অল্প পুজিতে বেশি লাভ করতে জানুন মিষ্টিকুমড়ার সঠিক চাষ পদ্ধতি
মিষ্টিকুমড়া একটি সুস্বাদু ও সুপরিচিত ফসল অল্প সময়ে এর ফলন পাওয়া যায় এবং সহজেই এর চাষাবাদ করা যায় তাই মিষ্টিকুমড়ার চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই
মিষ্টিকুমড়া একটি বারোমাসি অর্থকরি ফসল। বাজারে সারা বছরই কম-বেশি মিষ্টিকুমড়া চাহিদা থাকেই। বিশেষত শীতকালে মিষ্টিকুমড়ার চাহিদা বেশি থাকে। তাই এই সময় চাষীরা মিষ্টিকুমড়া চাষ করে অধিক লাভবান হন। আর মিষ্টিকুমড়ার শাক ও সবজি উভয়ই খাওয়া যায়। এর জন্য বাজারে এটির চাহিদা আরোও ব্যাপক। শখের বসে ও বানিজ্যিকভাবে এটির চাষাবাদ করা যায়। তাই আসুন জেনে নিই কিভাবে অল্প পুজিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করে বেশি লাভ করতে পারবো সে সম্পর্কে।
আরোও পড়ুন – ছাদ বাগানে সবজি চাষ
মিষ্টিকুমড়ার জাত নির্বাচন
আমাদের দেশে বিভিন্ন মিষ্টিকুমড়ার উন্নত জাত রয়েছে। মিষ্টিকুমড়ার সেসব উন্নত ও উচ্চফলনশীল জাত গুলো হালোঃ- সুপ্রিমা, সুইটি, ড্রিমগোল্ড ইত্যাদি। এছাড়াও হাইব্রিড জাতের মিষ্টিকুমড়াও রয়েছে।
এর মধ্যে সুইটি জাতের মিষ্টিকুমড়া বেশি ওজনের হয়ে থাকে। এই সকল মিষ্টিকুমড়া গাছ লাগানোর আড়াই হতে তিন মাসের মধ্যে ফল দিয়ে থাকে।
মিষ্টিকুমড়া উৎপাদনে মাটি নির্বাচন
আমাদের দেশে প্রায় সব মাটিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করা যায়। মিষ্টিকুমড়া চাষের জন্য দো-আঁশ বা এঁটেল দো-আঁশ মাটি খুবই উত্তম।
মিষ্টিকুমড়া উৎপাদনের সময়
শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর-ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি-মে মাস পর্যন্ত মিষ্টিকুমড়ার বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
আরোও পড়ুন – জুন মাসে কি কি সবজি চাষ করে ভালো লাভ করা যায়
মিষ্টিকুমড়া উৎপাদনে বীজবপন
- মিষ্টিকুমড়া বীজ মাটিতে মাদায় তৈরি করে বা পলিথিনে রোপণ করা যায়। এজন্য প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে বীজ তলার জন্য মাটি তৈরি করতে হবে।
- মাটিতে বীজ গজানোর জন্য ‘জো’ নিশ্চিত করে তা পলিব্যাগে ভরতে হবে। অতঃপর প্রতি ব্যাগে দুইটি করে বীজ লাগাতে হবে।
- বীজের ১-১.৫ ইঞ্চি মাটির গভীরে পুঁতে দিতে হবে। এছাড়া প্রত্যেক মাদায় ৩-৪ টি বীজ লাগাতে হবে। মিষ্টিকুমড়া চাষের জন্য প্রতি শতাংশে ২.৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হতে পারে।
আরোও পড়তে পারেন – কচু চাষ পদ্ধতি
মিষ্টিকুমড়া উৎপাদনে জমিতে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
মিষ্টিকুমড়া চাষের মূল জমি তৈরির সময় জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যগনেসিয়াম ইত্যাদি পরিমাণ মত দিতে হবে।
মিষ্টিকুমড়া উৎপাদনে চারা রোপণ ও পরিচর্যা
মিষ্টিকুমড়ার চারার বয়স ১৫-১৬ দিন হলে লাগানো যায়। আর পলিব্যাগের চারা পলির ভাঁজ বরাবর ব্লেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলা সহ চারাটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চার পাশে মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে।
মিষ্টিকুমড়া চাষে ক্ষতিকর পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা
১. মিষ্টিকুমড়া চাষে লাল পামকিন বিটল দমণ
সপসিন ২ গ্রাম এবং একতারা ১ গ্রাম বা সেভিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে মিষ্টিকুমড়া গাছে স্প্রে করতে হবে।
২. মিষ্টিকুমড়া চাষে জাব পোকা
সানগর ২ মি.লি. বা ২ গ্রাম ডায়াজিনন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে মিষ্টিকুমড়া গাছে স্প্রে করতে হবে।
৩. মিষ্টিকুমড়া চাষে পাউডারী মিলডিউ
টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মি.লি. বা রনভিট ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে মিষ্টিকুমড়া গাছে স্প্রে করতে হবে।
৪. মিষ্টিকুমড়া চাষে পাতার দাগ রোগ
রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম বা কার্বেনডাজিন (ব্যাভিস্টিন) ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে মিষ্টিকুমড়া গাছে স্প্রে করতে হবে।
মিষ্টিকুমড়া ফসল সংগ্রহ
মিষ্টিকুমড়া উপযুক্ত তাপমাত্রায় ৪-৬ মাস সংগ্রহ করে রাখতে পারি।
মিষ্টিকুমড়ার ফলন
মিষ্টিকুমড়ার ফলের গড় ওজন ৪-৫ কেজি। হেক্টর প্রতি মিষ্টিকুমড়ার ফলন ১৮-২০ মে. টন হয়ে থাকে।
FAQs
টবে মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি হলো টবে মিষ্টিকুমড়া চাষের জন্য মাটি ও সার দিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে সেই মাটি মিষ্টি কুমড়ার ৫-৬ টি করে বীজ বপন করতে হবে এবং মিষ্টিকৃমড়ার বীজ থেকে চারা উৎপাদণ হওয়ার পর টবে সুস্থ্য চারা রেখে দুর্বল চারা উপড়ে ফেলতে হবে। আর টবে মিষ্টকুমড়ার চারা গজানোর পর নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি হলো মষ্টিকুমড়া চাষের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দুরত্ব রাখতে হবে ২ মিটার এবং বীজ থেকে বীজের দুরত্ব হবে ২ মিটার। আর ২-৩ সেমি গভীরে প্রতিটি মাদায় ২ টি করে হাইব্রিড জাতের মিষ্টিকুমড়ার বীজ বপন করতে হবে এবং মিষ্টিকুমড়ার চারা গজানোর ৭ দিন পর সুস্থ চারাটি রেখে বাকি চারাগুলো তুুলে ফেলতে হবে এবং চারায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
মিষ্টি কুমড়া চাষে হেক্টর প্রতি জমিতে চাষের জমি তৈরী করার সময গোবর, টিএসপি, বোরণ, অর্ধেক পটাশ এবং পাঁচ ভাগের এক ভাগ ইউরিয়া সার চাষের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।