টা চাষ জানবো ভূট্টা চাষের সঠিক নিয়ম

রামবুটান ফল চাষের মাটি ও জমি নির্বাচন

রাম্বুটান চাষের জন্য জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগী। তবে এঁটেল-দো-আঁশ মাটিতেও রামবুটান ফল চাষ করা যায়। আর রাম্বুটান মাটির অম্লমান বা পিএইচ মান ৪.৫ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে থাকলে রাম্বুটানের ফলন ভালো হয়। রামবুটান চাষের জন্য উঁচু বা মধ্যম উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে।

রামবুটান ফল চাষের জলবায়ু নির্বাচন

এশীয় দেশগুলোতে রাম্বুটান ফল ২২-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার জলবায়ুতে খুবই ভালো জন্মে। আবার কিছুটা ঠাণ্ডা অঞ্চল বা ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের তাপমাত্রার জলবায়ুতেও রামবুটানের ফলন ভালো হয়। এছাড়াও যেসব এলাকায় অন্যান্য এলাকার তুলনায় খুব বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেসব জায়গায় রাম্বুটান ভালো জন্মে। আর যদি রামবুিটান চাষের জায়গা যদি উষ্ণ হয় সেক্ষেত্রে রামবুটান গাছের গোড়ায় এবং রামবুটান চাষের জমিতে অধিক সেচ দিতে হবে।

আরোও জানতে পারেন – স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি ও সার প্রয়োগ | ছাদে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি

রামবুটান ফল চাষের জাত নির্বাচন

বাণিজ্যিকভাবে রামবুটান ফল চাষের জন্য রামবুটান ফলের কিছু উচ্চ-ফলনশীল জাত রয়েছে। সেগুলো হলোঃ- ফিলিপাইনের সিবাবাত, মালয়েশিয়ার (পি১, পি৪, পি৫, পি৬, পি৮, পি২২, পি২৮, পি৫৪ ও পি৬৩), সিঙ্গাপুরের লি, এবং ইন্দোনেশিয়ার মেরাহ ও কোয়েনেং জাত।

রামবুটান ফল চাষের পূর্বে রামবুটান চারা তৈরী

  • সাধারণত রাম্বুটানের জোড়কলম করে চারা তৈরি করা হয়। নিম্নে রামবুটান চারা তৈরীর প্রক্রিয়াটি হলোঃ- রামবুটানের বীজ থেকে গজানো ১বছর বয়সী চারার মাথা কাঁটতে হবে।
  • এরপর ফল ধরা কোনো রাম্বুটান গাছের একটি ডগা তেরছা করে কাটতে হবে।
  • তারপর রামবুটান চারার মাথায় সামান্য ফাটল করে গোজের মতো সেই গাছের ডগা ঢুকিয়ে দিয়ে ফিতে দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
  • রামবুটানের এই কলম তৈরী করার পদ্ধতিকে বলে চোখকলম বা ক্লেফট গ্রাফটিং বলা হয়ে থাকে। 
  • আর এই চোখকলম করার উপর্যুক্ত সময় হলো বসন্তকালের আগ মুহুর্তে।

রামবুটান ফল চাষের জমি বা মাদা তৈরী

  1. রামবুটান চাষের জন্য প্রথমে জমি নির্বাচন করে তারপর মাদা তৈরী করতে হবে।
  2. প্রতিটি রামবুটান গাছের কলম বা চার রোপন জন্যে কমপক্ষে ৮ মিটার দূরত্বে দুরত্বে গর্ত বানাতে হবে।
  3. রামবুটান গাছের চারা বা কলম রোপনের প্রতিটি গর্তের সাইজ হবে ১ মিx ১ মি x ১ মি।
  4. রামবুটান কলম বা চারা রোপণ করার ১৫-২০ দিন পূর্বে উপর্যুক্ত পরিমাণ জৈব সার দিয়ে রামবুটান চাষের গর্তগুলো ২৫-৩০ কেজি গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০ গ্রাম এমওপি, ২০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ গ্রাম জিং সালফেট মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে  ভরাট করে দিতে হবে।
  5. রামবুটান চাষের মাটি শুষ্ক হয়ে গেলে সেখানে জল সেচ দিতে হবে।

আরোও পড়ুন – রাবার চাষ পদ্ধতি

রামবুটানের চারা রোপন বা চাষ পদ্ধতি

  • রামবুটান চারা রোপণের উপর্যুক্ত সময় হলো মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর মাস পর্যন্ত।
  • যদি রাম্বুটান বানিজ্যিকবাবে চাষ করা হয় সেক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি জমিতে ৮০-১২০টি রাম্বুটান গাছের সংগ্রহ করতে হবে।
  • তারপর সেই রাম্বুটান গাছের সেই চারাগুলো রামবুটান চাষের জমির গর্তে সোজা করে বপন করতে হবে। যাতে রামবুটানের চারাটি বেঁকে না যায়, প্রয়োজনে রামবুটান গাছের চারার সাথে একটি শক্ত লাঠি লাগিয়ে দিয়ে রামবুটান চারাটি শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে।
  • তারপর মাটি দিয়ে রামবুটান গাছের গেড়ায় মাটি দিয়ে ভালোভাবে চেপে দিতে হবে।

রামবুটান চাষে সার প্রয়োগ

  1. রামবুটান গাছের বয়স ১-২ বছর হলে রামবুটান গাছের জন্য হেক্টর প্রতি গোবর সার ১০-১৫ কেজি , ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমওপি ১৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
  2. রামবুটান গাছের বয়স ২-৪ বছর হলে রামবুটান গাছের জন্য গোবর সার ১৫-২০ কেজি , ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম, টিএসপি ৪৫০ গ্রাম এবং এমওপি ৩০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
  3. রামবুটান গাছের বয়স ৩-৭ বছর হলে রামবুটান গাছের জন্য গোবর সার ২০-২৫ কেজি, ইউরিয়া ৪৫০ গ্রাম, টিএসপি ৭৫০ গ্রাম এবং এমওপি ৪৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
  4. রামবুটান গাছের বয়স ৮-১০ বছর হলে রামবুটান গাছের জন্য  গোবর সার ২৫-৩০ কেজি, ইউরিয়া ৭৫০ গ্রাম, টিএসপি ১২০০ গ্রাম এবং এমওপি ৬০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
  5. রামবুটান গাছের বয়স ১০-১৫ বছর হলে রামবুটান গাছের জন্য  গোবর সার ৩০-৪০ কেজি, ইউরিয়া ১২০০ গ্রাম, টিএসপি ১৫৫০ গ্রাম এবং এমওপি ৭৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
  6. রামবুটান গাছের বয়স ১৫ বছরের উর্ধ্বে হলে রামবুটান গাছের জন্য  গোবর সার ৪০-৫০ কেজি, ইউরিয়া ১৫০০ গ্রাম, টিএসপি ২০০০ গ্রাম এবং এমওপি ১০০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।

আরোও জানুন – সজিনা চাষ পদ্ধতি

রামবুটান চাষে সেচ প্রদান

রাম্বুটান গাছ খরা সহ্য করতে পারে না। তাই রামবুটান গাছের গোড়ায় নিয়মিত জল বা সেচ প্রদান করতে হয়। আর নিয়মিত রামবটান চাষে সেচ না দিলে রামবুটান গাছ মরে যেতে পারে। আবার খেয়াল রাখতে হবে যে, রামবুটান গাছের গোড়ায় যেন জল জমে না থাকে।

শুকনো মৌসুম বা শীতকালে রামবুটান গাছের গোড়ায় ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর পানির সেচ দিতে হবে। এছাড়াও রামবুটান গাছে কুঁড়ি দেখা দিলে তখন ১ বার, রাম্বুটার ফল মটরদানার মতো বৃদ্ধি পেলে তখন ১ বার এবং ১৫ দিন পর আরো ১ বার পানির সেচ দিতে হবে।

রামবুটান ফল সংগ্রহ

রামবুটান ফল সংগ্রহের উপর্যুক্ত সময় হলো শ্রাবণ মাস। সাধারণত রামবুটান ফলের রঙ লালচে বর্ণ হলে রাম্বুটান ফল সংগ্রহ করা শুরু করে দিতে হয়। আর রামবুটান ফলের উপর্যুক্ত বাজারমূল্য পাওয়ার জন্য রামবুটান ফল লালচে-খয়েরি বর্ণ ধারণ করলে তার ১০-১২ দিনের মধ্যে সেই ফলগুলো সংগ্রহ করতে হবে।

আরোও পড়ুন – চারা গাছ রোপন পদ্ধতি

FAQs

রামবুটান কোথায় পাওয়া যায়?


রামবুটান ফল শ্রাবণ মাসে বাজারে পাওয়া যায়। 

২০২৩ সালে রামবুটান ফলের দাম কত?


২০২৩ সালে রামবুটান ফলের দাম কেজি প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা।

রামবুটান ফলের উপকারিতা কি?


রামবুটান ফলের উপকারিতা হলো এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট আমাদের খাবার হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ এই রামবুটান ফল খাওয়ার উপকারিতা হলো আমাদের শারিরিক দুর্বলতা দূর করে। রামবুটানের অন্যতম উপকারিতা হলো এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে। আর চুলের উজ্ঝলতা বৃদ্ধি করতে রামবুটানের পাতা খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।

রাম্বুটান গাছ কি?


রাম্বুটান গাছ হলো একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় গাছ। যার ফলগুলো খুবই মিষ্টি, লোমযুক্ত লাল বা হলুদ রঙের চামড়া।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *