কাঁচা আম পাকানোর সহজ ও সঠিক নিয়ম
বর্তমানে বাজারে ফরমালিন বা রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া পাঁকা আম পাওয়া খুবই দুষ্কর। পাঁকা আম পাকানোর কিছু পদ্ধতি রয়েছে। জানুন কাঁচা আম পাকানোর সহজ নিয়ম সম্পর্কে।
আম যেমন কাঁচা অবস্থায় খেতে মজা তেমন পাঁকা অবস্থায় আম খেতে আরো মজা। এছাড়াও বাজারে পাঁকা আমের চাহিদা খুব বেশি। কারণ, পাঁকা আম খেতে খুবই সুস্বাদু। কিন্তু অনেক সময় বাজারে সময় মতো পাঁকা আম সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। কিংবা দেখা যায় বাজার থেকে আম কিনে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরও আম পাঁকে না। ফলে অনিচ্ছাকৃত কাঁচা আম খেতে হয়। তাই জানুন কিভবে খুব সহজে কাঁচা আম পাকানো যায় সে সম্পর্কে।
আরোও পড়তে পারেন – বারোমাসি আম চাষ করে বারমাসি আয়
কাগজের ব্যাগে আম পাঁকানো
আম পাঁকানোর একটি অভিনব পদ্ধতি হলো কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা। খুব দ্রুত আম পাকানোর জন্য একটি কাগজের ব্যাগে কাঁচা আমের সঙ্গে কলা, আপেল বা টমেটো রেখে দিলে দেখা যাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আম পেকে গেছে। আর কাগজের ব্যাগে আম পাঁকার কারণ হলো ব্যাগের মধ্যে ইথিলিন গ্যাস বেড়ে যাওয়া। আর খুব তাড়াতাড়ি পাকানোর জন্য কাগজের ব্যাগের মধ্যে আমের সাথে কলা, আপেল বা টমেটো রেখে দিলে সে ফল গুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ ইথিলিন গ্যাস বের হয়। যা আমকে খুব দ্রুত পাকতে সাহায্য করে। তবে কাগজের ব্যাগে আম পাকানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে, কগজের ব্যাগ থেকে যেন কোনোভাবে গ্যাস বের হয়ে না যেতে পারে। এজন্য ব্যাগটি ভালোমতো দড়ি দিয়ে বেধে দিতে হবে।
গরম স্থানে কাঁচা আম পাকানোর নিয়ম
আম সহ যেকোনো ফলই তুলনামূলক কিছুটা গরম স্থানে রাখলে সহজে সেই ফলটি পেঁকে যায়। তাই কাঁচা আম পাঁকানোর জন্য আমাদের তুলনামূলক গরম জায়গা খুজতে হবে। তাই আম পাঁকানোর জন্য আমাদের ঘরের রান্নাঘর কিংবা কোনো আবদ্ধ রুম বা স্টোর রুম নির্বাচন করতে হবে। যেখানে ঘরের অন্যান্য জায়গা থেকে গরম বা তাপমাত্রা বেশি। যেহেতু রান্নাঘরে দিনের অনেকটা সময় চুলা জ্বালানো হয়, তাই এই রান্না ঘরের তাপমাত্রা অন্য ঘরের তুলনায় বেশি। সুতরাং অধিক তাপমাত্রা সম্পন্ন ঘরে কাঁচা আম রেখে দিলে তা ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই পুরোপুরি পেঁকে যাবে। কারণ কাঁচা আম তাপ বেশি পেলে আমের মধ্যকার রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্রুত ঘটিয়ে পেঁকে যাবে।
চালের মধ্যে কাাঁচা আম রেখে পাঁকানো
আম পাকানোর আরেকটি অন্যতম উপায় হলো চালের মধ্যে কাঁচা আম রেখে পাঁকানো। কারণ, চাল সাধারণত ঘরের মধ্যে ড্রাম বা বস্তার মধ্যে রাখা হয়। আর সেখানে তুলনামূলক গরম বেশি থাকে। এছাড়াও চাল এমনিতেই গরম। তাই চালের মধ্যে কাঁচা আম রেখে দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই আম পেঁকে যায়। তবে চালের মধ্যে আম পাকাতে চাইলে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর একবার আমের অবস্থা অবশ্যই দেখতে হবে।
আরোও জানতে পারেন – আমের মাছি পোকা দমন ব্যবস্থা
পপকর্ণের মাধ্যমে আম পাঁকানো
পপকর্ণ তুলনামূলক গরম হয়, তাই চাইলে পপকর্নের মধ্যে আম রাখলে একই ফল পাওয়া যাবে বা খুব দ্রুত আম পেকে যাবে। এ পদ্ধতিতে বা পপকর্নের মধ্যে আম রাখলে মাত্র এক রাতের মধ্যেই আম পাকতে শুরু করে। তবে পপকর্ণের মধ্যে আম পাকাতে চাইলে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর একবার আমের অবস্থা অবশ্যই দেখতে হবে। কারণ, এই পদ্ধতিতে আম পাকানোর কারণ হলো আমের মধ্যে থাকা ইথিলিন গ্যাস দ্রুত বের হয়ে যায়। ফলে আম তাড়াতাড়ি পেঁকে যায়।
কাঁচা আম কাগজে মুড়িয়ে রেখে পাঁকানো
পত্রিকার কাগজ বা অন্য কোনো কাগজে কাঁচা আম মুড়িয়ে রাখলে আম পাকতে শুরু করে। তবে আমের ঘ্রাণ বাড়তে শুরু করলে বুঝতে হবে যে, এই কাগজের পদ্ধতি সঠিকভাবে কাজ করছে। তবে এই পদ্ধতিতে আম পাঁকতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
কলা, আপেল বা টমেটোর সাহায্যে আম পাঁকানো
কলা বা আপেলের সঙ্গে একটি কাগজের ব্যাগে কলা, আপেল বা টমেটো রেখে দিলে দেখা যাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আম পেকে যায়। এর একমাত্র কারণ হলে, কলা, আপেল, টমেটো এবং আম থেকে ইথিলিন গ্যাস বের হয়ে ব্যাগের মধ্যে ইথিলিন গ্যাসের মাত্র বেড়ে যাওয়া। যার ফলে আম খুবই দ্রুত পেঁকে যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যাগ থেকে যেন কোনোভাবে গ্যাস বের হতে না পারে। জন্য ব্যাগটি ভালোমতো দড়ি দিয়ে বেধে দিতে হবে।
আরোও পড়ুন – কাঁঠাল চাষ পদ্ধতি: সঠিক নিয়মে কাঁঠাল চাষ করে পান সফলতা
স্বাভাবিকভাবে আম পাঁকানো
বর্তমানে যে পরিমাণে গরম পড়ছে বা দিন দিন যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই গরমে যেকোনো ফল এমনিতেই পেঁকে যাবে। তাই স্বাভাবিকভাবে আম পাকাতে হলে প্রথমে আম ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর কোনো পদ্ধতি ব্যবহার না ৭ থেকে ১০ দিন স্বাভাবিকভাবে আম রেখে দিলে আম এমনিতেই পেঁকে যাবে।
রাসায়সিক ছাড়া আম পাঁকানো
বর্তমানে আম সহ বেশিরভাগ ফলই রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে পাকায় বিছু অসাধু ব্যবসায়িরা। যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। তাই রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা ছাড়া আম পাকাতে চাইলে অবশ্যই কিছুদিন ধৈর্য ধরতে হবে। আর কথায় আছে ধৈর্যের ফল মিঠা হয়। সুতরায় স্বাভাবিকভাবে কোনো ধরণের রাসায়সিক পদার্থ ব্যবহার করা ছাড়া আম পাকালে তা খুবই সুমিষ্ট হ সুস্বাদু খেতে হয়।
খড়ের সাহায্যে আম পাঁকানো
খড়ের মাধ্যমেও আম পাঁকানো যায়। খড়ের সাহায়্যে আম পাকানোর জন্য, একটি প্লাস্টিকের বাক্সে শুকনো ঘাস ও খড় দিয়ে ভর্তি করতে হবে। তারপর খড়ের মধ্যে আম ঢুকিয়ে দিয়ে খড়যুক্ত আমের বাক্সটি ঘরের একটি কোণে বা অন্ধকার জায়গায় রাখতে হবে।েএভাবে দুই-তিন দিন রেখে দিলে কাঁচা আম পেঁকে যাবে।
আরোও জানুন – জুন মাসে কি কি সবজি চাষ করে ভালো লাভ করা যায়
সুতি কাপড় ব্যবহার করে আম পাঁকানো
আম পাঁকানোর জন্য সুতির কাপড়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য কাঁচা আম নিয়ে একটি সুতির কাপড়ে মুড়িয়ে একটি পাত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে পাত্রটি ঢেকে রাখতে হবে। এভাবে তিন-চার দিন রেখে দিলে দেখা যাবে কাঁচা আম ভালোভাবে পেঁকে গেছে।
কার্বাইড দিয়ে আম পাকানো
আম ব্যবসায়ীরা আম খুবই দ্রুত পাকিয়ে বিক্রি করার জন্য প্রতি পঞ্চাশ কেজি আমে ১০০ গ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে তা খাঁচায় রেখে দেয়। আর আম চকচকে করার জন্য এক ধরনের কেমিক্যাল করে। এতে আম দেখতে খুবই আকর্ষণীয় হয়। তারপর সেই আমগুলো জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এসে ক্যালসিয়াম কার্বাইড অ্যাসিটাইলিন গ্যাস উৎপাদান করে এবং এ গ্যাসের প্রভাবে আম পাকতে শুরু করে। কিন্তু এই আম খেতে তেমন সুস্বাদু হয় না এবং এই কার্বাইড যুক্ত আম বেশি খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে।
FAQs
পাঁকা আম চিনার উপায় হলো আমরে কড়া ঘ্রাণ গ্রহণ করে বোঝা।
আম বিভিন্ন ভাবে পাঁকানো যায়। যেমনঃ ১) ব্যাগের সাহায্যে ব্যাগের মধ্যে কলা, আপেল ও টমেটো একসাথে রাখা ২) খড়ের সাহায্যে আম পাঁকানো, ৩) চালের মধ্যে আম পাকানো ৪) বস্তার মধ্যে আম বেঁধে রেখে পাকানো ইত্যাদি।
কার্বাইড ব্যবহার করে পাকানো ফল খেলে ক্যানসার, কিডনি বিকল হওয়াসহ বিভিন্ন ধরণের জটিল রোগ সৃষ্টি এবং শিশু ও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা হতে পারে।
পাকা আমের রং হলো হলুদ বা কমলা।
কৃত্রিম পদ্ধতিতে আম পাকানোর ক্ষতিকর প্রভাব হলো মাথাব্যথা করা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া, পা এবং হাতে অসাড়তা, সাধারণ দুর্বলতা, ঠান্ডা এবং স্যাঁতসেঁতে ত্বক, নিম্ন রক্তচাপ এবং খিঁচুনি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেওয়া।
আম পাকানোর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয়।
একটি পাকা আমে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। যা আমাদের শরীরের রক্ত স্বল্পতা দূর করতে এবং হার্ট সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
আম 18°C থেকে 22°C এর মধ্যে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা উচিৎ।
রাতে আম খেলে ওজন বাড়ে না।
আমে শর্করার পরিমাণ ৩৩.৮ গ্রাম রয়েছে।