ধানের শীষ মরা রোগে করণীয় | ধানের ছড়া মরা রোগের প্রতিকার
প্রচুর ধান চাষ করেও কোনো লাভ হয় না। এর প্রধান কারণ হলো এর রোগ বালাই সম্পর্কে অবগত না হওয়া। তার মধ্যে শীষ মরা রোগ অন্যতম। এটি হলে ফলন কমে যায়। জানুন এর প্রতিকার সম্পর্কে।
ধান একটি দানা শস্য জাতীয় উদ্ভিদ। ধান বীজ বা চাল সুপ্রচীন কাল থেকে সকলের প্রধান খাদ্য। এমনকি বাংলাদেশের প্রাধান খাদ্য ভাত। বাংলাদেশে এর ব্যাপক চাষ হয়। তবে যা চাষ হয় এতে সারা বাংলাদেশের চাহিদা মিটে না। তাই বাংলাদেশকে অন্য দেশ থেকে চাল কিংবা ধান আমদানি করতে হয়। বর্তমান সময়ে ব্যাপক ভাবে ধান চাষ করার জন্য কৃষক ভাইদের নানা রকম অনুদান, কৃষিঋণ সরকার দিচ্ছে। তারপরও প্রতিবছর কৃষক ভাইরা নানা রকম সমস্যার মুখে পড়ে। এর প্রধান কারণ গুলো হলো-
- জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত নয়;
- রোগবালাইয়ের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়তে না পারা;
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবিলা করতে না পারা;
- আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা;
- ধান সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে না জানা;
জানুন-শসা চাষ পদ্ধতি ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা
এছাড়াও আরো নানা রকম সমস্যার মুখে পরে কৃষক ভাইগণ। যদি উপরের বিষয় গুলোকে মাথায় রেখে ধান চাষ কিংবা অন্য যেকোনো চাষ করা হোক না কেন প্রতিটি চাষে ভালো ফল আশা করতে পারবে কৃষক ভাইরা। আজকের আলোচনায় থাকবে ধানের শীষ মরা বা ছড়া মরা রোগ কিভাবে দমন করতে পারবেন তা নিয়ে। আশা করি আপনারা এর মাধ্যমে অনেক উপকৃত হবেন।
শীষ মরা বা ছড়া মরা রোগ চেনার উপায়
শীষ মরা বা ছড়া মরা রোগ ধানের একটি ছত্রাক জনিত রোগ। এই রোগের আক্রমণ ঘটলে ধানের শীষ সাদা হয়ে যায়। এবং ধান পুষ্ট হয় না বরং চিটা হয়ে যায়। একে আবার শীষ ব্লাস্ট রোগ বলে।
এই রোগ হলে ধানের ডিগ পাতা বা শীষের গোড়ার সংযুক্ত সাস্থানে শুকিয়ে যায়।পরবর্তীতে আক্রান্ত শীষের গোড়া পঁচে গাছের খাবার শীষে খাবার পৌছায় না এর ফলে শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যায় এবং দানা চিটা হয়। তাছাড়া শীষের গোড়া ছাড়াও শীষের যে কোনো স্থানে এই রোগ হতে পারে।
এছাড়া এই রোগের কারণে ধান গাছের উপরি ভাগের পাতা এবং খোল পাতা সাদা ছত্রাক দিয়ে আবৃত হয়ে যায় এর ফলে রূপার মতো দেখায়।আক্রান্ত শষে কোনো দানা হয় না।
কেন হয় শীস মরা ও ছড়া মরা রোগ?
প্রথমে বলতে হয় এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ। অর্থাৎ ছত্রাকের আক্রমণের কারণে এই রোগের সৃষ্টি। এই রোগ বাংলাদেশ নয় বরং দক্ষিণ ভারত সহ আরো অনেক জায়গায় মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে। যদি মৌসুমের শুরুতে কিংবা শেষের দিকে দিকে যদি আপনি ধান চাষ করেন তাহলে এই রোগের সংক্রমণ অনেক কম হয়।
এটি ছড়ায় মূলত বীজ, ধান গাছের পাতায় কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে ছড়ায়। তবে ফসল কাটার পর জীবানু ফসলের অবশিষ্টাংশে অবস্থান করে এবং বাতাস ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এর অনেক গুলো আবাস আছে যেমন- ইসাকনি এরিগ্যান্স, পেনিসেটাম, এরাগ্রোস্টিস টেনুইফোলিয়া প্রভৃতি আগাছা।
সাধারনত এই রোগ চারা রোপণ ও বৃদ্ধি পর্যায়েই এই রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ হয়। এই রোগের লক্ষন শীষ বের হওয়ার সময় প্রথম দৃশ্যমান হয়।
শীষ মরা বা ছড়া মরা রোগ দমনের জৈব পদ্ধতি
বীজ বপনের পূর্বে ৫০-৫৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি গরম করে, সেই পানিতে ১০ মিনিট শোধন করলে ছত্রাকের জীবানু মরে যায়। এই পদ্ধতি আপনার কাছে কঠিন মনে হলে আপনি বীজগুলোকে কড়া রৌদ্রে রেখে শোধন করে ছত্রাকের জীবানু ধ্বংস করা যায়।তাছাড়া শীষ ব্লাস্ট রোগ দেখা দিক বা না দিক জমিতে অব্যশই পানি ধরে রাখবেন।
শীষ মরা বা ছড়া মরা রোগ দমনের রাসায়নিক পদ্ধতি
শীষ মরা বা ছড়া মরা রোগ দমনের রাসায়নিক পদ্ধতি হলো ধানের জমিতে রোগ হোক বা না হোক থোড় ফেটে শীষ বের হওয়ার সময় একবার এবং এর ৫-৭ দিন পর আরেক বার প্রতি বিঘা জমিতে ৫৪ গ্রাম ট্রুপার ৭৫ ডব্লিউপি/দিফা ৭৫ ডব্লিউপি/জিল অথবা ৩৩ গ্রাম নাটিভো ৭৫ ডব্লিউজি, অথবা ট্রাইসাইক্লাজল/স্ট্রবিন গ্রুপের অনুমোদিত মাত্রায় ছত্রাকনাশক ৬৭ লিটার পানিতে ভালো ভাবে মিশিয়ে বিকালে স্প্রে করতে হবে।
মনে রাখবেন ধানের শীষ ব্লাস্ট বা শীষ মরা রোগ দমনের জন্য অব্যশই রোগ হওয়ার আগেই ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রিয় কৃষক ভাইরা এই দিকটা আপনারা ভালো ভাবে নজরে রাখবেন।
- সংক্রমিত জমি থেকে ধান বীজ সংগ্রহ করবেন না;
- রোগমুক্ত ধান বীজ ব্রবহার করুন এবং সম্ভব হলে রোগ প্রতিরোধী সহনশীল জাতের ধান চাষ করুন;
- জমি ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন এবং আক্রন্ত শীষ সরিয়ে ফেলুন;
- মৌসুমের প্রথম দিকে কিংবা শেষের দিকে ধান লাগাবেন;
- জমি কিংবা জমির আশে পাশে সম্ভাব্য বিকল্প আগাছা বা আবাস সরিয়ে ফেলুন;
বাংলাদেশে ধানের মৌসুম
প্রিয় কৃষক ভাইরা আপনারা হয়তো জানেন বাংলাদেশে কত ধরনের ধান চাষ হয়। তবুও আজকে আমি আপনাদের সাথে আরো একটু ধানের কিছু জাত নিয়ে একটু আলোচনা করব। যদিও আমাদের আজকের বিষয় ধানের শীষ মরা বা ছড়া মরা রোগ নিয়ে। তবুও ধানের জাতগুলো সম্পর্কে একটু অবগত হলে আপনারা একটু লাভবান হবেন। প্রিয় কৃষক ভাইরা বাংলাদেশের ধানকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- আউশ ধান
- আমন ধান
- বোরো ধান
আউশ ধান
আপনি যদি দ্রত ফল তুলতে চান তাহলে আপনার জন্য আমন ধান হবে সেরা বাছাই। কারণ এটি খুব দ্রত ফল দেয়। এই ধান সাধারনত হয় বর্ষাকালের আষাঢ় মাসে। এই কারণে এক আষাঢ়ী ধানও বলা হয়। আবর এই ধান বছরের যেকোনো সময় চাষ করা হয়।
আমন ধান
আমন ধান এর অপর নাম আগুণী ও হৈমত্তিক। আমন মৌসুমে সাধারণত এর চাষ বেশি হয়ে খাকে।আমন ধান আবার তিন প্রকার যথা;
১। রোপা আমন: চারা প্রস্তুত করে,স চারা রোপণ করে এই ধান উৎপন্ন করা হয় বলে এর নাম রোপা আমন। জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে বীজ তলায় বীজ বোনা হয়, শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মূল জমিতে রোপণ করা হয় এবং অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ধান কাটা হয়।
২। বোনা আমন: বোনা আমন ছিটিয়ে রোপন করা হয় তাই এর নাম বোনা আমন।সাধারণত এই আমন ধান বোনা আমন চৈত্র-বৈশাখ মাসে মাঠে বীজ বপন করা হয় এবং অগ্রহায়ণ মাসে পাকা ধান কাটা হয়।
৩। বাওয়া আমন: সাধারণত এই আমন ধান বিলে রোপন করা হয় তাই এর নাম রাখা হয়েছে বাওযা আমন। এর একটি বিশেষত্ব হলো এটি বিলের গভীর পানিতে রোপন করা যায়।
বোরো ধান
বোরো ধান প্রধানত সেচ নিরর্ভর অর্থাৎ বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসে যে ধানের চাষ হয় তাই হলো বোরো ধান।উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান প্রবর্তনের ফলে ধান আবাদ তুলনা মূলক বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক আবিষ্কৃত উন্নত জাতের ধান সমূহ যেমন- বি আর ১(চান্দিনা), বি আর ২(মালা), বি আর ৩(বিল্পব), বি আর ৪(রিশাইল) এবং ব্রি ধান ব্যাপক ভাবে চাষ করা হচ্ছে।
ধানের পুষ্টি উপাদান
জেনে নেওয়া যাক ধানের পুষ্টি উপাদান সমূহ:
উপাদান | পরিমান (১০০ গ্রাম) |
পানি | ১২ |
কার্বোহাড্রেট | ৮০ |
শক্তি | ১৫২৮ কিলোজুল |
আমিষ | ৭.১ |
স্নেহ | ০.৬৬ |
আঁশ | ১.৩ |
চিনি | ০.১২ |